তেমন ভাবে পড়ে দেখিনি তোমায়। তেমন ভাবে খুঁজে দেখিনি কান্না, হাসি, দুঃখ, আনন্দ, পেয়ে হারানো কিংবা হারিয়ে পাওয়ার মণি মুক্তো, যা সব ছড়িয়ে আছে তোমার লেখায়। আর পাঁচজন অনুরাগীর মতো বৈঠকি আড্ডায় তোমায় নিয়ে বলতে পারিনি গড়গড়, চড়তে পারিনি তোমার কীর্তি শৃঙ্গ, যেখানে হাওয়ায় ওড়ে, আলোয় ভাসে তোমার ধ্রুপদী আধুনিকতা। সহজ পাঠের পাট চুকিয়ে আধো আধো গলায় – মা গো আমায় ছুটি দিতে বল... তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে কিংবা কুমোরপাড়ার গরুর গাড়ি চেপে আমাদের ছোট নদী পেরিয়ে সেই কবেই তো চলে এসেছি। তারপরেও বলতে বললে আরও একবার বলেছি বহুবার বলা - ভগবান তুমি যুগে যুগে দূত পাঠায়েছ বাড়ে বাড়ে... গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা...নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে... এইসব ভাঙা ভাঙা। ধুতি আর ফতুয়া পরে হয়তো দিব্যি উতরে দিয়েছি রোগের চিকিৎসা, ডাকঘর, খ্যাতির বিড়ম্বনা। ছোট গল্প ক খান বেছে নিতে বললে সূচীপত্র তে দাগিয়ে দিয়েছি দেনা পাওনা, পোস্টমাস্টার, রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা থেকে শাস্তি, সমাপ্তি, মনিহারা। উপন্যাস পড়ার ছাড়পত্র পেতেই বসার ঘরের দেওয়াল আলমারি থেকে টেনে নামিয়ে নিয়েছি নৌকাডুবি নয়তো গোরা। যে বয়সে যা পড়তে নেই, তাই মন টানে বলে পাতা উলটেছি নৌকাডুবি, ঘরে বাইরে, চোখের বালি র। শেষের কবিতা কেন কবিতা হোল না শেষ মেশ সেটা বুঝতেই অমিত আর লাবন্যকে নিয়ে ঘুরে এসেছি শিলং পাহাড়। গীতিনাট্যে গলা মেলানোর দলে ডাক পেলে বার কতক রপ্ত করেছি বটে বাল্মিকি প্রতিভা, চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা। একলা বসে গুনগুন করেছি হয়তো বহুবার শোনা, চেনা জানা তোমার গানের দু চার কলি – সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে... পুরানো সেই দিনের কথা... নাহলে আমার খোলা হাওয়া।, তবে ওই টুকুই। নাঃ তেমন ভাবে মেখে নিতে পারিনি তোমার গল্প কথা, ভাসিয়ে দিতে পারিনি নিজেকে তোমার কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে, ছুঁতে পারিনি সাহিত্যের পরতে পরতে লেগে থাকা তোমার প্রতিভার চকমকি। কিন্তু ওই যে বলে , ঠাকুরকে যদি মন থেকে ডাকতে চাই, তবে মন্ত্র লাগে না। ঠাকুরকে যদি মনে রাখি ওঠা বসায়, তবে আচার লাগেনা ষোল আনা। তাই, তোমায় আমার অনুভবে পেতে কাঠ খড় পোড়াতে হয়নি আমায় তেমন কোনদিন। ছেলেবেলা কবেই হারিয়ে গেছে বড়বেলার বার বেলায় তবু তুমি মনের কাছেই থাকো বলে মন ফিরে যায় কোন এক সকালে। যে সকালের নিঃশ্বাসে চন্দন ধূপ অমলিন... আজ ঠাকুরের জন্মদিন।
রচনাকাল : ১৫/৫/২০২১
© কিশলয় এবং সৌরীন্দ্র বেজ ( সৌরীন) কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।