আতঙ্ক
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : সায়ন্তী সাহা
দেশ : India , শহর : সিঙ্গুর

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , ডিসেম্বর
প্রকাশিত ২৫ টি লেখনী ২৫ টি দেশ ব্যাপী ১৩৭৭৭ জন পড়েছেন।
ছোটোবেলাতে একবার সপরিবারে বেড়াতে গিয়েছিলাম গ্রামের বাড়ি।পরিবার বলতে আমি,বাবা,মা আর ভাই।গরমের ছুটিতে বাবার গাড়ি করে দাদুরবাড়ি গিয়ে ঠাম্মুর হাতে সুস্বাদু খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা।ঠাম্মুর হাতের ভাত-ডাল-পোস্ত দিয়ে আলুভাজা-মাছের ঝাল-আমের চাটনি খেয়ে দাদুর সাথে গেলাম আমবাগানে।গাছ থেকে কাঁচা আম পেড়ে নুন-লঙ্কা মিশিয়ে খেয়ে দাদুর হাত ধরে দুই ভাই-বোন গ্রামটা একটু ঘুরে দেখতে বেরোলাম।সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে ঠাম্মুর হাতের আমতেল দিয়ে মুড়িমাখা সাথে গরম গরম পেঁয়াজি খেলাম তৃপ্তি করে।রাত আটটা নাগাদ আমরা সবাই গাড়ি করে বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে।গ্রামের রাস্তা দিয়ে গাড়ি করে যেতে যেতে হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে গাড়িটা থেমে গেল।গাড়ি থেকে নেমে বনেট খুলে বাবা কিসব খুট্-খাট্ করলেন।তারপর হতাশ হয়ে জানলা দিয়ে গাড়ির ভিতর মুখ ঢুকিয়ে বললেন-"ইন্জিনের কি একটা সমস্যা হয়েছে,তোমরা সব বাইরে বেড়িয়ে এস,দেখি আজ রাতটা কেউ কারোর বাড়ি আশ্রয় দেয় কিনা।অনেকদূরে এসে গেছি,দাদুরবাড়ি যে আবার ফিরে যাব সেই উপায়ও নেই।নিরুপায় হয়ে আমরা এগিয়ে চললাম কোনো গৃহস্থবাড়ির উদ্দেশ্যে।কিছুদূর গিয়ে দেখলাম একটা জরাজীর্ণ মাটির বাড়ি।বাবা বাড়ির উঠোনে গিয়ে ডাক দিলেন-"ভিতরে কেউ আছেন?বড়ো বিপদে পড়েছি,আমাদের একটু আশ্রয় দেবেন আজ রাতের জন্য।"কিছুক্ষণ পর নিঃস্তব্ধতা কাটিয়ে বেড়িয়ে এলেন হ্যারিকেন হাতে আটপৌরে শাড়িপরা এক বয়স্ক মহিলা।সবশুনে তিনি আমাদের ভিতরে আসতে বললেন।একটা ঘরে মাদুর পেতে বসতে দিলেন।কিছুক্ষণ পর আমাদের বললেন কুয়ো থেকে হাত-পা ধুয়ে আসতে।তিনি নাকি সামান্য আহারের বন্দোবস্ত করেছেন।আমি আর বাপি আগে গেলাম।বাপি কুয়ো থেকে একবালতি জল তুলে হাত-পা ধুয়ে আমায় এক বালতি জল তুলে দিয়ে ভিতরে চলে গেলেন ভাইকে আনতে।আমি মগে করে জল নিতে গিয়ে দেখি বালতিতে জল নেই।বাবার আসতে দেরী হওয়ায় নিজেই গেলাম কুয়ো থেকে জল তুলে আনতে।জল তুলে মগটা নিয়ে গিয়ে জল আনতে গিয়ে দেখি বালতিতে আবারও জল শেষ।আবার চেষ্টা করলাম জল তোলার কিন্তু এবারও একই কাণ্ড।ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেলো।এ যে ভুতুড়ে কাণ্ড।শুনেছি গ্রামে-গজ্ঞে তেনারা রাতেরবেলা ঘুরে বেড়ান।সে কথা মনে হতেই অন্ধকারে পড়িমড়ি করে ঘরের দিকে ছুটলাম।ঘরে এসে কাউকে কিছু বললাম না।রাতে টকের ডাল,ডিমভাজাআর তেললঙ্কা দিয়ে ভাত খেলাম।এবার হাত ধুতে গেলাম আমি আর ভাই।তখনি দেখলাম এক অদ্ভুত কাণ্ড।দূরে কলাবাগানে লালপাড় সাদা শাড়ি পরে অন্ধকারে কে যেন দাঁড়িয়েছিল।তার পা মাটি থেকে অনেক উপরে।হাওয়ায় ভাসমান যেন সেটা।অল্প অল্প নড়ছে বলে মনে হচ্ছে।মনে হল যেনো এদিকেই এগিয়ে আসছে।এমনসময় পিছন থেকে গম্ভীর গলায় হঠাৎ কে যেনো বলে উঠল-"খুকি জল উঠচেনা বুঝি?এই মগের জলে তোমরা হাত ধুয়ে নাও দিকি।"ভয়ে বুকটা আমার ধড়াস করে উঠল।বালতিতে যে জল উঠছেনা একথা তো আমি কাউকেই বলিনি।তাহলে উনি জানলেন কি করে?শুনেছি তেনারা নাকি সবই জানতে পেরে যান।ভাইকে নিয়ে কোনোভাবে হাত ধুয়ে একছুটে ঘরে চলে এলাম।তারপরই বাবাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেস্টা করলাম।কিন্তু বারে বারে ঘরের হ্যারিকেনটা কিকরে যেনো নিভে যাচ্ছিল।বাবা যত চেষ্টা করছে কিছুক্ষণ পর আবার কোনো অদৃশ্য মন্ত্রবলে সেটা আবারও নিভে যাচ্ছে।ভয়ে ভয়ে মাকে আমি আগাগোড়া সবকথা বললাম।কুঁয়ো থেকে জল তুলতে গিয়ে মাও নাকি একই সমস্যায় পরেছিল।সবাই চিন্তা করবে বলে তিনি কিছু জানাননি।বাবাও খুব চিন্তায় পরে গেলেন।আমার তো মনে হল বাড়িতেই কোনো গন্ডগোল আছে।বারেবারে হ্যারিকেন জ্বালিয়ে কোনোমতে ভগবানের নাম জপতে জপতে ভোরের অপেক্ষা করতে লাগলাম।এমনসময় দরজায় টোকা পরল।মায়ের বারণ অগ্রাহ্য করে ভয়ে ভয়ে বাবা দরজা খুললেন।দরজা খুলতেই সেই বৃদ্ধা ঘরে এসে বললেন-"হ্যারিকেনটা বারে বারে নিভে যাচ্চে তাই না বাবা?এই কুপিটা রাকো বাবা,তোমাদের কাজে দেবে।"বলে কোনো উত্তরের অপেক্ষা না করেই তিনি চলে গেলেন।অামরা তো হতবাক।উনি কে আসলে?মানুষই তো নাকি?কিভাবে বন্ধ ঘরে অনায়াসে আমাদের অসুবিধার কথা জানতে পারলেন তিনি?নাকি নাকি তিনি অন্য কিছু।কিভাবে বন্ধ ঘরে আমাদের অসুবিধাকে নিমেষে তিনি সমাধান করে গেলেন?মা তো ভয়েই অস্থির।ভাইকে বুকে জড়িয়ে মা ভয়ে কাঁপতে লাগলেন,রাতে কি অঘটন ঘটবে কে জানে,বাবা গম্ভীর হয়ে বসে রয়েছেন,ভয়ে ভয়ে আমি ভাবছি সকাল কখন হবে,আমি কখন বাড়ি যাব।
*************************
   কখন সকাল হয়েছে জানিনা।ঘুম ভেঙে উঠে দেখি বাবা দেওয়ালে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে,মাও ভাইকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে,আমি সবাইকে ডেকে তুললাম।ভগবানের অশেষ দয়ায় ভালোয় ভালোয় নির্বিঘ্নে  রাতটা কেটে গেছে এবার বাড়ি ফিরতে পারলে বাঁচি।বাইরে বেরিয়ে কুঁয়োতলায় জল তুলতে গেলাম,হাত-মুখ ধুয়ে তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে।জল তুলতে গিয়ে দেখি বালতির নীচেতে মস্ত বড়ো একটা ফুঁটো।বাবা বুঝতে পেরে বললেন-"ওরে গোরু এইজন্যই সব জল পরে যাচ্ছিল।ভীতু কোথাকার।সবাইকে ভয় পাইয়ে দিল।"আমি তাই লজ্জায় দূরের দিকে তাকালাম।দেখলাম কলাগাছে একটা লালপাড় শাড়ি জড়ানো আছে।অন্ধকারে দেখে যে কেউ মনে করবে কোনো মানুষ।আমি আর কোনো কথা বললাম না।বৃদ্ধাকে বাবা কোথা থাকে ডেকে নিয়ে এলেন।তিনি হেসে হেসে বললেন-"আমার কাঁচ ভাঙা হ্যারিকেনটা কাল রাতে বাতাসে খুব জ্বালিয়েছে না তোমাদের?কি করব বলো গরিব মানুষ তো কিনতে পারিনেকো।তাই কাল কুপিটা দিয়ে এসেছিলাম।"এতক্ষণে জানা গেলো সব সত্যি ঘটনা।আসার সময় বাবা তাকে তিনশো টাকা দিয়ে এলেন।বৃদ্ধা নিতে চাননি,তাও বাবা জোড় করে দিয়ে এলেন এবং বললেন ওই টাকায় বালতি কিনে আনতে।বুড়ো মানুষ,ফুঁটো বালতিতে কত জলই তুলবেন।আমরা তাকে বিদায় জানিয়ে বেড়িয়ে এলাম।আসতে আসতে বাবা বললেন কাল রাতে ওনাকে কি না কি ভাবছিলাম বল।বলেই বাবা হাসতে লাগলেন।কিন্তু আজও আমি সে রাতের ঘটনা মনে পড়লে ভয়ে কেঁপে উঠি।
**************************
রচনাকাল : ২৬/১/২০২০
© কিশলয় এবং সায়ন্তী সাহা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 11  China : 30  France : 4  Germany : 6  India : 221  Ireland : 19  Russian Federat : 10  Saudi Arabia : 3  Sweden : 21  Ukraine : 16  
United States : 390  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 11  China : 30  France : 4  Germany : 6  
India : 221  Ireland : 19  Russian Federat : 10  Saudi Arabia : 3  
Sweden : 21  Ukraine : 16  United States : 390  
© কিশলয় এবং সায়ন্তী সাহা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
আতঙ্ক by Sayanti Saha is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৭৭৫৬৮