বীরাঙ্গনা
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : অর্পিতা চক্রবর্তী কণ্ঠ
দেশ : India , শহর : কোলকাতা

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , মে
প্রকাশিত ১৭ টি লেখনী ২৭ টি দেশ ব্যাপী ১২০০৩ জন পড়েছেন।
ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগদানের ইচ্ছে থাকলেও মধ্যবিত্ত পরিবারের তিয়াসার সেই স্বপ্ন পরিবারের প্রবল বাঁধার সামনে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে। সাধারণ বাঙালি মধ্যবিত্ত হয়ে স্বপ্ন দেখবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সরকারি কেরানি না হয় লক্ষ্মীমন্ত গৃহবধূ হওয়ার ।এসব আকাশে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন কি মানায়? মা, কাকিমা, ঠাম্মা সবাই "মিলে সুর মেরা তুমহারা" । ছাঁচের আদলে জীবন যাপন । ভাবনারাও যে লাগামহীন হতে পারে তা ভাবাও যে অপরাধ । স্বপ্ন বুকে চেপেই বাবা মায়ের মানসিক ব্ল্যাকমেল এর কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হল তিয়াসা ।বিয়ে ,হ্যাঁ বিয়ে হলো প্রফেসর সুবিমল গুহর সাথেই। বাবার পছন্দের পাত্র। ভাগ্যিস শিক্ষক ইনি।যদি ছোটভাইটার মতো লেফটেন্যান্ট হতো তাহলে এ বাড়ির জামাই হতে পারতোনা। তবে শ্বশুরমশাই জামাইয়ের ভাই সেনাবাহিনীতে আছে বলে বিয়েতে আপত্তি করেনি।

আজ তিয়াসার কোলে তিতলি।মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পিতৃহীনা। শোকাতুর বাড়ির আকস্মিক পট পরিবর্তনে সে ভীত, জেম্মার কোল ছাড়ছেনা। মাকে কেমন অন্যরকম লাগছে। আর বাবা নাকি মরে গেছে ।টিভিতে বাবার কথা বলছে বারবার, যুদ্ধে নিহত শহীদ সুকোমল গুহ । মুখস্থ হয়ে গেছে শুনে শুনে সারাদিন এক লাইন। টিভিটা কেউ বন্ধ করে দিল। না আজ কার্টুন দেখতে ইচ্ছে করছেনা তিতলির,মা কেন এত কাঁদছে? বাবা মরে গেলে কি আর আসেনা? ঘুম পাচ্ছে খুব তিতলির।

তিতলি কে তিয়াসা খুব ভালোবাসে। তিয়াসার ছেলে মেয়ে নেই । তাই তিতলিই ওর জগত । দেওরের মেয়ে যেন তারই । যুদ্ধে দেওরের প্রাণটা গেল। কিন্তু তনুশ্রীর দিকে তাকানো যাচ্ছেনা। জ্যান্ত লাশ হয়েগেছে সে সুকোমলের মৃত্যূর পর থেকেই।কুড়ি বছর বয়সেই এ বাড়ির বৌ হয়ে আসে তনুশ্রী । স্বামীর উৎসাহেই স্নাতক ও এবছর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে সংসার সন্তান সব সামলে। সেই প্রাণোচ্ছল মেয়েটা আজ পাথর।না , তিয়াসা জানতোনা যে সে তনুশ্রীকে এতটা ভালোবাসে। সে কিছুতেই তনুশ্রীকে এভাবে দেখতে পারছেনা।অসহ্যকর।
অনেক বুঝিয়েও তনুশ্রীকে স্বাভাবিক করতে পারছেনা তিয়াসা । তনুশ্রীর বাপের বাড়ি বলতেও কিছু নেই। মা বাবার মৃত্যূর পর এক খ্রিষ্টানকে বিয়ে করে গোয়ায় চলে যায়, তনুশ্রীকে দিদার কাছে রেখে। দিদা ছোট বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেয় নাতনির । তারপর আর বাঁচলেননা।

দেওরের চাকরিটা প্রাণঘাতী জানলেও ঈশ্বরে বিশ্বাস করে সবাই ভেবেছিল, ঠিক ফিরে আসবে ঘরের ছেলে ঘরেই। এরকম গভীর রাতের বেলায় সীমান্তে শিবিরে শত্রুপক্ষের অতর্কিত হামলায় দেওরের প্রাণটা যে হারিয়ে যাবে তা কি কেউ জানতো? দুঃখে রাগে রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে তিয়াসার। সে যদি আজ সেনাবাহিনীতে থাকতে পারতো, শত্রুশিবিরে যুদ্ধ বিমান নিয়ে আক্রমণ করে নিজের মনের জ্বালা মেটাতো। তনুশ্রীকে তিতলি হঠাৎ বলল, মা তুমি পারবেনা বাবাকে যারা মেরেছে ওদের মেরে ফেলতে? বদলা নিতে? কি বলছো সোনা? বাবার বন্ধুরা করবে ওসব,মা কি ওসব পারে বোকা মেয়ে। পিসিমা তিতলিকে একরকম চুপ করিয়ে দিলেন । এসব কথা ভারি অপছন্দের তার। ছোট্ট তিতলির কথাগুলো যেন তনুশ্রী আর তিয়াসার মনের কথা।ওরাও চায় ভারতবর্ষ তার বীর সেনার মৃত্যূর বদলা নেয় । শত্রু পক্ষকে যেন তছনছ করে দেয়। সেই দলে যেন তারাও থাকতে চায় । দেশমাতার বীরাঙ্গনারা। তিয়াসা তনুশ্রীর কানে কানে বলে ওঠে পারবি তিতলির বাবার শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে? আমার তো সে বয়েস নেই। তিতলিও খুব ছোট। তুই তো পারিস । দেখনা একবার ভেবে। তনুশ্রী তিয়াসাকে এতদিনে এই প্রথমবার কষে জড়িয়ে ধরলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, দিদি আমি পারবো? তিয়াসা বলল, ঠিক পারবি। কাল আমি ফোনে কথা বলবো সুকোমলের সহকারীদের সাথে। কিভাবে তুই সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে পারবি ,সে বিষয়ে ওনাদের পরামর্শ নেব। তুই আপ্রাণ চেষ্টা করবি ,নিশ্চয়ই পারবি।তিতলিকে আমি সামলে নেব। তুই প্রিয়া সেমওয়ালের কথা শুনেছিলিনা? সুকোমল গতবছর ছুটিতে বাড়ি এসে বলেছিল ওর কথা।লেফটেন্যান্ট অঙ্কিত শর্মার স্ত্রী । 2012 সালে অরুণাচল পাল্টা অভিযানে স্বামীর মৃত্যূর পর 26 বছর বয়সী এই মহিলা নিজের চার বছরের শিশুকন্যাকে সামলে নিজের স্বামী ও মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কমিশনার অফিসার হয়েছিলেন তিনি। মনে আছে তার গল্পটা? হ্যাঁ ,দিদিভাই মনে আছে। আমিও যদি পারি সুকোমলের মত দেশের সেবায় নিজকে নিয়োজিত করতে তবেই শান্তি পাবো। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো। সুকোমল চলে গিয়ে আমাকে বদলে দিয়েছে ।আমি এতদিন সুকোমলকে ভালবাসতাম। দেশের জন্য শহীদ হওয়ার পর থেকে ও আমার কাছে দেবতা । আমার দেশকে আমি আগে এতো ভালোবাসতে পারিনি ,বরং রাগ হতো।স্বামীকে কাছে না পেয়ে ।কিন্তু সুকোমলের বলিদান আমি ভুলতে পারবোনা। ওর দৃষ্টিভঙ্গিতে আমার দেবতার সাথে দেশকেও আমি সেবামূলক পুজো করবো। দিদি তুমি তিতলিকে এসব গল্প শোনাবে। আমি চাই যেন তিতলি দেশকে ওর বাবার মতোই ভালোবাসতে পারে। ঠিক বলেছিস ছোটো। আমার মতো মেয়ে সন্তান বলে পারিপার্শিক চাপে যেন দেশমাতার সেবার স্বপ্ন থেকে পিছিয়ে আসতে না হয় তিতলিকে। সমাজের সর্বস্তরের প্রতিটি ঘর থেকে যেন দেশসেবার মানসিকতায় তিতলিরা বীরাঙ্গনা হয়ে উঠতে পারে। তবেই তো দেশমাতা সুরক্ষিত থাকবেন। দেশ তো পুরুষ মহিলা সবার। তাই দেশের সুরক্ষা ও সেবায় মেয়েদেরও সামাজিক বিধিনিষেধ উল্লঙ্ঘন করে এগিয়ে আসতে হবে।

জয় ভারত মাতার জয় ????
রচনাকাল : ১০/১/২০২১
© কিশলয় এবং অর্পিতা চক্রবর্তী কণ্ঠ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 1  Canada : 4  China : 1  France : 4  Germany : 4  India : 193  Ireland : 39  Russian Federat : 3  Saudi Arabia : 3  Sweden : 106  
Ukraine : 6  United States : 231  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 1  Canada : 4  China : 1  France : 4  
Germany : 4  India : 193  Ireland : 39  Russian Federat : 3  
Saudi Arabia : 3  Sweden : 106  Ukraine : 6  United States : 231  
© কিশলয় এবং অর্পিতা চক্রবর্তী কণ্ঠ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
বীরাঙ্গনা by Chakraborty Arpita Kantha is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৭৭৪৪৭