~~~~~ভালোবাসার শেষ চিহ্ন~~~~~
তাতান আজ স্কুল থেকে ফিরেই বলে " মা পঁচিশ তারিখ আমার জন্মদিন, তোমার মনে আছে তো?" সুপর্ণা হেসে বলে " পাগল ছেলে, মা কখনো ছেলের জন্মদিন ভুলতে পারে!"তাতান বলে "আচ্ছা মা, এবছর আমার জন্মদিনে, স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য, তুমি কি রান্না করে দেবে? হঠাৎ সুপর্ণার মনে হয়- আচ্ছা এইকারনে তাতান জন্মদিনের কথা মনে করাচ্ছে।আসলে তাতানদের স্কুলে জন্মদিনের দিন বাড়ি থেকে কিছু রান্না করে নিয়ে গিয়ে পথশিশুদের খাওয়ানো হয়। সুপর্ণার মনে হয় সৌম্য যখন ছিল এসব নিয়ে তাকে কখনো ভাবতেই হয়নি, আজ নিজেকে বড়ো অসহায় মনে হয়।দুই পরিবারের সম্মতি না থাকলেও, বিয়ের পর সৌম্যর ভালোবাসায় কখনো ঘাটতি হয়নি, কিন্তু যেদিন রাতে পথ দুর্ঘটনায় সৌম্যর মৃত্যুর খবর আসে , তার পায়ের তলার মাটি সরে যায়। সৌম্যর মতো অত শিক্ষিত নয় বলে স্বামীর মৃত্যুর পর তার অফিসেই একটা অল্প মাইনের চাকরী তো জুটে যায় কিন্তু তাতে দুটো মানুষেরই কষ্ট করে চলে।তাতান খুব বুঝদার ছেলে, অহেতুক বায়না সে কখনোই করে না।মা ছেলের এই সংসারে দুজন যেন দুজনের বন্ধু। সুপর্ণা জানে তাতানের স্কুলের সবাই জন্মদিনের দিন অনেক ভালো ভালো খাবার নিয়ে আসে,চোখের কোণটা চিকচিক করে ওঠে। একটু যে মাংস এনে রান্না করবো তাও সম্ভব নয়,একে মাসের শেষ ,তার ওপর আবার তাতান এর বই খাতা কিনতে হবে। তাই কি করবে কিছুই ভেবে পায় না।জন্মদিনের আগের দিন অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে মাংসের দোকানে গেলেও সবটুকু দিয়ে মাংস কিনলে বাকী দিনগুলো কি করে চলবে এই ভেবে মুদির দোকানে গিয়ে একটু ভালো চাল, সয়াবিন, গোটা গরম মশলা আর দই কিনে বাড়ি ফেরে। জন্মদিনের দিন খুব ভোরে উঠে ঘরের কাজ, স্নান, পুজো সেরে রান্নাঘরে গিয়ে নিজের অক্ষমতার কাছে হার স্বীকার করলেও, সুপর্ণা খুব মন দিয়ে সয়াবিনের বিরিয়ানি বানিয়ে , তাতানকে ঘুম থেকে ডেকে দেয়।তাতান রান্নাঘরে ঢুকেই বলে" মা তুমি কি মাংস দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করেছো? কি ভালো গন্ধ বেরোচ্ছে"।তাতানের এই আনন্দকে সুপর্ণা কিছুতেই ম্লান হতে দিতে পারে না।বলে " দেখিস পরে কি বানিয়েছি" ।সারাদিন সত্য গোপন করার গ্লানি নিয়ে অফিস থেকে বাড়ি ফিরতেই তাতান জরিয়ে ধরে বলে " জানো মা তোমার রান্না ওদের খুব ভালো লেগেছে। তুমি দেখো আমি যখন বাবার মতো বড় হব তখন তোমাকে অনেক মাংস এনে দেব, তুমি সেদিন মাংসের বিরিয়ানি করে দিও কেমন!" সুপর্ণা তাতানকে জড়িয়ে সৌম্যর ছবির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে"আমি হেরে যাইনি সৌম্য, তুমি শুধু আশীর্বাদ কোরো আমি যেন ওকে মানুষের মতো মানুষ করতে পারি।"
© পারমুন সেনগুপ্ত
(কিশলয় এবং পারমুন সেনগুপ্ত কর্তৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত)
রচনাকাল : ২৪/৮/২০২০
© কিশলয় এবং পারমুন সেনগুপ্ত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।