আকাশের দিকে তাকিয়ে রমেন ভাবতে থাকে আজকের দিনটা কেমন কাটবে।
গতকাল খুব একটা বেশী রোজগার সে ক্রতে পারেনি।রিক্সা চালিয়ে কতটুকু
রোজগারই বা হয়, কাল আবার রোববার ছিল – ষ্টেশনে মানুষজনের যাতায়ত
এমনিতেই এমনিতেই খুব থাকে। এখন আবার রিক্সা সংখা খুব বেশী বেড়ে গেছে,
খুব প্রতিযোগীতা, রমেনের মনে হয় বেঁচে থাকার জন্য কত কষ্টই না করতে হয়।
ঘরে ছেলেটার অসুখ, মেয়েটার আবার স্কুলের পরীক্ষার ফী বাকি। ফী না দিলে
পরীক্ষাতে বস্তেই দেবে না। মাঝে মাঝে মনে হয়, মেয়েটার পড়াশুনো ছাড়িয়ে দিতে।
কিন্তু পড়াশুনো না জানার জন্য তাকে আজ যা কষ্ট করতে হচ্ছে, এটা মনে
পড়লেই মেয়ের পড়াশুনো ছাড়ানোর কথা সে ভুলে যায়।
দূরে ষ্টেশনে মানুষজনের ভিড় দেখেই রমেনের মনটা খুশি হতে ওঠে। সে ভাবে
আজ তার বেশ রোজগার হবে। তাড়াতাড়ি রিক্সার প্যাডেল এ চাপ দিয়ে ষ্টেশনের
কাছে এসে দেখে যে, ট্রেন যাতায়ত বন্ধ হয়ে গেছে এবং সেই কারনেই নিত্যযাত্রী
মানুষদের ভিড়। দূরে কোথায় যেন নদীর উপর রেল সেতু ভেঙে পড়েছে। এই শুনে
যেন বজ্রাহত হয় রমেন। এমনিতেই অভাবের সংসার, কোনমতে খাবার সংস্থান
করতেই দিন থেকে রাত হয়ে যায় – সেখানে আবার একটি রোজগারহীন দিন। ঘরে
ছেলেটার অসুখ- তাকার অভাব, রমেন যেন কিছুটা অস্থির হয়ে পড়ে।সে ভেবে
উথতে পাড়েনা কিভাবে ছেলের জন্য ডাক্তারের ব্যবস্থা করবে, মেয়ের পরীক্ষার ফী
জোগাড় করবে। এই অবস্থায় সে বাড়ীর পথ ধড়ে।
রাস্তার মধ্যেই সে হটাৎ দেখতে পায় একটা ব্যাগ পড়ে আছে। সে ব্যাগটা তুলে
দেখে ব্যাগের মধ্যে প্রায় দশ হাজার টাকা আছে। সে ভীষণ অবাক হয়ে এদিক
ওদিক তাকায়, কিন্তু কাউকে দেখতে পায়না। তখন সে ভাবে এ টাকা যদি তার
হত, রমেনের চোখের সামনে তার ছেলে,মেয়ের মুখ গুলো ভেসে ওঠে। কিন্তু
পরক্ষনেই তার মনে হল সে ভুল কাজ করছে। তার চেয়ে ব্যাগটি মালিকের কাছে
পৌছে দিলে কিছু বকশিস পাওয়া যাবে, এই ভেবে সে ব্যাগটি বাড়ি নিয়ে আসে,
এবং ঠিক করে যে, পরদিন ব্যাগটি নিয়ে সে থানায় যাবে।
কিন্তু বিকেল বেলায় রমেন হটাৎ দেখে যে তার বাড়িতে পুলিশ এসে হাজির। সে
জিঙ্গেস করে কি ব্যাপার। তখন পুলিশের বড়বাবু বলেন যে, একজন ভদ্রলোকের
টাকা ভর্তি ব্যাগ চুরি গেছে। তিনি একটি রিক্সা করে ষ্টেশন যাচ্ছিলেন। ষ্টেশনে
পৌছে দেখেন রেল বন্ধ। খানিক বাদে তার মনে পড়ে যে তার ব্যাগটি নেই। বাইরে
এসে তিনি সেই রিক্সাওয়ালাকে খোঁজ করেন। কিন্তু তার খোঁজ পাননি। আর সেই
জন্য রমেনের বাড়িতে পুলিশ সার্চ করতে এসেছে। তখন রমেন জানায় যে সে রাস্থা
থেকে ব্যাগটি কুড়িয়ে পেয়েছে। কিন্তু, পুলিশ তার কোনো কথা না শুনে তাকে
অ্যারেস্ট করে নিয়ে চলে।
রমেনের বুক ঠেলে অব্যাক্ত কান্না বেড়িয়ে আসে। সে ভাবে যে ব্যাগটি ফিরিয়ে দিয়ে
সে কিছু বকশিস আসা করেছিল। তার পরিবর্তে তার ভাগ্যে জুটল এই অন্যায়
বিচার। চোখের সামনে বাড়ি,ছেলে,মেয়ে, স্ত্রী সব ঝাপসা হয়ে গেল। সে ভাবে এখন
কতইনা রোজগারহীন দিন কাটাতে হবে। বিনা রোজগারে তার পরিবারটা পুরো শেষ
না হয়ে যায়!
রচনাকাল : ২৪/১১/২০১১
© কিশলয় এবং অর্ক দেব ব্যানার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।