কাল সবে নন্দীগ্রাম সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বিতীয় দফা ভোট পর্ব শেষ হয়েছে। তাই নিয়ে সোস্যাল মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া সব সরগরম। আমিও তাই সকাল থেকে বসে বসে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলিতে রাজনৈতীক দলগুলির নেতাদের তর্ক বিতর্ক দেখছিলাম আর ফেলুদার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলাম। লকডাউনের সময় থেকেই ফেলুদার হাতে কাজ কম্ম তেমন একটা নেই। আর মগজাস্ত্রতে শান দেবার রশদ না থাকাতে এমনিতেই ফেলুদার মেজাজ একটু তিরিক্ষি হয়ে আছে। অনেক্ষন ধরে খবরের কাগজটা নারা চারা করতে করতে একরাস বিরক্তি নিয়ে হঠাৎই বিছানার উপর কাগজটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ফেলুদা বলল, "বাঙালী প্রমান করে দিল, রাজনীতির ওপরে আর কিছু নেই রে তপসে। দেখ আজ রাজনৈতীক নেতা নেত্রী থেকে শুরু করে সাধারন মানুষ পর্যন্ত, মৃত্যু ভয় ভুলে নির্বাচন নামক যজ্ঞতে মেতে উঠেছে। দেখ, দু দিন আগে পর্যন্ত করোনা মহামারীর জন্য মানুষ ঘর বন্দী ছিল। কত মানুষ আজো কর্মহীন, এখনও পর্যন্ত স্কুল কলেজগুলোও সম্পূর্ণ রূপে খোলেনি। এক দিকে নেতা নেত্রীরা রোড শো, জন সভা করে চলছে আর এক দিকে দেশে করোনার হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অথচ নেতা নেত্রীদের তা নিয়ে কোন রকম মাথা ব্যথা নেই। এদিকে ডাক্তার স্বাস্থ্য কর্মীরা মরোন্মুখ রোগীদের সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে আর অন্যদিকে সমস্ত সংবাদ মাধ্যমগুলি রাজনৈতীক খবর প্রচার করে টি আর পি বাড়াচ্ছে।"
এমন সময়ে কলিংবেলের শব্দ; দরজা খুলে দেখলাম লালমোহন বাবু; সাথে শালপাতার ঠোঙাতে খাবার। ঘরে ঢুকেই ফেলুদাকে বললেন, "হ্যাপি গুড ফ্রাইডে"। তা শুনে ফেলুদা বলল, "গুড্ ফ্রাইডে তো বুঝলাম, কিন্তু তাতে আপনি হ্যাপি হলেন কিভাবে?" ফেলুদার উত্তরে লালমোহনবাবু হতবাক হয়ে যাওয়াতে, আমি বললাম, "আমি বলছি ফেলুদা, যীশুর ক্রুশবিদ্ধকরণের দিনটি ছিলো শুক্রবার, পবিত্র শুক্রবার এবং ইস্টার ফ্রাইডেও বলা হয়। এই দিনটি যীশুর মহান আত্মত্যাগের স্মরণার্থী, যিনি আমাদের পাপ থেকে বাঁচাতে তাঁর জীবন দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের জন্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি আমাদের জন্য মরেছিলেন। তাঁর মৃত্যু চূড়ান্ত ত্যাগ এবং নিঃশর্ত ভালবাসার একটি উদাহরণ যা আমাদের অনেক কিছু শেখায়। গুড ফ্রাইডে প্রতিটি খ্রিস্টানের জন্য পবিত্র দিন। মূলত খ্রিষ্টানদের দ্বারা পালিত একটি ধর্মীয় ছুটির দিন। এই উৎসবের অন্য নাম হোলি ফ্রাইডে বা গ্রেট ফ্রাইডে। কেউ কেউ একে ব্ল্যাক ফ্রাইডেও বলে থাকেন। যীশু খ্রিষ্টের ক্রুসবিদ্ধকরণ, মৃত্যু ও সমাধিমন্দির থেকে তাঁর পুনরুজ্জীবনের স্মরণে এই দিনটি পালিত হয়।"
ফেলুদা বলল, "ভেরী গুড্ তপসে। আসলে কি জানেন তো লালমোহনবাবু , খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার দিনকে কেন গুড ফ্রাইডে বা শুভ শুক্রবার বলা হবে তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে৷ এমন যন্ত্রণাদায়ক অবসানের মধ্যে 'শুভ' কোথায়? জার্মান-সহ বেশ কিছু জায়গায় এই দিনটিকে বেদনাময় শুক্রবার বলা হয়। তবে এমন নামকরণের একটা ব্যাখ্যা রয়েছে৷ খ্রিস্টধর্মের আদি পর্বের এই কাহিনি নিয়েও উপকথা জড়িয়ে রয়েছে। ইংরেজি নামটির একটি ব্যাখ্যা হল, এটি গড’স ফ্রাইডে’র পরিবর্তিত রূপ। আবার, পবিত্র বা ইংরেজি হোলি অর্থে প্রাচীন ইংরেজিতে ‘গুড’ শব্দটি ব্যবহৃত হত, নামটা সেখান থেকেও এসে থাকতে পারে।" যথারীতি লালমোহন বাবু একটা আস্ত রসগোল্লা ঢুকে যেতে পারে এমন একটা হা করে বললেন "হাইলি সাসপিসিয়াস"। ফেলুদা বলল "এবারে একটু সবকিছু জেনে তারপর বলুন। আপনারও দেখছি আমাদের দেশের নেতা নেত্রীদের মত অবস্থা, তা আপনি এখন কি বই লিখছেন?" লালমোহনবাবু বললেন, "আমার এবারের গল্পটা একদম ফাটাফাটি হবে, তাতে একটু রাজনৈতিক টাচ্ থাকছে, দল বদল থাকছে, থাকছে রোমাঞ্চকর একটা খুন, আর নামটাও ভেবেছি দেবো 'ভোটের ভন্ডামি'। কেমন হবে বলুন তো ফেলু বাবু?"
ফেলুদা, লাল মোহন বাবুর আনা সিঙ্গাড়াতে একটা মোক্ষম কামড় দিতে দিতে বলল, "সবই ঠিক আছে,তবে নামটা বড্ড সস্তা হয়ে যাবে, তার চেয়ে 'রাজনীতির রণনীতি' লিখতে পারেন।" "বাঃ বাঃ বেশ নামটা দিয়েছেন মশাই",বললেন লালমোহনবাবু; আর বললেন, "আজ রাত্রে এই নামকরন করার জন্য আমার তরফ থেকে 'সপ্তপদী' -তে কমপ্লিমেন্টারি ডিনার ফাইনাল। বুঝলে ভাই তপেশ, তোমার দাদা আছেন বলেই আমার ভরসা।" আমার মনেতে তখন সপ্তপদীতে ডিনারের নামে "খেলা হবে"-র ছন্দে 'ডিনার হবে' বোল উঠেছে। হঠাৎ দেখি জটায়ুর ব্যগ থেকে নতুন কটি বই উঁকি দিচ্ছে। ভাবলাম ওনার লেখা নতুন উপন্যাস বোধহয়। জিজ্ঞাসা করতে জটায়ু তার সেই চির পরিচিত কান এঁটো করা হাসি হেসে বললেন, "দেখছো ভায়া তপেশ,কথায় কথায় আসল কথাটাই ভুলে গেছিলাম। যে উদ্দেশ্যে ফেলুবাবুর কাছে আজ আসা সেটাই ভুলে গেছিলাম।" তারপর জটায়ু যা শোনালেন তা শুনে আমারই ভিরমি খাবার জোগার। বললেন ওনার লেখা চরিত্র গোয়েন্দাপ্রবর প্রখর রুদ্র নাকি কিডন্যাপ হয়েছে। আর সেই জন্যই নাকি জটায়ু আজ ফেলুদার স্মরনাপন্ন। তাহলে ঘটনাটি খুলেই বলা যাক।
রচনাকাল : ১০/৪/২০২১
© কিশলয় এবং দেবজিৎ কুণ্ডু কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।