আশ্চর্য নয় সত্য......অবাক হলেও সত্য ঘটনা
তৃতীয় খণ্ড (পঞ্চম পরিচ্ছেদ)
তথ্য সংগ্রহ ও সম্পাদনা ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দুর্ধর্ষ নারী গোয়েন্দাদের অভিযানের কথা অজানা নেই কারও। আসল পরিচয় গোপন করে গোপন তথ্য সংগ্রহের এই কাজ তাদের নেশা ও পেশা দুটোই। প্রতি পদে পদে রয়েছে জীবননাশের ঝুঁকি। নারী গোয়েন্দাদের রোমাঞ্চ জাগানো কর্মকা- নিয়ে আজকের রকমারি
ছদ্মবেশে দক্ষ তারা
যে কোনো দেশের গোপন তথ্যগুলো বিশেষ নিরাপত্তা সংস্থার হাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো থাকে। পূর্বানুমতি ছাড়া টপসিক্রেট তথ্যগুলো দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ও অফিসার ছাড়া অন্য কারও কাছে প্রকাশ করা হয় না।
এ ধরনের গোপনীয় তথ্য বিশেষ গুরুত্ব পায় গোয়েন্দাদের কাছে। তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার অন্যতম প্রধান উপায় হলো নিজ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের আসল পরিচয় গোপন করে তথ্য সংগ্রহে নামানো। নারী গোয়েন্দাদেরও মূল কাজটি এর থেকে একটু ব্যতিক্রম নয়। সব সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখার প্রয়াস হিসেবেই নারী গোয়েন্দাদের বিশেষ সফলতা রয়েছে। নারী গোয়েন্দারা গোপনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ছদ্মবেশ নিতে দক্ষ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা আসল পরিচয় লুকাতে অন্য একটি কাজ জোগাড় করে তথ্য হাসিলের পথে হাঁটেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো সূত্র থেকে গোপনীয় তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি সে পথেই হাঁটেন তারা।
এসব ব্যাপারে তাদের বিশেষ অনুশীলন রয়েছে। নারী গোয়েন্দাদের পাতা ফাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা থেকে শুরু করে বিয়ে করার মতো ঘটনাও ইতিহাসে রয়েছে। নারী গোয়েন্দারা টার্গেট খুঁজে পাওয়ার পর তার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। প্রেম না জমাতে পারলে কাজের সূত্র ধরে বন্ধুত্ব ও যোগাযোগ করেন তারা। তবে কোনো নির্দিষ্ট সংস্থার হয়ে গোয়েন্দাগিরিতে এসেছে এমন সংখ্যা বেশি হলেও ব্যক্তিগত কারও ওপর ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেও নারী গোয়েন্দা হিসেবে নাম লিখিয়েছেন এমন উদাহরণও রয়েছে। নারী গোয়েন্দাদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, তাদের প্রধান অস্ত্র রূপ-সৌন্দর্য এবং তারা সহজেই যে কারও সন্দেহের বাইরে থাকতে পারেন। বাস্তবতায় আবেগ ফুটিয়ে তুলতেও তারা বিশেষভাবে দক্ষতার পরিচয় দেন। একজন সেরা নারী গোয়েন্দার এসব গুণাবলি ছাড়াও খালি হাতে মারামারি ও বন্দুক চালনায় বিশেষভাবে দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। নারী গোয়েন্দারা টপসিক্রেট তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি চলমান পদক্ষেপ নিয়ে কর্তৃপক্ষ কী ভাবছে বা কী করতে যাচ্ছে এমন সম্ভাবনার খবরগুলোও পাচার করে থাকেন
সাধারণভাবে এরা সরাসরি নিজে তথ্য পাচার করেন না।
বিভিন্ন সূত্র ধরে এরা খবর গোপনে সরিয়ে ফেলেন।
পরিচয় লুকানো ও ছদ্মবেশ ধরার জন্য এলিট শ্রেণির নারী গোয়েন্দা প্রয়োজনে বছরের পর বছর নিজ পরিবার, দেশ ও কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে সরে থাকেন। বড় বড় মিশনে নারী গোয়েন্দাদের সম্পৃক্ত করা হয় বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। বিচ্ছিন্নভাবে ও বিচ্ছিন্ন জায়গা থেকে এরা একযোগে কাজ করেন। নারী গোয়েন্দারা শুধু যে শত্রুপক্ষের গোপন তথ্য হাতিয়ে নেন তা নয়, শত্রুপক্ষের কাছে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিতেও তাদের জুড়ি নেই। প্রায়শই সূত্র হিসেবে এই নারী গোয়েন্দারা ভুল তথ্য সরবরাহ করে শত্র“পক্ষকে বিভ্রান্ত করে থাকেন। নারী গোয়েন্দাদের আসল পরিচয় কখনই জনসম্মুখে আসে না। তারা কোথায় থাকেন, কি করেন বা তার পরিবার সম্পর্কে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা সংরক্ষণ করা হয়। বিভিন্ন দেশের নারী গোয়েন্দারা একেকজন গোয়েন্দা সংস্থার ‘সিক্রেট এজেন্ট’ হিসেবে গুরুত্ব লাভ করায় তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে বিন্দু পরিমাণে ছাড় দেয় না বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। পৃথিবীর ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিয়েছেন এমন অনেক নারী গোয়েন্দাও রয়েছেন।
ক্রিস্টিনা স্কারবেকের পাঠানো তথ্য ছিল নির্ভুল
ব্রিটিশ স্পেশাল অপারেশন্সের হয়ে যুদ্ধমাঠে সক্রিয় ছিলেন বিখ্যাত নারী গোয়েন্দা ক্রিস্টিনা স্কারবেক। বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ড আক্রান্ত হওয়ার পর এই নারী গোয়েন্দা যুদ্ধতথ্য চুরির কাজ শুরু করেন। তার বিশেষত্ব ছিল কোন পথে সেনাসদস্যরা কখন পার হবে সে সম্পর্কে নিখুঁত তথ্য চুরি করে পাঠানো। তার দেওয়া তথ্য ধরেই হামলা পরিচালনা করা হতো। ক্রিস্টিনা স্কারবেকের তথ্য ছিল নির্ভুল। এ কারণেই আস্থার অপর নাম ছিলেন তিনি। তথ্য চুরি করে তিনি নিজেই ছুটে যেতেন তা পৌঁছে দিতে। একসময় তথ্য নিয়ে পালাতে গিয়ে তিনি শত্রুপক্ষের নজরে পড়েন। সে সময় তিনি পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নাজিদের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। তার ওপর কারাগারে নির্মম অত্যাচার চালানো হতো। কিন্তু সাহসিনী ও বুদ্ধিমতী গোয়েন্দা ক্রিস্টিনা ঠিকই বোকা বানায় নাজিদের এবং কারাগার থেকে পালিয়ে আসেন। কেউ কেউ বলেছেন, তাকে নাকি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে সেটা তথ্যবহুল নয়। ১৯৫২ সালে একটি ক্রুজশিপে ভ্রমণের সময় তাকে হত্যা করা হয়। নেচে-গেয়ে সবাইকে বোকা বানাতেন তিনি
জোসেফাইন ব্যাকার
নৃত্যশিল্পী ও গায়িকা হিসেবে সুখ্যাত জোসেফাইন ব্যাকার যে একজন দুর্ধর্ষ নারী গোয়েন্দা ছিলেন, তা অনেকেই জানতেন না। ফ্রান্সের যুদ্ধদল কৌশলে তার খ্যাতি কাজে লাগিয়ে নারী গোয়েন্দা হিসেবে তাকে ব্যবহার করে। একজন সেলিব্রেটি বলে তার ওপর কোনো সন্দেহ পড়েনি নাজিদের। তাকে সহজেই নাজি বাহিনী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে যাওয়ার অনুমতি দেয়। আর এভাবেই বিভ্রান্তিকে কাজে লাগিয়ে যুদ্ধতথ্য হাতিয়ে নেওয়ার মোক্ষম সুযোগ তুলে নেন জোসেফাইন। তার অপরূপ সৌন্দর্য অনেক উচ্চপদস্থ যুদ্ধসেনাকেও বোকা বানিয়ে দিয়েছিল। তার সঙ্গে মধুর সম্পর্ক স্থাপনে উদ্বুদ্ধ হওয়ার সুযোগ দিয়ে আড়ালে গোপন তথ্য চুরি করতেন তিনি। সেন্ট লুইসের রূপবতী এই নৃত্যশিল্পী প্রায়শ নাচে-গানে মাতিয়ে রাখতেন আর কৌতুকের আড়ালে আসল খবর বের করে নিতেন তিনি। কিন্তু বেশিদিন তিনি গোয়েন্দা কাজ চালিয়ে যেতে পারেননি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো চুরি হওয়ার পর তার ওপর সন্দেহ এসে পড়ায় তিনি সরে আসেন।
বিখ্যাতদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে তথ্য চুরি
মাটা হ্যারি
নারী গোয়েন্দাদের তালিকা করলেই উঠে আসে মাটা হ্যারির নাম। নেদারল্যান্ডসে জম্মগ্রহণকারী এ গোয়েন্দা রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সরিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে পাচার করা কোনো কিছুতেই পিছিয়ে ছিলেন না। শুধু গোয়েন্দা পরিচয় ঢাকার জন্য তিনি এক বৃদ্ধ লোককে বিয়ে করে ইন্দোনেশিয়ায় চলে আসেন।
রচনাকাল : ২৮/৮/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।