আলোকবর্তিকা
আনুমানিক পঠন সময় : ১১ মিনিট

লেখিকা : নন্দিতা সরকার
দেশ : India , শহর : সোনারপুর

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , এপ্রিল
প্রকাশিত ১৬ টি লেখনী ৩১ টি দেশ ব্যাপী ১১৬৮০ জন পড়েছেন।
           জরাজীর্ণ  শরীরমন , ঋত্বিকা তার ভারী ব্যাগ নিয়ে বাজার থেকে  আসছিলেন ।চলার শক্তি আস্তে আস্তে কমে এসেছে,তাও জীবন এ বেঁচে থাকতে ও তার দুই অনাথ শিশু কে বাঁচিয়ে রাখতে এটুকু রসদ তো তাকে আনতেই হবে।
    এই হলো ঋত্বিকা। মানে এক সময় এর স্কুল শিক্ষিকা।সারদা বিদ্যাপীঠ  এর বাংলার দিদিমণি।  যিনি এখন অবসর নিয়ে একাই তার জীবন তরণী    বেয়ে চলেছেন।।
      আর অনাথ শিশু দুটির গল্প আছে।কেউ নয় তার একা জীবনে রুমকি তার দেখভাল করতো ,সুদূর বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ও এসেছিল কাজ করতে।খেতে পেতোনা ।রুমকি কে সে কাজের লোকের মত ও রাখেনি।বোনের মতোই থাকতো।অনেক চেষ্টা করেছিল লেখাপড়া শেখাতে।কিন্তু ভবি ভোলবার নয়।কোনো রকম অক্ষর জ্ঞানটুকু করতে পেরেছিল,তাতেই সে বিজ্ঞের জাহাজ  হয়ে তার গার্জিয়ান  হয়ে  উঠেছিল।সে কপট রাগ করলেও ,ভালো যে লাগতোনা তার খবরদারি , তা নয়।সারাজীবন সে সবার জন্য করেই গেছে।তার জন্য কেউ করার নেই। জোর করেনি কেউ তার ভালো টা বোঝাবার।একটা সময় সংসার এর জোয়াল  টানতে টানতে মনে হতো কেউ যদি এর ভাগীদার হতো ,একটু বাঁচতো। আর সেই ভাগীদার পেলো ও,জীবনের চরম ভুলটা করলো  মানুষ না চিনে অভিনয় এ ভুলে ,সুখের মুখ দেখার জন্য জীবনসঙ্গী নির্বাচন করে।তার ফল ও জীবন দিয়ে দিতে হলো,এই সব ভাবতে ভাবতে তার কপালের কাটা দাগ টায় হাত চলে গেলো।এটাই তার সারাজীবনের সুখে থাকার চিহ্ন।
   আনমনে হাঁটতে হাঁটতে ঋত্বিকা অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলো।হঠাৎ কেউ তাকে হাত ধরে রাস্তার একদিকে টেনে নিল।পাস দিয়ে ভারী ট্রাক টা চলে গেলো,তাকিয়ে মনে হলো যমদূত ,তার পাশ দিয়ে চলে গেলো বিশাল মালবাহী ট্রাক, তার দিকে হাত  নাড়তে নাড়তে।
  পাস থেকে কেউ বলে উঠলো ম্যাম এই ভাবে কেউ রাস্তা পার হয়।পাশে দেখলো লম্বা শ্যামলা এক টা ছেলে,ছেলে না বলে লোক বলাই ভালো।নাকের কাছে তিল টা চেনা মনে হলো।
  পাস থেকে তার রক্ষা কর্তা বলে উঠলো চিনতে পারছেন না তো! আমি কিন্তু ঠিক চিনেছি আমার হারিয়ে যাওয়া ম্যামকে,পলাশপুর কে ভুলে গেছেন আপনি ,কিন্তু আমরা আপনাকে ভুলিনি।
   বিস্মৃতির অতল থেকে একটা সুবাস বাতাস বয়ে গেলো।সেইই পলাশপুর,তার প্রথম জীবনের  এক অধ্যায়,তার শিক্ষিকা জীবনের শুরু,স্কুল সার্ভিস কমিশনে তার পোস্টিং হোয়েছিল পলাশপুর,যেখানে গিয়ে প্রথম মনে  হয়েছিল কোনো নির্বাসনে এসেছে।তবে আস্তে আস্তে ওদের সাথে মিশে গিয়েছিল।কারণ ওর তো পড়ানো কাজ ,সে শহরের স্কুল বা গ্রামের স্কুলই হোক।
                   আস্তে আস্তে এই ছাত্রছাত্রী দরদী দিদিমণি কে সবাই আপন করেও নিয়েছিল।কারণ ও বুঝেছিল ওদের আপন না করলে ওরাও ওকে আপন করবেনা।কবে যে ওরা ওর খুব কাছের  হয়ে উঠেছিল বুঝতেই পারেনি।
     পাশে দাড়ানো ভদ্রলোক তাদে ম্যাম বললেন কেনো ?     তিল টা চেনা মনে হচ্ছে।প্রণাম করতে সে বুঝল তার  কোনো কালের ছাত্র হবে। লোকটি হেসে বলল,, আমি রিন্টু।
     মনে পড়ে গেলো সব ,শিক্ষকদের এই ভালো লাগাটা কেউ আটকাতে পারেনা যখন তার পুরনো ছাত্রছাত্রী রা তাদের পাশে এসে তাদের পরিচয় দিয়ে বলে আমি অমুক।নাম করলেই সেই ছোট বেলার মুখটা ভেসে ওঠে  আর তাদের দুষ্টুমি বা মজার ঘটনা ।কুঁড়ি গুলো যে ফোটানোর দায়িত্ব তাদের।ছোট বেলায়   বাবা বা মার হাত ধরে আসে তারা প্রাইমারি থেকে  হাইস্কুল এ ।ভীতু ভীতু মুখে আসা বাচ্চা গুলো কে দেখতে খুব মজা লাগতো যেনো নদী থেকে সাগরে ফেলে দিলে যেমন দসা হয় ,ওদের ও তেমন অবস্থা।বাবা বলে দিলো দিদি মনি দেখবেন বা মাস্টার দেখবেন আপনার ছেলে টা বা মেয়ে  কে।
   হম্ দেখতো তারা কুঁড়ি গুলো কেমন প্রস্ফুটিত হয়ে বিকশিত হতো।চলে যেত যখন স্কুল ছেড়ে বৃহত্তর জগতে বা পাস করে কোথাও একটা চিনচিনে ব্যথা বাজত করুন সুরে।এটাও শিক্ষক জীবনের একটা ভালোর ভিতর মন্দ লাগা অনুভূতি।বিদায় অনুষ্ঠান এ সেই সুর টা আরো মারাত্মক হতো ওদের চোখের জলে।
  যাক তার পাশে এই যে রিন্টু,ইনি কম মারাত্মক জিনিস ছিলেননা। বিচ্ছুর থেকেও বেশি বললে ভুল হবে।তবে একটা গুন ছিল ডাকলেই উনি আগে হাজির হতেন পারুন বা না পারুন।   বড়ো দাদা দিদিদের আগেই উনি এসে হাজির জ্বলন্ত করিৎকর্মা মানুষ,দেখতে ছোট কিন্তু ভাব খানা ---হাম কিসিসে কম নেহি। ছোট তেই পড়া থেকে এই গুলোতে উনি বিশেষ আগ্রহী।
      রিন্টুর   ডাকে তার সম্বিত ফিরলো।"ম্যাম একটু দেখে তো পার হবেন রাস্তা ,কিছু যদি হতো।"হম্ আগে হলে-- হতো না কিছু ___এই বড়ো পৃথিবীর এক‌ক্ষুদ্র মানুষের  জন্য কেউ নেই,কিন্তু এখন যে দুটো আছে যাদের সে ছাড়া কেউ নেই।তাই বললো... হম্ 
 রে বুড়ো হচ্ছি তো - খেয়াল থাকেনা।
      রিন্টু র পরনে খাকি ড্রেস দেখে বুঝতে পারলো পুলিশ ও। জানলো‌ ওর পোস্টিং এখন ওদের  রতুলপুর এ।থানার বড়বাবু।হাসি পায় তার সেই ছোট্ট রিন্টু এখন দারোগা।ঋত্বিকা সাম্য বলতেই  রিন্টু বললো __ম্যাম এত তাড়াতাড়ি পর করে দিলেন ।সাম্য বলে তো কোনো দিন ডাকেননি।এখন তবে....
    ঋত্বিকা হেসে বললো এখন কি রিন্টু বলা যায়।।তুমি দারোগা বলে কথা।
 "ম্যাম এবার কিন্তু রাগ হয়ে যাচ্ছে।আপনি সাম্য বললে আর কথা বলবনা।"এবার সেই ছোটবেলার রিন্টু কে দেখতে পেলো।হাসলো খুব ঋত্বিকা।                            হয়তো এটাই ওদের প্রাপ্য।ছাত্রছাত্রী রা ভোলেনা। আর তারা ও সেই ছোটই থাকে ওদের কাছে।তাই ওকে আগের নামে ফিরে যেতে হলো।বাড়ি অবধি পৌঁছে দিল ও , চা খেতে বললেও চলে গেলো ডিউটি আছে বলে।
       ‌‌    এই সেই ছেলে যার সময়জ্ঞান একদম ছিলনা ।হয় আগে আসতো না হলে ক্লাস শুরু হলে আসতো।কত বকা খেত।আজ হাসি পেলো দেখে এমন সময় নিষ্ঠ বলে।

     কিন্তু  অষ্টম শ্রেণী থেকে ওর একটু পরিবর্তন চোখে পড়ে।অবশ্য এই জীবন  সন্ধিক্ষণে সব বাচ্চা দের পরিবর্তন লক্ষ্য করতো ওরা।নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করতে ওরা প্রস্তুত।তো এমনই এক দিন ক্লাস এ ও      পড়াচ্ছিল  রবি ঠাকুরের "জন্মান্তর"...

আমি ছেড়েই দিতে রাজি আছি সুসভ্যতার আলো, ....

     এক মনে তার প্রিয় কবিতা টা বোঝানোর পর যখন দেখল পাশের ছেলেটার সঙ্গে কথা বলছে রিন্টু ,দেখে ওকে জিজ্ঞেস করলো .. কার কবিতা....চুপ , গল্প করছিল কেনো জিজ্ঞেস করতেই .তর্ক শুরু... রাগে পা থেকে মাথা অবধি জ্বলে যাচ্ছিল ওর অধঃপতন এ।শুনলি না যখন তবে বেরিয়ে যা----- বলতেই দরজার পাসে নয়,গটগট করে বেরিয়ে গেলো।সেদিন     পড়ানোর   মন টা চলে গিয়েছিল।তারপর স্নেহের ছাত্র এর এমন রূপ !কল্পনা ও করেনি। অন্য ছাত্র রাও ও এমন করবে বুঝতে পারেনি বিশেষ করে ওর ক্লাস এ। ও চলে এসেছিল স্টাফ রুম এ।পাশে বসে থাকা মিতালী কে বললো ,মিতালী ও বললো একই কথা ,ছেলেটা বদলে যাচ্ছে,বখাটে ছেলেদের সাথে মেশে।খুব বাজে লাগছিল।কি করে ওকে ফেরানো যায় ভাবছিল।কারণ টিচার রাই তো ওদের বন্ধু এই  বয়স টায়।বিপথে যাবার এই সময় যে তারা,ফ্রেন্ড ফিলোসফার অ্যান্ড গাইড,,,এখনই ওকে ফেরানো দরকার।
    কদিন স্কুলে এলোনা।ছেলেরা বললো ও সাইকেল নিয়ে ঘুরছে ম্যাম,বাড়িতে বলেছে স্কুলে ম্যাম যেতে নিষেধ করেছে।হেড মাস্টার মশাই কে দিয়ে ডেকে পাঠালে- ওর বাবা আসতেই বললো "ম্যাম আপনি ওকে স্কুলে আসতে বারণ করেছেন।কদিন ধরে ভাবছিলাম আসবো আপনার কাছে,আপনার কথা শোনে বলে, ও বিকেল হলেই যারা স্কুলে পড়ে না, ওর থেকে বড়ো ছেলেদের সাথে মেশে,কারো কথা শোনে না...কি করবো অভাবের সংসার এ ,ও আমার আশা ।আমরা সুযোগ পাইনি পড়ার ,ছেলে টা কে মানুষ করতে পরিশ্রম করছি।কিন্তু কি হলো ম্যাম,আপনি দেখুন_ অনেক আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছিল ওর বাবা কে।পরের দিন বাবু আসলেন স্কুলে ,যেনো কিছুই হয়নি।
      ঋত্বিকা বাগানের দল কে নাম ধরে ডাকলে,ওকে ডেকি নি।এমন কদিন করার পর ও বুঝল যে ম্যাম ওকে বাদ দিয়েছে বাগানের কাজে।নিজেই একদিন সবার আগে এসে গাছ পরিষ্কার করছে, দেখে বুঝল অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছে ও। ও আর কিছু না বলে পড়া ধরত আর একদিন গল্পের ছলে বোঝাল।

এর পর 

         কালস্রোতে ওরা উঁচু ক্লাস এ উঠলো,যখন ওরা দশম শ্রেণী তে,তখন ও বাড়ির কাছে স্কুলে আসার সুযোগ পেলো।শুনে তো সবাই ঘিরে ধরলো"যাবেন না   ম্যাম "... ও যে ওদের এত ভালোবাসতো সেটা নিজে ও জানতো না।ক্লাস টেন থেকে বেরোতে পিছনে মনে হলো কেউ আছে।তাকিয়ে দেখলো রিন্টু...মাথা নিচু করে _বলল ম্যাম ক্ষমা করবেন .......ওর মনে ছিলনা।সত্যি কথাই ওরা যা করে তা মনে থাকেও না স্নেহের টানে।বাড়িতে বাচ্চারা দুষ্টুমি করার পর মাও যেমন মনে রাখে না, হয়ত সেই মাতৃ সত্ত্বা থেকেই ওরাও যে কখন ওদের মা সম হয়ে যায় বুঝতে পারেনা।বোঝে ওদের কিছু হলে। রিন্টু বাবু কে বললো "আপনি আমায় ক্লাস এইট এ বাইরে বেরোতে বলেছিলেন-- আমি তর্ক করছিলাম বলে,আমি বেরিয়ে গিয়ে বাড়িতে ও মিথ্যে বলেছিলাম।ম্যাম ক্ষমা করে দেবেন ।
   নিজের অজান্তে ওর মাথায় হাত উঠে গেছিলো।বলেছিল  ঋত্বিকা তার মনেও নেই,       মা বাবা কি মনে রাখে রে ,সন্তান দের দুষ্টুমির কথা।              তুই ভুল বুঝতে পেরেছিস এটাই তোর আত্মোপলব্ধি। পরশুনায় সবাই ভালো হয়না ,কিন্তু ভালো মানুষ হওয়া যায়।সেটাই চেষ্টা করিস।
  সেদিন খুব ভালো লেগেছিল যে     --এত দিনে তার পড়ানো সার্থক হয়েছে।তারপর ওদের সাথে ...সেও...
 "পেয়েছি ছুটি বিদায় দেহ ভাই,সবারে আমি প্রণাম করে যাই" বলে বিদায় নিয়েছিল অসংখ্য ছেলে মেয়েদের চোখের জলের মধ্যে দিয়ে।সত্যি মনে হয়েছিল তার হৃদয় এ রক্তক্ষরণ হলো যেনো,এটা এমন অনুভূতি যে বোঝানো সম্ভব নয়।
      রিন্টু রা  মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল।এসেছিল ওরা ও ওদের আগের পাস করে যাওয়া সবাই।সবাই তার ভালো জীবনের প্রত্যাশী হয়ে
বিদায় জানিয়েছিল।
    নতুন  স্কুলে ,নতুন জীবন শুরু করে,আবার ও নতুন ছেলেমেয়ে পেলো।মা বলত যেখানেই যাবি ছাত্র ছাত্রী তৈরি করতে হয়,শুধু তাদের কাছে টেনে নিতে হয়।পলাশপুর ওর মনিকোঠায় দাগ ফেলে রইলো।ওদের কথা মনে পড়তো।
    কিন্তু নতুন জীবন কিছুদিন ভালো কাটলেও আস্তে আস্তে বুঝল  ওর ভুল জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা ,রাতে বেহেড মাতাল স্বামী এসে চিৎকার চেঁচামেচি,টাকা জোর করে নেওয়া, বলতে গেলে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া,বুঝিয়ে কোনো ফল হয়নি। 
  ওদিকে রুমকি, 
সেলাই শিখতে পাঠাতো ওকে সনির্ভর হতে কিন্তু সেখানেও সে রাম কে নির্বাচন করলো।ওর তোয়াক্কা করেনি।তবে কাজ না করলে ওর ভাত জুটবে না কদিন পড়ে বুঝল যখন ও দুটো যমজ  সন্তান এর জন্ম দিল । 
         ঋত্বিকা ও একা।ওর জন্ম জন্মান্তরের সম্পর্ক -- তাকে, নতুন সংসার পেতে একা  নিঃসীম অন্ধকারে  রেখে  চলে গেছে।সত্যি কথাই সমমনস্ক সমসংস্কৃতির না হলে মেলে না ,বুঝতে বড়ো ভুল  হয়ে গেছে।রুমকি রা বলতে পারে আর ওদের মত শিক্ষিত  মেয়েরা  বলতে পারেনা দগ্ধে মরে।কিন্তু সমাজে এই চিত্র বড়ো ভয়ঙ্কর।
  যাইহোক কাজ করে দিয়ে রুমকি পুঁচকে দুটো কে নিয়ে চলে যেত।ওদের কাছে ঋত্বিকা মামন ছিল। হয় তো কোথাও মাতৃ তৃষ্ণা থেকে ওদের কাছে টেনে নিয়েছিল।কিছুদিন পরে একদিন রুমকি কাজে না আসলে ও ওদের বাড়ি গিয়ে দেখে লোক জমাজমি।ছেলেমেয়ে দুটো তারস্বরে কেঁদে চলেছে।পাশে এক মহিলা এসে কেঁদে বললো রুমকি আর নেইগো দিদিমণি।কাল ওর বর ওকে মদ খাওয়ার টাকা না দেওয়ায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।ওর মনে পড়লো রুমকি কে ও মাইনা দিয়েছিল।একটু বেশি ও ধরে দেয় বাচ্চা দুটির জন্য। রুমকির বর ফেরার ।ও বাচ্চা দুটোকে কোলে তুলে নিয়ে থানায় সব আইনানুক ব্যবস্থা নিয়ে বাড়ি আনে, তুলি আর তুতুল এর সেই থেকেই ও ওদের মামন।
  তুতুল আর তুলি দৌড়ে এসে বলে ভয় পেয়েই,"মামন পুলিশ, ধরতে এসেছে তোমাকে ।কি হবে আমাদের,তুমি চলে গেলে।সত্যি কঠিন প্রশ্ন ওর ।
সত্যি তো ওদের কি  হবে..সে না থাকলে!!!!
 অনেক ফুল নিয়ে ঢুকলেন দারোগা বাবু।প্রণাম করলো পায়ে হাত দিয়ে।তুলি তুতুল অবাক ,,পুলিশ আবার প্রণাম করে !ওদের ওই অবাক ভাব দেখে রিন্টু নিজেই বুঝল ।।।বলল"পৃথিবীর যত বড়ো মহারথী হোন , এই এক জায়গায় সবার মাথা নোয়াতে হয়।"
      তারপর বললো যা ও আশা করেনি।দুটো মানুষের মধ্যে যে কথা কোনদিন বাইরে প্রকাশ হয়নি।।।।
          ম্যাম"অনেক খুঁজেছি আপনাকে,বাবা মারা যাবার পর সংসার অচল ,তখন টাকা পাঠিয়ে আমার পড়ার সব খরচ বহন করেছেন।জানতে পারিনি নি আপনার শর্তে।।মা মারা যাবার আগে এই কথা টা বলে গেছেন।এই দারোগা হওয়া,কি ভাবে কি পথে যেতে হবে অলক্ষ্যে সব বলে দিতেন।আজ শিক্ষক দিবসে আমার শ্রদ্ধার্ঘ আপনাকে।  


     কিন্তু ক্লান্ত শরীর দেখে ও জিজ্ঞেস করতে ,সব শোনার পর ম্লান  মুখে ওর বসে থাকা দেখে ঋত্বিকা ছোট বেলার মত স্নেহ ভরা হাতে মাথায় হাত দিল।বললো   __মরতে তো একদিন হবেই।         
     রোগ নয়,চিন্তা --তুলি আর তুতুল কে নিয়ে।।কে ওদের দেখবে।
 রিন্টু তুলি আর তুতুল এর কাছে গিয়ে বলল ওদের ভার সেই নিলো।অনেক টা নিশ্চিত লাগলো তার আজ মনে হলো সত্যি শিক্ষক দিবসের সেরা  প্রাপ্তি আজ,একজন সত্যি কারের মানুষ তৈরি করেছে ।
       সব শিক্ষক এটাই চায়।রিন্টুর সব খবর ওর মা দিত।কিন্তু মুখটা অনেক বদলে যাওয়ার ফলে চিনতে পারেনি।আজ ওর এই আনন্দের প্রাপ্তি তে তার সন্তান সম  ছাত্র ও তুতুল তুলি কে নিয়ে সর্বপল্লী   কৃষ্ণাণ এর ফটো য় পুষ্পার্ঘ নিবেদন করল সে।।
  ধূপ, দীপ এর গন্ধে চারিদিক  ভরে গেলো আগুনের পরশ মনির ছোঁয়া র মধ্য দিয়ে।

          প্রণাম করে সব শিক্ষকের হয়ে ঋত্বিকা চাইলো এমন মানুষ যেনো সবাই গড়তে পারে -----
যেখানে মনুষত্ব আগে।সেটাই সবার সেরা প্রাপ্তি এই শিক্ষক জীবনে। জ্ঞানের আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত হোক বিশ্ব চরাচর  ব্যক্ত হোক তা জনে জনে।জ্ঞানের আলোকবর্তিকা উদ্ভাসিত হোক  প্রত্যেক ঘরে ঘরে ।আজ সে পেয়েছে তার শিক্ষক জীবনের পরম প্রাপ্তি ।
রচনাকাল : ১/৯/২০২০
© কিশলয় এবং নন্দিতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 25  China : 22  Europe : 1  Finland : 1  France : 9  Germany : 1  India : 279  Ireland : 44  Japan : 1  Russian Federat : 23  
Saudi Arabia : 7  Sweden : 11  Ukraine : 5  United Kingdom : 1  United States : 250  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 25  China : 22  Europe : 1  Finland : 1  
France : 9  Germany : 1  India : 279  Ireland : 44  
Japan : 1  Russian Federat : 23  Saudi Arabia : 7  Sweden : 11  
Ukraine : 5  United Kingdom : 1  United States : 250  
লেখিকা পরিচিতি -
                          নন্দিতা সরকার ১লা জানুয়ারি দক্ষিণ পরগণা জেলার সোনারপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি একজন গৃহবধূ হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষকতার সাথেও যুক্ত। এর পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চাতেও সমান আগ্রহী। কবিতা লেখা তাঁর ভীষণ প্রিয়, এর সাথে সাথে তিনি স্কুলে গীতি আলেখ্যও লেখালেখি করেন। কিশলয় পত্রিকার মাধ্যমেই তাঁর প্রথম অনলাইন পত্রিকায় লেখালেখি করার আত্মপ্রকাশ। 
                          
© কিশলয় এবং নন্দিতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
আলোকবর্তিকা by Nandita Sarkar is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৪১৬৩৯