পুরাতন বিদায় ..........নতুনের আহ্বান
স্বাগতম নববর্ষ ২০২২ (প্রথম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে/ঝরে ধুলায় ভোর বেলাতে/আমায় তারা ডাকে সাথে- আয় রে আয়। সজল করুণ নয়ন তোলো, দাও বিদায়...। গানে গানে কথাগুলো বলেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আজকের সূর্যাস্ত যেন এই গানের সঙ্গেই একাকার। সব বিদায়ের সঙ্গেই লুকিয়ে আছে এমন আনন্দ-বেদনার কাব্য। সেটা বর্ষবিদায়ের বেলায়ও। বিদায় ২০২১। শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) সূর্যাস্ত আরেকটি খ্রিস্টীয় বছরের সমাপ্তির ডাক দেবে। আর আগামীকালের ভোরের সূর্য পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসবে আরেকটি নতুন বছর। বলতে হবে-স্বাগত ২০২২!
বছরের এই শেষ দিনটিতে এসে ভালো-মন্দ আর আনন্দ-বেদনার স্মৃতিগুলো আরও একবার রোমন্থন করবেন অনেকেই। একইভাবে জীবনের সব ধরনের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে দূরে ঠেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় নতুন করে পথচলার প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন প্রায় সকলে। এছাড়া দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডগুলো মূলত ইংরেজি সালের গণনায় হওয়ায় খ্রিস্টিয় বছর বেশ গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জীবনে। সেদিক বিবেচনায় বিদায়ী বছরটা কেমন গেলো তার হিসাবও কষবেন কেউ কেউ। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর ভাবনায় নানাভাবে মূল্যায়িত হবে বিদায়ী এই বছরটি।
আমাদের ব্যক্তি জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাতীয় জীবনেও বিদায়ী বছরটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। শুরু থেকেই ছিল করোনার প্রভাব। তাই এটা বলাই যায় যে, বছরটা খুব একটা ভালো কাটেনি। অন্তত ঘরবন্দি অবস্থাতেই কেটেছে বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময়। তারপরও রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০২১ বেশ ঘটনাবহুল একটি বছর। নানা ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে, ঘটেছে উত্থান-পতনের ঘটনা। তারপরও এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।
২০২১ সাল বরণ করার সময় কেউ ভাবেনি বছরটি মানব জাতির জন্য এতটা অভিশপ্ত হবে। আতঙ্ক, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তা নিয়েই প্রায় সারা বছর কাটলো করোনা ভাইরাসের ভীতিতে। ২০২১ এর শুরু থেকে শেষ অধ্যায়ে নতুন ভাইরাস ওমিক্রনের আবির্ভাব। এই নিয়ে সারা বিশ্ব আজ আতঙ্কিত। বন্ধ হয়েছে বিমান পরিষেবা, বন্ধ হলো দিকে দিকে একটার পর একটা দেশ। লক-ডাউনের আহ্বান শুনি ২০২২ এর প্রারম্ভে। বিদায় ২০২১ আজ বছরের শেষ দিন।এবার আসুক ২০২২। নতুনের করি আহ্বান। স্বাগতম ২০২২ বর্ষ। বর্তমান বর্ষে বিশ্ব অর্থনীতিকে পঙ্গু করেছে করোনা ভাইরাস। পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠী, প্রায় ৪০০ কোটি মানুষকে মাসের পর মাস ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য করেছে এই মহামারি। প্রায় ৮ কোটি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু বরণ করেছেন প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। এখন দেশে দেশে চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতিদিনই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুবরণ করছে। তবে বছর বিদায়ের আগেই অবশ্য আশার আলো দেখিয়েছে চিকিৎসা-বিজ্ঞান। স্বল্পতম সময়েই আবিষ্কার হয়েছে করোনার ভ্যাকসিন।
করোনার ফলে অর্থনীতির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়েছে। মানুষের চলাচল ব্যাহত হয়েছে। অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কাজের সুযোগ ও পরিধি সংকুচিত হয়েছে। অনেক মানুষকে বেকারত্বের যন্ত্রনা সহ্য করতে হচ্ছে, হবে। শিক্ষার্থীদের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হয়তো ঝরে পড়বে অনেকে। সমাজে দেখা দেবে সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া। সব মিলিয়ে করোনার কারণে ২০২১ সালকে বিদায় জানাতে হয়তো মন ভারাক্রান্ত হবে কম। তবে করোনা যে আমাদের পরিবারের সঙ্গে থাকতে শিখিয়েছে, জীবনের নতুন পথ দেখিয়েছে, নতুন বছর ২০২২ সালকে স্বাগত জানাতে হবে সেই চেতনা আর ভালো কিছুর প্রত্যাশা নিয়েই।
রচনাকাল : ৩১/১২/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।