মনীটর বাদল
আজ আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন আমি আর বাদল দু’জনেই পড়ি ক্লাশ এইটে …একটা বেশ নামী দামী ইংলিশ মিডিয়াম বিরাট বড় স্কুলে
আমি যে চন্চল তা হয় তো আর বলতে হবে না নতুন করে
সে দিন হঠাৎ আমাদের সব স্কুল গ্রুপের প্রিন্সিপাল স্যার স্কুলে এলেন সকালেই… আমাদের স্কুলের তিনটে গ্রুপ আছে আর সব গ্রুপ মিলিয়ে দশটা স্কুলে সব মিলিয়ে দশ হাজারের ও বেশী ছাত্র পড়ে আর তাও এক এক বছরে আর শুধু আমাদের এই একটা বেনারস শহরেই আর এমন পনেরোটা শহরে আছে আমাদের স্কুল গ্রুপের শাখা….
প্রিন্সিপাল স্যার সব স্যার আর ম্যাডামদের নিয়ে একটা খুব জরুরী মিটিং ডেকে বসলেন…
সব ক্লাশেই তো পড়া চলছিলো তখন আর তা বন্ধ হয়ে যেতেই খুব হৈ চৈ শুরু হয়ে গেলো সব ক্লাসেতেই…. আমাদের অঙ্কের স্যার বুদ্ধি করে যাবার আগে এগিয়ে এসে বাদলের হাত ধরে টেনে এনে নিজের চেয়ারে তাকে বসিয়ে দিয়ে বলে গেলেন –‘বাদল, তুমি আজ পড়াও আর দেখো যেন কোন হৈ চৈ না হয়…’
আধঘন্টা পরে তিনি ফিরে এসে চমকে উঠলেন কেননা শুধু আমাদের সেক্সান ছাড়া অন্য সব ক্লাশেই দারুণ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে … আমাদের ক্লাশে বীজগণিতের সমীকরণ শিখছে সবাই…অদ্ভূত ব্যাপার..দশমিনিট দেখে তখন ক্লাশে ঢোকবার আগে বললেন-‘মে আই কাম ইন, স্যার?’
বাদল তখন একটা ছেলেকে দাঁড় করিয়ে তার হাতে চক স্টিক দিয়ে বোর্ডে লিখতে বলছে নিজের ও তার বাবার বয়স কতো… তার যোগফল…ছেলেটা বোর্ডে লিখছে ১৩+৩১= ৪৪ আর তার নীচে আবার বাদলের কথামতন লিখছে x+y=৪৪ মানে হলো x=১৩ আর y=৩১…
একটা মেয়ে হাত তুললো…বাদল বললো-‘ইয়েস প্লীজ …’
মেয়েটা উঠে দাঁড়ালো সেইভাবে একহাত তুলেই আর তাই তখন তার নিজের স্কার্টটা অনেকটা সরে ওপর দিকে পুরো উঠে গেলো…মেয়েটা সেটা বাদলকে দেখিয়ে দিলো একটু সরে এসে আর তারপরে হাত নামিয়ে সরে যাওয়া স্কার্টটাকে আগে নীচু করে দিয়ে জানতে চাইলো-‘স্যার, আসলে বীজ গণিত বিষয়টা কি আর তা শিখে কি যে লাভ হয় তাই তো আমি এখনো বুঝি না আর সে কথা কাউকে জিজ্ঞাসা ও করতে পারি না সবাই হাসবে এই ভয়ে … তা আপনি আগে সেটাই বোঝান দেখি আমাকে ..’
কয়েকটা মেয়ে তার এই অসভ্যতা দেখে হেসে ফেললো ..
বাদল বললো-‘বীজ গণিত হলো গণিতের একটা শাখা…যে গণিতে কোন এক বা একাধিক অজ্ঞাত বা বীজসংখ্যার আঙ্কিক মানের মূল্য জানতে চেষ্টা করা হয় আর সমীকরণ হলো একটা ব্যঞ্জক যার একপাশে থাকে এই অজ্ঞাত বীজ সংখ্যা আর অন্য পাশে থাকে তাদের আঙ্কিক যোগ বা বিয়োগ ফল… .. সমান সমান চিহ্ন যুক্ত এই ব্যঞ্জকই সমীকরণ যার মানে উভয়পক্ষের সম করণ বা ইকোয়েশান…’
আবার অন্য একটা বাদলের চেয়ে বয়সে বেশ বড় লাষ্ট বেঞ্চের দুষ্টু মেয়ে হাত তুললো… বাদল তার দিকে চেয়ে ও ঘাড় নাড়লো আর মেয়েটা উঠে একেবারে বাদলের কাছে চলে এসে তার একটা হাত খপ করে চেপে ধরে নিয়ে বললো-‘স্যার, তাহলে আপনার ওজন কতো তা কি বীজগণিত দিয়ে জানা যাবে? মানে এটা তো আমার কাছে একটা অজ্ঞাত সংখ্যা আর আমি জানতেই চাই কেননা আমি আপনাকে একবার অন্তত দু’হাতে জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নিতে চাই…
এইবার পুরো ক্লাশ হো হো করে হেসে উঠলো এই অসভ্য রসিকতা শুনে…
বাদল সেসব কানেও না তুলে বললো-‘অবশ্যই জানা যায় তবে একটা সমীকরণ সল্ভ করতে হবে আগে তোমাকে… পারবে?’
মেয়েটা বললো-‘খুব পারবো, স্যার..’
বাদল চক স্টিকটা মেয়েটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো –‘বেশ.. তবে তুমি বোর্ডে লেখো… x+y=৯৬ এখানে x হলো তোমার ওজন কেজিতে আর y হলো আমার ওজন… ঠিক আছে? এইবার নীচে আবার লেখো x-y=৬৫ .. হয়েছে? এই বার সল্ভ করো দেখি.. তাহলেই তুমি আমার ওজন পেয়ে যাবে…’
‘কি করে সল্ভ করবো… স্যার ?’
‘বলছি…প্রথমে দুটো সমীকরণকে একসাথে যোগ করতে হবে… তুমি পাশে যোগ চিহ্ন দাও আর নীচে একটা লাইন টানো… এখন +y আর -y তো বিপরীত.. যোগ ফল হবে শূণ্য আর দুটো xএয়ের যোগ হবে 2x.. কি ঠিক তো? এখন ৯৬ আর ৬৫ যোগ করলে কতো হয় বলতো?’
‘১৬১ হয় স্যার…’
‘গুড…তুমি একদম ঠিক বলেছো…এখন ২x=১৬১ যদি হয় তবে x মানে তার অর্দ্ধেক কতো হবে? বলো তো..’
‘স্যার ৮০.৫…’
‘ভেরী গুড…আবারও তুমি ঠিক বলেছো.. এটাই হলো xএর অঙ্কগত মান মানে তোমার ওজন হলো ৮০.৫ কে জি ..এইবার আমার ওজনের পালা আসছে…’
এই শুনেই ক্লাশের সব ছেলেরা একেবারে জোরে হো হো করে হেসে উঠলো
আর সঙ্গে সঙ্গে সব মেয়েদের মুখ শুকিয়ে আমসি হয়ে গেলো এই ওজন শুনে আর সেই সময় স্যার পারমিশান চাইলেন আর বাদল সেটা ভালো করে না শুনে আর কিছু না দেখেই বললো-‘নো…নো ডিসটারবেন্স প্লীজ ইন লার্নিং…’
আর যায় কোথায়? স্যার তেড়ে গিয়ে ছেলেটার বাঁ হাতটা চেপে ধরলেন…বাদল লজ্জায় মুখ নীচু করে বললো-‘ভেরী সরি স্যার…’
কে শোনে কার কথা…বাদলকে তার হাত ধরে টানতে টানতে তিনি তখনই প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে চললেন আর গোটা ক্লাশটাই উঠে দাঁড়ালো সঙ্গে সঙ্গে আর বিশেষ করে মেয়েরা যারা অঙ্কের নামেই ভয়ে পালায় তারাই তখন সব ঘোর আপত্তি করে একেবারে একসাথে চেঁচিয়ে উঠলো-‘স্যার..স্যার..নো ডিসটার্বেন্স প্লীজ ইন আওয়ার লার্নিং ম্যাথ…’
অর্থাৎ বাদল যা বলেছে সবাই সেটাই বলে ফেললো সঙ্গে সঙ্গে..বোঝ কান্ড…
কিন্তু তখন বাদল ছেলেটার নরম ফর্সা চকচকে মসৃণ হাতটা টেনে ধরে তাকে নিয়ে অঙ্কের রাহুল স্যার বেরিয়ে গেছেন আর মাত্র ১৩ বছরের একটা বাচ্ছা ছেলের অভাবে এতোক্ষণ যে ক্লাশে পিনড্রপ সাইলেন্স ছিলো সেখানেই ভীষণ হৈচৈ গন্ডগোল চিৎকার আর —
‘নো…নো..নেভার…শেম…শেম…বয়কট ক্লাশ’ এইসব বলে বিশ্রী চেঁচামেচি লেগে গেলো আর সকলেই বেরিয়ে এসে তাঁর সাথে চললো…
বাদলকে এনে দাঁড় করানো হলো সেই প্রিন্সিপাল স্যারের সামনে … তিনি বাদলের লজ্জানত অতি সুন্দর মুখের দিকে হাঁ করে তিন মিনিট তাকিয়ে থেকে বললেন – ‘কি ব্যাপার? আবার এতো হৈ চৈ কিসের হচ্ছে এখন? সব ক্লাশই তো শুরু হয়েছে…’
‘হ্যাঁ স্যার..তবে এই ছেলেটার জন্য এখন আবার গন্ডগোল হচ্ছে যে…অন্য যে সব ক্লাশে অন্য সব ছেলেদের পড়াবার ভার দেওয়া হয়েছিল তারা কেউই পড়াতে পারেনি তাই আগে অতো হৈ চৈ হচ্ছিলো খুব বেশী তবে একে আমি ও ক্লাশে পড়াতে বলে এসেছিলাম আর ও না কি সবাই কি পড়তে চায় তাদের কাছে তাই আগে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিয়ে তখন পড়াচ্ছিলো বীজগণিতের সমীকরণ…যা আমি কবেই সব পড়িয়ে দিয়ে বসে আছি… অবশ্য যেমন শুনলাম তাইতে মনে হলো যে সব ছেলে মেয়ে হয়তো ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি বিষয়টা আর তাহলে ও তো কিছু করবার নেই কেননা ক্লাশে তো হয় গ্রুপ টিচিং তাই এক এক জনকে ধরে তো আর পড়ানো সম্ভব নয়… টিচার আর কি করবে? তবে যে ছাত্র যেমন সে তো তেমনই শিখবে … ক্লাশ তো আর টিউশানের গ্রুপ নয় স্যার…’
‘কি বললেন? সকলে কি পড়তে চায় ও তাই আগে জানতে চেয়েছে আর তখন সেই মতন পড়িয়েছে … ওঃ.. তার মানে প্রবলেম সল্ভিং অ্যাপ্রোচ অ্যাপ্লাই করেছে এই ছোট একটা ছেলে… ওঃ… এই বাচ্ছাটা কি টিচার্স ট্রেনিং নিয়েছে? অসম্ভব…’
‘তার মানে স্যার?…’
‘না কিছু না…আপনি বলুন সবটা..’
‘তা ও যা পেরেছে যেভাবে পেরেছে তাই পড়িয়েছে কিন্ত আমি গেলে কিনা আমাকেই আর ঢুকতে পারমিশানই দিলো না এই দুষ্টু ছেলেটা আর তাইতো তখন আমি রেগে গিয়ে জোর করে ক্লাশে ঢুকে ছেলেটার হাত ধরে টেনে বের করে আনলুম আর তাইতেই গোটা ক্লাশটাই একসাথে লাফিয়ে উঠে আমার ক্লাশই কি না বয়কট করে দিলো.. আর এই ছেলেটা অঙ্কের মতন একটা গুরু গম্ভীর বিষয় পড়াবার সময়ে ও জোক করে গোটা ক্লাশকে হাসিয়ে একেবারে অস্থির করে দিয়েছে.. ছিঃ.. ছিঃ…তাই এই ছেলেটার কঠিন শস্তি চাই এখনই…’
‘হুঁ…দেখছি..অঙ্কের সাথেও জোক? ..অদ্ভূত ব্যাপার … তার মানে অঙ্ক যে একদম একটা সোজা বিষয় তা ও প্রমাণিত করে দিতে চেয়েছে যাতে আর কেউ অঙ্ককে ভয় না পায়… এটা তো সাবজেক্টের ফোবিয়া নিরাকরণ টেকনিক … আপনি বলছেন কি?’
‘আর শুধু কি তাই? সবাইকে বোর্ডের কাছে এক এক করে ডেকে এনে তাদের হাতে চক স্টিক ধরিয়ে দিয়ে তাদের দিয়েই বোর্ডে সব কিছু লেখাচ্ছিলো ও এই দুষ্টু ছেলেটা… কেউ তো আবার নিজে থেকেই উঠে চলে আসছিলো না ডাকতেই আর যাচ্ছেতাই সব দুষ্টুমী ও করছিলো তবে ছেলেটা তার উপযুক্ত জবাব ও দিয়েছে আর সে অতি সাধারণ ভাবেই তবে একেবারে মুখ চুণ করিয়ে ছেড়েছে… উঃ…সে সব আমি আর কি বলবো আপনাকে স্যার?’
‘হুঁ…পার্টিসিপেটারী টিচিং…’
‘কি বললেন স্যার?’
‘না ও আপনি বুঝবেন না তবে বিনা পারমিশানে যে কোন ক্লাশেই ঢোকা যে একটা ঘোর ইনডিসিপ্লিন তা আপনি তো জানেন রাহুল বাবু আর সেই পারমিশান একজন মনীটর ও পড়াবার সময় কোন বাইরে থেকে আসা লোককে এমন কি আমাকে ও না দিতেই পারে কেননা এটা টিচার্স রাইট অফ মেন্টেনিং ক্লাশ ডিসিপ্লিনের আওতায় পড়ে তা ও নিশ্চয় জানেন..’
‘তবে আমি কি নিজের ক্লাশের বাইরেই হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকবো স্যার?’
‘হ্যাঁ…তা তো অবশ্যই থাকতে হবে কেননা তখন তো আর আপনি টিচার নন আর সে তখন যে পড়াচ্ছে সে…মানে এই ছেলেটা আর সে পারমিশান না দিতেই পারে যাতে তার তৈরী করা ক্লাশ রুম টিচিং এনভায়ার্মেন্ট কোন বাইরের এলিমেন্ট হঠাৎ এসে পড়ে নষ্ট না করে দেয়…আর সেটা করলে তখন তো প্রিন্সিপালের ও কিছুই করবার নেই কেননা তখন এই সুন্দর মতন বাচ্ছা ছেলেটাই ক্লাশের কন্ট্রোলার… তা বাদল..তোমার কি কিছু বলবার আছে?’
‘ভেরী ভেরী সরি স্যার,…আমি তো বুঝতেই পারিনি একদম যে কখন স্যার এসে গেছেন…’
‘আচ্ছা..এতো বেশী টিচিং কনশানট্রেশান এইটুকু একটা বাচ্ছা ছেলের .. খুব আশ্চর্য তো ..আচ্ছা রাহুল বাবু আপনি বলুন তো ঠিক এমন ঘটনা এর আগে আর কখনো আপনার ক্লাশে হয়েছে কি?’
‘তা হয়েছে বটে..অন্য ছেলেরা পড়িয়েছে ক্লাশে আমি না থাকলে তবে যে ছেলেটা পড়াচ্ছে তাকে আচমকা সরিয়ে দিতে তখন এমনভাবে একটা গোটা ক্লাশ অস্থির হয়ে ওঠেনি আর আমার পড়ানোও বয়কট করেনি কখনোই..’
‘হুঁ…সবাই এতো উত্তেজিত হয়ে উঠলো কেন একসাথে? তবে কি এটা একটা গ্রুপ হিপনোটিক এফেক্ট? হুঁ…তাই বলে মনে হচ্ছে…আচ্ছা, তখন কি আপনার ক্লাশে ছেলে মেয়েদের মধ্যে কোনো মার্মারিং সাউন্ড ছিলো?’
‘নাঃ .. পিনড্রপ সাইলেন্স ছিলো সত্যি কথা বললে যা আজ অবধি আমার নিজের ও কোন ক্লাশেই থাকে না…’
‘আর সব ছাত্ররাই কি পড়া বুঝছিলো বলে আপনার মনে হয়েছিলো তখন?’
‘হ্যাঁ, সেটা ও বেশ মজার ব্যাপার স্যার.. লাস্ট বেঞ্চের আকাট গুলোও ঘাড় নাড়ছিলো আর অনেক সব প্রশ্ন ও করছিলো..’
‘ওঃ..মাই গড…তবে তো খুবই অন্যায় করা হয়ে গেছে দেখছি… আপনি মনে হয় এটা ঠিকই বলেছেন যে ক্লাশেতে হয় গ্রুপ টিচিং আর তাই একটা পুরো গ্রুপের সবাইকে এক সাথে সমান ভাবে কিছু পড়ানো সম্ভব হলে ও শেখানো হয়ে ওঠে অসম্ভব তবে সেটা সম্ভব হতে ও পারে মাত্র এই ছেলেটার টেকনিকেতেই … তা রাহুল বাবু আপনি যখন পড়ান তখন চক স্টিকটা কার হাতে থাকে বলুন তো দেখি …’
‘কার হাতে আবার থাকবে স্যার? আমার হাতে ছাড়া… অঙ্ক কি চক স্টিক রেখে দিয়ে কখনো পড়ানো চলে না কি? কি যে বলেন আপনি স্যার…’
‘হুঁ…তা তো বুঝেছি আমি তবে এটা যে কি কান্ড তাই তো কিছু বুঝছি না…এতো আমার মনে হয় স্ট্রং গ্রুপ হিপ্নোসিস ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না ….এটা হয় কি ভাবে? তবে মনে হয় এই ছেলেটার কিছু ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা আছে আর ও চাইলেই কিছুই না বুঝে ও এই সাংঘাতিক মেন্টাল পাওয়ারকে কাজে প্রয়োগ ও করে ফেলতে পারে আর তার ফলে তখন এই ছেলেটা যাকে যা করতে বলবে সে তখন তাই করবে….ও যাকে যে ভাবে যা বোঝাবে সবাই তাই সেই ভাবেই বুঝতে বাধ্য হবে …তবে ছেলেটাকে দিয়ে জোর করে করালে কিছুই হবে না …ছেলেটার নিজের মনে ইচ্ছে থাকতে হবে নইলে কোনই কাজ হবে না তা ঠিক…’
‘আজ মনে হয় যে বয়সে সকলের চেয়ে ছোট এই ছেলেটার ওপরে আপনি টিচিং রেসপনসিবিলিটি দেওয়াতে ওর ক্লাশের অনেকেই ওকে বেশ করে হেনস্থা করতে চেয়েছিলো আর তারই প্রতিরক্ষায় মানে সেল্ফ ডিফেন্স মেকানিজমের ফলে এই ছেলেটা নিজের এই সাংঘাতিক মনের ক্ষমতাটা একটু প্রয়োগ করে ফেলেছে বিশেষ কিছু না ভেবে ও বুঝেই আর সবাইকে একেবারে নিজের হাতের পুতুল বানিয়ে ছেড়েছে …ওঃ ..মাই গুডনেস…’
‘তবে আপনিই বলেছেন যে এই ছেলেটার হাতে চক স্টিক ছিলো না আর ও অঙ্কই পড়াচ্ছিলো… ঠিক তো?’
‘হ্যাঁ স্যার… ছেলেটার দুটো হাতই খালি ছিলো আর ও সেই হাত নেড়ে সবাইকে বোঝাচ্ছিলো…’
‘তার মানে শুধু হাতের মুদ্রা…হ্যাঁ পড়াবার সময় মুখের ও হাতের নানা রকমের মুদ্রা ও ভাব ভঙ্গিমা বিদেশের সব নামী আর বিখ্যাত জন প্রিয় মানে ছাত্রদের অতি প্রিয় সব টিচাররাই প্রয়োগ করে থাকেন বলে আমি শুনেছি আর তাই হাত খালি রাখেন তাঁরা তবে পড়াবার বিষয়টা যদি অঙ্ক হয় তখন তো চক স্টিক হাতে রাখতেই হবে আর তখন ও নিজের হাত খালি রাখতে হলে সেটা তো তুলে দিতেই হবে ছাত্রের হাতেই যাতে হাতের মুদ্রায় একটা পুরো ক্লাশকে বশ মানে কন্ট্রোল করে রাখা যায় আর সবাইকে একসাথে সমানভাবে পড়ানো থুড়ি শেখানো সম্ভব হয়…এটা তো তবে টিচিংই নয়…একজন টিচারের হাতে চক থাকবেই কিন্তু এই ছেলেটা আজ ক্লাশে টিচিং করেই নি… তাই চক ও লাগেনি আর ও টিচার ও নয়…’
‘এটা তবে কি স্যার?’
‘ঠিক জানিনা… তবে মনে হয় এ হলো স্পন্টেনাস লার্নি…নিউ জার্সি নর্থ ক্যারোলিনা আরো সব অন্য স্টেটের রিসার্চাররা এখন এই নিয়েই রিসার্চ করছেন বলে আমি শুনেছি আর একজন লার্নারের হাতেই থাকা উচিত কলম বা চক স্টিক…এই ছেলেটা হলো সেই লার্নিয়ের ফেসিলিটেটার বা মোটিভেটার…আপনি সে সব জটিল শিক্ষামনোবিঞ্চানের টেকনিক টেকনোলজি ও কারসাজির কিছুই না বুঝে অকারণ রাগ করে সেই কন্ট্রোলার ছেলেটাকেই মানে স্টিমুলাসকে হঠাৎ করে টেনে সরিয়ে নিয়ে চলে এসেছেন ক্লাশ থেকে আর তাইতেই সবাই তাদের রেসপন্সের একমাত্র কনসানট্রেশান পয়েন্টটাই হঠাৎ হারিয়ে ফেলে ক্ষেপে গেছে মনে হয়…’
‘এটাকে বলা হয় এস –আর বন্ড বা স্টিমুলাস –রেসপন্স বন্ড … এটা যতো বেশী স্ট্রং হবে ততো বেশী করে স্টিমুলাসে পরিবর্তনের সাথেই রেসপন্সের প্যাটার্ণের ও পরিবর্তন ও আপনিই হতে থাকবে…কি? কিছু কি বুঝলেন?’
‘আপনার সব কথাই হাইলি টেকনিক্যাল আর তাই এক বর্ণ ও আমি বুঝলাম না স্যার…’
‘বাইরে চিৎকার আর হৈ চৈ কিন্তু খুব বেড়েই চলেছে আর তাই আমাদের চটপট ওদের কাছে এখনই এই ছেলেটাকে ফেরৎ দিতেই হবে নইলে দারুণ ঝামেলা করবে সবাই মিলে কেননা সবাই ভাবছে যে আমরা এই নির্দোষ ছেলেটাকে ধরে এনে খুব কর্পোরাল পানিশমেন্ট দিচ্ছি অকারণে …’
‘তাহলে এখন কি হবে স্যার?’…’
‘এখন ও সব কথা আপনি বাদ দিন…আমি সাইকোলজি কিছু তবে সামান্যই জানি তাই এই সব বাজে কথা বলে ফেলেছি….তবে আপনি এই ছেলেটাকে অন্তত ক্লাশেই বসিয়ে রাখতে পারতেন..এতে যে দারুণ শক্তিশালী সাইকোম্যাগনেটিক পাওয়ারের হিপ্নোটিক এফেক্টটা সেখানে তৈরী হয়েছিলো সেটা ধীরে ধীরে ক্লোজ হতে পারতো কিন্তু তা তো করা হয়নি আর তার ফলে সবাই উঠে চলে এসেছে কন্ট্রোলারের সাথেই…’
‘সেই গল্পের বীণ বাদকের কথা কি আপনার মনে আছে রাহুল বাবু? যার বীণের সুর শুনে তার সাথে যেমন করে প্রথমে নদীর জলে চলে গিয়ে ছিলো একটা শহরের সব ইঁদুরের পাল আর তার পরে দেশের রাজা তাকে তার পারিশ্রমিক না দিয়ে অপমান করে তাড়িয়ে দেবার পরে তখন দ্বিতীয় বারে সেই দেশের সমস্ত ছোট ছেলে মেয়েরা ও চলে গিয়ে ছিলো দল বেঁধে…’
‘সে তো একটা গল্প কথা স্যার…’
‘হয়তো সেটা ও ছিল সত্যি… শুধুই একটা গল্প নয় … কেননা আপনি জানেন তো যে কথায় আছে…ঝুকতি হ্যায় দুনিয়া ঝুকানে ওয়ালা চাহিয়ে’
‘তবে এই বাচ্ছা ছেলেটা কি করে যে এটা করলো তা মনে হয় ও নিজেই জানে না তবে এটা একটা বেশ অদ্ভূত আর সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার… তবে এই শক্তি না থাকলে সে আর একটা ক্লাশকে পড়াবে…আবার থুড়ি… শেখাবে কি করে? আর অঙ্ক কি কেউ পড়ায়…অঙ্ক এমনই একটা জরুরী বিষয় যা সবাইকেই শিখতে হয় আর ও আপনার হুকুমে তাই তো করেছে মাত্র’
‘তবে এই খুব স্টং সাইকোম্যাগনেটিক হিপ্নো এফেক্টটা আপনি মনোবিজ্ঞান জানলে ঠিকই বুঝতে পারতেন…এটা স্বামী বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে স্যার চার্চিলের মতন বিশ্বের বড়ো বড়ো সব বক্তা জননেতা আর প্রোফেসারেরা তৈরী করতে পারতেন বলে শুনেছি আর তাই তাঁদের ভাষণ সবাই ছুটে এসে শুনতো… আপামর সবাই… স্বামিজী যখন শুধু উঠে দাঁড়িয়ে সম্বোধনে বলেছিলেন …মাই অ্যামেরিকান সিস্টারস অ্যান্ড ব্রাদার্স… তখন কি হয়ে ছিলো তা নিশ্চয়ই জনেন আপনি…আর ম্যানড্রেকের মতন পি সি সরকার নামে একজন যাদুকর ও এটা করতে পারতেন বলে শুনেছি আমি কিন্তু আমাদের স্কুলে পড়া এতোটুকু একটা বাচ্ছা ছেলে কিভাবে এটা করলো …ওঃ..মার্ভেলাস বয়..’
‘তা ওর শাস্তিটা স্যার….?’
‘তা শাস্তি ও তো একটা দিতেই হবে…..আপনি এই ছেলেটার পরণের শার্ট আর প্যান্ট দুটোই খুলে নিন এখনই..’
এই শাস্তির কথা শুনেই তো বাদল একেবারে …না.. স্যার..না না ..করে কাঁদতে লাগলো…
তবে কাঁদলে আর কি হবে?
স্কুলগ্রুপের প্রিন্সিপালের আদেশ বলে কথা… হেডমিসট্রেস ও চুপ…রাহুল স্যার এসে তখনই বাদলের শার্ট আর হাফপ্যান্ট দুটোই খুলতে বসলেন আগে আর তার পরে বাদলের গায়ের গেঞ্জিটা ও টেনে খুলে নিতে যাচ্ছিলেন কিন্তু প্রিন্সিপাল বললেন –‘ও কি করছেন আপনি? থামুন আপনি…আমি কি ছেলেটাকে ল্যাংট করতে বলেছি আপনাকে?’
‘না তা তো ঠিক বলেননি তবে একটা ছেলের জামা প্যান্ট সব খুলে নেবার মানেই তো তাই স্যার আর সেটা তার জন্য শাস্তি যখন…’
‘উঃ…কি দারুণ বুদ্ধি আপনার তবে পজিটিভ পানিশমেন্ট কাকে বলে তা কি জানেন আপনি?’
‘না তো স্যার…’
‘আরে বাবা এটা কোন মাস তা জানেন?’
‘তা আর জানবো না কেন স্যার সেপ্টেম্বর মাস…’
‘হুঁ…তা হলে ছেলেটা এই ক্লাশ এইটে সবে উঠেছে আর মাত্র তিন মাস পড়ছে …ঠিক তো?’
‘তা তো ঠিক তবে তাতে কি হবে স্যার?
‘বলছি…মাত্র এই তিনমাসেই এই ছেলেটার গোটা বীজগণিতের বইটা পড়া হয়ে গেছে তা আপনি কি বুঝতে পেরেছেন?’
‘কই না তো…সে আর আমি কি করে বুঝবো বলুন স্যার?’
‘বুঝবেন ছেলেটার সেল্ফ কনফিডেন্স দেখে… সব অঙ্কই শেখা না থাকলে কি কেউ জানতে চাইতে পারে যে তোমরা কি পড়তে চাও বলো …তখন যদি কেউ দ্বিঘাত বা ত্রিঘাত সমীকরণ অথবা তার অ্যাপ্লিকেশান পড়তে চেয়ে বসতো? আর মাত্র তিন মাসে একবছরের পড়া যে শেষ করতে পারে সেই ছেলেটার আই কিউ কতোটা হাই হতে পারে তা কি আপনি আন্দাজ করতে পারেন? সে একটা সুপার জিনিয়াস ছেলে… তা নইলে কি সে প্রবলেম সল্ভার হতে পারে?’
‘আর ছেলেটার এই বিশেষ ক্ষমতাটা শাস্তির মাধ্যমে স্কুলের কাজে লাগানোই হলো পজিটিভি পানিশমেন্ট …আর সেইটাই আমি চাই যে আজ যেমন ৩৯ জন ছাত্র বাদলের পেছনে ছুটে এসেছে তেমনই কাল এই স্কুলের এক হাজার ছাত্র ও পরশু পুরো স্কুল গ্রুপের দশ হাজার ছাত্র এই বাদল ছেলেটার কথায় উঠবে বসবে মানে চলবে…ওকে উলঙ্গ করে দিয়ে পুরো স্কুলে ঘোরানোটা পজিটিভ নয়… সেটা নেগেটিভ পানিশমেন্ট…আর তার ফল যে কি সাংঘাতিক হতে পারে এই অবস্থায় তা ও কি আপনি কিছুই বুঝতে পারছেন না … গোটা স্কুল কিন্তু ক্ষেপে উঠবে এখনই…আপনি ভূলে যাবেন না যে এখনো এই স্কুলেরই ৩৯ জন ছেলে মেয়ে এই একটা ছেলের সাইকো ম্যাগনেটিক পাওয়ারের কন্ট্রোলেই রয়ে গেছে ….তারা কিন্তু এখন আমাদের কারো কোন কথাই শুনবে না কেননা তারা তো আর কিছু এখন বুঝবেই না…তারা শুধু বুঝবে আর মানবে এই ছেলেটার অর্ডার…বাদল তাদের গিয়ে যা করতে বলবে তারা সঙ্গে সঙ্গে তাই করবে এখনি… একেবারে নির্দ্বিধায়… বুঝলেন কিছু?…’
‘সে… না মানে স্যার আমি তো কিছুই…’
‘তবে কি আপনি আমার কথার সত্যমিথ্যা যাচাই করে দেখতে চাইছেন?’
‘ওরে বাবা না…একদমই না…’
‘আরে বাবা…এতো হাইলি ইন্টেলিজেন্ট একটা ছেলে সুপার সেনসেটিভ তো হবেই কেননা ইন্টেলিজেন্স মানেই তো স্পেসিফিক সেনসেটিভিটি টু নেচার, নেচুরাল পাওয়ার অ্যান্ড সুপার নেচুরাল কসমিক এনার্জি…আর তাই কোন হাইলি ইন্টেলিজেন্ট ছেলে যে কখনো একটা নন সেন্সেটিভ সাধারণ ছেলের মতন খালি গায়ে স্কুল ড্রেস পরে স্কুলে আসবে না তা আমি মনে মনে বুঝেই ওকে চেঞ্জিং রুমে না নিয়ে গিয়ে এইখানেই আপনাকে শুধু ওর স্কুল ড্রেসটা খুলতে বলেছি রাহুলবাবু ওকে অন্য একটা স্পেশাল ড্রেস পরাতে চাই বলে আর আপনি কি না বুঝলেন যে আমি এই অসাধারণ প্রতিভাবান ছেলেটাকে এখন সকলের সামনে ল্যাংট করতে বলছি…’
‘উঃ…আপনাকে বলিহারী…তবে আমার অনুমান যে ভূল নয় তা তো ওর গেঞ্জী জাঙিয়া সব ভেতরে পরে থাকা দেখেই বুঝতে পারছেন… আপনি তো জোর করেই সকলের সামনে ওর পরণের স্কুল ড্রেসটা খুলে নিলেন কিন্তু ও ছেলেটা একদম উলঙ্গ হয়ে গেলো না তো..’
তখন বাদলের জন্য অন্য বিশেষ পোষাক আনতে বললেন প্রিন্সিপাল স্যার…এটা হলো নতুন মনীটরের পোষাক… আজ স্কুলের সব ক্লাশেই মনীটর নিযুক্তির জন্য তিনি মিটিং ডেকে ছিলেন আর তাদের যে বিশেষ পোষাক স্কুল থেকে দেওয়া হবে তা ও তিনি সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছিলেন…
সেইমতো তখন একটা দামী গ্রেভিয়েরা সার্টিংয়ের নেভী ব্লু রঙের ঝকঝকে ফুলপ্যান্ট এনে বাদলকে পরানো হলো…বুকে স্কুলের মনো ও নাম লেখা চকচকে একটা পাঁচ ইঞ্চি লম্বা ও দুই ইঞ্চি চওড়া চকচকে রুপোর প্লেট ও ছোট লাল ব্যাজ বসানো একটা নীলচে মতন সাদা দামী ফুলশার্ট ও পরানো হলো বাদলকে… আর তার সরু লাল স্কুল টাইয়ের বদলে একটা নতুন চওড়া মতন মেরুন রঙের টাই ও পরিয়ে দিয়ে তাইতে…এসজিএম…লেখা একটা ঝকঝকে টাই পিন এনে আটকে দেওয়া হলো আর শার্টটা প্যান্টের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে পরিয়ে একটা চামড়ার কালো বেল্ট লাগিয়ে দেওয়া হলো যার ঝকঝকে স্টিলের বাকলে একটা পাতলা চকচকে সোনার তৈরী দু’টাকার কয়েনের মতন বড়ো গোল চাকতিতে লেখা আছে দেখা গেল-‘স্কুল গ্রুপ মনীটর…’
‘এইবার ছেলেটা একদম রেডী…এখন আপনি এই ছেলেটাকে হাত ধরে নিয়ে আবার ক্লাশে চলে যান.. তবে সবার সামনে ছেলেটার এই নতুন পদমর্য্যাদার কথা বলে একটা আলাদা চেয়ারে বসাবেন ছেলেটাকে আজ থেকে…কোন ক্লাশ মনীটর নিযুক্ত হয়ে থাকলে তার সাথেও বসাতে পারেন তবে এর সাথে কেউ যেন আর কোন অসভ্যতা না করে বা এর গায়ে কেউ যেন ভূলে ও হাত না দেয় কেননা এর হাতে কিন্তু এখন থেকে স্কুল রাস্টিকেশান থেকে শুরু করে ক্লাশ ডিমোশান ও প্রমোশান দেওয়া অবধি অনেক সব স্পেশাল পাওয়ার আছে’
‘দেখবেন এখনই সব গন্ডগোল থেমে যাবে আর আপনিই আর সব ছেলে মেয়েরা নিজেরাই ঠিক ফিরে যাবে এই ছেলেটার সাথে আপনাকে দেখলেই…তবে এই ছেলেটাকে দিয়ে একবার ক্লাশে বলিয়ে নেবেন…
‘আজ এই অবধি থাক কাল আবার পড়লেই হবে …’
রাহুল স্যার বাদলের শাস্তির বহর দেখে হতবাক তবে তিনি বাদলকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে আসতেই হাত পা ছুঁড়ে আর লাফিয়ে দারুণ চেঁচামেচি করতে ও পাগলের মতন স্লোগান দিতে থাকা সব ৩৯ জন ছেলেমেয়েই বাদলকে দেখামাত্রই আগুনে জল পড়বার মতনই ঝপ করে একদম শান্ত হয়ে থেমে গেলো একেবারে…
বাদল একটু হেসে মৃদু স্বরে বললো-‘থ্যাংক ইয়ু অল…কাম আন উইথ মি প্লীজ…’
সবাই একদম শাত হয়ে তখন বাদল ছেলেটার সাথে অনুগতের মতন ক্লাশে চলে এলো চুপটি করে … দেখে তখন কে বলবে যে এই ছেলে মেয়েগুলোই এতোক্ষণ ধরে অতো চেঁচাচ্ছিলো ঠিক পাগলের মতন…কি সব কান্ডই যে হয় না…
বাদল ক্লাশে এসে নিজের দুটো হাত তুলে বললো-‘টেক ইয়োর সীট প্লীজ…আমরা আবার কাল পড়বো সমীকরণ… এখন আমাদের তো স্যার পড়াবেন..তাই…’
তখন আর স্যারের পড়ানো…তিনি তখন বাদলের পদমর্যাদা তার বিশেষ সব পাওয়ার আর তার সাথে ব্যবহারের সব এটিকেটের কথা বলতে আর তার জন্য তখন অন্য চেয়ার আনাতে ব্যস্ত … তিনি স্পষ্ট বলে দিলেন যে আজ থেকে কেউ আর বাদলের সাথে কোনরকম অসভ্যতা করতে বা তার গায়ে একবার হাত ও ছোঁয়াতে পারবে না…তার সাথে খেলা করা তো দূরে থাক কেননা বাদলের হাতে এখন যে কোন ছাত্রকে স্কুল থেকে রাসস্টিকেশান করে দেবার আর ক্লাশ ডিমোশন ও প্রমোশন দেবার মতন অনেক সব পাওয়ারই কিন্তু আছে…
বাদল বললো-‘স্যার, একটা রিকোয়েস্ট করতে পারি আমি?’
‘অবশ্যই … তবে এখন সেটা তোমার অর্ডার হবে রিকোয়েস্ট নয় ’
‘না..না..স্যার..আমি শুধু চাই যে চঞ্চল এই ক্লাশের মনীটর হবে আজ থেকে …’
‘ওঃ…তাই? তা এ আর এমনকি? তুমি চাইলে ও ক্লাশে এখনই প্রোমোশন ও পেতেই পারে তবে আর একটা চেয়ার আর এক প্রস্থ ক্লাশ মনীটরের নির্দিষ্ট পোষাক আনিয়ে দিচ্ছি… তুমি তোমার বন্ধুকে পরিয়ে দিও রিসেসের সময় নিজের এস জি এময়ের জন্য নির্দিষ্ট চেম্বারে নিয়ে গিয়ে… তা হলেই হবে… আমি নোটিফাই করে দিচ্ছি এখনই…’-----
----------------------
জি০সি০ভট্টাচার্য্য বারাণসী
রচনাকাল : ১৩/১০/২০২০
© কিশলয় এবং জি.সি.ভট্টাচার্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।