তোর মেয়েটা একদম তোর মায়ের প্রতিচ্ছবি । বৌদিকে বিয়ের দিনে ঠিক এমনি লাগছিল। তোর মেয়ে আজ গোলাপী বেনারসি পড়েছে ,বৌদিরটা ছিল লাল রঙের। মেয়ের বিয়ের আসরে পিসিমণির কথায় ঘোর কাটলো তমালিকার।। আজকালকার মতো আগেকার দিনের মায়েরা বিয়েতে মেয়ের সিঁথিতে সিঁদুর দান দেখবে এমনটা কেউ ভাবতে পারতো? আঠাশ বছর আগে তমালিকার বিয়েতে বিধবা মা ছিলেন আড়ালে। মাকে লাল শাড়িতে দেখার বাসনা কোনোদিনই পূর্ণ হলোনা তমালিকার । বিয়েতে জোড় করে মাকে পাশে রাখার দুঃসাহসিক ভাবনা তখনকার প্রেক্ষাপটে ধোপে টেকেনি। ব্যর্থ হয়েছে ।
মাকে জন্মাবধি সাদা শাড়িতে দেখতে তমালিকার ভালো লাগতোনা।বারো বছরের তমালিকা দোলের দিন লাল গোলাপি রঙিন আবির ছড়িয়ে দিয়েছিল মায়ের গায়ে মুখে ।কি সুন্দর লাগছিল মায়ের মুখখানা। লজ্জায় সংকোচে মায়ের মুখটা রাঙা হয়ে উঠেছিল।মা যেন চরম দোটানায়, মনের সুপ্ত বাসনার পরিপূর্ণতায় একঝলক আনন্দ মুখে চোখে ফুটে উঠলে সে তো পাপ অনাচার অসামাজিক । তবুও নিজেকে এভাবে কখনোই কি আবার দেখতে মন চায়না? আলতো মেজাজে মা বলেছিল ,,,কি করলি? এসব আমার বারণ। আবার স্নান করতে হবে।কাউকে বলিসনা। ঠাম্মা জানলে বকা খাবি। সাধপূরণ করতে গিয়ে তমালিকা মাকে কি কষ্ট দিয়ে ফেলল? সেই অনুশচোনায় বহুকাল দগ্ধ হয়েছে তমালিকা। মা যেদিন চলে গেল মাকে ফুল মালা চন্দনের সাথে নিজের আলমারির নতুন একখানা লাল কাপড় জড়িয়ে দিয়েছিল তমালিকা। ঝাপসা চোখে লাল কাপড়ে মাকে তমালিকা ওভাবে আর দেখতে পারছিলনা। তখন অন্তঃসত্ত্বা তমালিকা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। না, মার মুখাগ্নি সে করতে পারেনি। মায়ের জামাই করেছিল। তমালিকার মেয়ের বয়স এখন তেইশ। বিয়ের সাজে মেয়েটাকে দেখতেই সংকোচ করছে তমালিকা । যদি নজর লেগে যায় ।তাছাড়া আজ তার মাকে যেন দেখতে পাচ্ছে সে মেয়ের মাঝে। কনের সাজে সিঁদুর পরা মেয়ের মুখটার মধ্যে তমালিকা দোলের দিনের মায়ের মুখটা দেখতে পাচ্ছে। কি অপূর্ব সুন্দর সেই মুখখানা। সিঁদুর আবির সব মিলেমিশে একাকার । কখনও জীবনে কিছু উপলব্ধি হয় পরম তৃপ্তির, তমালিকাও আজ তৃপ্ত। মায়ের সাথে মেয়ের অবয়বের এমন মিল কই সে তো আগে কখনো খুঁজে পায়নি? এমনি বোধহয় হয় স্বপ্ন আর বাস্তব যখন সাঁকো বাঁধে সময় নদীর ওপারে ।
রচনাকাল : ২২/৩/২০২১
© কিশলয় এবং অর্পিতা চক্রবর্তী কণ্ঠ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।