গান্ধীজি ও তাঁর জীবনকাহিনী (প্রথম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
সারা পৃথিবী জুড়েই প্রতি বছর ২ রা অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিবস পালন করা হয়। মহাত্মা গান্ধীর পুরো নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। গুজরাতের পোরবন্দরে ১৮৬৯ সালের ২ রা অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ২০২১-তে আমরা তাঁর ১৫২তম জন্মবার্ষিকী পালন করতে চলেছি।
গান্ধীজির আদর্শ এবং জীবনবোধ গোটা বিশ্ব পৃথিবীকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর দেওয়া শিক্ষা ও আদর্শ ফিরে দেখি আমরা। বিভিন্ন স্কুলে গান্ধীজয়ন্তী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গান্ধীর কথা, তাঁর কাজ আমাদের আজও অনুপ্রাণিত করে। বিশেষ করে আজকের দিনে এসে দাঁড়িয়ে তাঁর আদর্শ আঁকড়ে ধরার প্রয়োজন ফুটে উঠেছে গোটা বিশ্বেই।
পরাধীন ভারতে গান্ধীজির কথা উদ্দীপ্ত করেছিল গোটা দেশকে। ১৯৩০ সালে তিনি ডাণ্ডি অভিযান শুরু করলে বহু মানুষ এসে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করেন তিনি। গান্ধীজি উপলব্ধি করেছিলেন যে দেশকে সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে শুধু ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করলেই হবে না। স্বাধীনতা চাই জাতপাতের অন্ধকারে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা বাঁধন থেকেও। সেই কারণে দেশ থেকে জাতপাত এবং অস্পৃশ্যতা দূর করার জন্য লড়াই করেছিলেন তিনি। ২০০৭ সালের ১৫ই জুন জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২রা অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
একজন শিক্ষিত ব্রিটিশ আইনজীবী হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিপীড়িত ভারতীয় সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে গান্ধীজি প্রথম তাঁর অহিংস শান্তিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনের মতাদর্শ প্রয়োগ করেন। ভারতে ফিরে আসার পরে তিনি কয়েকজন দুঃস্থ কৃষক এবং দিনমজুরকে সঙ্গে নিয়ে বৈষম্যমূলক কর আদায় ব্যবস্থা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসার পর গান্ধী সমগ্র ভারতব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী স্বাধীনতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ, জাতির অর্থনৈতিক সচ্ছলতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রচার শুরু করেন।
তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণপাত করলেও গান্ধীজির আদর্শ ছিল অহিংসার পথ। হিংসার মাধ্যমে, রক্ত ঝরিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করা যায় না বলে বিশ্বাস করতেন তিনি। গান্ধীজির সেই অহিংসার পথ থেকে আজ অনেক দূরে সরে এসেছি আমরা। তার প্রভাব পড়েছে সমাজের অবক্ষয়েও। গান্ধীজির লাঠিকে আরও শক্ত করে ধরার প্রয়োজনীয়তা আজ খুব বেশি। তাহলেই এই সর্বগ্রাসী অবক্ষয় থেকে সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
রচনাকাল : ৩০/৯/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।