শরতের আগমনী.........পূজার খুশিতে হৃদয় নাচে
শিউলির ডালে ফুটে ফুলকলি (দ্বিতীয় পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
রাতের গভীর যবনিকা পতনের পর আলোয় সেজে ওঠে প্রকৃতি। আর কি ঐ তারাদলের মাঝে ঘোমটা পরে লুকিয়ে থাকা যায়? ‘এবার অবগুণ্ঠন খোলো / গহন মেঘমায়ায় বিজন বনছায়ায় / তোমার আলসে অবলুণ্ঠন সারা হোলো / শিউলিসুরভি রাতে বিকশিত জ্যোৎস্নাতে / মৃদু মর্মরগানে তব মর্মের বাণী বোলো’। শিউলিসুরভি রাত পেরিয়ে ঊষার আলো গায়ে মেখে শরততপনে সিনান করে গাইতে ইচ্ছে করে ‘শরত আলোর কমলবনে / বাহির হয়ে বিহার করে যে ছিল মোর মনে মনে / …. আকুল কেশের পরিমলে / শিউলিবনের উদাস বায়ু পড়ে থাকে তরুতলে’।
শিউলির ডালে যেন প্রেমের কবিতা লেখা হয় – ‘ধরণীর আঁখি যে শিশিরে ভাসে / হৃদয়কুঞ্জবনে মুঞ্জরিল মধুর শেফালিকা’। সেই কবিতা কোনো নাম না জানা নিরাভরণ প্রেমিকার অথবা স্বপনের বেলাভূমিতে আলুলায়িত কোনও প্রেমিকের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। অবশেষে প্রাণের উচ্ছ্বলতায় পরিশীলিত হয় সকালের আকাশ – ‘আজি শরততপনে প্রভাতস্বপনে কী জানি পরাণ কী যে চায় / ওই শেফালির শাখে কী বলিয়া ডাকে বিহগ বিহগী কী যে গায় গো’। এখানেই শান্তি বিরাজ করে। চরম বিরহের জলধারায় স্নাত কবি আপ্লুত হয়ে বলে ওঠেন, ‘তোমার নাম জানি নে, সুর জানি / তুমি শরৎ প্রাতের আলোর বাণী / সারা বেলা শিউলিবনে আছি মগন আপন মনে, / কিসের ভুলে রেখে গেলে আমার বুকের ব্যথার বাঁশিখানি’।
শিউলি আসলে সকালের আলো নিয়ে আসে। বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে আসে। মনের প্রশান্তি নিয়ে আসে। মনপবনের আন্দোলনে কবির আবাহন – ‘ওলো শেফালি , ওলো শেফালি, / আমার সবুজ ছায়ার প্রদোষে তুই জ্বালিস দীপালি’। আর শরতের সুরঝর্ণা স্নাত হয় গোবর নিকোনো শিউলিতলায়। হাজার সুরসঙ্গীতের রাগানুরাগ বর্ষিত হয় এভাবেই – ‘শরতবাণীর বীণা বাজে কমলদলে / ললিত রাগের সুর ঝরে তাই শিউলিতলে’।
শিউলি ফোটার সময় ফুরোলেই শরতের বিদায়ঘণ্টা বেজে ওঠে। শীতের মৃদুমন্দ আলিঙ্গন তখন বলতে থাকে – ‘শিউলি ফোটা ফুরলো যেই ফুরলো শীতের বনে / এলো যে / আমার শীতের বনে এলে যে শূন্যক্ষণে’। শীত এলেই শিউলির তখন মুখ লুকোনোর পালা। একটা অব্যক্ত যন্ত্রনায় মোচড় দিয়ে ওঠে শিউলির অন্তরাত্মা – ‘শীতের বনে কোন সে কঠিন আসবে বলে / শিউলিগুলি ভয়ে মলিন বনের কোলে’।
রচনাকাল : ২৫/৯/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।