আমার জীবনের সেরা শিক্ষিকা
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখক : সৌম্যদীপ দত্ত
দেশ : India , শহর : Kolkata

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , আগষ্ট
প্রকাশিত ৪ টি লেখনী ২৪ টি দেশ ব্যাপী ৩৯৪৯ জন পড়েছেন।
তখন আমি নবম শ্রেণীর ছাত্রl সম্ভবত  মার্চ মাসের মাঝামাঝিl একদিন স্কুলে গিয়ে দেখি কিছু নতুন শিক্ষক - শিক্ষিকা এসেছেন l পরে শুনলাম,  তাঁরা বি. এড এর ট্রেনিং এর জন্য এসেছিলেন l

যথারীতি ওনাদের মধ্যেই একজন ম্যাডাম, আমাদের ক্লাসে এসেছিলেন প্রথমবার l বাংলার ম্যাডাম ছিলেন উনি l নাম, সায়ন্তি বারিকl

প্রথম দিন ক্লাসে অদ্ভুতভাবে  অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন আমাদের কাছ থেকে l খুবই জ্বালাতন করেছিলাম ওইদিন  ওনাকে (নতুন শিক্ষক -শিক্ষিকা এলে ,  যেভাবে জ্বালাতন করা হয় আর কি  ) l ভেবেছিলাম হয়তো আমাদের ওপর খুবই রাগ করবেন ,  প্রধানশিক্ষক মহাশয়ের কাছেও নালিশ জানাতে পারেন আমাদের বিরুদ্ধে l

কিন্তু ক্লাস যখন শেষ হলো,  ওনার মুখে সেই হাসিটাই বিদ্যমান ছিল,  যেমনটা ক্লাসে ঢোকার মুহূর্তে  ছিলেন l তখন বুঝলাম অতোটাও রাগ করেন নি তিনি l  নিশ্চিন্ত হলাম ,  নালিশটা  প্রধানশিক্ষক মহাশয় অবধি যাবে না l যদিও পরের সমস্ত স্যার ম্যামকে একইরকমভাবে জ্বালাতন করায় খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন ,  আবার অনেকে নালিশও জানিয়েছিলেন ,  আমাদের ক্লাসে ,  ক্লাস নিতে পারবেন না কেউ l

হ্যাঁ, স্কুলের সবথেকে খারাপ রেকর্ড ছিলো  আমাদের ব্যাচের,  ব্যবহারের দিক থেকে l

তা প্রতিদিনই আমরা অন্তত ওনার ক্লাসে খুবই বিরক্ত করতাম ,  ম্যাডাম খুব একটা বিরক্ত হতেন না  l মাঝে মাঝে  একটু ধমক দিতেন  l  ক্লাস খুবই ভালো নিতেন তিনি ,  ওই বিরক্ত করার মাঝেই l হয়তো উনি আমাদের ওই জ্বালাতন করারই  মাঝে , আমাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা খুঁজে পেয়েছিলেন l যখন ক্লাস নিতেন হয়তো অনেকেই পড়া শুনতো না ,  তবুও এতো জ্বালাতনের মাঝেও ক্লাস নিতেন l শুনিনি কক্ষনো আমাদের সম্পর্কে নালিশ জানিয়েছেন l আমাদের সাথে দিদির মতো ব্যবহার করতেন l

দিনের পর দিন কেটে গেলো প্রথম ইউনিট পরীক্ষা হয়ে গেলো,  এলো গরমের ছুটির  সময় l ছুটির আগের দিন অনেক বি -এড এর শিক্ষক -শিক্ষিকার মুখে শুনেছিলাম, তাঁরা নাকি আমাদের জ্বালাতন থেকে বেঁচে যাবে l কিন্তু ম্যাডামের মুখেই শুনেছিলাম, আমাদের নাকি তিনি মিস করবেন l যাওয়ার দিন ক্লাসের সকলকে চকোলেট খাইয়েছিলেন l এটা ভেবে খুশি হয়েছিলাম , কেউ তো আমাদের মিস করবে  !

তারপর একটানা ছুটি l লক্ষ্য করলাম , বাকি স্যার -ম্যামদের কথা তেমন মনে না পড়লেও ওই ম্যাডামের কথা খুব মনে পড়ছে , মিস করতাম  ওনাকে খুব l অনেক সময় মেসেঞ্জারে খবরা খবর নিতাম l

তারপর অনেকদিন পর স্কুল খুললো,  আবার জ্বালাতন শুরু করলাম তাঁকে l তখন আমাদের ক্লাসের নাম সত্যিই খুব খারাপ হয়ে পড়েছিলো l নাইন , এ -সেকশনকে সবাই খুব নিন্দা করতো l  তবুও তিনি কিছু বলতেন না l ক্লাস নিতে নিতে কখন তিনি প্রায়  সকলেরই প্রিয় শিক্ষিকা হয়ে উঠলেন,  তা বোঝাই  গেলো না l এরকম খারাপ একটা ক্লাসকে অবশেষে সামলাতে পেরেছিলেন তিনি l আমাকে প্রজেক্ট সহ আরও কটা কাজে  অনেক সাহায্য করেছিলেন উনি  l

বার্ষিক পরীক্ষার প্রথমদিন ছিলো  কম্পিউটার l ওইদিনই আমাদের স্কুলে ওনাদের অন্তিমদিন  ছিলো,  ট্রেনিং এর অন্তিম দিন l পরীক্ষার পরে শেষবারের মতো দেখা করলাম ওনাদের সকলের সাথে l বাড়ি ফিরেও একটু  কষ্ট হচ্ছিলো ,  সাহায্য পেয়েছিলাম ওনার থেকে অনেক কাজে , অনেকটা স্নেহও পেয়েছিলাম l

যাই হোক,  ওনার  ছাত্র আমি এখন  l অনেক কিছু শিখেছি  ওনার কাছ থেকে l ওনার কাছ থেকেই  নিজের কাজকে ভালোবাসতে শিখেছি l  অনেক সমস্যায় খুব সাহায্য করেন উনি  l ওনাকে আমি নিজের আদর্শ বলেই মানি l উনি নিজের ছাত্রদের ভাইয়ের মতো মনে করেন l

ভবিষ্যতে যদি শিক্ষক হই তবে  ওনার মতো ভালো  হওয়ার চেষ্টা করবো,  ছাত্র-ছাত্রীদের ভাইয়ের মতো স্নেহ করতে চেষ্টা করবো l ঠিক উনি  যেমনভাবে আমাদের স্নেহ করেন l
রচনাকাল : ৩০/৮/২০২০
© কিশলয় এবং সৌম্যদীপ দত্ত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 3  Canada : 21  China : 21  France : 5  Germany : 2  Hungary : 2  India : 214  Ireland : 10  Russian Federat : 8  Sweden : 10  
Taiwan : 1  Ukraine : 5  United States : 131  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 3  Canada : 21  China : 21  France : 5  
Germany : 2  Hungary : 2  India : 214  Ireland : 10  
Russian Federat : 8  Sweden : 10  Taiwan : 1  Ukraine : 5  
United States : 131  
লেখক পরিচিতি -
                          সৌম্যদীপ দত্ত গোবিন্দপুরে ২৬শে এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। 

উনি বর্তমানে দশম শ্রেণীর ছাত্র।

তিনি এক বছর আগে থেকে লেখালিখি শুরু করেন।

গল্পের বই পড়া, কবিতা পড়া, আবৃত্তি শোনা, সিনেমা দেখা এবং গান শোনা তার পছন্দের কাজ।  
                          
© কিশলয় এবং সৌম্যদীপ দত্ত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
আমার জীবনের সেরা শিক্ষিকা by Soumyadeep Dutta is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৮২৫৬৪
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী