রমার মায়ের শরীরটা কিছুদিন ধরে খুব খারাপ ছিল। বুকের ব্যাথাটাও বেড়েছিল। আজ সন্ধ্যে থেকেই যেন একটু বেশিই কষ্ট হচ্ছে রমার মায়ের। আজ আবার রমা বাড়িতেও নেই। আর আকাশ জুড়ে ঘন কালো মেঘের ছায়া। সাথে ঝড়ও উঠবে মনে হচ্ছে। রমার বাবা তিন বছর আগেই মারা গেছে। বাড়িতে এখন মা আর মেয়ে থাকে। মা টিউশন পড়িয়ে সংসার চালাত। এই ক'দিন তো সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। রমা এখন দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। সংসার চালানোর জন্য তাকেই রোজগার করতে হয়। সে প্রথম শ্রেণীতে পড়া একটি ছেলেকে ও তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া একটি মেয়েকে বাড়িতে পড়াতে যায়। এই কদিন আবার মায়ের শরীর অসুস্থ তাই ডাক্তার দেখানো, ওষুধ কেনার টাকাটাও জোগাড় করতে হবে। বাবার মৃত্যুর পর জ্যেঠু তাদের দেখাশোনা করত কিন্তু জেঠিমা সেটাও বন্ধ করে দেয়। আজ রমা পড়াতে গেছে তখনই তার মায়ের শরীর আরও অসুস্থ হয়ে পরে। জল তেষ্টায় গলা ফেটে গেলেও একটু জল দেওয়ায় মত কেও নেই। অনেক কষ্টে নিজেই জল নিতে উঠে আসে বিছানা ছেড়ে কিন্তু পায়ের উপর ভর দিতেই পড়ে যায় রমার মা। চোখ ফেটে জল আসে তার আর শুধু ভাবতে থাকে মেয়েটা কখন যে আসবে, তার যে আর এই কষ্ট সহ্য হচ্ছে না।
প্রায় এক ঘন্টা পর রমা বাড়ি ফিরে দেখল তার মা অচৈতন্য অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। রমা ছুটে এসে মা কে জড়িয়ে ধরে বিছানায় তোলার চেষ্টা করে। তারপর একটা গ্লাসে জল এনে মায়ের মুখে চোখে জল ছিটিয়ে দেয়। মায়ের জ্ঞান ফিরছেনা দেখে রমা কাঁদতে শুরু করে। সে এখন কী করবে ভেবে পায়না। এদিকে বাইরেও প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাছাড়াও অনেক রাত হয়েছে। এইসব ভাবতে ভাবতেই তার মায়ের জ্ঞান ফিরল। কিন্তু তখন আরও অবস্থা খারাপ। জোরে জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেই তার মা। কিছুতেই যেন শ্বাস নিতে পারছেনা, দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। এসব দেখে রমা মাকে ছেড়ে পাশের বাড়িতে জ্যেঠুকে ডাকতে যায়। কিন্তু জেঠিমা তাকে মুখের উপর বলে দেয় যে এই ঝড়-বৃষ্টির রাতে তার জ্যেঠু কোথাও যেতে পারবেনা। তাদের এই অবস্থায় প্রকৃতিও হয়তো রমার পরীক্ষা নিচ্ছিল। কিছু উপায় না পেয়ে রমা একাই এই ঝড়-বৃষ্টির রাতে একটা রিক্সা ডেকে মাকে নিয়ে বেড়িয়ে পরে ডাক্তারের কাছে। তার মনে একটাই জেদ চেপে বসে। সে যেকোনো মূল্যে তার মা কে বাঁচাবেই। বাবাকে হয়তো সে বাঁচাতে পারেনি কারন অনেকটাই ছোটো ছিল রমা তখন, কিন্তু এখন সে কোনোকিছুকেই আর ভয় পায়না। মায়ের জন্য সে কঠিন সময়ের সাথেও লড়াই করতে প্রস্তুত। তাই যতই খারাপ সময় আসুক সে আর পিছিয়ে পড়বে না।
রচনাকাল : ১৬/৫/২০২০
© কিশলয় এবং পায়েল মুখার্জ্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।