• বিষয় ভিত্তিক সংকলন

    বিশ্ব পরিবেশ দিবস - ২০২০


বৃক্ষ কথা
নন্দিতা সরকার
দেশ : India , শহর : সোনারপুর

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , এপ্রিল
প্রকাশিত ১৬ টি লেখনী ৩১ টি দেশ ব্যাপী ১২৪৮৪ জন পড়েছেন।
Nandita Sarkar
আমি পরাজিত সৈনিক। কষ্ট করে লড়াই করে বেঁচে থাকা কাকে বলে এই দূষিত নাভিশ্বাস পরিবেশে তা বুঝছি।
     ও আমার পরিচয় দেওয়া হয়নি, আমি তমাল । বৃক্ষরাজির বয়স্ক সদস্য। প্রতিকূল পরিবেশে নিজের ও আমার বৃক্ষ পরিবারকে বাঁচাতে কঠিন লড়াই আমাদের। 
  আধুনিক ভোগবাদ এ দুর্বিসহ অবস্থা । আমার ওপর দিয়ে বছরে এক থেকে দুবার সাইক্লোন তার থাবা বসিয়ে যাচ্ছে। আমার বৃক্ষ সৈনিকরা তা  প্রতিহত করে  নিজেরা ক্ষত বিক্ষত হয়ে শিকড় উপড়ে  ভূলুণ্ঠিত।
  এখন কদিন আগেই বুলবুল , তারপর উম্পুন গেলো। আমার ডালে ধাক্কা খেয়ে রোজ যে শালিক গুলো কিচির মিছির করে গল্প করতো তাদের মধ্যে অনেকেই গত হয়েছে ঝড়ে । সব দোষ পড়লো আমাদের নিরীহ গাছ গুলোর ওপর ।
   ভাবলো না আমরাই প্রতিহত করেছিলাম বলে দেশলাই বাক্স এর মত বহুতল গুলো রক্ষা পেলো।
আমার সকাল শুরু হয় নবদিত সৌরপ্রভা র সাথে ছাতার ,বটের ,শালিক,টিয়া , ময়না , টুনটুনি,চড়ুই এদের কলকাকলিতে, তার সাথে ভোরের বাতাস খেলা করে। কিন্তু এটাও বেশি দিন থাকবে কিনা জানিনা। আমি কথা বলি বাতাস, মেঘ রোদ্দুর, বৃষ্টি র সাথে।
  ইদানিং দেখছি আমার, কালো ধোয়ায় নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে,আমার পাতা গুলো কালো ধোয়ায় জর্জরিত।কাল কজন আমাকে ক্ষত বিক্ষত করে পেরেক এ এক নেতার হোডিং টানালো বন মহোৎসব এর।হাসিও পায় নাম কিনতে গিয়ে আমাকেই আহত  করে আমাদের লাগানোর প্রচার চাইছে,বন দপ্তর গাছের চারা ও দেবে।লক্ষ লক্ষ টাকা দেখিয়ে অরণ্য সপ্তাহে গাছ লাগিয়া ফটো ও তোলা হবে।কিন্তু তাদের বাঁচিয়া রাখতে পলকা বেড়া দেওয়া হবে কিন্তু তাদের বাঁচাতে জল দেওয়া হবে না।।এই খেলা দেখতে দেখতে আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারিনা।
বাতাস এসে টোকা দিল তার ভাবনা কে,মেঘ ও দূর থেকে তমাল রাজি কে চিন্তিত দেখলো। ওরা ও যে ওর বন্ধু।

এই বন্ধুত্ব অমলিন।।মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি মাটি বাতাস এর সখ্যতা তাই তমাল রাজি র সাথে।ওরা ও যে ওকে ছুয়ে যায়।
        মেঘ রোদ্দুর সব সময় ওকে সতেজ রাখে  ।মাটি মা যে ওকে  শোনিতধারার মত তার সঞ্চিত জলে ওকে পুষ্ট রাখে ।কিন্তু মাটি মা কেও ও তো ভূমিক্ষয় থেকে বাঁচাতে সদা সচেষ্ট। আর মাটি মা ও যে জানে, তমাল রাজি মানুষের মতো বিশ্বাসঘাতক নয়!
          গাছ কেটে নগরায়ণ , দুর্গা স্বরুপিনী কন্যা ভ্রূণ  হত্যা ,এমন কি সবচেটে শিক্ষিত কেরল এ   আগে কুকুর  ছিল ,বর্তমানে গর্ভবতী হাতি মা কে  ও আনারসের মধ্যে বারুদ ঢুকিয়ে যে ভাবে নৃশংস ভাবে মারল  সে নজির দেখলে বোঝাই যায় মান হুস ছাড়া সব কিছুই আছে।
    এবার বাতাস এসে তমাল রাজির কানে কানে বললো আমি ভালো নেই ।তোমাদের নীলকন্ঠ এর মত কার্বন ডাই অক্সাইডের গ্রহণ প্রাণী কূল  জীবনী শক্তি অক্সিজেন  দান এর কথা ভুলে যাচ্ছে সবাই। তাই তো আমাকে ও দূষিত করে কার্বন মনোক্সাইড এর পরিমাণ বাড়িয়ে আমাকে ও কলুষিত করছে। আর বাতাসে ক্রমাগত  মিথেন গ্যাস এর পরিমাণ বাড়িয়ে তৈরি করছে   বিশ্ব উষ্ণায়ন।
    তমাল ও বললো -_ দেখ তার ফলে কি হচ্ছে -- উষ্ণতা এত বাড়ছে পৃথিবী মায়ের -  যা দুর্বিসহ , অ্যান্টার্কটিকা র বরফ গোলে জল স্তর বাড়ছে   তাতে অনেক দ্বীপ নিমজ্জিত হবেই ,ওদিকে সমুদ্র তলের উষ্ণতা ও বেড়ে যাচ্ছে তাতে তৈরি হচ্ছে সাইক্লোন ।।এত পরিমাণ এ সাইক্লোন হলে আমরা গাছ র মাথা পেতে সবাই কে রক্ষা করতে চাইলেও নির্মম সাইক্লোন আমাদের প্রাণ কেড়ে , ডাল পালা ছিন্ন ভিন্ন করে আমাদের কে ধরাশায়ী করে দিচ্ছে।কোটি কোটি গাছের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ফলে যে শুন্যতার সৃষ্টি করছে টা কেউ পূরণ ও করছে না।একটা গাছ এর মৃত্যু মানে পাঁচটা চারা গাছ লাগালে তবেই  এই ক্ষতি থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে পারা।

বাতাস শুনলো,দূর থেকে মেঘ ও শুনলো।।বলল ওদের কে ...জানো! আমি তো ভেসে ভেসে বেড়াই ।মেঘ তৈরি করতে ও বৃষ্টি এনে পৃথ্বী কে শস্য শ্যামলা করতে তোমাদের মতো গাছেদের দান কেউ মনেও রাখে না। ।    ভেসে ভেসে যেতে যেতে আজ সুন্দর বনের ম্যানগ্রোভ গুলোর দুর্দশা তার সাথে প্রাণী কূল ও মানুষ দের দুর্দশা দেখছিলাম। ম্যানগ্রোভ এর পরিমাণ কমে গেছে তাই ওখানকার প্রাণী বিশেষ করে মহান রয়াল বেঙ্গল এর অবস্থা ও শোচনীয়। ম্যানগ্রোভ এই সব ঝড় ঝঞ্ঝা থেকে সুন্দরবন কে টিকিয়ে রেখেছে পরোক্ষ ভাবে তার তিলোত্তমা কেও।কিন্তু  মানুষের বৃক্ষনিধন এ আর ভোগবিলাসের আত্ম তৃপ্তি তে তাও ধ্বংসের মুখে।
  কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি ও তাদের ঝরঝর ধারায় কথা শুরু করলো।বৃষ্টি র সৃষ্টি ও তো তমাল রাজির জন্য ।তাই 

    সেও এসে বললো আমি এসে রুক্ষ মরু কে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করি,দিন এ দিনে মানুষ এত পরিমাণ এ জল নষ্ট করছে যে একটা সময় ওরা খাবার জল পাবে না , ভুনিম্নস্থ জলতল নিচে নেমে এক সময় সেই জলভান্ডার ও নিঃশেষিত হবে,বোকারা ভাবে বৃষ্টি হলেই তার পূরণ হয়।1 লিটার খাবার  জল তৈরি হতে  দশ বছর লাগে।।দিনের পর দিন সেই জল তুলে চাষ ,বিনা প্রয়োজনে গাড়ি ধা,রাস্তা ধোয়া, ট্যাঙ্কি ছাপিয়ে জল নষ্ট।।ভুগতে হবে ভুগতে হবে।।দেখছ না তার জন্য আর্সেনিক দূষণ হচ্ছে।
       কবে বুঝবে এরা।। বৃষ্টি র  ঘার্তি তে ফসল ফলছেনা।মরুকরণ বাড়ছে। সব কিছুর সমাধান ..   ....সবুজায়ন ।নিজেরাও ছাঁদে বা পড়ে থাকা অনাবাদি জমি তে বনসৃজন করে তবেই এর এক মাত্রা সমাধান। 
  মেঘ  তার বৃষ্টির কথা শুনে বলল কিছু মানুষ আছে যাদের জন্য আজ ও গাছ লাগাতে  সেই সব মানুষ রা সদাই ব্যস্ত।ভালো পাহাড় এর কমল চক্রবর্তী,চলো গাছ লাগাই এর সমাজবন্ধু রা,এমন অনেক মানুষ যারা গাছ এর জন্য নিবেদিত প্রাণ ...ওদের হাত ধরে মানুষ এগোবে ।দেখবে অরণ্য সপ্তাহে  সব কচিকাঁচার দল, কলেজ স্কুল গুলো  কিছুটা হলেও এগোবে।
    তমাল এবার তার মনের কথা ও ব্যক্ত করলো।
    পথিক বন্ধু ছাতার আসন তলে এসে বসলে আমিও নিজেকে ধন্য মনে করি।আমি স্বপ্ন দেখি বন মহোৎসবে সবাই পৃথিবী কে সবুজে ভরে দিক। কোটি জনসংখ্যার      দেশে    পরিবেশ দিবস,অরণ্য সপ্তাহ  এ ওরা বনমহোৎসব করুক মাথা পিছু অন্তত একটা গাছ লাগিয়ে।সেই উৎসবে আমরা তমাল রাজি মেতে উঠবো।কিন্তু সারা বছর ই যদি সবাই কিছু গাছ লাগায় ,ফল খেয়ে তাদের বীজ গুলো ফেলে না দিয়ে রাস্তা র পাশে ,রুক্ষ জমিতে ,পরিত্যক্ত জায়গায় ছড়িয়ে দেয়,বর্ষা কালে আমার বৃষ্টি বন্ধু আর মাটি বন্ধু তাকে অঙ্কুরিত করে অনেক মহীরুহ তৈরি করবে।
   চিৎকার করে তমাল... মানুষ ভাব।।সময় এসেছে ভাবার ।এখনও সময় আছে  পৃথিবীকে শ্যামল সুন্দর করার। টবে ও যদি সেই চেষ্টা করো আর আমাদের কথা ভালো করে ভাব তাহলে তোমাদের আগের প্রজন্মের কাছে এই অস্থির পৃথিবী কে রেখে যাবে না। করাল গ্রাসে ওদের শৈশব কেমন চুরি করেছ তোমরা তোমাদের আধুনিকতার ছোঁয়ায়, খোলা আকাশ ওরা দেখে না,বাতাস এ ওরা নিশ্বাস নিতে পারে না। ওদের কে ওদের পৃথিবী ফিরিয়ে দাও।আমাদের ছায়া য় ওরা ওদের তৃষিত  প্রাণ কে তৃপ্ত করুক।

তমাল রাজি র সাথে সাথে বিশ্ব চরা চর বৃষ্টির সাথে সাথে গেয়ে ওঠে ....

"হৃদয়ে মন্দ্রিল ডমরু গুরু গুরু,
ঘন মেঘের ভুরু কুটিল কুঞ্চিত,
হল রোমাঞ্চিত বন বনান্তর–
দুলিল চঞ্চল বক্ষোহিন্দোলে   মিলনস্বপ্নে সে কোন্‌ অতিথি রে।
সঘনবর্ষণশব্দমুখরিত   বজ্রসচকিত ত্রস্ত শর্বরী,
মালতীবল্লরী কাঁপায় পল্লব করুণ কল্লোলে–
কানন শঙ্কিত ঝিল্লিঝঙ্কৃত॥"
রচনাকাল : ৫/৬/২০২০
© কিশলয় এবং নন্দিতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 1  Canada : 29  China : 21  Europe : 3  France : 4  Germany : 2  India : 300  Ireland : 47  Japan : 2  Saudi Arabia : 6  
Sweden : 12  Ukraine : 6  United Kingdom : 3  United States : 363  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 1  Canada : 29  China : 21  Europe : 3  
France : 4  Germany : 2  India : 300  Ireland : 47  
Japan : 2  Saudi Arabia : 6  Sweden : 12  Ukraine : 6  
United Kingdom : 3  United States : 363  
পরিচিতি -
                          নন্দিতা সরকার ১লা জানুয়ারি দক্ষিণ পরগণা জেলার সোনারপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি একজন গৃহবধূ হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষকতার সাথেও যুক্ত। এর পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চাতেও সমান আগ্রহী। কবিতা লেখা তাঁর ভীষণ প্রিয়, এর সাথে সাথে তিনি স্কুলে গীতি আলেখ্যও লেখালেখি করেন। কিশলয় পত্রিকার মাধ্যমেই তাঁর প্রথম অনলাইন পত্রিকায় লেখালেখি করার আত্মপ্রকাশ। 
                          
© কিশলয় এবং নন্দিতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
বৃক্ষ কথা by Nandita Sarkar is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.



অতিথি সংখ্যা : ১০৬৭৩৬৩৬
fingerprintLogin account_circleSignup