'স্বাধীনতা' --শব্দটা শুনলেই হাসি পায়।
কেনো জানো?
আমরা 'স্বাধীনতা'--শব্দটা কে নিয়ে যত টা বড়াই করি,ততটা লড়াই করিনা।
কারণ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে আমরা আজও
মুক্ত হতে পারিনি।
বীর বিপ্লবীদের ঝরে যাওয়া এক এক ফোঁটা রক্ত,
তার মূল্য আমরা দিতে পারিনি।
আমরা লোভী,স্বার্থপর,পরশ্রীকাতর,নিন্দুক।
তাই দিনে-রাতে,এখনও আমার ভারত মাকে হতে হয়
নির্যাতিতা, লাঞ্চিতা, অপমানিতা, অসম্মানিতা।
এগুলো কি আমায় আঘাত করে না?
আমি তো আমার মায়ের সন্তান।
যখন ওরা আমার মাকে নিয়ে ছেলেখেলা করে ,আমার মনে হয়,মনে হয় ছুটে
গিয়ে আমি ওদের গুলি করি, কিন্তু পারিনা।
একটা সংসারের জন্য আমার হাত-পা বাঁধা।
সেখানে আছে কিছু মানুষ,যারা ভোর হলেই আমার
মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে এক মুঠো ভাতের আশায়।কোনো 'স্বাধীনতা দিবস'--সেই খিদে মানেনা।
আর আমাকে ছুটতে হয় বাবুর বাড়ী, অনেক দূরে
কাজের জন্য।
ছলে-বলে কৌশলে আজ বাবু আমাকে তার অত্যন্ত কাছের লোক করে নিয়েছেন।
নাওয়া - খাওয়া র সময়ও পাইনা।
অসুস্থ মায়ের ওষুধ কিনি আমার বাবুর দয়ার
পয়সায়।
ছাতার নীচে সুখে বাঁচে সংসার।
আমি বাঁচি,বৃষ্টিতে ভিজি।
তবে আমি কিসের স্বাধীন? কিসের স্বাধীন আমার
মা ?
বলতে পারো,কোথায় আমার স্বাধীনতা?
কোথায় আমার মুক্তি?
আমাকে বাঁচতে হয়,বাবুর হাতের পুতুল হয়ে।
প্রাণ খুলে গাইতে পারিনা,'ও আমার দেশের মাটি'....
ওই যে সীমান্তে যুদ্ধ করছে যারা,আমাদের স্বাধীতার
জন্যে,তারাও তো নিজেরা স্বাধীন নয়।
এক-একটা গুলির হিসাব দিতে হয়।
বিশেষ দরকারে ছুটিও মেলেনা।তাও মনের কষ্ট
বুকে চেপে ওরা গেয়ে যায়,'সারে জহাঁসে আচ্ছা'....
মায়ের কষ্টে যেমন সন্তানের কষ্ট হয়, তেমন কি
সন্তানের কষ্ট মাকে আঘাত করে না?
'হে ভারতমাতা,সর্ব সুন্দর এই পৃথিবীতে আমরা
সবাই বাচঁতে চাই।
তাই কবির লেখায় বলতে চাই,
'একই সূত্রে বাঁধিয়াছি,সহস্র জীবন'।
দেখেছি কার্গিলের সেই বিভীষিকা ময় দিন গুলো--
একের পর এক সন্তান হারাচ্ছেন আমাদের মা,
মৃতদেহ নিয়ে একদিন মাতামাতি,
আজ তারা হারিয়ে গেলো রাতারাতি,
দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া সৈনিকের পরিবার আজ
থাকে অভুক্ত।
'ধনধান্য পুষ্প ভরা' এই দেশে 'পুষ্প'--রাই অকালে
ঝরে যায়।
রক্তাক্ত গালোয়ানের পিচ্ছিল পথে হারিয়ে গেলো
যে সৈনিকেরা,তাঁরাও ওদের মায়ের সন্তান।
তাঁদের ঘিরে একটা সবুজ, সতেজ স্বপ্ন দেখার
চেষ্টা করেছিলো পরিবারগুলো,
টালির চালের ভাঙা টুকরো দিয়ে আসা একফালি
চাঁদের আলো,সেই কথাই বলে।
'চল চল চল, ঊর্ধ্বগগনে বাজে মাদল'....
গাইতে গাইতে ওরা এগিয়েছিলো যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে।
সমাজিক,সাংসারিক সব কারণেই কেবল দোষী
মেয়েরা,পুরুষরা সেখানে ধোয়া তুলসীপাতা।
'নষ্টা মেয়েছেলে', হয় 'নষ্ট পুরুষ' হয় না।
যে মেয়েটি সেদিন ধর্ষিতা হয়েছিলো,
বিবস্ত্র অবস্থায় পরেরদিন তাকে
পাওয়া গিয়েছিলো, তাহলে সে কি স্বাধীন ছিলো?
পথের পাশে ওই যে ছোটো শিশুটা আজ খেতে
পায়না,তার অপরাধ কি? সেও তো স্বাধীন নয়।
জন্মদাত্রী কে আজ কেনো যেতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে,
তার উত্তর 'স্বাধীনতা',তোমার কাছে নেই।
সেই বৃদ্ধ - বৃদ্ধা কে তখন গাইতেই হয়
'ইতনী শক্তি হমে দে না দাতা......'
মুক্তাঞ্চলের প্রাণীরাও স্বাধীন, আমরা নই।
হে ঈশ্বর,”আমাদের শুভ বুদ্ধির স্বাধীনতা দিও।
এই মোর প্রার্থনা বলে,চলে যাই অনেক দূরের
স্বপ্নঘেরা জঙ্গলে।
যেখানে একটা খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে
গাইতে পারবো 'এই আকাশে আমার মুক্তি......'।
রচনাকাল : ১৪/৮/২০২০
© কিশলয় এবং অসীমা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।