• সংকলন

    শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন


শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন সপ্তম পর্ব- আগমনী কাব্য-৭
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৫৭৩১৩ জন পড়েছেন।
শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন 
সপ্তম পর্ব- আগমনী কাব্য-৭
               কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের আকাশ, শরতের নদী, শরতের ফুল- সবকিছুই কেমন যেন শান্ত মায়াময়। শরতের এই শুভ্র রূপ পবিত্রতার প্রতীক। বিলের শাপলা, নদীতীরের কাশফুল, আঙিনার শিউলি- এরা সবাই কোমল, পবিত্র। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। যখন শিশিরের শব্দের মতো টুপটাপ শিউলি ঝরে, তখন অনুভবে শরৎ আসে। কাশবনে দলবেঁধে আসে চড়–ই পাখিরা। নদী শান্ত হয়ে আসে। তখন থাকে না তার দুকূল-ছাপানো বিপুল জলরাশির উত্তাল ঢেউ। আর শরতের নদী মানেই দুই পাড়ে কাশবনের ছোট ছোট রুপালি ঢেউ। বাংলা ছাড়া এমন অনাবিল সৌন্দর্যভূমি আর কোথায় পাওয়া যাবে?

শরৎ মানেই শিউলি ফোটার দিন। শিউলির মধুগন্ধ ভেসে বেড়ানোর দিন। শিউলির আরেক নাম শেফালি। আগের দিনে কবিরা শেফালি নামটাই বেশি ব্যবহার করেছেন। শিউলি বা শেফালি যা-ই বলি-না কেন, চমৎকার এ-ফুলটি নিয়ে দুটি গ্রিক ও ভারতীয় উপকথা আছে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে শিউলির বিশাল বন ও তার তীব্র ঘ্রাণের কথা বলা হয়েছে। 

শরতের এই স্নিগ্ধ শোভাকে আরও মোহময় করে এ-মৌসুমের বিচিত্র ফুলেরা। নদী কিংবা জলার ধারে ফোটে কাশ-কুশ, ঘরের আঙিনায় ফোটে শিউলি বা শেফালি, খাল-বিল-পুকুর-ডোবায় থাকে অসংখ্য জলজ ফুল। আর শেষরাতের মৃদু কুয়াশায় ঢেকে-থাকা মায়াবী ফুলেরা যেন আরও রূপসী হয়ে ওঠে। শিশিরভেজা শিউলি, বাতাসে মৃদু দোল-খাওয়া কাশবনের মঞ্জরি, পদ্ম-শাপলা-শালুকে আচ্ছন্ন জলাভূমি শরতের চিরকালীন রূপ। সত্যিই বিচিত্র রূপ নিয়ে শরৎ আমাদের প্রকৃতিতে এবং চেতনায় ধরা দেয়।  আমাদের অন্য ঋতুগুলো অনেক ফুলের জন্য বিখ্যাত হলেও মাত্র কয়েকটি ফুল নিয়েই শরৎ গরবিনী।

গ্রাম বাংলার পথের দুধারে বনে কত বন্য শিউলি গাছ… যেন শিউলিবন। বড় বড় শিলাখণ্ডের উপর শরতের প্রথমে সকালবেলা রাশি রাশি শিউলিফুল ঝরিয়া পড়িয়াছিল’ (পৃ. ৬৩)। ‘সন্ধ্যা হইবার সঙ্গে সঙ্গে আর একটি নতুন সুবাস পাইলাম। আশেপাশের বনের মধ্যে যথেষ্ট শিউলিগাছ আছে। বেলা পড়িবার সঙ্গে সঙ্গে শিউলিফুলের ঘন সুগন্ধ সান্ধ্য-বাতাসকে সুমিষ্ট করিয়া তুলিয়াছে’ (পৃ.১৪০)।

কাশফুল প্রসঙ্গে :
‘ধু-ধু বন-ঝাউ আর কাশবনের চর’ (পৃ. ৭)। ‘শুকনো কাশ ও সাবাই ঘাসের ছোট্ট একটা ছাউনি’ (পৃ. ৩৫)। ‘সেই খাটো কাশ-জঙ্গল’ (পৃৃ. ৫৯)।
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ- সকলেই অসংখ্যবার শিউলির প্রশংসা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ শরতের স্নিগ্ধতা উপভোগ করেছেন নানাভাবে। শরতের পুষ্পসম্ভার তাঁর জাদুস্পর্শে আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে :

‘এই শরৎ-আলোর কমল-বনে/ বাহির হয়ে বিহার করে/ যে ছিল মোর মনে মনে।’
অন্যত্র আছে :
‘শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি/ ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি।/ শরৎ তোমার শিশির-ধোওয়া কুন্তলে-/ বনের পথে লুটিয়ে-পড়া অঞ্চলে’
রবীন্দ্রনাথ গান ও কবিতায় নানাভাবে, নানা প্রসঙ্গে অন্তত একুশ বার শিউলির কথা বলেছেন। 

তার কয়েকটি :
১. যখন শিউলী ফুলে কোলখানি ভরি/  দু’টি পা ছড়ায়ে দিয়ে আনত বয়ানে।
২. সকল বন আকুল করে শুভ্র শেফালিকা।
৩. বকুল, কেয়া, শিউলি সনে/  ফিরে ফিরে আসবে ধরণীতে।
৪. আশ্বিনের উৎসবসাজে শরৎ সুন্দর শুভ্র করে/ শেফালির সাজি নিয়ে দেখা দিবে/ তোমার অঙ্গনে।
৫. আশ্বিনের শেফালিকা/ ফালগুনের শালের মঞ্জরি।
৬. শিউলী ফুলের নিশ্বাস বয়/ ভিজে ঘাসের পরে।
৭. প্রশান্ত শিউলি ফোটা প্রভাত শিশিরে ছলোছলো।
৮. শিউলি এলো ব্যতিব্যস্ত হয়ে,/ এখনো বিদায় মিলিল না মালতীর।
৯. নীরব আকাশবাণী শেফালির কানে কানে বলা।
১০.তারি অঙ্গে এঁকেছিল পত্রলেখা/ আম্রমঞ্জরির রেণু, এঁকেছে পেলব শেফালিকা/ সুগন্ধি শিশির কণিকায়।
১১. যখন শরৎ কাঁপে শিউলি ফুলের হরষে।
১২. আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ/ আমরা গেঁথেছি শেফালি মালা।
১৩. ওগো শেফালি বনের মনের কামনা।
১৪. শরৎ প্রাতের প্রথম শিশির প্রথম শিউলি ফুলে।
১৫. দেখিলাম ধীরে আসে আশীর্বাদ বহি/ শেফালি কুসুম রুচি আলোর থালায়।
 
শরৎ-শিউলির প্রসঙ্গ এলে নজরুলের এই গানটি অনিবার্য হয়ে ওঠে। :
‘তোমারি অশ্রু জলে শিউলি-তলে সিক্ত শরতে,
হিমানীর পরশ বুলাও ঘুম ভেঙে দাও দ্বার যদি রোধি।’


শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন 
সপ্তম পর্ব- আগমনী কাব্য-৭
               কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের আকাশেতে সাদামেঘ ভাসে,
সবুজ ধানের খেতে সোনারোদ হাসে।
দিঘিজলে হাঁসগুলি কাটিছে সাঁতার,
সবুজ ধানের খেত হেরি চারিধার।

শরতের আগমন দোলা দেয় প্রাণে,
চারিদিক মুখরিত আগমনী গানে।
ঢাকীরা বাজায় ঢাক কাঁসর বাজায়,
তরুশাখে বিহগেরা বসি গীত গায়।

অজয়ের নদী চরে বক ধরে মাছ,
নদী তীরে বটগাছে পাখিদের নাচ।
যাত্রী সব পার হয় নামে নদী জলে,
খেয়াঘাট ভরে উঠে জন কোলাহলে।

আগমনী গান ভাসে বাতাসে বাতাসে,
অজয়ের নদী চরে বেলা পড়ে আসে।
রচনাকাল : ২০/৯/২০১৯
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 4  China : 34  France : 9  Germany : 1  India : 164  Ireland : 28  Malaysia : 1  Russian Federat : 2  Sweden : 18  Ukraine : 8  
United States : 201  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 4  China : 34  France : 9  Germany : 1  
India : 164  Ireland : 28  Malaysia : 1  Russian Federat : 2  
Sweden : 18  Ukraine : 8  United States : 201  


© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন সপ্তম পর্ব- আগমনী কাব্য-৭ by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.