শিক্ষক দিবস
আনুমানিক পঠন সময় : ৫ মিনিট

লেখিকা : যুথিকা দেবনাথ
দেশ : India , শহর : মালদা

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , মে
প্রকাশিত ৩৮ টি লেখনী ৩১ টি দেশ ব্যাপী ১৮৫৩৫ জন পড়েছেন।
                 শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। কারিগর যেমন কাঁচা মাটির তাল নিয়ে ধীরে ধীরে অতি সযত্নে একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তি তৈরী করেন, শিক্ষক ও তেমনি অতি সযত্নে অক্লান্ত পরিশ্রমে আমাদের কাঁচা মনের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করেন এবং ধাপে ধাপে আরও শীর্ষে ওঠার পথকে মসৃণ করে দেন। আমরাও একসময় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপন করে  কর্মজীবনে পা বাড়াই। শিক্ষকেরাও তাঁদের ছাত্র ছাত্রীকে কৃতী সফল হতে দেখে গর্বিত বোধ করেন।

              জন্মের পর প্রথমেই আমরা পিতামাতার মুখ দর্শন করি। তাঁদের স্নেহচ্ছায়ায় আমরা একটু যখন বড় হ ই, আমাদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটতে থাকে তখন পিতামাতাকেই আমরা প্রথম শিক্ষক রূপে পেয়ে থাকি। তাঁদের নিরন্তর অনুপ্রেরণায় আমাদের অপরিপক্ব মনে শিক্ষার বিকাশ হতে থাকে। পিতামাতাই প্রথম আমাদের ভালো-মন্দের বিচার, অন্ধকার-আলোর তফাত, রুচিশীল আচার, আচরণ,মার্জিত ভাষা শেখানো, কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক তা সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেওয়া, গুরু জনকে সম্মান করা ইত্যাদি খুব নিপুণভাবে আমাদের মনে এঁকে দেন। আমাদের চারিত্রিক গঠন এভাবে ধীরে ধীরে দৃঢ় হতে থাকে। এঁদের হাত ধরেই আমাদের শিক্ষার বুনিয়াদের সূচনা। আমার মতে এঁরাই আমার জীবনের প্রথম পথদ্রষ্টা এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।

                  এরপর শুরু হয় আমাদের আক্ষরিক অর্থাৎ পুঁথিগত বিদ্যা শিক্ষা। আমাদের হাতে প্রথম লেখনী তুলে দেন আমাদের পিতা মাতা ই। বর্ণপরিচয় হতে শুরু করে একে একে শব্দ শিক্ষা, তারপর শব্দ বিন্যাসে বাক্য রচনা এভাবেই কদম ফেলে আমরা এগোতে থাকি।একটা বয়সের পর শুরু হয় বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন। তখন আমরা বিষয়ভিত্তিক অনেক শিক্ষাগুরুকে  পাই। তাঁদের অক্লান্ত চেষ্টায় আমরা অনেক  কিছু শিখে শ্রেণীর পর শ্রেণী উত্তীর্ণ হয়ে বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করি। তারপর স্নাতক থেকে স্নাতকোত্তর স্তরেও বিভিন্ন শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন করে সফল হয়ে কর্মজীবন শুরু করি। এই শিক্ষকেরাই হলেন আমাদের জীবনে আলোর দিশারী ও পথপ্রদর্শক। শৈশব হতে এঁদের মাধ্যমে একটু একটু করে আমরা যে শিক্ষা সঞ্চয় করি তা আমাদের আগামী দিনের পাথেয়।

                 এছাড়া লেখা পড়ার পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন শিল্প,ললিতকলা অঙ্কন ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার জন্য আমাদের এইসব বিষয়ের শিক্ষকের শরণাপন্ন হতে হয়। এঁরা ছাড়া আমাদের শিক্ষা পরিপূর্ণতা লাভ করে না। সব ই ভাসা ভাসা এলোমেলো থেকে যায়। তাই শিক্ষকেরাই হলেন ছাত্রজীবনের পরিপূরক।

              রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ, বিদ্যাসাগর, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম এবং আরও অনেক মহাপুরুষ ও মনীষী আছেন যাঁরা আমাদের পথপ্রদর্শক। এঁরা তাঁদের উজ্জ্বল লেখনী ও অমূল্য বাণীর মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার পথ মসৃণ করে দিয়ে গিয়েছেন। এঁরা সমগ্ৰ মানবজাতির শিক্ষক। এঁদের অনুসরণ করে আজ আমাদের সমাজ অনেক উন্নত হয়েছে। সভ্যতার  পথে মানুষ অনেক এগিয়ে গেছে। মানুষকে সাম্যপ্রাণ, বিবেকবান, মহানুভব হতে শিখিয়েছে। সমগ্ৰ বিশ্বের শিক্ষকেরা তাঁদের হাতে সযত্নে তৈরী কত কীর্তিমান, বরেণ্য, বীর নেতা  উপহার দিয়ে গেছেন। ইতিহাসের পাতায় তাঁদের নাম কনক দ্যুতির মতো শোভা পাচ্ছে। মানুষের হৃদয়ে এই অমূল্য উপহার গুলোর মালা গাঁথা রয়েছে। এইভাবেএকজন ছাত্র আবার ভবিষ্যতে একজন শিক্ষক রূপে অনেক ছাত্র ছাত্রী গঠন করেন।

                 আমাদের দেশে, সমাজে এমন অনেক সহৃদয়,আত্মত্যাগী মানুষ আছেন যাঁরা তাঁদের অর্জিত অর্থের প্রায় সমস্তটুকুই পথহারা,অনাথ, ভবঘুরে শিশুদের জন্য ব্যয় করেন। তাদের জীবনধারনের সমস্ত সামগ্ৰী জোগান দিয়ে তাদের জঠরজ্বালা নিবারণ করে ধীরে ধীরে বিদ্যাশিক্ষায় ব্রতী করান এবং একে একে তাদের লেখাপড়া, আচার-ব্যবহার , আদব -কায়দা,ভাষাজ্ঞানে দীক্ষিত করে এই মানুষেরাই তাদের চলার পথে তাদের হাত ধরে আলোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। এঁরাই হচ্ছেন সর্বহারা শিশুদের ভগবানরূপী শিক্ষক।এই শিক্ষকদের অসীম চেষ্টা, অক্লান্ত পরিশ্রম, অধ্যবসায়ের ফসল আগামী দিনের  অনেক কৃতী, সফল ছাত্র। আমাদের সমাজে এইরকম শিক্ষকের জ্বলন্ত উদাহরণ অনেক আছে । এঁদের কাছে আমাদের সমাজ কৃতজ্ঞ।

                 শিক্ষকেরাই হলেন সমাজ সংস্কারক, মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শক্তি, শীর্ষে ওঠার অনুপ্রেরক,শিক্ষার আলোর পথের দিশারী,অন্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন পৃথিবীকে অন্ধকার গর্ভ হতে মুক্ত করার যোদ্ধা। যেসব গ্ৰামেগঞ্জে এখনো শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি, যেখানকার মানুষ দুবেলা দুমুঠো অন্নের সংস্থানও ঠিকমত করতে পারে না, তাদের কাছে লেখাপড়াটা দুর অস্ত। কিন্তু অনেক সমাজসেবী শিক্ষক আছেন যাঁরা আগে সেইসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবার দুহাত বাড়িয়ে দেন। তাদের সঙ্গে থেকেই প্রথমে সাহায্য দানে তাদের মুখে হাসি ফোটান। তারপর ধীরে ধীরে বিদ্যাশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে তাদের সে পথে এগিয়ে নিয়ে যান।এই শিক্ষকদের অবদানের ফলে সেইসব অনুন্নত গ্ৰামে শিক্ষার আলো ধীরে ধীরে প্রসারিত হচ্ছে। এঁদের কাছে শ্রদ্ধায় আমরা মাথা নত করি।

                 মানুষের শিক্ষার কোন শেষ নেই। আমরা আজীবন- কখনও প্রকৃতির কাছে থেকে, কখনও কোনো প্রানীর, কখনও বা কোনো কীটপতঙ্গ সকলের কাছ থেকেই কিছুনা কিছু শিক্ষা পেয়ে থাকি। একটু অর্ন্তদৃষ্টি দিয়ে দেখলেই সেটা অনুধাবন করা যায়, যেমন আকাশ আমাদের উদার হতে শেখায়,বাতাস শেখায় দাতা হতে,জল শেখায় কালিমা ধৌত করে পবিত্র হতে। তেমনি পিপীলিকা শেখায় একতাবদ্ধ হতে, সারমেয় শেখায় বিশ্বস্ত হতে, মৌমাছি শেখায় পরিশ্রমী হতে। আমাদের চারপাশে এরকম অনেক শিক্ষার উদাহরণ রয়েছে। শুধু আমাদের দরকার সেগুলো অন্বেষণ করে সংগ্ৰহ করা এবং সেই শিক্ষা সর্বান্তকরণে গ্ৰহন করে নিজেদের জীবন সেই শিক্ষার পথে চালিত করা এবং অপরকেও সেই শিক্ষা বিতরণ করে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। তবেই আমরা সমাজকে আদর্শ ও সর্বাঙ্গসুন্দর করে গড়ে তুলতে পারব।
৫ই সেপ্টেম্বর আমাদের ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি স্বর্গীয় ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিন । তিনি ছিলেন একজন স্বনামধন্য, প্রথিতযশা মহান শিক্ষক। তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  শুরু করে পৃথিবীর নানা দেশের বহু খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে  প্রভুত সুনামের সাথে অধ্যাপনা করেছেন এবং অনেক কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব উপহার দিয়ে গেছেন। তাঁর এই অনবদ্য অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখতেই তাঁর জন্মদিনটিকে শিক্ষক দিবস হিসাবে আনুষ্ঠানিক ভাবে সারা দেশে পালন করা হয়।

                 এই শুভ দিনটিতে আমরাও আমাদের জীবনের সমস্ত শিক্ষকবৃন্দকে আন্তরিক বিনম্র সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই। ছাত্রজীবনে আমাদের যত সুন্দর মধুর স্মৃতি মনের মনিকোঠায় গ্ৰথিত হয়ে আছে,এই দিনটিতে সেই স্মৃতিগুলো রোমন্থন করে দিনটিকে আরও উজ্জ্বল, মাধুর্যপূর্ণ করে তুলি।
রচনাকাল : ৩০/৮/২০২০
© কিশলয় এবং যুথিকা দেবনাথ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 4  Canada : 25  China : 20  France : 2  Germany : 2  Hungary : 6  India : 247  Ireland : 14  Japan : 3  Philippines : 1  
Russian Federat : 14  Saudi Arabia : 3  Serbia : 1  Sweden : 10  Ukraine : 6  United States : 260  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 4  Canada : 25  China : 20  France : 2  
Germany : 2  Hungary : 6  India : 247  Ireland : 14  
Japan : 3  Philippines : 1  Russian Federat : 14  Saudi Arabia : 3  
Serbia : 1  Sweden : 10  Ukraine : 6  United States : 260  
লেখিকা পরিচিতি -
                          শ্রীমতি যুথিকা দেবনাথ একজন গৃহবধূ। জন্ম ৯ ই জুলাই অধুনা বিহারের কাটিহার শহরে। পিতার কর্মসূত্রে পরবর্তীতে মালদহে বসবাস। শিক্ষা জীবন সম্পূর্ণ মালদহ মহাবিদ্যালয় থেকে কলাবিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনে। বিবাহ সূত্রে বর্তমানে দমদম ক্যান্টনমেন্টে স্থায়ীভাবে বসবাস।
       ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি উনি গীটারেও শিক্ষা লাভ করেছেন। স্কুল জীবনে কবিগুরুর কিছু লেখনীপাঠ থেকে সাহিত্যানুরাগের  জন্ম। কলেজ জীবনে প্রবেশের পর কিছু কবিতা ও গল্প রচনা দিয়ে লেখালেখি শুরু।মে,২০২০ থেকে কিশলয় ই-পত্রিকার একজন নিয়মিত লেখিকা। 
                          
© কিশলয় এবং যুথিকা দেবনাথ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
শিক্ষক দিবস by Juthika Debnath is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৩৯০৯