শ্যালক ফোঁটা
সাত সকালেই হুড়োহুড়ি,বাড়াবাড়ি!
ঘুম ভাঙ্গিয়ে গিন্নী বলে,”তাড়াতাড়ি
মুখ ধুয়ে নাও,এখনও যে ঘুমাচ্ছ চাঁদ!
ইচ্ছেটা কি? ভাইফোঁটাটা হোক বরবাদ?
তিন ছোট ভাই,তাদের বৌ,সাত ছেলে মেয়ে,
আসবে এখন,রাত্রে যাবে খেয়ে দেয়ে।
আমি,তুমি,খোকা,খুকু,কাজের বুড়ি,
ঠাকুর,চাকর সব মিলিয়ে মানুষ কুড়ি।
দুই বেলা মোট চল্লিশ জনের খাবার যোগাড়,
দরাজ হাতে সেই পরিমান ক'রবে বাজার।
সব কিছু চাই সেরা জিনিস গুণে,মানে,
কোন রকম ফাঁক না থাকে কোনখানে।
দুপুর বেলায় চিতল-কাতল,গলদা রাতে,
মুরগি,পাঁঠার ঝোল ও কষা দুই বেলাতে।
ফ্রায়েড রাইস,মশলা পনির,চাটনি ও দই,
রকমারি মণ্ডা-মিঠাই চাই রুচিসই।
ভাইফোঁটা তো বৎসরেতে একবারই হয়,
তোমার হাতেই ছেড়ে দিলাম,মান যেন রয়।"
তড়িৎ বেগে পোশাক প'রে বাজার গিয়ে,
সেরা জিনিস কিনি যে সব লিস্ট মিলিয়ে।
ঘন্টা তিনেক বাজার ক'রে রৌদ্রে ঘুরে,
পাঁচশ টাকার কুড়িটি নোট গেলো উড়ে!
গিন্নী দেবে ভাইফোঁটা আর যমকে কাঁটা,
টাকার শোকে যাচ্ছে জ্বলে আমার গা-টা!
শাঁখের আওয়াজ,মহিলাদের উলু-উলু,
সারাটি দিন বাড়িতে আজ হুলুস্থুলু !
লুচি মিঠাই যাচ্ছে উড়ে থালায় থালায়,
মাংস,মাছের গন্ধতে মন টেঁকানো দায়!
শ্যালক-জায়া সুন্দরীরা ঘুরে ঘুরে,
করছে খাওয়ার তদারকি খুশির সুরে!
শিশুগুলো করছে বেজায় লুটোপুটি,
পেয়েছে সব মাতামাতির অবাধ ছুটি।
খাটের উপর উপহার ওই সারি সারি,
নাম করা সব শপিং মলের পোশাক,শাড়ি।
সবাই মেতে আছে কেমন আনন্দেতে,
আমার শুধুই দুঃখ কেন অন্তরেতে?
কয়েক মাইল দূরেই আমার দিদি,ঘরে
বসে থাকেন প্রতি বছর আশা ক'রে।
নাইকো সেথায় আড়ম্বরের ঘনঘটা,
ভাইকে শুধু ভালবাসার একটি ফোঁটা
দেবে বলে বানায় দিদি নাড়ু,মোয়া,
অলিখিত বারণ আমার সেথায় যাওয়া।
দিদি আমায় পায় না বলে অভিমানে,
দেয় ফোঁটা তার ঠাকুর ঘরের সিংহাসনে।
গিন্নী আমার ভাইফোঁটা দেয় প্রতি বছর,
আমিও ভাই,তার কি জানা নেই এ খবর?
মুখচোরা,তাই ভাইফোঁটা নেই এই ললাটে,
'শ্যালক ফোঁটা'দেখেই আমার জীবন কাটে।
সমর কুমার সরকার/শিলিগুড়ি
রচনাকাল : ১৪/১১/২০২৩
© কিশলয় এবং সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।