বসন্ত এসে গেছে....... বসন্তের রং মাখি
আসছে দোলপূর্ণিমা (প্রথম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
আর দিন কয়েক পরেই দোলপূর্ণিমা। পুরাকাল থেকে আমাদের দেশে মহাসমারোহে পালন হওয়া এই দিনটি নিয়ে উত্সানহের অন্ত নেই। তবে গোটা দেশের থেকে দোল উত্সহব বিশেষ চেহারায় ধরা পড়ে মধুরা ও বৃন্দাবনে। সারা বিশ্ব থেকে মথুরা-বৃন্দাবনের হোলি চাক্ষুস করতে সেখানে এই সময় পৌঁছে যান বহু মানুষ। এই বছর দোল উত্সবব পালিত হবে ১৮ মার্চ এবং হোলি উদযাপন হবে ১৯ মার্চ। হিন্দু ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী ফাল্গুদন মাসের পূর্ণিমা তিথি দোল উত্সঠব পালন করা হয়। এর আগের দিনটি ন্যাড়া পোড়া বা হোলিকা দহন নামে পরিচিত।
দোলের আগে এক সপ্তাহ ধরে নানা উত্সাবে মেতে ওঠে শ্রীকৃষ্ণধাম মথুরা ও বৃন্দাবন। মথুরা-বৃন্দাবনে পালিত হয় লাঠমার হোলি। কৃষ্ণের লীলাভূমি নামে পরিচিত মথুরায় দোল উত্স ব যে আলাদা চেহারা পাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পুরাণ কথা অনুসারে এখানেই রাধা ও অন্য গোপিনীদের সঙ্গে দোল খেলতেন কৃষ্ণ। মথুরায় পালিত হওয়া লাঠমার হোলির প্রথা রাধা-কৃষ্ণের আমল থেকেই চলে আসছে বলে মনে করা হয়। ব্রজ কি হোলি, লাঠমার হোলি ছাড়াও বৃন্দাবনের বিখ্যাত বাঁকে বিহারী মন্দিরে খেলা হয় ফুলের হোলি। আবার বৃন্দাবনে বসবাসকারী বিধবা মহিলাদের হোলিও এখানে বিখ্যাত।
উত্তর প্রদেশের মধুরা, বৃন্দাবন, গোকূল এবং নন্দগাঁও-তে ১১ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে হোলির উত্সঁব, চলবে ১৯ মার্চ পর্যন্ত। প্রথম দিন ১১ মার্চ বারসারায় পালিত হয়েছে লাড্ডু হোলি। ১২ মার্চ দ্বিতীয় দিন সেখানেই পালিত লাঠমার হোলি। এরপর ১৩ মার্চ তৃতীয় দিন আবার লাঠমার হোলি হবে নন্দগাঁওতে। ১৪ মার্চ চতুর্থ দিনের উত্সিব হবে বৃন্দাবনে। সেখানে বাঁকে বিহারী মন্দিরে খেলা হবে ফুলের হোলি। ১৫ মার্চ পঞ্চম দিনের অনুষ্ঠান হবে গোকূলে, সেখানে পালিত হবে ছড়িমার হোলি বা লাঠমার হোলি। ১৬ মার্চ ষষ্ঠ দিনের অনুষ্ঠান আবার বৃন্দাবনে। এদিন সেখানে পালিত হবে বিধবাদের হোলি খেলা। ১৭ ও ১৮ মার্চ সপ্তম ও অষ্টম দিনের অনুষ্ঠান হবে মথুরায়। এই দু-দিন সেখানে হোলিকা দহন ও হোলির মূল অনুষ্ঠান পালিত হবে। এরপর ১৯ মার্চ বলদেও-তে হুড়াঙ্গা হোলি খেলে সাঙ্গ হবে এই বছরের হোলির অনুষ্ঠান।
কথিত আছে, ছোটবেলায় কৃষ্ণ তাঁর মা যশোদার কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন, কেন তিনি শ্যামবর্ণ আর রাধা কেন ফর্সা? তখন যশোদা বলেন রাধাকে ভালো করে রং মাখিয়ে দিতে, যাতে গায়ের রং বোঝা না যায়। তখন কৃষ্ণ তাঁর বন্ধুদের নিয়ে রাধা ও অন্য গোপিনীদের রং মাখিয়ে দেন। এর উত্তরে রাধা ও গোপিনীরা লাঠি দিয়ে কৃষ্ণ ও তাঁর বন্ধুদের মারেন। এর থেকে চালু হয় লাঠমার হোলির প্রথা।
এখনকার দিনেও হোলির সময় মথুরা-বৃন্দাবনে পালিত হয় লাঠমার হোলি। মহিলারা মজা করে লাঠি দিয়ে মারতে থাকেন পুরুষদের। মহিলারা গোপিনীদের মতো পোশাক পরেন এবং পুরুষরা সেজে ওঠেন গোপের মতো পোশাকে।
রচনাকাল : ১২/৩/২০২২
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।