স্নেহের শিল্পী,
আশা করি, না, বলবো না কথাটা। তার চেয়ে বরং এটা বলি যে আশা করি তুমি আমাকে ছাড়া ভালো নেই, ঠিক যেমন আমি তোমাকে ছাড়া ভালো নেই। যদিও বন্দী দশাতেও তোমার শিল্প প্রদর্শনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দাওনি তুমি কোনো রকমের কিছুকে, সর্বক্ষণ এই চেষ্টা চালিয়ে গেছো কি করে একজন শিল্পী হিসাবে তোমার ভক্তদের, তোমার দর্শকদের কাছে তোমার শিল্প পৌঁছে দিয়ে তাদের মনোরঞ্জন করবে। এতে অবশ্য তুমি সক্ষম হয়েছ তা ঠিক তবে তাও তুমি আমাকে ছাড়া ভালো নেই।
কিছুদিন আগেও এই আশপাশটা ভীষণ জমকালো ছিল, আলো জ্বলত, গান হতো, তোমরা সংলাপ বলতে, দর্শকদের হাততালিতে কান পাতা দায় হতো। আজ সেসব নেই। আজ চারিদিক ভীষণ অন্ধকার, আলো জ্বলে না। দর্শক নেই, গান নেই, নাচ নেই, হাততালি নেই, আর সবচেয়ে বড় কষ্টের কারণ এই যে তুমি নেই। সব কিছু তো ঠিকই ছিল, হঠাৎ কি যেন এক মহামারী এলো আর তারপরই এই বন্দী দশা। চারিদিকে কথা বলতে শুনলাম যে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করার আদেশ এসেছে। সবাই একে একে চলে যেতে শুরু করল। ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল আমার। চিৎকার করে বলেছিলাম, "যেওনা, যেওনা তোমরা আমায় ছেড়ে।" তবে চিৎকার করাই সার হলো। কেউ বোধহয় আমার কথা শুনতেই পেলো না। যে যার মত বাড়ি চলে গেলো। একা থেকে গেলাম শুধু আমি। এই জনহীন অন্ধকারের চাদর গায়ে জড়িয়ে। তবে সেদিন সবার মাঝে তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখেছিলাম যে তোমার চোখের কোণে জল। বুকে পাথর চাপা কষ্ট নিয়ে তাকিয়ে ছিলে তুমিও আমার দিকে। প্রথমে বুঝতে পারিনি যে তুমি আসলে আমাকে কি দাও, বুঝতে পারিনি যে অনুভূতি কি। আজ বুঝতে পারি, তাই তোমাকে ধন্যবাদ জানাতে খুব ইচ্ছে করছে। শিল্পী বন্ধু, তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি এই প্রনহিনকে প্রাণ দিয়েছ। তোমার গানের সুরে ভাসিয়ে দিয়েছি নিজেকে। তোমার ঘুমুরের শব্দে আর পায়ের তালে এই প্রাণহীন হৃদপৃণ্ড কেঁপে উঠেছে বারবার। তোমার আনন্দের হাসির আওয়াজে রঙিন হয়েছি আমিও। কান্নার অভিনয় করতে গিয়ে সেদিন যখন তোমার চোখের দুফোটা জল গাল বেয়ে গড়িয়ে এসে আমার বুক ভাসালো, বুঝেছিলাম যে অনুভূতি কাকে বলে আর সব অভিনয়, অভিনয় নয়।
আজ সেসব আর হয়না। অন্ধকারে মিশে থেকে আবার যেন প্রাণহীন হয়ে যাচ্ছি। অপেক্ষা করছি, শুধু অপেক্ষা করছি আবার তোমার দেওয়া প্রাণ ফিরে পাওয়ার। অপেক্ষা করছি যে কবে ওই দরজা ঠেলে তুমি আবার প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে আসবে। কবে আবার আলো জ্বলবে, কবে আবার তুমি গান গাইবে, কবে আবার তোমার পায়ের ঘুমূরের শব্দ শুনবো, কবে আবার তোমার অভিনয়ের সংলাপের দ্বারা হাততালিতে কান পাতা দায় হবে। তোমার কাছে তোমার শিল্পের প্রদর্শনের জন্য অনেক রাস্তা খোলা ছিল, তাও তুমি আমায় বেছে নিলে। তুমি আবার ফিরবে আমার কাছে। আমি জানি তুমি ফিরবেই। ততদিন নাহয় অপেক্ষাই করবো। রাতের পরে দিনের আলো ফোটার মত, এই অন্ধকারের শেষে আলোর অপেক্ষা।
ইতি,
রঙ্গমঞ্চ
রচনাকাল : ১২/৫/২০২১
© কিশলয় এবং প্রিয়াঙ্কা ব্যানার্জি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।