দেখা…
জি০সি০ভট্টাচার্য্য,বারাণসী
ধড়াম… দমাস… ধাঁই… জোর শব্দ করে অবশেষে একটা সরু গাছে ধাক্কা মেরে মড় মড় মড়াৎ…ও ঝন ঝনাৎ করে গাড়িটা যখন অবশেষে দশ মিনিট ধরে আমাকে হিম সিম খাওয়াবার পরে কোনমতে থামলো তখন আমি আলুর মতন ফুলে ওঠা কপালে হাত বোলাচ্ছি আর গাড়ি ও তার মালিকের চৌদ্দ পুরুষ মানে মনে মনে ভেবে নিয়ে আর কি… উদ্ধার করছি…
‘উঃ… একেই বলে গেরো…
একে দুর্গম সরু এবড়ো খেবড়ো পাহাড়ী রাস্তা আর তেমনি গাড়ির ঝামেলা… ব্রেক ফেল…দুর্গতির একশেষ..
বুকে ও চোট লেগেছিলো বেশ…
তবু ও সামলে নিয়ে রাজপথে নামতে হ’লো আশ্রয় খুঁজতে সেই ঘোর অন্ধকার রাতে… গাড়ির হেডলাইট ভেঙে আলো নিভে গিয়েছিলো… কি করি? কোথায় যাই?
দূরস্থ আর দুর্গম সব এলাকায় গিয়ে নানাধরণের সব দুর্লভ গাছ পাতা আর জড়ি বুটি খোঁজবার আমার এই অখাদ্য চাকরির একটা বেশ গালভরা নাম আছে …ফিল্ড সার্ভেয়ার…মাইনে সামান্যই তবে টি এ ডি এ ছাড়া ও ইনসেনটিভ আছে মানে কমীশন …আরকি…
মনে মনে বললুম… চাকরির না কাঁথায় আগুন…
আর এদিকে আকাশের যা অবস্থা দেখছি তা ও তেমন সুবিধের বলে মনে হচ্ছে না..
এই দুর্গম পাহাড়ী রাজ্য উত্তরাখন্ডের ভেতরে আসাই ঠিক নয় আমাদের মতন শহুরে আর সমতলের বাসিন্দাদের …
কিন্তু চাকরির যা বাজার… কি আর করা?
সরকারী চাকরী পাওয়া তো দিবাস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে…
এখন একটা যেমন তেমন দশ পনেরো হাজার মাস মাইনের প্রাইভেট চাকরী ও যার ভাগ্যে জুটছে সে তো ধরাকে সরা… মনে করছে…
এমন অবস্থা হয়েছে যে হাজার হাজার ছেলে মেয়ে লেখা পড়া শিখে বেকার বসে আছে আর বাপের হোটেলে অন্নধ্বংস করছে আর সকলের দ্বারা নানাবিধ বিশেষণে ও বাক্যবাণে রোজ আপ্যায়িত হয়ে ভাবছে কি উপায় করা যায়?
অনেক কোম্পানী কারখানা তো সব বন্ধ হয়ে গিয়ে কোটি কোটি লোক বেকার কর্মহীন হয়ে গেছে তবে আমাদের এই কোম্পানী ভেষজ মানে হার্বাল প্রোডাক্ট তৈরী করে বলে এখন ও টিকে আছে কোনমতে রপ্তানীর জোরে…
সে যাক….
তবে চাকরী যখন করতে হবে তখন তো এইসব দুর্ভোগ ও ভুগতেই হবে… উপায় নেই তাই পাহাড়ী পাকদন্ডির পথ ধরে চড়াই ভাঙা শুরু করলুম রাজপথ ছেড়ে..
চল্লিশ মিনিট হেঁটে আর চড়াই পার হয়ে এক জায়গায় দূরে সামান্য আলোর আভাষ দেখতে পেয়ে সেইদিকেই হাঁপাতে হাঁপাতে টর্চ হাতে যেতে হলো…
মাত্র আট দশটি ছোট ছোট পাথরে তৈরী বাড়ী নিয়ে সেই পাহাড়ী গ্রামে যদি আশ্রয় মেলে এই আশায় যেতে হলো কেননা রাত ও বাড়ছে আর ঠান্ডা ও … যখন সেখানে গিয়ে হাজির হতে পারলুম তখন প্রায় সব বাড়িই অন্ধকার হয়ে গেছে… মাত্র একটি ছাড়া … অগত্যা আমি সেই বাড়ির দরজাতেই নক করলুম…
‘কে?’
পাহাড়ী ভাষায় কেউ একজন জানতে চাইলো…
‘আমি এক বিপন্ন পথিক…ভাড়া করা গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছিলুম শিমলা … হঠাৎ ব্রেক ফেল হয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছি…’
‘তা আসুন… ভেতরে চলে আসুন… দরজা খোলাই আছে এখনো… তবে আমি কিন্তু কোনমতে আশ্রয় দিলে ও রাতে আমাদের খাওয়া হয়ে গেছে বলে আপনার জন্যে এখন আর খাবার দাবারের অভাবে কোন ব্যবস্থাই করতে অক্ষম…’
‘আর দেখুন…এই গরীবের ঘরে… খুব কষ্ট হবে আপনার কেননা জায়গার ও অভাব … খুব অল্প স্থান… দুটি ছোট ঘর আর চৌকী আছে… আপনি নিজেই দেখতে পাবেন ভেতরে এলেই… আসুন…’
আমি ভেতরে ঢুকলুম একটা ঘরে।
‘এই দেখুন… এই ঘরে আমি আর আমার স্ত্রী থাকতুম আর পাশের ঘরে আমার ছেলে বৌ থাকে … তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে … তবে আমার স্ত্রী হঠাৎ গত হয়েছে গত মাসে তাই এখন আমার নাতিকে নিয়ে আমি শুই এই ঘরে আর মেয়েদের নিয়ে ছেলে বৌ পাশের ঘরে… এখানে রাতে খুব ঠান্ডা পড়ে বলে মাটিতে শোওয়া যায় না আর তেমন তো স্থান ও নেই ,,, এখন বলুন আপনি কি এই সামান্য জায়গায় থাকতে পারবেন? বাড়তি কম্বল ও তো নেই যে দেব…’
‘ও সব নিয়ে আপনি ভাববেন না…’
‘আমরা যে খুব গরীব মানুষ…দিনমজুরী করে খাই…’
আমি বললুম-‘আপনি মিছে ভাবছেন কেন? বাইরে একটা কাঠের বেঞ্চ আছে দেখছি… আপনি অনুমতি দিলে এখনই সেটা এই ঘরে তুলে নিয়ে এসে চৌকির সাথে জুড়ে দিলেই জায়গা হয়ে যাবে তিন জনের মতন… সকালে আবার বাইরে এনে রেখে দেব আর আমার এই ট্রলি ব্যাগে কম্বল আছে দুটো আর একটা মোটা লাইনিংওয়ালা ডবল স্লিপিং ব্যাগ আর কিছু শুকনো খাবার ও আছে … আপনি সবাইকে ডাকুন… ভাগ করে খাওয়া যাবে এখন..’
‘তা ঠিক … বেঞ্চিটা জুড়ে দিলেই মনে হয় আমার ছোট নাতিকে ছাড়া ও দুই জন মানুষের শোবার রমতন বেশ জায়গা হতে পারবে… তবে ছেলে বৌ সব শুয়ে পড়েছে তাই ওরা আর কিছুই এখন খাবে না ….. ডেকে তাই কোন লাভ নেই… আর আমি ও তো শুয়ে পড়তেই যাচ্ছিলুম …. আরে এই সিনচা … যা.. তো… বেঞ্চিটা ঘরে নিয়ে আয় গিয়ে…’
একটা বছর দশ এগারোর রোগামতন বেশ ফর্সা ছেলে চৌকী থেকে উঠে এলো…
ছেলেটার পরণে ভেতরে জামা কি আছে তা ঠিক বোঝা গেলো না তবে ওপরে পাহাড়ী ছেলেদের মতনই পরা রয়েছে বেশ পাতলা উলের তৈরী লাল পা জামা একটা আর তার সাথে জোড়া দেওয়া নীল রঙের জ্যাকেট একটা মাথার টুপি ফিতে সমেত…
আমি ছেলেটার চকচকে ফর্সা হাতটা চেপে ধরে তাকে কাছে টেনে নিয়ে বললুম-‘তুমি ভাই একলা পারবে না ওই ভারী বেঞ্চি তুলতে… আমিই তুলে নিয়ে যাচ্ছি … তুমি শুধু আমার ব্যাগটা এই হ্যান্ডেল ধরে ঘরের ভেতরে টেনে নিয়ে এসো…’
সুন্দর মতন ছেলেটা তাই করলো মুখ নীচু করে … একটা ও কথা বললো না…
আমি ঘরে গিয়ে চৌকির সাথে বেঞ্চটা জুড়ে বসিয়ে দিয়ে তা র ওপরে একটা কম্বল পেতে দিলুম বিছানার মতন করে তবে দেখলুম যে সেই গৃ্হস্বামী আর ছেলেটার গায়ে দেবার জন্যে যে কেবল মাত্র একটা পাতলা কম্বল রয়েছে সেটা ও ছেঁড়া আর ফুটো …
সেইটাই টেনে নিয়ে তিনি গায়ে দিয়ে বললেন-‘এই সম্বল আমাদের…’.
আমি তার পরণের যে আধময়লা মোটা কাপড়ের ছেঁড়া জামা আর পা জামা ছিল সেটা দেখিয়ে বললুম-‘আপনি ওই যে পোষাক পরে আছেন ওতে তো আপনার ঠান্ডা লেগে যাবে আর এই ছেলেটার ও ঠান্ডা লাগবে কেননা বাইরে এখন খুব জোর বৃষ্টি পড়ছে… পাহাড়ে বৃষ্টি যখন ঠান্ডাও তখন…. আর তাই আপনি এক কাজ করুন দেখি… আপনার ওই কম্বলটা ও পেতে দিন আর আমার এই কম্বলটা নিয়ে গায়ে দিন এখন …এই বৃষ্টির জন্য রাতে যাতে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়লে ও তখন কষ্ট না হয়… তবে তার আগে আর একটা কাজ আপনাকে করতেই হবে…আমার একটা গরম জামা প্যান্ট দিচ্ছি আপনি সেগুলো সব পরে ফেলুন…’
‘ আর তুমি? তোমার তো কম্বল নেই?’
‘আমার কাছে কোন বাচ্ছা ছেলের পোষাক নেই যে এই ছেলেটাকে ও পরতে দেবো তবে একটা ডবল স্লিপিং ব্যাগ আর চাদর আছে… একটা কম্বলের ওপরে পাতবো আর একটা ওপরে মুখে মাথায় চাপা দেবো … আর একটা কথা… আপনি ওই ছেলেটাকে ও আমাকে দিয়ে দিন… আমি স্লিপিং ব্যাগে ওকে ঢুকিয়ে নিয়ে চেন বন্ধ করে রেখে দিলে এই অল্প জায়গায় ও আমাদের বেশ কুলিয়ে যাবে আর স্লিপিংব্যাগে শুয়ে পড়লে তখন আর ছেলেটার ঠান্ডা ও লাগবে না…’
‘হুঁ…তা বেশ তো…আমাদের ঘরে তো সবাই কষ্ট করেই আছি … তবে কি জানো…… তুমি যখন এই সবার ছোট ছেলেটাকেই নিতে চাইলে তখন এই নাও ছেলে… তবে এতো কচি একটা ছেলেকে নিয়ে তুমি এখন কি করবে?’
‘আরেঃ… আমি আবার কি করবো এখন এই ছেলেটাকে নিয়ে? ওকে ঘুম পাড়িয়ে দেবো তবে আগে একটু কিছু খাইয়ে দিই…’
’সে তোমার এখন যা মন চাইবে তাই করো তুমি ওকে নিয়ে মানে তোমার যা খুশী হয় তাই করো ….আমি শুয়ে পড়ছি…’
এতোক্ষণে সিনচা মুখ নীচু করে বললো-‘তবে আংকল…… একটা কথা বলবো? তুমি কি শুনবে আংকল?’
আমি ছেলেটার মুখটা দু’হাতে তুলে ধরে বললুম-‘কেন শুনবো না? তুমি ভাই বলোই না দেখি মানে শুনি…’
সিনচা খুব মৃদু স্বরে লাজুক গলায় বললো-‘আমি তোমাকে অন্য কিছু করতে বলছি না আংকল… তবে আমাকে তুমি যা করতে বলবে আমি তাই করবো আংকল… দাদা তো তাই বলেই দিয়েছে আর আমাকে দিয়ে ও দিলো তোমাকে তাই কথাটা তোমাকে বলছি… আংকল…’
‘আরেঃ …এতো সংকোচ কিসের জন্য করছো? তুমি বলোই না ভাই…’
‘আমি কিন্তু একটা খুব বাজে ছেলে…কেউ পছন্দ করে না আমাকে এক দাদা ছাড়া … মা বাবা ও নয়… তাই মনে হয় তোমার ও ভালো লাগবে না আমাকে কেননা আমার না মাঝে মাঝেই খুব মন খারাপ লাগে… কিচ্ছুই ভালো লাগে না …এমনকি খেলতে বা খেতে ও ইচ্ছে করে না …কারো সাথে একটা ও কথা বলতে ভালো লাগে না … কেমন যেন কখনো খুব অস্থির আর কখনো ভয় করে তবে কখন যে এটা শুরু হবে সেটা আমি বলতে পারবো না তবে মাস তিনেক আগে একবার আমার এই অবস্থা হয়েছিলো তা জানো আংকল?’
‘না তো ভাই…’
‘তুমি তো তখন ছিলে না তাই তবে সে তুমি জানতে পারবে ঠিক…’
‘তবে তারপরেই না আমার খুব মাথা ঘোরে সেই ভয় করতে থাকে বলে …ভীষণ ভয় …অকারণ ভয় আর হাত পা সব কাঁপে… তখন তুমি সঙ্গে থাকলে আর ভয় করবে না মনে হয় আংকল… কেননা আমার কথা তো কেউ শুনতে ও চায় না আর তাই কিছু বুঝতে ও পারে না যে…তুমি থাকবে তো সবসময় আমার সঙ্গে…আংকল?’
আমি চুপ…কিছুই তো বুঝতে পারছি না..কি বলবো?…
শেষে বললুম-‘হুঁ…’
শুয়ে পড়বার আগে যা শুকনো খাবার মানে ব্রেড টোস্ট বিস্কুট কেক আর কয়েকটা ব্রেড পকৌড়া আর সমোসা যা সঙ্গে ছিল তাই বের করে দু’জনে ভাগ করে খেতে বসলুম আমরা তবে সেই পাহাড়ী লোকটা বিশেষ কিছুই খেলো না কিন্তু আমি ছেলেটাকে ছাড়লুম না …তার হাত ধরে টেনে এনে কাছে বসিয়ে জোর করে কিছু খাইয়ে দিয়ে তবে স্লিপিং ব্যাগের ভেলভেট আস্তরণের ওপরে শুইয়ে দিলুম…
ছেলেটা বেশ স্পষ্ট হিন্দিতে বললো-‘আংকল, আমার এই সব ঢোলা জামা টামা পরে তো আমি শুই না আর এই ব্যাগে তো বেশী জায়গা ও হবে না…’
আমি বললুম-‘দু’জনের মতন জায়গা আছে তবে… তুমি ওগুলো সব খুলে ফেলতে পারো … আমি আমার গরম কাপড়ের একটা নাইটির মতন গাউন তোমাকে পরিয়ে দিচ্ছি… একটু বড়ো হবে বটে তবে তাতে কোন ক্ষতি নেই…. তুমি সেটা পরে নিয়ে শুয়ে পড়ো তবে ভেতর থেকে যখন আমি চেনটা টেনে বন্ধ করবো তখন একটু জায়গা কমে যাবেই তাই তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরতে পারো …কি? ঠিক তো’?
‘হুঁ…খুব পারবো আংকল … আমি তো রাতে পোষাক খুলে রেখেই শুই তবে আর কেউ আমাকে কাছে নেয় না বলে দাদার সাথেই শুই… দাদাকে জড়িয়ে ধরে ওই ছেঁড়া কম্বল জড়িয়েই…’
’তা বাড়ির কেউ তোমাকে কাছে রাখে না কেন?’
‘ভয়ে আংকল … ভয়ে… বলে আমার ওপরে নাকি জিনের নজর আছে…’
‘সে আবার কি? যাঃ …’
ততক্ষণে সেই বৃদ্ধ আরাম করে হাত পা ছড়িয়ে আমার গরম মোটা কম্বলটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আর ঘরের ছাদে জোর শব্দ হচ্ছে মুষলধারে বৃষ্টি পড়বার… আমি বেশ বুঝতে পারলুম যে আমার পোষাক আর কম্বল সবই গেলো কেননা এই গরীবদের কাছ থেকে ও সব তো আর এই ঠান্ডার সময় চলে যাবার সময়ে ও চেয়ে ফেরৎ নিতে পারবো না… আশ্রয়দাতা বলে কথা…
আমি ছেলেটার হাতে একটা চকলেট দিয়ে জানতে চাইলুম-‘সিনচা, তুমি তো এখন বেশ বড়ো হয়ে গেছো আর যখন হিন্দী ও বলছো… আর আংকল ও বলছো তখন তো তুমি স্কুলে ও পড়ো তবে তোমার ভয় করে কেন?’
সেটা খুলে তখনি সে মুখে পুরে দিয়ে তার নেপালীর মতন চেরা চোখ দুটো পুরো খুলে বললো-‘আংকল,সেই ভীষণ ভয় করবার পরেই যে আমি… যা দেখতে নেই জীবন্ত কোন মানুষকে কখনোই…আমি সেই যে তখন যেতনা দেখতে পাই…’
চমকে উঠে আমি বললুম -‘তার মানে?’
‘সে রাতে বলা চলবেই না আংকল… খুব বিপদ হয়ে যাবে,,, তবে আমাকে তুমি সকালে বাইরে নিয়ে যেও একটু তখন সব বলবো তবে পানি পড়লে তখন তো বাইরে যাওয়া যায় না,,, তখন চেকাতে যেতে হবে …’
বাবারে বাবা… আমি পাহাড়ী ভাষা সামান্যই জানি আর তাইতে এই সব শব্দ ও তার উচ্চারণ বোঝা আমার পক্ষে কঠিন কিন্তু ছেলেটা বেশ স্মার্ট আর তেমনই সপ্রতিভ মানে তার বেশ নিঃসংকোচ ব্যবহারের জন্য আমার তো তখন তাকে বেশ ভালোই লাগছিলো
আমি ছেলেটাকে ড্রেসিং গাউনটা পরাবো বলে তার পরণের সব ড্রেসগুলোই এক করে খুলে তার পোষাক চেঞ্জ করতে বসলুম…
সে ভেতরে একটা ছেঁড়া জামা আর হাফপ্যান্ট পরে ছিলো আমি তার সেই পোষাকের ওপরেই তাকে ড্রেসিং গাউনটা পরিয়ে দিলুম…
শুয়ে পড়ে আমি চেনটা পুরো টেনে আটকে দিলুম আর তখন সে তার দুই নরম বাহু আর ঊরু দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে পর পর চারটে চুমু খেতে খেতে বললো-‘ আংকল. গুড নাইট…’
হায়… তখন ও কি আমি ছাই জানি যে ছেলেটার ওই সব কথার অর্থ কি… জানলে হয়তো সেই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ছুটে পালিয়ে যেতুম সেখান থেকে তবে সব যখন বেশ বুঝতে পারলুম তখন বেশ দেরী হয়ে গেছে আর তখন আর সেই কচি ছেলেটাকে সেখানে কোথাও রেখে দিয়ে চলে যাবার কোন উপায়ই আর আমার নেই…সে তখন আর আমার পক্ষে সম্ভব ও নয়….নিয়তি কে ন বাধ্যতে…
পরদিন সকালে যখন আমার ঘুম ভাঙলো ছেলেটা তখন ও আমাকে তার বুকে জড়িয়ে চেপে ধরে রেখে শুয়ে ঘুমোচ্ছে … আমি ছেলেটার ডান হাতটা সরিয়ে দিয়ে স্লিপিংব্যাগের চেনটা একটু খুলে মাথার ক্যাপটা নামিয়ে দিয়ে চাদরটা সরিয়ে দেখি যে বাইরে একটু আলো ফুটলে ও সমানে জোরে বৃষ্টি পড়ছে আর তাই কেউ ওঠেনি তখনো… আমার নড়াচড়ায় ছেলেটার ঘুম ভেঙে গেলো আর সে আরো জোরে প্রাণপণ শক্তিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো-‘ আংকল, পানি তো পড়ছেই আংকল… তাই আজ সব কিছুই ছুটি হয়ে যাবে …আমার স্কুল ও… আমি পাঁচ ক্লাশে পড়ি জানো তো… তবে আমার স্কুল ড্রেসই নেই… স্কুল ব্যাগ… ওয়াটার বটল… কিছুই তো নেই… দাদী চলে গেলো যে… তাই আমি পড়াশুনা কিছুই তো করতে পারি না ঠিক মতন… আংকল….তুমি সব কিছু আমাকে কিনে দেবে তো?’
‘হুঁ…’
‘তাই দিয়ো আংকল তবে আজ তো নয় কেননা আজ তো হবেই না কেননা ঢালু পাহাড়ী রাস্তাতে তো জলস্রোত বইছে আর হাঁটাই যে যাবে না আংকল… গুডমর্ণিং আংকল…. এই বলে সে বাসি মুখেই তখনি আমাকে দুটো চুমু খেলো…
আমি উঠে বসলুম…
ছেলেটাকে স্লিপিংব্যাগের বাইরে এনে দেখি যে সে কখন তাকে রাতে পরিয়ে দেওয়া গরম ড্রেসিং গাউনটা ও খুলে ফেলেছে আর তাই তাকে আমি হাত ধরে বাইরে আনতেই সেই পাতলা সামান্য পোষাকে দারুণ ঠান্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপতে শুরু করলো ছেলেটা…
তাই দেখে তখনই আবার তাকে স্লিপিং ব্যাগের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে চেন টেনে বন্ধ করে দিয়ে বললুম- ‘সিনচা, তোমার লাল নীল পোষাকগুলো কোথায় বলো…তোমাকে এখন পরাতে হবে তো…;
সিনচা হেসে বললো-‘আমি অন্য নতুন পোষাক পরবো… তুমি কিনে দিও…আংকল’
‘আরে যাঃ…এখন সে এখন আমি কোথায় পাবো বলতো?’
বলে উঠে গিয়ে আমিই ছেলেটার সেই গরম জামা টামা সব খুঁজে এনে রাখলুম কাছেই…
একটু বেলাতে ছেলেটাকে তাই পরিয়ে ও দিলুম আর বাইরে মানে জঙ্গলের বদলে যে পাথরের কমন বাথরুম তৈরী করা হয়েছে বৃষ্টির সময়ের জন্যে সেই চেকা না কি যেন নাম সেখানে ও তাকে নিয়ে যেতে হ’লো আর আমাকে ও যেতেই হলো…কি আর করা?
তবে সেদিনটা আর আমি বৃষ্টির দাপটেতে কোথা ও যেতে পারলুম না
শুধু নাস্তার সময় সেই গৃহস্বামির বৌ ছেলে ও তাদের তিন বড়ো মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হলো…
তবে বেশ অদ্ভূত ছেলে বটে সিনচা…
তিন জন দিদির একজনকে ও আমার ধারে কাছে ও আসতেই দিলো না… সব সময় আমার সঙ্গে সে আঠার মতন জড়িয়ে রইলো আর আমার হাত ধরে সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে রইলো…
দুপুরে ঘরে যা ছিলো তাই দিয়েই খিচুড়ী আর আলুভাজা বানিয়ে খাওয়া দাওয়া হলো কোন মতে আর তাই বিকেলে বৃষ্টি থামতেই তখন একবার সিনচাকে সঙ্গে নিয়ে বেরোতে হলো…
আগে সেই গাড়ীর অফিসে ফোন করে ব্রেকডাউনের খবর দিলুম আর তারপরে দোকান খুঁজে সেখানে গিয়ে সিনচার জন্য একসেট স্কুলড্রেস …ওয়াটার বটল … বইখাতা… ঘরের পোষাক … গরম জামা ও তার দাদার জন্যে আারো কিছু গরম পোষাক.. আর চাল ডাল নুন তেল শাক সবজী …খাবার দাবার… যা পাওয়া গেলো তাই কিনে আনলুম আর তাই দিয়েই ঘরে রাতের খাওয়া দাওয়া সারা হলো …
পরদিন আমার জন্য একটা অন্য গাড়ী এসে গেলো আর আমাকে বেরোতে হলো তবে আমি চলে যাচ্ছি দেখে সিনচা ঠিক একটা পাঁচ বছরের বাচ্ছা ছেলের মতন ভীষণ কাঁদতে শুরু করলো…
তাই দেখে তার দাদা বললো-‘বাবুজী, তুমি না হয় এখন সিনচাকে সঙ্গে করে নিয়েই চলে যাও… ও তোমার সেবা করবে আর না হয় ওকে তুমি ফেরবার সময়ে ফেরৎ দিয়ে যেও … আর সে তুমি তখন ওকে ফেরৎ না দিয়ে নিয়ে চলে গেলেও কেউ কিছু বলবে না তোমাকে কেননা নেহাৎ কেউ তো আর এতো বড়ো একটা ছেলেকে রাস্তায় ফেলে দিতে বা গলা টিপে মেরে ও ফেলতে পারে না তাই ঘরে রেখেছে কেননা ওর দাদী চলে যাবার সময় থেকেই আর কেউ ওকে দু’চোখে দেখতে পারে না…’
‘সে কি? কেন? ছেলেটা তো দেখছি খুব ভালো আর অনুগত মানে অবাধ্য নয়… বেশ কথা শোনে… ওর দোষটা কি?’
‘সে অনেক কথা… তুমি পরে শুনো… ফিরে এসে…’
বাধ্য হয়ে ছেলেটাকে ও সঙ্গে নিয়ে যেতেই হলো এই শর্তে যে আমি ফেরবার সময়ে আবার এনে পৌঁছে দিয়ে যাবো….
তবে ছেলেটা আমার জন্যে খুব পয়া বলে মনে হলো কেননা সহজেই আর সস্তায় একজন নতুন এজেন্ট পাওয়া গেলো শিমলার এক হোটেলে উঠেই…
আলাপ পরিচয় হতে সেই আমার দরকার মতন সব রকমের জড়ি বুটি পাইয়ে দেবে বলে এক পাহাড়ী বাজারে নিয়ে গেলো সঙ্গে করে আর অনেক জিনিষ যেমন আসল শিলাজিত …জিনসেঙ আর ও অনেক কিছু এনে বেশ সস্তায় আমাকে নিজে থেকেই সাপ্লাই দিলো যে এক মাসের জায়গায় দশ দিনেই সব কিছু জোগাড় হয়ে গেলো আর অতো মাল সব সঙ্গে করে নেওয়া কঠিন দেখে সব এক্সপ্রেস কোরিয়ার করে আমাদের গোডাউনের ঠিকানায় বুক করে পাঠিয়ে দিলাম আর ফোন করে সব জানিয়ে ও দিলাম…
ব্যস…আমি তখন এই ভালো সাপ্লায়ার পেয়ে নিশ্চিন্ত হলুম আর হাতে ও অঢেল সময় বলে খুশী হলুম আর সেইসাথে কোম্পানির সব মাল পাঠিয়ে ও আমার হাতে নগদ পাঁচ হাজার টাকা বেঁচে গেলো সস্তায় মাল কিনেছি তাই আর সে সময়ে সেই টাকার অনেক দাম ছিলো…
এইবার শিমলা হয়ে ফেরবার পালা কেননা ফেরবার পথে সিনচা ছেলেটাকে ও তো ফেরৎ দিতে হবে কেননা যতোই যা হোক আর আমি ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে যতোই ঘুরি না কেন সিনচা তো আর আমার নিজের ছেলে বা ছোট ভাই নয় …পরের ছেলে… তাই ওর দাদা যাই বলুক না কেন সব সময়ের জন্য তাকে নিজের কাছে রাখা চলবে না…
তবে শিমলায় ফিরে এসে একটা হোটেলে উঠেই হঠাৎ ছেলেটার এক ঝামেলা শুরু হ’লো..
সে দিন সন্ধ্যাহয়ে গেছে …
শিমলার একটা ভালো হোটেলের ডবল বেড রুম নিয়ে আছি …
বেশ ঠান্ডা পড়েছে আর তাই কোথা ও না বেরিয়ে রুমে বসেই টিভি দেখছি আর চা আর পনীর পকৌড়া রুম সার্ভিসে আনিয়ে নিয়ে খাচ্ছি…
সিনচাকে ও দিয়েছি তবে ছেলেটা খেতেই চাইছে না …কি আর করি?
হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হ’লো আর আলো ও নিভে গেলো …
তবে বড় হোটেল বলে তৎক্ষণাৎ জেনারেটার চালৃ করে দিলো আর আলো জ্বলে উঠলো আর ঘরের রুম হীটার ও আবার ঘুরতে লাগলো ধীরে ধীরে টকটকে লাল গরম হয়ে… থ্রিরডের ভার্টিকাল রোটেটিং রুম হীটার…
আমি তবু ও বেশ শীত শীত করছে দেখে… দূর ছাই আর ভালো লাগে না…এই বলে সোফা থেকে উঠে পড়ে বিছানায় গিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লুম তবে তার আগে সিনচা ছেলেটার ডান হাতটা খপ করে চেপে ধরে তাকে সোফা থেকে টেনে তুলে নিলুম…
ছেলেটাকে কাছে টেনে এনে জড়িয়ে ধরে বিছানার ওপরে ফেলে বুকে শক্ত করে দু’হাতে চেপে ধরে চুমু খেতে গেলাম ছেলেটার নরম চকচকে গালে আর তখনি বুঝতে পারলুম ব্যাপারটা…
চা জলখাবার কিছুই না খেয়ে চুপচাপ হয়ে এতোক্ষণ বসে থাকা ছেলেটার গা বেশ গরম আর গোটা ছেলেটা থর থর করে কাঁপছে…
‘তোমার কি হয়েছে সিনচা? শীত করছে?’
‘না না…আংকল…’
‘তবে?’
‘আমার কেমন যেন খুব মন খারাপ লাগছে আর শরীর অস্থির করছে… কিছুই ভালো লাগছে না… কিছু খেতে বা কথা বলতেও ইচ্ছে করছে না আংকল…’’
‘সে কি? কেন? তুমি তো এখন ঘরে আমার কাছে রয়েছো আর দামী গরম বাবা স্যুট পরে আছো…’
‘ও তুমি বুঝবে না আংকল… এটা অন্য রকমের মন খারাপ আর এরপরেই আমার খুব ভয় করবে আংকল …’
‘কেন ভয় করবে সিনচা?’
‘মনে হবে যেন আমার সামনে বহুলোক রয়েছে আর তারা সবাই মিলে হাত পা ছুঁড়ে চিৎকার করছে যেন তাদের ভীষণ বিপদ..’
‘কি সর্বনাশ? তারা সব কারা? আর কোথায়ই বা রয়েছে অতো লোক?’
‘একটা মন্দিরের পাশে বিরাট বড় আর খোলা জায়গায়… তবে সে শুধু আমিই দেখতে পারবো আংকল …তুমি তা দেখতেই পাবেনা …’
‘সে আবার কি? সে আবার হয় নাকি?’
‘তাই হয় আংকল… কেউ তো বিশ্বাসই করে না আমার এই সব কথা আর ….আর তাই আমার তখন ভয় করে খুব… বিপদ আসছে… আর তাই কিচ্ছু ভালো লাগছে না… উঃ কি জোরে ছুটে আসছে একটা তুফান…ওঃ আংকল আমাদের বড় বিপদ… আরো অনেক…’
ছেলেটা আমার দুই হাতের ভেতরে এলিয়ে পড়ে অজ্ঞানের মতন হয়ে যাচ্ছে দেখে বেশ ভয় পেয়ে হোটেলের সার্ভিস থেকে ডাক্তার ডাকলুম আমি…
ছেলেটার মেডিক্যাল চেকআপ হলো আর ওষুধ পথ্য সব এসে গেলো কিন্তু ওষুধ খাইয়েও কোন উন্নতি হলো না…. পরের ছেলে নিয়ে তখন আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম…. পরদিন সকালে তো যেতে হবে …অনেকটা পথ এখনো তো বাকি আছে সিনচাদের বাড়ী… কি উপায় করি এখন? ছোট ছেলে নিশ্চয়ই ঠান্ডা লেগে গেছে… ছেলেটাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে গায়ে নরম কম্বল চাপা দিলুম আমি… দেখি যদি কাল সকালে ছেলেটা একটু সুস্থ হয় তখন বেরোতে পারবো আর গাড়িতে ও ওর গায়ে দেবার জন্য একটা ভালো কম্বল কিনে নিতে হবে দেখছি কাল … এখন কোনমতে পৌঁছতে পারলে আমি বাঁচি… সিনচাকে ফেরৎ দিয়ে নিশ্চিত হই… এই বাজারে একটা ছেলেকে পোষা আমার এই সামান্য মাইনের চাকরিতে সহজ কাজ নয়…
তা পরদিন সকালে উঠে দেখি যে ছেলেটার কাঁপুনি আর নেই তবে ভীষণ ভয়েতে সে থেকে থেকে ফুঁপিয়ে কাঁদছে… যাঃ বাবা এ আবার কি? এখন কি করি আমি? তা যা হোক কিছু জলখাবার খেয়ে আর লাঞ্চপ্যাক করিয়ে নিলুম ও নতুন একটা কম্বল কিনে নিয়ে তবে যাত্রার আয়োজন শুরু করলুম আমি…
তবে হোটেলের বিল দেবার আগে একবার আবার ডাক্তারকে ডেকে সিনচাকে দেখিয়ে তবে যাত্রা শুরু করলুম … এইবার ডাক্তার ছেলেটাকে একটা ইঞ্জেকশান লাগিয়ে দিলেন…বাঁচা গেলো বাবা…আর মনে হয় অসুবিধে হবে না…
গাড়ী ছাড়তে সিনচা বললো-‘কেন মিছে আমার জন্য এতো পয়সা তুমি নষ্ট করলে আংকল? আমি তোমাকে তো বলেছি আংকল যে ওষুধে আমার এই ভয় কাটে না কেননা…. আরে… আরে… কি সর্বনাশ…. আংকল…. ওওওওকি? ও কে যায়? ওঃ ওঃ না … আংকল তুমি গাড়ী থামাও দয়া করে …আর সাইড করো গাড়ী নইলে সর্বনাশ হয়ে যাবে আংকল…’
‘কে? কোথায় যায়? আমি তো কিছুই দেখছি না সিনচা…কই…?’
‘থামো…থামো…’
অগত্যা ব্রেক কষে স্টিয়ারিং ঘোরাতে হলো আমাকে… গাড়ী থামতেই ছেলেটা তখন… হঠাৎ ওঁওঁওঁ করে উঠলো আর ক্ষীণ স্বরে হঠাৎ… দাদী… ও দাদী…তুমি কোথায় যাচ্ছো?... বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে গেলো…
কি বিপদ … এখন আমি কি করি? রাস্তা তো পাহাড় আর জঙ্গলে ভরা… এখানে এখন কোথায় পাই ডাক্তার আর কোথায় পাই ওষুধপত্র….
‘নাঃ…এখানে তো দেখছি থেমে থেকে কোন লাভ নেই… এখানে জনমানব নেই তাই বরং ছেলেটাকে সিট বেল্ট আটকে সীটে শুইয়ে দিই আর গায়ে কম্বলচাপা দিই আর গাড়ির হীটার অন করে খুব ধীরে ধীরে গাড়ী চালিয়ে এগিয়ে গিয়ে বরং দেখি যে কোথাও কোন মেডিকাল স্টোরে ডাক্তার বা অন্য কারো সাহায্য কিছু পাওয়া যায় কি না…
তাই করলুম …তবে পথে কিছুই মিললো না কোথা ও শুধু চারদিকে পাহাড়… গভীরখাদ… জঙ্গল আর মাঝে মাঝেই ইয়ু আর জেড টার্ন আর সাথে হুশশশশ …. করে পাশ দিয়ে অন্য গাড়ির চলে যাওয়া ছাড়া …
কোনমতে যখন সিনচাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম তখন বিকেল হয়ে গেছে আর গাড়ী দেখে সিনচার দাদা ছুটে এলেন কেননা তার ছেলে তখন বাড়ী নেই … দশমাইল দুরে একটা কি পাহাড়ী টাউনের কাছে রোড মেরামতির জায়গায় যোগানদারের কাজ করতে গেছে…এই সব কাজই এখানে এদের রুটি যোগায়…
‘সিনচার কি হয়েছে বাবুজী?’
‘ফেরবার পথে মনে হয় বৃষ্টির জন্য একটু ঠান্ডা লেগে গেছে তবে ওষুধ খেয়েছে আর ইনজেকশান ও দিয়েছে ডাক্তার আর তাই আমার মনে হয় যে ভয় পাবার কিছু নেই …’
‘তা বেশ… আপনি ওকে তুলে নিয়ে এসে আমার ঘরে চৌকিতে একটু শুইয়ে দিন বাবুজী আর আজ রাতটা আপনি ও এখানেই থেকে যান কেননা মৌসম খুব খারাপ হতে পারে একঘন্টা পরেই আজ রাতে…’
আমি তখন ছেলেটাকে গাড়ির দরজা খুলে নীচু হয়ে বুকে তুলে নিলুম…
তারপরে বললুম-‘তাহলে আমি গিয়ে কিছু আনাজ পাতি না হয় কিনে নিয়ে আসি কেননা আজ রাতের খানা তো বানাতে হবে …’
‘তা যাবেন তো এখনই চলে যান বাবুজী… তবে তাড়াতাড়ি করবেন কেননা সময় কম… হঠাৎ তুফান আসতে পারে আর তখন আবার পানি ও পড়বে…’
আমি কাছের সেই বাজারে চলে এলুম আর একটা দোকানে বেশ বড়ো বড়ো গোল গোল শক্ত লাড্ডুর মতন দেখতে পাহাড়ী মেঠাই পেয়ে কিনে নিলুম… বেশ কয়েক ডজন কলা ও অন্য ফলমূল… শাক সব্জী আনাজ পাতি তেল মশলা যা পেলুম সেই পাহাড়ী ছোট বাজারে তখন তাই কিনে গাড়িতে তুলে নিয়ে যখন ফিরে এলাম তখন আকাশের রং ঘোর কালোমতন হয়ে এসেছে আর হাওয়া ও চলতে শুরু করেছে বেশ জোরে…
তবে আমি আসতেই দাদাজী আমাকে তখন ঘরে ঢুকতে না দিয়ে নিজেই বাইরে এসে বললো-‘দাঁড়ান বাবুজী, একটা জরুরী খুব গোপনীয় কথা আছে আপনার সঙ্গে… শুনুন… অনেক শুষ্রুষার পরে এখন সিনচা চোখ খুলেছে আর খালি আপনাকে খুঁজছে আর খুব ভয় পাচ্ছে…. আচ্ছা… একটা কথা বলুন তো বাবুজী … ও কি আসবার পথে কিছু দেখতে পেয়ে আপনাকে সে কথা বলেছিলো ?’
আমি বেশ ঘাবড়ে গিয়ে বললুম-‘কই না তো… তেমন কিছু তো বলেনি… হ্যাঁ …তবে একবার ও আমাকে গাড়ীটা থামাতে বলেছিলো আর অসুস্থতার জন্য মনে হয় জ্বরের ঘোরে দাদী… দাদী… তুমি কোথায় যাচ্ছো… এইসব বলছিলো শুনেছি…’
‘তাই নাকি? সর্বনাশ …যেতনা…ওঃ হো হো হো…’
‘সে আবার কি?’
‘আরে বুঝলেন না? ওর দাদী কোথায়? সে কি আর আছে? সে তো গত হয়েছে’
‘তবে হয় তো অসুস্থ ছেলেটা স্বপ্ন দেখেছে… এতো হতেই পারে…আপনি এতো ঘাবড়ে যাচ্ছেন কেন?’
‘ঘাবড়াবো না? ওর দাদী গত হবার আগে ও ছেলেটা আমার বড়ো ভাইকে দেখে বড়ে দাদা … ও বড়ে দাদা.. বলে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠেই অজ্ঞান হয়ে গেছিলো আর তারপরেই ওর দাদী… ওঃ হো হো …এবার এখন কার পালা আসছে?’
‘কি সব যা তা কথা বলছেন আপনি? এসবই অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়…’
‘আরে আপনারা তো সব লেখা পড়া জানা শহুরে বাবু… আপনারা তো বলবেনই ওই কথা তবে জানবেন যে ওই যেতনা সবাই দেখতে পায় না… হয়তো লাখ বা কোটিতে একজনই দেখতে পায় আর সে দেখা ভালো নয়…যে দেখে তার ও তার ঘর পরিবারের সর্বনাশ হয়ে যায়…’
‘সে আবার হয় না কি?’
‘হয় কি না সব বুঝতে পারবেন আপনি ঠিকই… ওঃ…আপনি কি জানেন যে যদি সামনা সামনি দেখা হয় তবে এক থেকে তিন দিন মাত্র সময় থাকে আর পেছন থেকে দেখলে এক থেকে তিন মাস সময় থাকে বড় জোর আর তেমনি দূরত্বের ও মাপ আছে… মানে খুব কাছ থেকে দেখলে তো আর কথাই নেই আর অনেকটা দূর থেকে দেখলে বড়ো জোর তিন কি সাড়ে তিন বছর সময় থাকে…’
‘আরে গেলো যা… কিসের সময় সেটা তো বলবেন আগে…’
‘তাও বুঝলেন না? ওপরে যাওয়ার… আর কিসের? হয় তখন সে নিজেই মরে যায় আর নয়তো তার ঘর পরিবারের কেউ চলে যায়… বুঝলেন… এ অনিবার্য্য … তবে সে নিজে মরলে তো ল্যাঠাই চুকে যায় আর যদি তা না হয়ে সে বেঁচে থাকে পরমায়ুর জোরে আর তার ঘর পরিবারের লোক সব এক এক করে বার বার যেতনা দেখবার ফলে একজন একজন করে সবাই মারা যেতে থাকে তখন সেই গরীব পরিবারের সবাই কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলতে পারেন আপনি?’
‘সর্বনাশ…আপনি বলছেন কি?’
‘ঠিকই বলছি আমি আর তার চেয়ে ও বড়ো কথা হলো যে গ্রামের সবাই মিলে আগে সেই যেতনাকে যে দেখেছে তাকে হয় ঘরে আটকে রেখে জীবন্তপুড়িয়ে মারে আর নয়তো খাদে ঠেলে ফেলে দেয় তার হাত পা বেঁধে… হায় হায় হায় … এখন কি উপায় হবে? গতবারে অতি কষ্টে আমি এই সব কথা চেপে রেখে দিয়েছিলাম যাতে কচি ছেলেটাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি… তাই গ্রামের কেউ জানতে পারেনি তবে ওর নিজের বাপ মা বোন সবাই ওকে ভয় করতে শুরু করেছে আর রাতে তো ঘরে ওকে রাখতো না …এখন আমার এই বাচ্ছা ছেলেটা তো যাবেই…সেই সাথে আরো একজন… .ওঃ হো হো হো হো … আপনি আজ আমাকে কথা দিন যে সিঞ্চার এইবারের এইসব দেখবার কথা তো এখনো কেউ জানে না তাই আপনি ও কাউকে বলবেন না ভূলেও আর আমি ও এখনি গিয়ে সিনচাকে ও বারণ করে দিচ্ছি কাউকে বলতে… ওঃ হো হো হো…’
‘বেশ কথা দিলাম…’
দাদাজী ঘরে ঢুকলেন আর তখনি শুরু হয়ে গেলো ভয়ংকর তুফান …ভীষণ জোরে এসে আছড়ে পড়লো ঝড়…
উঃ সে কি ভয়ানক দাপট ঝড়ের… মনে হলো যে এই ঘরটা পাথরের না হলে এতোক্ষণে কোথায় যে উড়ে যেতো তা কে জানে… একঘন্টাতে ও সেই ঝড় তো থামলোই না উল্টে হঠাৎ কেমন ধারা জোর… ঘড় ঘড়… গড় গড়… করে এক শব্দ শুরু হলো মাটির নীচে আর তাই শুনেই দাদাজী লাফিয়ে উঠে বললো-‘আরেঃ… আভি ভূডোল আই… ভাগ বাহর জল্দি সে…’ এই বলেই নিজে বাইরে ছুটে চলে গেলো সিনচাকে ফেলে রেখে দিয়ে আর অন্য ঘর থেকে ও সবাই বেরিয়ে এসে হুড়মুড় করে দৌড়ে চলে গেলো… কোথায় তা কে জানে…
সঙ্গে সঙ্গে মাটি কেঁপে উঠলো থর থর করে আর মনে হলো কেউ যেন আমার পা দুটো ধরে জোরে নাড়া দিচ্ছে…ওরে বাবা…এ যে ভূমিকম্প শুরু হলো …এখন আমি একলা করি কি? মাটির সাথে আমি ও কাঁপতে কাঁপতেই চট করে নিজের গায়ে একটা কম্বল জড়ালুম আর অন্য একটা কম্বল দিয়ে সিনচাকে জড়িয়ে নিয়ে ছেলেটাকে টেনে নিজের কাঁধে তুলে নিলুম আমি…
একলাফ মেরে ঘরের বাইরে এসে পড়ে টলতে টলতে এগিয়ে চললুম দূরে রাখা গাড়িটার দিকে আবছা অন্ধকারের মধ্যে …… তখন শুনলুম যে খুব মৃদুস্বরে সিনচা বলছে-‘আংকল… মুঝে ছোড় দো… আওর আপনি জান বচাও…’
‘আপ ভি আপনা জান বচাও ভাগ কর… দেখো দাদা আওর সব কোই ভাগ কর চলে গয়ে হ্যায় মন্দিরকে পাশ ….’
আমি কোন দিকে যে মন্দির তাই তো জানিনা … কি করি তাই ভাবছি আর তখনি শুরু হলো চড় বড় করে বৃষ্টি পড়া আর ভূমিকম্প ও থেমে থেমে ঝটকা দিয়ে তখনো হচ্ছেই … কি যে মুশ্কিল সে আর কি বলি আমি…..
বাধ্য হয়ে কোনমতে ভিজতে ভিজতে গিয়ে গাড়িটার দরজা খুলে পেছনের সীটে সিনচাকে কম্বল সমেত শুইয়ে দিয়ে আমি ড্রাইভিং সীটে উঠে বসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললুম-‘ভয় নেই সিনচা… আমার গাড়িটা তো আছে… আমরা এতেই থাকবো আর মরতে হলে একসঙ্গেই মরবো কিন্তু তোমাকে ফেলে রেখে দিয়ে একলা পালিয়ে কখনোই যাবো না কেননা তেমন শিক্ষা আমি পাইনি ভাই…’
‘আংকল… বৃষ্টি এখন অনেকক্ষণ হবে আর আজ রাতে তো কেউ আর ঘরে ফিরবে না কেননা ভূডোলের পরে ঘর মেরামত না করে কেউ আর সেই ঘরে ঢোকে না তো থাকবার প্রশ্ন কোথায়? আর আংকল… সারা রাত খাবেই বা কি?’
‘সে দেখা যাবে… মেঠাই কলা মূলো আপেল অনেক সব ফলমূল আছে …কিছুই তো নামানোই হয়নি গাড়ি থেকে …তাই খাবো আর ঠান্ডা বেশী লাগলে তখন হীটার চালাবো তাতে তেলই শেষ হোক আর ব্যাটারীই ডাউন হোক… সে যা হয় হবে…’
’আমার বেশ শীত করছে আংকল… আর ভয় ও করছে কেননা মনে হয় যখন দাদা আমাকে সব কথা কাউকে বলতে বারণ করছিলো তখন মা বা বোন কেউ হয়তো শুনে ফেলেছে আর তাই কাল সকলে মিলে আমাকে ঠিক মেরে ফেলবে …খাদে ঠেলে ফেলে দেবেই আমাকে… আর আজকের এই দুর্যোগে ও হয়তো অনেক লোক মারা যাবে এখন আর সেই দোষ ও আমার হবে… তাই বলছি কি যে আর মিছে কি হবে চেষ্টা করে আংকল? ….তুমি ও আমাকে বাঁচাতে পারবে না …কেন কষ্ট করছো বলো তো?….’
‘আমি ও সব কথা শুনছি না…আমিএখন হীটার চালাচ্ছি… তুমি ভিজে কম্বল খুলে রাখো.. এখনি গরম হাওয়ায় শুকিয়ে যাবে… তাই আর তখন তোমার শীত করবে না আর এসো… যা হোক কিছু এখনই খেয়ে নেওয়া যাক … পরে হয়তো এই দুর্যোগ আরো বাড়বে আর তখন….’
আমি বলতে বলতেই গাড়িটা খুব জোরে কেঁপে উঠলো আর সিনচাদের ঘরের ছাদ থেকে হুড় মুড় করে কিছু পাথর মনে হলো ভেঙে পড়লো তবে অন্ধকারে ঠিক ঠাহর হলো না তবে তখনি আরো দূরে জাগলো ভীষণ… দড়াম.. হুড়ুম… দুড়ম… করে শব্দ আর মানুষের চিৎকার ….হয়তো আরো অনেক সব ঘরবাড়ী ধূলিসাৎ হয়ে গেলো … অবস্থা যে ক্রমেই বেশ সঙীন হয়ে উঠছে তা বোঝা গেলো বেশ… পাহাড়ী গ্রামে এসব তো হয়ই কিন্তু যদি এর ফলে কাল সকালে সিনচার বাপ বা দাদা কেউ আর না ফেরে তখন যে হবে খুব মুশ্কিল তা ঠিক…’…’
আমরা কিছু যা হোক খেয়ে নিয়ে আড় হয়ে শুয়ে পড়লাম … …বাইরে তখন তুমুল ব্ষ্টি পড়ছে আর থেকে থেকে গাড়ি শুদ্ধু আমরা দুলে দুলে উঠছি আর দূরে হুড়মুড় দূম ধড়াম … করে শব্দ ও হয়েই চলেছে… মানুষজনের আর্ত চিৎকার ও চলছে সমানে সেই সাথে …
এরই মধ্যে হীটারের গরমে বেশ তন্দ্রামতন ও এসে গেছিলো… যখন ঘুম ভাঙলো দেখি যে তখন সবে ভোর হয়ে আসছে আর সব ঝড় জল ও থেমে গেছে … পেছনের সীটে সিনচা তখন ও কম্বল জড়িয়ে শুয়ে আছে…
হঠাৎ কে যেন গাড়ির গায়ে বাইরে থেকে ঠক ঠক করে শব্দ করলো… আমি দরজা খুলে দেখি যে সিনচার দাদাজী হাতে একটাকাপড় জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে … ‘কি হলো… এতো সকালে আপনি?’
‘হ্যাঁ…আমাদের সব কিছু কাল শেষ হয়ে গেছে… ভূডোলে সব ঘর ভেঙে পড়েছে আর অনেক হতাহত হয়েছে আর আমি ও আহত হয়েছি … রাতে তুফান থামতে কয়েক জন গ্রামে ফিরেও আসতে পেরেছে কাজের জায়গা থেকে তবে কাল আর আমার ছেলে আসেনি ফিরে… কাজের জায়গাতেই রাস্তায় ধ্বস নেমে সে হয়ে গেছে …আর এই খবর আসতেই আরো এক বিপদ হয়েছে … …সব কথা শুনে সিনচার মা কাঁদতে কাঁদতে বিলাপের মধ্যে তার নিজের ছেলের যেতনা দেখবার সবকথাই বলে ফেলেছে… বাবুজী… পাহাড়ী রাস্তায় ও ধ্বস নেমে অনেক জায়গাতেই বন্ধ হয়ে গেছে তবে তুমি এখন পালা ও বাবুজী.. সিনচাকে নিয়ে চলে যাও এই গ্রাম থেকে যতো দূরে পারো… পালাও… নইলে আজই সিনচার জীবনের শেষ দিন… আমাদের তো সবই গেছে তাই হয়তো না খেয়েই মরতে হবে তবে তুমি এখনই চলে যাও…’
‘বেশ…আমি তাই যাচ্ছি দাদাজী ……’
’তবে আপনি চিন্তা করবেন না… শুধু আপনার পতা ঠিকানা আমাক বলে দিন … ‘
‘কেন?’
‘আমি গিয়েই কিছু টাকা আপনাকে পাঠিয়ে দেবো…’
‘সে কেন?’
‘আপনি তাই দিয়ে আপনাদের ঘর দোর সব সারিয়ে নেবেন …’
‘তুমি এইভাবে আর কতো দিন সাহায্য করতে পারবে? ও সব কথা ছাড়ো… আমার একটাই ছেলে ছিলো যে রোজগার করে এনে এই সংসার চালাতো …আমাদের এই ছয় সাত জনের মুখে অন্ন যোগাতো… আমি বুড়ো বেঁচে রইলুম আর সে চলে গেলো… ওঃ… হো হো হো হো… এখন আমি করবো কি? আর কি করে সবাইকে খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখবো তা তুমিই বলো… আর আমার শেষ এই শিবরাত্রির সলতে ছেলেটাকে ও তো কেউ বাঁচতে দেবে না… বিনা দোষে মেরে ফেলবে শুধু এই ভয়ে যে ও বেঁচে থাকলেই আবার কখন যেতনা দেখবে আর তারপরেই গ্রামে নেমে আসবে এইরকম ঘোর অমঙ্গল… ঘোর দুর্দিন তখন…ওঃ…হো হো হো হোঃ…’
‘আরে অতো ভয় পাচ্ছেন কেন আপনি? মনে করবেন এটা সিনচার মাইনে… এখন থেকে আপনাদের ঘর পরিবার সব এই কচি ছেলে সিনচাই চালাবে তার বাবার অবর্তমানে… বাবার দায়িত্ব ছেলে নেবে এতে কার কি বলবার আছে?… যাকে আপনারা পুড়িয়ে মারতে বা খাদে ফেলে দিয়ে আজকেই এখনি মেরে ফেলতে চাইছেন তাকে নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি আর দেখবেন যে সেই ছেলেই আপনাদের খাইয়ে পরিয়ে বাঁচাবে….’
‘তুমি কি বলছো?...’
‘ঠিকই বলছি আমি…তবে আপনি যা বললেন…সেটা ও তো মিথ্যানয় বরং এখনো এটাই বড়ো দুর্ভাগ্য আমাদের দেশের… তবে ছেলেটা লেখা পড়া ও শিখবে আর হয়তো একদিন শুধু নিজের ঘর পরিবারের রক্ষা করাই নয়… এই ভীতু ছেলেটাই কাল হয়তো বড়ো হয়ে এই গোটা দেশটাকে রক্ষা করতে রাইফেল ও গ্রেনেড হাতে নিয়ে বুক ফুলিয়ে দেশের শত্রুদের মোকাবিলা করবে সীমান্তে গিয়ে…… হয় তো দেশের রক্ষায় শত শত দুশ্মনকে শেষ করে তখন নিজে ও শহীদ হবে আর আমরা ঘরে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে দেওয়ালী উৎসব পালন করবো ….ভবিষৎ কে বলতে পারে দাদাজী? আজ এখন তবে আমি যাই…বহুত বহুত শুক্রিয়া….’
09452003290
রচনাকাল : ২/২/২০২১
© কিশলয় এবং জি.সি.ভট্টাচার্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।