মাথায় ভারী বোঝা, পরনে ছেঁড়া পোশাক,
অথবা চায়ের দোকানের সেই ছোট্ট খুদে,
অথবা স্টেশনের জলের বোতল বিক্রি করা ছেলেটি,
এদের দেখলেই মনে জাগে এক অনন্ত ক্ষোভ,
শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে যেন গর্জে ওঠে অন্তর।
তবু এরা তো কঠোর পৃথিবীর বাস্তব জালে
জৈবিক ক্ষুধার টানে বইছে শ্রমের বোঝা,
বই খাতা গেছে ভুলে, শ্রমেই দিন যাপন।
তাদের বাড়ির মা বাবা ফেলে চোখের জল
রাত্রি বেলায় ছোট্ট সোনার ক্লান্তি দেখে।
কিন্তু তাদের শ্রম - তা নয় কোনো অপরাধ,
সেই শ্রমের বলেই তো তারা যোগায় অন্ন ডাল।
একবার কথিত শ্রমের উর্ধে দেখই না চেয়ে
সেই অট্টালিকার পরেও আছে এক ছোট্ট সোনা,
সে খুব নরম পালঙ্কে সোয়, পরে দামী চকচকে জমা,
তবু তার চোখের জলে নরম বালিশ প্রতিদিন ভেজে।
কেনো জানো? তার যে বন্ধুদের কথা মনে পরে!
সে আজ সেলিব্রেটি এই মাত্র ছয় বছর বয়সে।
বিদ্যালয়ে থুরি কনভেন্টে আছে তার নাম লেখা,
কিন্তু সেখানে যাওয়া যে তার কাছে সময় সাপেক্ষ!
ইয়া বড় বড় গাড়ি আসে নিয়ে যেতে তাকে,
মা বাবা কেনো আহ্লাদে আটখানা হয়ে ভাসে।
কোনো কোনো খুদে স্টেজে ওঠে রঙিন সাজে,
কি যে সুন্দর গান গায়! সবাই করতালি দিয়ে ওঠে।
খুদেটির মুখে রঙ বেরঙের আভা, মুখে হাসি ভাব,
তবু যেন এই খুদে নয় মন থেকে আনন্দিত নিজে,
তার হাসি, তার কান্না সবই যেন আজ সাচ্ছন্দ্য ভোলে।
এই অট্টালিকা, ওই পথের ধারের চাটাইয়ের ঝুপড়ি,
দুইখানেই দুই ছোট্ট খুদে রয়েছে গুমোট ধরে।
তবু যেন মনে হয় সেই ঝুপড়ির ছোট্ট খুদে
অনেক সুখী, অনেক আনন্দিত, অনেক মুক্ত।
কেনো জানো? সে হয়ত দুইবেলা পায়না খেতে,
তবু তার অনেক আছে মা বাবার আদরের পসরা,
তার দুঃখ, কষ্ট যেন সবাই বোঝে, পায় সহানুভূতি,
কিন্তু এই অট্টালিকার টুকটুকে খুদে সে শ্রম বয়েও,
বোঝায় নত হয়েও চুপ সুন্দর তোতা পাখির মতো;
সবাই ভাবে কতই না সে সুখী সোনার খাঁচার মাঝে।
সেই অট্টালিকার প্রতিটি দেওয়াল শোনে তার কান্না,
তবু সেই খুদে বাবা মা কে পারে না বোঝাতে
সে যে চাই স্কুলে যেতে, পড়তে পরীদের মুক্তির গল্প।
কিন্তু হায়! সে যে পুতুল আজ এই চকচকে জগতের,
অভিনয় করতে করতে শিশু গণ্ডি কখন যে পার করে।
শিশু শ্রম বিরোধ শুধু রাস্তার ফুটপাতে গর্জায়;
আলোর ঝলকানিতে কত শিশু স্বপ্ন হারায়,
তা কেউ ঝকমকে আলেয়াই দেখতে না পায়।
হায়! হায় সমাজ! বদ্ধ এক ধারণার ধারায়
কুল কুল শব্দে বয়ে চলে বুকে চড়ার চাদর লয়।
রচনাকাল : ৩১/৫/২০২০
© কিশলয় এবং লোপা দাস কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।