১৮৮৬ সালে শ্রমজীবী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মালিক ও শোষকদের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়ে জীবন ও রক্ত দিয়েছিলেন। শতবর্ষ পরে তাদের জীবন দিতে হচ্ছে অদৃশ্য ভাইরাসের কবলে, নীতিগত ভ্রান্তিতে ও ভুল পরিকল্পনার কারণে। আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের আত্মাহুতির পেছনে ছিল নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার দাবি। সে দাবি পরিপূর্ণ হলেও কর্মপরিবেশ, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সামাজিক স্থিতিশীলতা, আর্থিক স্থিরতার মতে বহুবিধ বিপদ একবিংশ শতকের অগ্রসর পৃথিবীতেও আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছে শ্রমজীবীদের কর্মক্লান্ত জীবন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রতিক্রিয়ায় শ্রমজীবীদের অবস্থান আরো নাজুক হয়েছে। অনেক নতুন নতুন স্বাস্থ্য ও পেশাগত বিপদ তৈরি হচ্ছে শ্রমিক ও মেহনতী মানুষের সংগ্রামী জীবনের পদে পদে। তদুপরি, প্রযুক্তি, পরিবেশ ও পরিবর্তনের জোয়ারের ফলে নব নব সমস্যা উত্থিত হয়ে কালাপাহাড়ের মতো সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থে যেসব সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে ভাবনা-চিন্তা করার এবং প্রতিবিধান খুঁজে বের করার দরকার আছে মে দিবসকে সামনে রেখে।
ঐতিহাসিক মে দিবস অতীতের সংগ্রাম ও ত্যাগের অভিজ্ঞতায় শ্রমিক শ্রেণির জন্য বিশ্বব্যাপী বর্তমান বিরূপতার অবসান ঘটিয়ে ভবিষ্যতের মসৃণ পথ খুলে দেবে।
নতুন বছরের পূণ্য মে দিবসের অরুণ প্রভাতে ভরে উঠুক শ্রমিক, কৃষক আর মেহনতী মানুষের জীবন ভরে উঠুক পাখিদের আনন্দ কলতানে । আসুক এবার নতুন সকাল, কিছু কথা কিছু গান। কিছু সুন্দর স্বপ্ন, একমুঠো সাদা মেঘ, কিছু মিষ্টি অনুভূতি। আসুক স্বপ্নময় সৃষ্টি। এবার নতুন বছরে মে দিবসের আলোকে রঙিন হোক খেটে খাওয়া মানুষদের আগামী দিনগুলো, সফল হোক তাদের খেয়ে পরে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
মে দিবস জিন্দাবাদ।
আসুন, আজ আমরা লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, সেই সব শ্রমিক, কৃষক আর মেহনতী মানুষ, যাদের চোখের জলের দাম কেউ দিতে পারে না, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সবাই একসাথে সম্মিলিতভাবে সংগ্রাম করি। তাদের দিই মানবিক মর্যাদা। অথবা দুবেলা দুমুঠো খেতে না পাওয়া অনাহারী মানুষগুলোর পাশে এসে সহানুভূতির পরশ দিয়ে তাদের বাঁচার ঠিকানা বলে দিই। সকলে সুস্থ থাকুন, রোগমুক্ত জীবনযাপন করুন এই প্রত্যাশা। জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!
ঐতিহাসিক মে দিবসের কবিতা
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
জাগো রে শ্রমিক, জাগো রে কৃষক
জাগো ওগো সর্বহারা,
আধপেটা খেয়ে কল-কারখানায়
হাতুড়ি চালায় যারা।
যাদের রক্তে, কান্না আর ঘামে
কারখানায় চাকা চলে,
উষর মাটিতে লাঙল চালায়
রোদে পুড়ে ভিজে জলে।
ওরাই মানুষ, ওরাই দেবতা
গাও ওদের জয়গান,
মে দিবসের অরুণ প্রভাতে
দাও ওদের সম্মান।
বন্দী গৃহকোণে সকলেই আজ
মালিক, শ্রমিক, চাষী,
সবাই সমান বড় কেউ নয়
দেখো চেয়ে বিশ্ববাসী।
সাম্যবাদের জয়গানে আজ
মেতেছে বিপুল ধরা,
বাঁচার লড়াই দিকে দিকে আজ
মৃত্যু কোলাহলে ভরা।
জীবন মৃত্যুর সংগ্রামে আজ
বন্ধু এগিয়ে দাও হাত,
অনাহারী যারা পথে বসে কাঁদে
দাও এক মুঠো ভাত।
একটি রুটি পেতে চায় মানুষ
করিছে মানুষ সংগ্রাম,
ক্ষুধাতুর শিশু ক্ষুধায় কাঁদিছে
কে দেবে কান্নার দাম?
ক্ষুধার অন্ন কেড়ে খায় যারা
দেশেতে আনে আকাল,
শ্রমিক মালিক গৃহে বসি কাঁদে
স্বদেশের এই হাল।
বন্ধ হয়েছে বিপণি সকলি
বন্ধ হলো বেচা-কেনা,
লক-ডাউন দিকে দিকে আজ
দিনে দিনে বাড়ে দেনা।
রক্ত নিশান হাতে লয়ে যারা
লড়েছিলো একদিন,
আজিকে তারা মৃত্যু কবলিত
শোধ করো মৃত্যুঋণ।
লালে লাল হয়ে উঠেছে তপন
কৃষক শ্রমিকের খুনে,
করোনার বিষে স্বদেশ ছেয়েছে
মৃত্যুরই জাল বুনে।
মে দিবসের সবুজ প্রভাতে
তুলে ধরো রক্ত নিশান,
গৃহে বন্দী আজ ধনী মহাজন
জাগো রে শ্রমিক কিষাণ।
রচনাকাল : ৩০/৪/২০২২
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।