"জন্মেছিলাম যাঁর কোলে,তিনি আমার 'মা',
মায়ের সাথে অন্য কারও তুলনা চলে না।"
আমার মা,আমার জন্মদাত্রী কে আমি আমার
জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক(শিক্ষিকা) বলে মানি।মাকে
জানাই আমার প্রণাম।
"তোমার গর্ভে জন্মে আমি, ধন্য হলাম মা,
তোমার আশীষ বিনা আমি চরম মূল্যহীনা।"
সন্তান ছোটবেলায় জন্মাবার পরে লালিত - পালিত
হয় সর্বপ্রথম মায়েরই কোলে। মায়ের বুকের দুধেই
থাকে সন্তানের পরম তৃপ্তি,উর্বরতা,প্রতিবাদের সাহস,
যোগ্যতা ও স্বাধীনতার আস্বাদ।আমার ক্ষেত্রেও
তার কিছু ব্যতিক্রম হয় নি।
আস্তে আস্তে যখন বড় হতে লাগলাম,ছোটবেলা থেকে সারাক্ষন চোখের সামনে দেখা মুখটাই যে
আমার 'মা'--সেটা বুঝতে শিখলাম।মা সারাক্ষন
আমার সাথে ঘরের কাজ করতে করতে কথা বলা,
খেলা করা,বিভিন্ন ধরণের গান ও কবিতা পাঠ করতেন।আমি তখন প্রায় দুই বছর।প্রথম মুখে বুলি
ফুটলো 'মা'। হামা দিয়ে দিয়ে সারাক্ষন মায়ের পিছনে ছুটতাম।মা কখনো কাজ করতে করতে,কখনো বিশ্রামের সময়ও আমাকে বিভিন্ন
ছড়া বলে বলে শেখানোর চেষ্টা করতেন।আমার
গৃহ-শিক্ষা শুরু হোলো এইভাবে। প্রথম আধো - আধো করে বলতে শিখলাম 'খোকা যাবে বিয়ে
করতে' আর 'Pussy -Cat, Pussy-Cat'. সারাদিন ই
বলতে লাগলাম। আস্তে আস্তে তিন বছরে পা দিলাম।
প্রথম মা পড়ালেন 'অ - আ। আস্তে আস্তে A B C D,
1,2,একে চন্দ্র,দুই এ পক্ষ,ক -খ। আমার জীবনের
সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক আমার মা মুখে মুখেই আমার শিক্ষাদান শুরু করলেন।
আমার হাতে-খড়ি হোলো।সেদিন মা আমার হাতে
দিলেন একটা আদর্শলিপি,স্লেটের সাথে পেন্সিল।
এতোদিন শিক্ষা চলছিলো মুখে।এবার সেটা শুরু
হোলো লেখা দিয়ে।
"মুখে মুখে শিখিয়েছিলে,'জল পড়ে, পাতা নড়ে,
তোমার শেখানো প্রতিটি জিনিস 'স্মৃতির কড়া নাড়ে।"
প্রতিদিন মা পড়াতে বসাতেন।বরাবরই আমি বাধ্য
ছিলাম।ছোটবেলার সব কথাই মনে আছে। মায়ের
কাছে যেভাবে শিক্ষা পেয়েছি,তাতে মায়ের শেখানো
কোনো কিছুই আজও ভুলিনি।মনে পড়ে যায় সব।
তাই আমার আদর্শ শিক্ষক কেবল 'মা'।
কবিগুরুর 'সহজপাঠ'('ছোটো খোকা বলে অ - আ')
কিনে দিলেন মা।সত্যি পড়তে এতো আনন্দ পেয়েছিলাম যে কি বলবো।এখনও পড়তে ইচ্ছে হয়।
'আমাদের ছোটো নদী চলে আঁকে বাঁকে'।এই পড়াগুলো ছিলো সহজ।এবার মা দিলেন 'বর্ণপরিচয়'।বেশ কঠিন। এবার বছর দেড়েক পরে
ভর্তি হলাম স্কুলে।
শুরু হোলো স্কুল- জীবন।মাধ্যমিক পর্যন্ত্য শিক্ষক
কেবল 'মা'।টিচার রাখার স্বচ্ছলতা তখন ঘরে ঘরে
ছিলো না।এখন যুগ বদলেছে।তবে স্কুলে শিক্ষিকাদের ভীষন ভয় পেতাম। সেরকম বন্ধুত্বপূর্ণ
আচরণ কোনোদিনও পাইনি।তাছাড়া শিক্ষিকারাও
একটু বেশি নজর দিতেন, ক্লাসের 1st গার্লের দিকে।সেখানে আমরা ছিলাম পিছনের সারিতে।
বিশেষ কিছু সুবিধা,বা নিজের মতো ভালোবাসা
সেই রকম কিছু তাঁদের ছিলো না।তাই আমার জীবনে আমি সেইরকম বিশেষ ভাবে কোনও
শিক্ষক বা শিক্ষিকার কথাই মনে করতে পারিনা।
সবসময়ই মনে হয় যেভাবে যত্ন, ধৈর্য্য,ভালোবাসা,
সহযোগিতা করে মা পাশে থাকতেন,
সেখানে 'মা'--ছাড়া অন্য কাউকে আমি আমার
'আদর্শ শিক্ষক' মনে করতে পারিনা।
মাধ্যমিক পাশ করার পরে যে উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলে
ভর্তি হলাম,সেখানেও প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতা
সঞ্চয় করেছিলাম।
এরপরে কলেজ,university যত জায়গায় গেছি,
সেইরকম দায়িত্ব র ভূমিকায় আমি কাউকে পাইনি।
তাই আমার কাছে কেবল ই :আদর্শ শিক্ষক আমার
'মা'।
মায়ের শিক্ষা অনুসরণ করে বাস্তব জীবনে চলছি।
এমন কি বিবাহিত জীবনেও মায়ের শিক্ষা অনুসরণ
করে চলছি।কোথাও কোনোদিনও এতোটুকু অসুবিধা হয় নি।
ছোটবেলা থেকে কড়া শাসনের মধ্যে বড় হওয়ার
নিয়মানুবর্তিতাই তার প্রমাণ।
"ছোটবেলার শিক্ষা মাগো আজও কাজে লাগে,
তুমিই আমার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক,মাগো প্রণমি তোমাকে।"
রচনাকাল : ৩০/৮/২০২০
© কিশলয় এবং অসীমা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।