• ১০ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা (১১২)

    ২০২০ , সেপ্টেম্বর



শিক্ষা তো অন্তহীন
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখিকা : মুসকান ডালিয়া
দেশ : India , শহর : Dankuni

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ১৬ টি লেখনী ৩৫ টি দেশ ব্যাপী ১২৭৪৬ জন পড়েছেন।
জীবনের প্রথম কথা বলা শিখিয়েছিলেন মা। ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন।  বাবার হাত ধরেই প্রথমবার হাঁটতে শিখেছিলাম। তাই বাবা মা ই আমার প্রথম শিক্ষাগুরু। প্রথমে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলি। যেটা শুনলে কমবেশি মনে হয় সবাই উপকৃত হবেন।

তখন আমার ক্লাস ফোর হবে। অঙ্কে আমি বরাবরই ভীষণ কাঁচা। আজ গড়গড় করে গল্প লিখতে পারলেও অঙ্কে আমার আজও অনীহা। বরাবরই পাশ নাম্বার তুলতেই  আমি গলদঘর্ম হতাম। তা সেবার হলো কি- অঙ্কে পেলাম মাত্র ১৬..হায়রে কি লজ্জা!!১০০ তে ষোল ভাবা যায়? আমি এতটা খারাপ করে ফেলেছি যে লজ্জায় কারোর সামনে বের হওয়া ভুলে গেলাম। সারাদিন নিজেকে ঘরে আটকে রাখতাম। স্কুলের পথেও পা দিলাম না এক সপ্তাহ। মা অনেক বোঝালেও আমি বাইরে যাইনা।

একদিন দুপুরে খেয়ে মায়ের পাশে শুয়ে ছিলাম।  মা বললো একটা গল্প শুনবি?আমি মাথা নাড়লাম।  মা শুরু করলেন তার সেই গল্প। যা আজও আমি ভুলতে পারিনি।-- 

"'এক বানর মা ছিলো। সে তার বাচ্চাদের খুব ভালোবাসতো। একদিন একটা বাচ্চা কিভাবে মারা গেল। কিন্তু বানর মা তাকে ফেললো না। বুকে করে ধরে রইলো তার মৃত বাচ্চাকে। লোকালয়, তাই মানুষ জনও চেষ্টা করলো বানরটাকে বোঝাতে, যে তার বাচ্ছা মারা গেছে।  মৃত বাচ্চাটাকে কেড়ে নিতে গেল। কিন্তু বানর মা তাকে কিছুতেই ছাড়লোনা। ওই ভাবেই রয়ে গেল বেশ কিছু  দিন। অন্য বাচ্চারা তার মায়ের ভাবমূর্তি দেখে নিজেরাই সরে গিয়ে বাঁচতে শিখে গেল। বেশ কিছুদিন পর।মানুষ দেখতে পেলো - মা বানরটার পেটের একটা অংশ পচে গিয়েছে। মৃত বাচ্চাটাও পচে গলে পড়েছে মায়ের কোল থেকে। মা বানরটাও অসুস্থ। শেষে সেও আর বাঁচলোনা।"

গল্প শেষ। কিন্তু এর থাকে আমরা প্রথমতঃ শিক্ষা পেলাম যে -কোন জীব, সে পশু হোক বা মানুষ  তার সন্তানের জন্য চাইলে নিজের জীবনও বিপন্ন করে দিতে পারে। দ্বিতীয়ত- যে চলে যায় তাকে ধরে রাখা মুর্খামি। বানরটা যদি তার মৃত সন্তানকে ছেড়ে দিতো, তাহলে তার অন্য সন্তানরা মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত হতোনা। আর মা বানরটাও বেঁচে থাকতে পারতো। কিন্তু যা নেই তাকে আঁকড়ে ধরতে গিয়ে যা আছে তাও অবহেলায় হারিয়ে  ফেললো।

গল্পের মাধ্যমে মা আমায় বুঝিয়ে ছিলেন- আমি শুধু অঙ্ক নিয়ে ভেবেছি। কিন্তু বাকি বিষয় গুলোর কথা ভাবিনি। হলামই অকৃতকার্য। তাতেই কি সব শেষ?  হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে থাকার নাম জীবন নয়। উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন। সাহিত্য আসলে আমার অস্থি মজ্জা রক্তে মিশে আছে। আমার বাবার অনেক বড় একটা লাইব্রেরি ছিলো। তাতে কত রকমের বইপত্র। কোরান, হাদিস, বোখারী শরীফ থেকে শুরু করে কমিকস, রুপকথা উপন্যাস সবই ছিল। বাবা নিজেও লিখতেন, তবে তা ধর্মবিষয়ক। মা সব ধরনের বই পড়তে শুনতে খুব ভালবাসতেন। মুসলিম হওয়া সত্বেও আমার মা আমাকে বহ্মবৈবর্ত পুরাণ, মহাকাব্য রামায়ণ কিনে দিয়েছিলেন।  বাবাকে একদিন বাইবেল পড়তে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম -" তুমি বাইবেল পড়ছ কেন? ওটা তো আমাদের ধর্মগ্রন্থ নয়"। আব্বা হেসে বলেছিলেন - "বই কখনো পর আপন হয়না। সব পড়ে দেখতে হয়। কোন ধর্মের কি কি মিল অমিল আছে জানা দরকার"।

সব ধর্মকে সমান শ্রদ্ধা করতে আমি আমার বাবা মায়ের কাছ থেকেই শিখেছি। শিখেছি কিছু সয়ে কিছু প্রতিবাদ করতে। আজ মা নেই। বাবাও নেই। তারা দু-জনেই তারার দেশে। কিন্তু তাদের শিক্ষা আজও আমার মনিকোঠায়। জীবনে অনেক শিক্ষক পেয়েছি। সকলে সমান শ্রদ্ধেয়  আমার কাছে। শ্রদ্ধা জানাই সেই সব শিক্ষক / শিক্ষিকাদের। যারা আমাকে সঠিকভাবে জীবনের পথে চলতে  সাহায্য করেছেন।সকলকেই সন্মান জানাই।
রচনাকাল : ৩০/৮/২০২০
© কিশলয় এবং মুসকান ডালিয়া কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 6  China : 15  France : 2  Germany : 2  India : 177  Iran, Islamic R : 1  Ireland : 10  Russian Federat : 7  Saudi Arabia : 11  Sweden : 12  
Ukraine : 3  United Kingdom : 8  United States : 195  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 6  China : 15  France : 2  Germany : 2  
India : 177  Iran, Islamic R : 1  Ireland : 10  Russian Federat : 7  
Saudi Arabia : 11  Sweden : 12  Ukraine : 3  United Kingdom : 8  
United States : 195  
লেখিকা পরিচিতি -
                          মুসকান ডালিয়া ১৯শে নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি একজন গৃহবধূ এবং দুই সন্তানের জননী। এইসবের পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চাতেও সমান আগ্রহী। লেখালেখি তাঁর ভীষণ প্রিয়, তাঁর লেখার চেষ্টা সেই ছোট্ট বয়স থেকে। স্কুলের দেওয়াল পত্রিকায় প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন ছোট ছোট পত্র-পত্রিকায় তিনি লেখালিখি করেন। তাছাড়া তিনি নানারকম অনলাইন পত্র-পত্রিকাতেও লেখেন। লেখালিখির পাশাপাশি তিনি কনে সাজানো আর ঘর সাজানোর শখ রাখেন।

-"যদি প্রেরণা দাও, এক আকাশ গল্প লিখতে পারি।
সাহিত্য তোমাকে যে ভালবাসি ভারি।" 
                          
  • ১০ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা (১১২)

    ২০২০ , সেপ্টেম্বর


© কিশলয় এবং মুসকান ডালিয়া কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
শিক্ষা তো অন্তহীন by Muskan Dalia is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৯১৩৬৮৫
fingerprintLogin account_circleSignup