।।১।।
– অবিনাশ বাবু আছেন?
– উফঃ শান্তিতে খেতেও দেবেনা! কে মশাই? হ্যাঁ বলুন, কি চাই?
– হ্যাঁ ইয়ে স্যার, আমি জমরাজ। আপনাকে নিতে এসেছি স্যার।
– দূর্গা পূজোর নাটকের রিহার্সাল এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে? তা এই তালপাতার সেপাই চেহারা নিয়ে তোমায় জমরাজ কে বানিয়েছে?
হবেনা হবেনা! ভাগো এখান থেকে!
– নাটক নয় স্যার। আমি হলাম গিয়ে দি জম রাজ, এম.ডি, পাতাল। একদম অরজিনাল। এই দেখুন কার্ড।
– এম.ডি টা ঠিক?
– ম্যানুয়াল ডেলিভারী। ফ্রম মর্ত্য টু পাতাল। সেই আপনাদের অনন্তকাল ধরে এই কাজটা করে আসছি।
– আপনি অরিজিনাল জমরাজ?
– ইয়োরস ট্রুলি, স্যার।
– এমা, বাইরে দাঁড়িয়ে কেনো? ভেতরে আসুন প্লীজ। আসলে আজকাল চাঁদার এত জুলুম, বুঝলেন কিনা, তাই একটু বাজিয়ে নিচ্ছিলাম আরকি।
– নো ইস্যুজ স্যার। আপনি তাহলে একটু কাইন্ডলি তৈরি হয়ে নেবেন?
– তৈরি? আপনি বিশ্বাস করবেন না জমস্যার, সেই কবে থেকে রেডী হয়ে বসে আপনার জন্য, ওদিকে আপনার আসার নামই নেই!
– আসলে ট্রাম্প আসার পর আমাদেরও ওয়ার্কফোর্স কমে গেছে তো, ভিসা সমস্যা, বুঝতেই পারছেন।
– তাই ভাবছিলাম, এরকম ইনটার্ন হায়র করতে সি.ই.ও কেন এল। সব জমদূত পিঙ্কস্লিপ?
– ডিমান্ড সাপ্লাইয়ের মার্কেট স্যার। কি করব বলুন। তিন মাসের মাইনে দিয়ে দরজা দেখাতে হলো। এখন সব বোঝা আমার আর চিত্রবাবুর ঘাড়ে।
উনি ডিজাইন করেন, আমি ইম্প্লিমেন্ট।
– হ্যাঁ সব মার্কেটেই চাপ পড়ছে। এই দেখুন না, এই আপনাদের ইন্টর্নাল রি-আরেঞ্জমেন্টের চক্করে দু-দুখানা জ্যোতিষীর পেটে লাথি পড়ল।
– কিরকম?
– আরে আমাদের শ্রীভগা জ্যোতিষী, বটতলায় বসত, কুষ্টি দেখে বলেছিল আমার মার্চের উনিশে মৃত্যু, অপঘাতে। তিন পিস আংটিও দিল,
যাতে না মরি। আমার তো প্রাণের মায়া ঘুচেছে অনেকদিন হল। আংটি ফাংটি পড়িনি। সেই হিসেবে ট্যাক্স সেভিংসও কিছু করিনি।
কুড়ি তারিখ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি দিব্বি আয়নায় রিফ্লেকশন দেখা যাচ্ছে! পাবলিকের ঠ্যাঙানি খেয়ে শ্রীভগা ভেগেছে।
সুন্দর বটতলায় গুছিয়ে বসেছিল বেচারা।
– আরেকজন জ্যোতিষীর কি হল? তাঁর দেওয়া এক্সপাইরি ডেটও এক্সপাইর করে গেছে?
– না তা ঠিক নয়, শ্রীগোবিন্দ জ্যোতিষী আজই ডেট দিয়েছেন পরলোকগমন করার। হিসেবমত আপনিও আজই এলেন। জয় শ্রীগোবিন্দ মহারাজ!
তবে হ্যাঁ, একটু গন্ডগোল করেছেন আর কি হিসেবে।
– হিসেবে গন্ডগোল মানে?
– না আসলে উনি তারা-নক্ষত্রের ইন্টিগ্রেশন-ডিফারেনসিয়েশন করে বলেছেন, অপঘাতে মৃত্যু আমার। অথচ দেখুন, আমি কি সুন্দর
টিভিতে সারেগামাপা দেখতে দেখতে, আমের আঁটি চুষতে চুষতে মরব। জাকগে, ওটুকু এরর ইন্টিগ্রেশন এর কনস্টান্ট ধরে নেব আরকি।
– হ্যাঁ মানতেই পারেন। তাহলে আপনি তৈরি তো? হাতে আর দু’মিনিট আছে আপনার।
– দু’মিনিট আছে? বেশ, তাহলে আরেকটা আম খেয়ে নিই, কি বলেন? আপনাদের পাতালে তো ম্যাংগো প্লান্টেশনের স্কোপ নেই।
আমার আবার আমের ওপর একটা অসম্ভব উইকনেস আছে, বুঝলেন তো।
।।২।।
– নেক্সট!
– অবিনাশ দত্ত। ফিফটি ওয়ান।
– অবি ... অবি ... নাশ ... অবিনাশ ... দে ... দাস ... দত্ত। অবিনাশ দত্ত। কই দেখি সামনে আসুন।
– এইখানে?
– হাফ পা পেছন। হ্যাঁ। সোজা তাকান। হমম, কজ অফ ডেথ: অপঘাত। তাই তো?
– চিত্রস্যার একটু মনে হয় মিসটেক হয়ে গেছে। কজ অফ ডেথ অপঘাত হবেনা।
– জমবাবু তো তাই লিখেছেন।
– ওয়ার্ক স্ট্রেসে হয়তো অন্য কারুরটা আমার ঘাড়ে এসে পড়েছে। একটু রিভিউ করে নেবেন প্লীজ?
– জমালয়ের ফার্স্ট আওয়ারেই ডি.আর.এস নিচ্ছেন অবিনাশবাবু? আর ইউ শিওর আপনি অপঘাতে মড়েননি?
– কনফিডেন্ট চিত্রস্যার।
– বেশ, তাহলে বলুন আপনার ভার্শনটা।
– জমবাবু বললেন দু-মিনিট হাতে টাইম আছে, আমি আম খাওয়া শুরু করলাম। খেতে খেতে দি এন্ড। অভিয়াসলি এরমধ্যে
অপঘাতের কোনো সীন নেই।
– বেশ। এবার তাহলে জমবাবুর স্ক্রিনশটের ডকুমেন্টগুলো দেখা যাক?
– আলবাত!
– ফার্স্ট, এই আপনি আমটা তুললেন, সেকেন্ড, আম খাওয়া শুরু করলেন, বাঃ এতদূর তো আপনার কথা অনুযায়ী মিলে যাচ্ছে!
– মিলতে বাধ্য!
– নেক্সট, টি-মাইনাস থ্রী সেকন্ড, চাকলা দুটো শেষ করে নামালেন। টি-মাইনাস ওয়ান- এই যে, এই হলো ঘটনা।
– অপঘাত নয় তো?
– এই স্ক্রিনশটটায় দেখুন, এই আপনার হাত থেকে আঁটিটা স্লিপ করছে, টি-মাইনাস পয়েন্ট ফাইভ, আপনি আঁটির পেছনে ডাইভ মারছেন।
এই দেখুন, ব্লাড প্রেশর একশ নব্বই, পালস রেট পয়েন্ট এইট সেকেন্ডে সিক্সটি সেভেন থেকে সোজা ওয়ান হান্ড্রেড থার্টি নাইন।
– কিন্তু…পালস, ব্লাড প্রেশর, এগুলো তো ঠিক অপঘাত নয় চিত্রবাবু! মেডিক্যাল সেকশনে ঢুকবে তো স্যার তাহলে।
– অবিনাশবাবু। আপনি হয়তো ভুল আপিল করেছিলেন, কিন্তু মশাই আপনার কপাল ভালো মানতেই হবে।
– আত্মার কপাল স্যার?
– লিটারেলি নেবেন না প্লিজ। আপনার মশাই বিশাল লাক। আম-ঘটিত মৃত্যুকে আমরা একটা স্পেশাল সেকশন অফ অপঘাত
হিসেবে ট্রিট করি। আর সেই ক্যাটাগরিযে আমাদের স্পেশাল একটা স্কীম আছে।
– এখানেও স্কীম?
– হ্যাঁ। আম খেতে খেতে মৃত্যু অনেক পুণ্যের কাজ মশাই। এগারো জন্ম ধরে একপায়ে দাঁড়িয়ে কঠিন সাধনা করলে টুয়ালফথ
লাইফে এরকম ভাগ্য হয়। আর তার রেসাল্ট হলো – স্ট্রেট স্বর্গযাত্রা।
– কি বলছেন স্যার!
– আর নয়ত কি! স্বর্গে বসে বসে অপ্সরাদের গান শুনবেন, আর টপাটপ আম খাবেন। আপনাদের হিমসাগরের ডাবল সাইজ, ট্রিপল মিষ্টি।
– আম পাওয়া যায় স্বর্গে! আহঃ বাঁচালেন মশাই! থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
– কংগ্রাচুলেশন্স অন ইওর প্রমোশন টু দি আম হেভেন, মিস্টার দত্ত।
রচনাকাল : ১/৬/২০১৭
© কিশলয় এবং Punnag কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।