• সংকলন

    ভালবাসা শুধু ভালবাসা - প্রথম খণ্ড


ভালবাসা শুধু ভালবাসা (অষ্টম অধ্যায়)
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭৩ টি দেশ ব্যাপী ৩৪৫১৪৫ জন পড়েছেন।
ভালবাসা শুধু ভালবাসা (অষ্টম অধ্যায়)

রক্তে রাঙা সিঁথি
            লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


বিয়ের সানাই বাজছে। শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনিতে সারা বিয়েবাড়ি মুখরিত। চারদিকে আলো আর আলো। বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও আমন্ত্রিত অতিথিদের ভিড়। হঠাত্ সরগোল উঠল- “বর এসেছে বর এসেছে।” বরকে বরণ করে ছাঁদনাতলায় আনা হল। সাথে সাথে বরযাত্রীরাও এসে দাঁড়ালেন। বরাসনে বরকে বসিয়ে সবাই শাঁখ বাজাতে লাগল, উলুধ্বনি দিতে থাকল। 
পুরোহিত নান্দীমুখ সারিয়ে, কন্যাকে আনার আদেশ দিলেন। এবার হস্তবন্ধন,    মালা-বদল ও সিঁদুর দান হলেই তার দায়িত্ব শেষ। এদিকে লগ্ন পার হয়ে যায়। বরের বাবা নিজেই বরকর্তা। তিনি বললেন- “পণের বাকী টাকা না পেলে এ বিয়ে হবে না। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত কেউ বরযাত্রীরা ভোজন করবে না।”
কিন্তু একি হল! সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও নীলাঞ্জনাকে পাওয়া গেল না। সব কিছু দেখে শুনে নীলাঞ্জনার বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। নীলাঞ্জনার মা কাঁদতে কাঁদতে এসে বললো- “ওপরের দোতালা ঘরের একটা রুমে সিলিং ফ্যানে গলায় ফাঁস লাগিয়ে নীলাঞ্জনা আত্মহত্যা করেছে।” 
বরযাত্রীরা সবাই বরকে নিয়ে বাসে উঠলেন। বরকর্তা বললেন - “কাজটা আপনি ভাল করলেন না বেয়াই মশাই। পণের অগ্রিম টাকা বাড়িতে এসে ফেরত্ নিয়ে যাবেন।” 
বিয়ের সানাই বন্ধ হয়ে গেল। এক এক করে সব আলো নিভে গেল। বাড়ির সবাই এসে নীলাঞ্জনার প্রাণহীন নিথর দেহটাকে মাটিতে নামিয়ে রাখল। অঞ্জনের চোখে জল। সে কাঁদছে। নীলাঞ্জনার সাথে তার ভালবাসারও পরিসমাপ্তি ঘটল।
এই তো জীবন। জীবন বড় ছোট। নীলার জীবনে অঞ্জন কেমন করে এল আর কেমন করে তাকে না জানিয়ে এত বড় ভুলটা করা হল তা সবাই না জানলেও অঞ্জন জানে। নীলা তাকে বলেছিল- “আগামী 26শে ফাল্গুন আমার বিয়ে। তুমি অবশ্যই এসো।” অঞ্জন নীলার কথা রেখেছে। সে এসেছিল তার বিয়েবাসরে। কিন্তু নীলা যে এভাবে চলে যাবে তা সে কোনদিনই কল্পনা করতে পারে নি।
জীবনে চলার পথে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অঞ্জন জীবনের পথে চলতে শিখেছে। পরের জন্য সে যুদ্ধ করেছে অনেক। এবার তার নিজের জন্য যুদ্ধ করতে হবে। এর নাম জীবনযুদ্ধ। জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে সে পারে নি। পারে নি কোনরকম প্রতিবাদ করতে। তাই পরাজয়ের কালিমা মুছে ফেলতে সবার সামনে ছুরিটা তার নিজের বুকে আমূল বসিয়ে দিয়ে বললো- “নীলা তোমার আমার চলার পথে বাধা অনেক। তাই সব বাধা অতিক্রম করে আমি তোমার পথেই পা রাখছি। যাবার আগে আমি আমার বুকের রক্ত দিয়ে তোমার সিঁথি রাঙিয়ে দিলাম।” 
অঞ্জনের লাশটাকে নীলাঞ্জনার পাশে যখন শুইয়ে দেওয়া হলো, তখন ভোরের আকাশে রক্তিম সূর্যটা উঁকি দিচ্ছে।
গল্প এখানেই শেষ নয়। সব কিছুর শেষ হয় শ্মশানঘাটে। শ্মশান মানে নির্জন, শ্মশান মানে অবিচারের আদালত। শ্মশান মানে প্রায়শ্চিত্তের জেলখানা। প্রাণহীন দুটো দেহকে পাশাপাশি জ্বালিয়ে দেওয়া হল। সেই চিতার আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছে অঞ্জন আর নীলাঞ্জনার নীরব অভিমান আর তাদের বুকভরা ভালবাসা, যে চিতার আগুনে পুড়ে ছাই হয় পার্থিব কামনা, বাসনা আর অহংকারের সুরম্য রাজপ্রাসাদ। শ্মশানের চিতা জ্বলছে। তারপর কোন একসময়ে দুটো চিতার আগুন একসাথে নিভে যায়। 
রচনাকাল : ৪/১১/২০১৯
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 5  China : 34  Europe : 25  France : 11  Germany : 3  India : 188  Ireland : 27  Russian Federat : 2  Sweden : 18  Thailand : 1  
Ukraine : 5  United Kingdom : 10  United States : 233  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 5  China : 34  Europe : 25  France : 11  
Germany : 3  India : 188  Ireland : 27  Russian Federat : 2  
Sweden : 18  Thailand : 1  Ukraine : 5  United Kingdom : 10  
United States : 233  


© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ভালবাসা শুধু ভালবাসা (অষ্টম অধ্যায়) by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.