শিক্ষানবিশ
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : অর্পিতা চক্রবর্তী কণ্ঠ
দেশ : India , শহর : কোলকাতা

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , মে
প্রকাশিত ১৭ টি লেখনী ২৭ টি দেশ ব্যাপী ১২৫২৮ জন পড়েছেন।
ক্লাস টিচারের হঠাৎ ফোন, সুনন্দার অস্বস্তি যেনো বাড়িয়ে দিল। মেয়ের স্কুল থেকে যে আগে কখনও ফোন আসেনি এমন নয়, তবে এবারের ফোনটা অন্যরকম। মেয়েকে জানানো বারণ ।রীতিমতো গোপনীয় সাক্ষাত শ্রেণীশিক্ষিকার সাথে। অজানা আশঙ্কায় সুনন্দা প্রমাদ গুনতে লাগলো। একেবারে জরুরি তলব আগামীকাল ওনার সাথে দেখা করতে হবে। 

অফিস থেকে আগে বেড়িয়ে যেতে হবে,আজকেই ম্যানেজ করে রাখল সুনন্দা। বেসরকারি অফিস কাজ হারানোর ভয় রয়েই যায়। অকাল বৈধব্য আর্থিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে তাকে। তার উপর একমাত্র কন্যার ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার খরচা চালানোর জন্য জমাপুঁজি যথেষ্ট নয় বলেই কাজের জগতে আসা সুনন্দার। মেয়েকে খুব একটা সময় দিতে পারেনা সে এখন আর। বাড়িতে ফিরে বাজার থেকে রান্না অফিস ঘরসংসার সামলে ক্লান্ত হয়ে পড়ে রোজ। সিম্মির সাথে রবিবার ছাড়া তেমন কথাই হয়না। সিম্মির এখন ক্লাস নাইন। বড়ো হয়েছে, এখন আর সুনন্দার চোখ রাঙানি বড়ো বেশি ধোপে টেকেনা। বাবার অকালপ্রয়াণ সিম্মিকে জেদি আর উদ্ধত করে তুলেছে। সবকিছু বুঝে ও তাই মেয়ের সাথে কম কথা বলে।বললেই এক কথা দু কথায় বেজায় অশান্তি । কি জানি আজ স্কুলে গিয়ে কি নালিশ শুনতে হবে এই মেয়ের জন্য । গত কাল বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় সিম্মি আজ ছুটিতে বাড়িতে।

সুনন্দা স্কুলে সময়মতো পৌছে শ্রেনীশিক্ষিকার অপেক্ষায় ।
- "সৌমিতার বাবার মৃত্যু কতদিন আগে হয়েছে?" 
ক্লাস টিচারের প্রশ্নের উওরে সুনন্দা জানালো, "গতমাসে একবছর হলো"।
- আপনার সাথে মেয়ের সম্পর্ক কেমন?
- মন্দের ভালো। ছোটো থেকেই শাসন আমি করতাম, আদর ওর বাবা । ও চলে যাওয়ার পর যাতে সিম্মি বাবার কথা ভেবে ভেঙে না পরে তাই আমি শক্ত থাকি। ওর বাবাকে নিয়ে কোন স্মৃতিচারণা ওর সামনে করিনা। এমনকি কান্না পেলেও আড়ালে কাঁদি । শুরুর দিকে ও খুব ভেঙে পড়েছিল। ওকে সামলাতেই আমি আরো কঠোর হতে শুরু করি। ও হয়তো মনে মনে ভাবত তখন বাবা না মরে আমি মরলে বাঁচত ও।
- আপনাকে যে জন্য ডেকেছিলাম। সৌমিতার কালকের পরীক্ষার খাতা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি আমরা। আমরা ভাবিওনি যে ওর মতন পড়াশুনোয় ভালো মেয়ে এরকম নিজের পায়ে কুড়ুল মারবে।
- কি করেছে ও? খাতা ক্যান্সেল হলো কেনো? টুকলি করেছে? আমি ঘেন্না করি এইসব শঠতা।
- আসলে ম্যাডাম আপনার মেয়ে টুকলি করেনি। ওর বন্ধুকে করার সুযোগ করে দিয়েছে । নিজের খাতা খুলে রেখে অবিকল নকল করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল । আশ্চর্য কি জানেন মেয়েদুটো পড়াশুনায় ভাল ,তাও কেন যে এমন দুর্বুদ্ধি হলো। ওদের পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাচ্ছে জেনে আমার কোথাও ভেতর থেকে একটা কিছু নাড়া দিয়েছিল।মনে হয়েছিল সৌমিতা মেধাবী ছাত্রী । মনামীকে উত্তরপত্র দেখানোর ঝুঁকি কেন নিলো জেনেবুঝে? মনামীর দিদি কিছূদিন আগে মারা যায় । মাত্র দু বছরের বড়ো । ওকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে জিগেষ করে জানলাম ও সমব্যথী । পরীক্ষার আগে মনামীর দিদির আকস্মিক মৃত্যুর কারণে ও পড়াশুনোয় মন দিতে পারেনি। সৌমিতার বাবার মৃত্যুও পরীক্ষার আগে হঠাৎ হওয়ায় ওর পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পেরেছিল। তাই সাহায্য করেছিল , চায়নি ও ফেল করুক। সৌমিতার এই অকপট স্বীকারোক্তি আমার মনকে ছুঁয়ে গেলো ।যদিও পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। তবে হেড দিদিকে অনুরোধ করেছি ওদের প্রোমোশন টা যেন হয় ।আগের রেজাল্ট ওদের ভালো আছে যেহেতু।

সুনন্দার সহপাঠী চন্দ্রার মুখটা মনে পড়ছে আজ খুব। পরীক্ষায় চন্দ্রার টুকলি করা দেখে সহ্য করতে না পেরে শিক্ষিকার কাছে নালিশ জানায় সে। দিদিমণি যথাসম্ভব বিশ্রীভাবে হেনস্থা করেছিলেন চন্দ্রাকে। অপমানিত লজ্জিত চন্দ্রা বাড়ি গিয়ে আত্মঘাতী হয় । সুনন্দা সহপাঠীর মৃত্যুতে হতবাক হয়ে গিয়েছিল । তবে সহপাঠী তার চোখে অপরাধী হয়ে রয়েগেছিল।আত্মহত্যা সুনন্দার মনে করুণার জায়গা তৈরী করতে পারেনি। পরীক্ষায় নকল করাকে সুনন্দা এতকাল অন্যায় হিসেবেই দেখত। কিন্তু আজ মেয়ের এই কাণ্ড নিয়ে শ্রেনীশিক্ষিকার মানসিকতা তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিল। সে মা হয়েও এক মুহূর্তের জন্য হলেও ভেবে নিয়েছিল যে সিম্মি হয়তো টুকলি করেছে। কিন্তু ম্যাম ওর উপর আস্থা হারাননি। মানুষ কোন প্রেক্ষিতে কি কাজ করে তার খবর আমরা নেই না। শুধু ঘটনার নিরিখে শাস্তি দিয়ে থাকি। আজ স্কুলে এসে যেন সুনন্দা জীবনের পাঠশালায় ক্লাস নিলো। প্রকৃত শিক্ষিকা এভাবেই শিক্ষা দান করেন। সত্যিই আমরা সারাজীবন বিভিন্ন মানুষের থেকে কত কিছু শিখি। বাড়ি গিয়ে সিম্মিকে কিছু বলতে নিষেধ আছে, তাই বলবেনা সুনন্দা ।তবে মন তো অনেক না বলা কথা স্নেহ ভালোবাসার পরশে বুঝিয়ে দেয়,,,,তাই না?
রচনাকাল : ৩১/৮/২০২০
© কিশলয় এবং অর্পিতা চক্রবর্তী কণ্ঠ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 12  China : 25  Europe : 1  France : 3  India : 211  Ireland : 18  Japan : 1  Russian Federat : 5  Saudi Arabia : 7  Sweden : 12  
Ukraine : 4  United States : 166  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 12  China : 25  Europe : 1  France : 3  
India : 211  Ireland : 18  Japan : 1  Russian Federat : 5  
Saudi Arabia : 7  Sweden : 12  Ukraine : 4  United States : 166  
© কিশলয় এবং অর্পিতা চক্রবর্তী কণ্ঠ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
শিক্ষানবিশ by Chakraborty Arpita Kantha is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪২৭৩৫২