চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিয়েছিলে তোমার প্রিয়তমাকে--
তোমার নববিবাহিতা স্ত্রী কে যাবার সময় বলেছিলে
কিছুদিন বাদেই ছুটি নিয়ে আসবে তুমি।
মাতৃভূমি দেখার অপেক্ষায় তোমার সন্তান তার গর্ভে।
সুখবর টা পেয়ে গর্বে ফুলে উঠেছিলো তোমার বুক।
স্বভাবতঃই না যাবার একটা ইচ্ছা।
তবু দেশের কাজে যাবে বলে তৈরী হয়েছিলে।
আর সন্তান টেনেছিলো পিছন থেকে --
পারোনি উপেক্ষা করতে এই কঠিন,দৃঢ়,পিছুটানকে।
বারবার তাই স্ত্রী কে আসবে বলে কথা দিয়েছিলে।
চলে গেলে নিজের জগতে করতে দেশের কাজ--
মন মানালো প্রিয়তমা একলা ঘরে আজ।
লেগে গেলো ভীষন যুদ্ধ,পেলেনা তুমি ছুটি--
একসাথে করলো যুদ্ধ সকল সৈনিক জুটি।
কার্গিল উপত্যকায় ভারী বুটের শব্দ--
ফোনে রাতে শুধু হোতো কথা,বাকী সময় স্তব্ধ।
প্রিয়তমার উষ্ণ ঠোঁট থাকে তোমার অপেক্ষাতে,
যে ঠোঁটেতে চুম্বন তুমি দিয়েছিলে অনেক আগে।
এমনি করে কেটে গেলো বেশ কয়েকটি দিন,
যুদ্ধক্ষেত্রে র সৈনিক তুমি,মায়ের পেটে আলাদিন।
ফোনের মধ্যে দিতে তুমি যুদ্ধের বর্ণনা--
পেটের মধ্যে উঠত নড়ে ছোট্ট তোমার সোনা।
একদিন এলো তোমার শমন, লাগলো গুলি বুকে--
যুদ্ধক্ষেত্রেই হলে শহীদ,'জয় হিন্দ'--বললে হাসি-মুখে।
চোখের সামনে ভেসে উঠলো,প্রিয়তমার মুখ--
ছোট্ট সোনা আর প্রিয়তমাই ছিলো তোমার সুখ।
চলে গেলে চিরতরে, সকল সুখ ছাড়ি,
শববাহী শকট চড়ে এলে তুমি বাড়ী।
খবর শুনে কেবল তোমার প্রিয়া মূর্ছা যায়,
সবই হোলো অগোছালো,প্রিয়া অসহায়।
কুর্নিশ করে তোমায় প্রণাম করলো প্রিয়তমা,
কানে বাজে বুটের শব্দ সহস্রবার গোনা।
তোমার সন্তান তার গর্ভে,বাবা হবে তুমি--
প্রিয়তমা শপথ নিলো তার পুত্র সৈনিক হবে,যেমন
সৈনিক স্বামী।
তোমার রক্তে পিচ্ছিল হোলো, কার্গিলের পথ--
ভারত মাতাকে রক্ষা করবে নিয়েছিলে শপথ।
বন্দুক আর গুলির লড়াইয়ে হেরে গেল ওরা--
চারিদিকের কালো ধোঁয়ায় নীল আকাশ ভরা।
দেশ তোমাকে রাখবে মনে,করবে সম্মান--
এইদেশমাতার জন্যে প্রাণ দিয়েছো, তুমি যে মহান।
রক্তে ভাসা তোমার শরীর,শান্ত হোলো আজ,
'কার্গিল'দিলো শেষ ছুটি,
তাই নেই কোনো আর কাজ।
রচনাকাল : ১৬/৭/২০২০
© কিশলয় এবং অসীমা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।