বসুমাতার আক্ষেপ
আমরা সর্ব শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানবজাতি। আমরা বড়াই করি আমরা সভ্য আধুনিক দিগ্বিজয়ী। মানুষ শব্দটার মর্ম অতি গভীরতর।মান ও হুঁ শ থাকলে তবেই মানুষ। আমাদের মান খ্যাতি সব আছে ঠিকই কিন্তু হুঁশ আসার সময়টা বোধহয় এবার এসেছে।এক অতি ক্ষুদ্রানু ক্ষুদ্র জীব যাকে স্পর্শ করা যায়না খালি চোখে দেখা যায় না সে এসে আমাদের জীবন ধারাটাই মূহুর্তে ওলটপালট করে দিল। তার মারণ কামড়ের হাত হতে আমাদের নিষ্কৃতি নেই।আজ আমরা আতঙ্কিত ও ঘরবন্দি। রাস্তাঘাট প্রায় শুনশান। পুলিশ প্রশাসন ডাক্তার নার্স সকলে দিশেহারা। অজানা ভবিষ্যত। এক একটি পরিবার সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন।স্ংক্রমনে মৃত্যু হলে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও হয় না।আজ বসুমাতাও বোধহয় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।এত দুর্দশা দেখেও তিনি নীরব অনুপায়। তিনি আক্ষেপ করে বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে এক মর্মান্তিক বার্তা পাঠিয়েছেন
তোমরা বহুকাল ধরে আমার উপর অত্যাচার করেছ।আজ আমি লাঞ্ছিত অবহেলিত কলুষিত। তোমরা আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে তুলেছ। আমি তোমাদের বাঁচা বাড়ার জন্য প্রকৃতিকে কত নিপুণ হাতে সাজিয়েছি। বিশুদ্ধ অক্সিজেন দিতে যে গাছপালা দিয়েছি সেগুলো কেটে তোমরা ইমারত গড়েছ। জীবনের জন্য যে জল দিয়েছি সেই জলকে তোমরা করেছ দুষিত ও অপবিত্র।যার জেরে জলজ প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে।জীব হত্যা করে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করেছ। তোমরা সভ্যতার ধ্বজা উড়িয়ে এগিয়েই চলেছ। একবার ও ভেবে দেখনি এই কর্ম কান্ডের ফলে তোমাদের জীবনে কতবড় বিপর্যয় আস্ তে চলেছে। যন্ত্র দানবের হুঁঙ্কার কলকারখানার দুষনে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তোমরা যে আয়লা দেখেছ ভূমিকম্প বিধ্বংসী ঝড় তুফান দেখেছ সেগুলো সবই আমার বিষাক্ত শরীরের প্রতিক্রিয়া। তবুও তোমরা ক্ষান্ত হ্ওনি।কারণ তোমরা মানবযন্ত্র রোবটে পরিণত হয়েছ
আজ তার মারাত্মক ফলস্বরূপ আমার ই গর্ভজাত এই মারণ ভাইরাস।সে তোমাদের শিক্ষা দিতে শিক্ষক রূপে আবির্ভূত হয়েছে। তার রক্তচক্ষুর শাসানিকে যারা উপেক্ষা করেছে তারা কেউ মারা গিয়েছে কেউ বা মৃত্যু শয্যায়। যারা ভয় পেয়েছে তারা ঘরবন্দি হয়েছে।সংযত ও সংযমী হয়েছে। তারা দাতা হতে শিখেছে। গরীবের মুখে অন্ন জোগাচ্ছে। বিশ্ব বাসী আজ এক মত হয়েছে। শ্রেণী ভেদ জাতিভেদ দলাদলি সব ভুলে এঁকে অন্যের পাশে দাঁড়িয়েছে। আজ প্রকৃতি কত শান্ত।বন্য পশুরাও বোধহয় এখন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে পাখিদের কলতান। ধনী গরীব রাজা ভিখারী সকলের একটাই মত একটাই শপথ লড়াই লড়াই লড়াই। বাঁচার লড়াই বাঁচানোর লড়াই অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই। মৃত্যু মিছিলে সবার একটাই পরিচয় তারা মানুষের শবদেহ।আজ তোমাদের সমবেত লড়াই তাকে প্রতিরোধ করতে পারবে প্রতিষেধক তৈরী হবে কিন্তু তাকে বিনাশ করতে পারবে না। সে পরাজিত হয়ে ফিরে যাবে ঠিকই তবে এই শিক্ষায় যদি তোমাদের চৈতন্য না ফেরে তবে সে অন্যরূপে আরও দ্বিগুন শক্তি সঞ্চয় করে ফিরে আসবে। তখন হয়তো গোটা পৃথিবীটাই ধ্বংস হয়ে যাবে।তাই অতি সাবধান হ ও সতর্ক হ ও।
রচনাকাল : ১২/৫/২০২০
© কিশলয় এবং যুথিকা দেবনাথ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।