আশ্চর্য নয় সত্য......অবাক হলেও সত্য ঘটনা
চতুর্থ খণ্ড (অষ্টম পরিচ্ছেদ)
তথ্য সংগ্রহ ও সম্পাদনা ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
মৃতদের সঙ্গে যৌনমিলন করেন ভারতের যে হিন্দু সাধুরা কেবল কুম্ভমেলার সময়েই অঘোরি সাধুদের দেখা মিলে। এরা ধ্যান করেন, খান, ঘুমান এবং শ্মশানে চারিদিকে চিতায় আগুনে পুড়তে থাকা লাশের পাশেই যৌনমিলনে লিপ্ত হন। এরা নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ান, মানুষের মাংস খান এবং নরকংকালের খুলি থেকে পান করেন। গাঁজায় টান দেন। আর তাদের কেবল জনসমক্ষে দেখা যায় বহুদিন পরপর কেবল কুম্ভমেলার সময়।
ভারতের এই হিন্দু সাধুদের বলা হয় অঘোরি। সংস্কৃত ভাষায় অঘোরি মানে হচ্ছে ভীতিকর নয় এমন কিছু।
কিন্তু বাস্তবে এই অঘোরিদের জীবনযাপনের কাহিনী মানুষের মধ্যে জাগায় একই সঙ্গে ভীতি, কৌতুহল এবং ঘৃণা ।
এই সাধুদের নিয়ে গবেষণা করেছেন লন্ডনের স্কুল অব আফ্রিকান এন্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের অধ্যাপক জেমস ম্যালিনসন। তিনি সেখানে 'সংস্কৃত এন্ড ক্লাসিকাল ইন্ডিয়ান স্টাডিজ' পড়ান।
অঘোরিদের অনেক রীতিনীতি বাইরের লোকজনের কাছে আজব মনে হয়।
জেমস ম্যালিনসনের ভাষায়, "অঘোরিদের এসব রীতির মূল কথা হচ্ছে, তারা অ্যাধাত্মিক মুক্তিলাভের মাধ্যমে ঈশ্বরের সঙ্গে এক হতে চান, আর সেজন্যে তারা বিশুদ্ধতার সূত্রের সীমা ছাড়িয়ে যেতে চান।"
মিস্টার ম্যালিনসন পড়াশোনা করেছেন ব্রিটেনের খুবই অভিজাত স্কুল ইটনে এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি নিজেও একজন মহান্ত বা গুরু। তবে একটি ভিন্ন হিন্দু গোত্রের অনুসারী তিনি, যারা বিশুদ্ধতার সব সূত্র মেনে চলে। অঘোরিদের এসব নিয়ম কানুন তাদের গোত্রে নিষিদ্ধ।
"যা কিছুই গর্হিত বা নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত, তার সব অঘোরিরা ভঙ্গ করতে চায়। সনাতনী ভালো-মন্দের যে ধারণা, সেটা তারা প্রত্যাখ্যান করে।"
"যে পথ ধরে তারা আধ্যাত্মিক সাধনায় লিপ্ত হয়, সেটা পাগলামি এবং বিপদজনক বলে মনে হবে। এরা মানুষের মাংস খায়, এমনকি নিজেদের মল খায়। কিন্তু তারা মনে করে এই কাজ করে তারা চেতনার একটা উচ্চতম পর্যায়ে পৌঁছায়।"
অঘোরিদের মধ্যে যেসব রীতি বা প্রথা চালু রয়েছে, সেগুলো সাম্প্রতিকালের বলেই মনে হবে। অঘোরি শব্দটাই জানা যায় আঠারো শতক থেকে।
তবে এই হিন্দু সাধুরা কাপালিকদের অনেক নিয়ম কানুন অনুসরণ করে। নরমুন্ডু বহনকারী কাপালিকদের সম্পর্কে কিন্তু জানা যায় সেই সপ্তম শতক থেকেই। কাপালিকরা নরবলির প্রথায় বিশ্বাস করতো। কিন্তু এদেরকে এখন আর দেখা যায় না।
অন্য হিন্দু জাতের মতো অঘোরিদের সমাজকে খুব সুসংগঠিত বলা যাবে না। বেশিরভাগ সময় এরা বাস করে দূরের কোন জনবিচ্ছিন্ন এলাকায়। বাইরের দুনিয়ার লোকদের এরা খুব বিশ্বাস করে না। তারা এমনকি তাদের নিজেদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখে না।
অঘোরিরা সাধারণত আসে সমাজের তথাকথিত 'নীচু জাতের' লোকদের মাঝ থেকে। তবে বুদ্ধিবৃত্তির বিচারে এদের মধ্যেও বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ আছে। মিস্টার ম্যালিনসন জানান, একজন অঘোরি নেপালোর রাজার উপদেষ্টা পর্যন্ত হয়েছিলেন।
মাঝে মাঝে মনে হয়, গতানুগতিক জীবনধারা ছেড়ে যাযাবর পাখি হলেই বরং সমস্ত পৃথিবীটা ঘুরে ঘুরে দেখা যেতো। বলুন তো, এমনটা হলে কি খুব মন্দ হতো? মনের ইচ্ছে ডানা মেলে বেড়িয়ে আসা যেতো পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কিন্তু বাস্তবতা অন্য হিসেব জানিয়ে দিয়ে যায়, এসব কেবল রূপ কথাতেই সম্ভব।
রচনাকাল : ৮/৯/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।