শ্রী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী (প্রথম পর্ব)
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৬৭৮৮৪ জন পড়েছেন।
শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ( পৌরাণিক তথ্য)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন বিষ্ণুর অবতার। তার পবিত্র জন্মতিথিকে বলা হয় জন্মাষ্টমী।জন্মাষ্টমীতে ঘরে ঘরে ভক্তরা উপবাস থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা ও পূজা, গীতাযজ্ঞ, জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রা, কৃষ্ণপূজা, পদাবলি কীর্তন করে থাকেন।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রাচীন ধর্মীয় উৎসব। দিবসটিকে কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তীসহ নামেও অভিহিত করা হয়।


পৃথিবী থেকে দুরাচারী দুষ্টদের দমন আর সজ্জনদের রক্ষার জন্যই এ মহাবতার স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। ধর্মগ্রন্থ গীতাও সেই সাক্ষ্য দেয়,………..


‘যদা যদাহি ধর্মস্য গ্লানি ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানম ধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম।
পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম।
ধর্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে।
(জ্ঞানযোগ ৭/৮)


হিন্দু সনাতন বিভিন্ন শাস্ত্রে তার মহিমার কোনো অন্ত নেই, নাম ও উপাধির,…… যেমন বেদে বলা হয়েছে ঋষিকৃষ্ণ ও দেবতাকৃষ্ণ। মহাভারতে রাজর্ষিকৃষ্ণ, শাসক ও প্রজাপালক কৃষ্ণ, অত্যাচারী দমনে যোদ্ধাকৃষ্ণ। ইতিহাসে যাদবকৃষ্ণ ও দর্শনশাস্ত্রে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ কৃষ্ণ। শ্রীমদ্ভগবদ গীতায় অবতারকৃষ্ণ, দার্শনিক কৃষ্ণ, পুরুষোত্তম কৃষ্ণ ও ঈশ্বরায়িত কৃষ্ণ।


দ্বাপর যুগের শেষদিকে মথুরা নগরীতে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের শুভ আবির্ভাব। তার জন্ম অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে, যিনি কিনা তারই মামা। মগধ অধিপতি জরাসন্ধ ১৮ বার মথুরা আক্রমণ করে ব্যর্থ হন। তখন মথুরার রাজা উগ্রসেনের ছেলে কংসকে হাত করতে দুই মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দেন। কংস নিজেও ছিল অত্যাচারী। তার ছিল সিংহাসনের লোভ। জরাসন্ধের সঙ্গে মিলে হয়ে উঠেন আরও দুর্বিনীত। কিন্তু বংশের অন্যান্য যাদবরা চিরশত্রু জরাসন্ধের সঙ্গে আত্মীয়তাকে ধিক্কার জানায়। একসময় কংস উগ্রসেনকে বন্দি করে সিংহাসন দখল করে। তখন আত্মীয়- স্বজন ও বিশেষ করে যাদববংশ বিদ্রোহী হয়ে উঠে। তাদের শান্ত করতে যাদববংশের শুর সেনের ছেলে বসুদেবের সঙ্গে বোন দেবকীর বিয়ে দেন।


বিয়ের পর দেবকী ও বসুদেব রথে করে যাওয়ার সময় কংস দৈববানী শুনতে পান- এদের অষ্টম সন্তানই হবে তার মৃত্যুর কারণ। কংস দেবকীকে হত্যা করতে চাইলে বসুদেব আশ্বস্ত করেন, দেবকীর সন্তান জন্ম নিলে কংসের হাতে তুলে দিবেন। কংস তাদের দুইজনকে কারাগারে বন্দি করেন। এর দশমাস দশদিন পর দেবকী এক পুত্রসন্তান জন্ম দেন। সঙ্গে সঙ্গে কংসের হাতে সন্তানকে তুলে দেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বসুদেব। এভাবে একে একে খুন হয় তাদের ছয় সন্তান। অন্যদিকে, গোকুলে বাস করতেন বসুদেবের প্রথম স্ত্রী রোহিনী। রোহিনীকে দেবকীর সপ্তমগর্ভ দান করা হয়। জন্ম নেয় ছেলে বলরাম। আর দেবকী আবার সন্তানসম্ভবা হলে কারাগারে বসানো হয় কঠোর নিরাপত্তা।


চারদিকে আলোয় উদ্ভাসিত করে অষ্টমী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেন পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ। জন্মের সময় শিশুটি চার হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম ধারণ করেছিল। এ ছাড়া দেহে শোভা পাচ্ছিল মনিরত্নের অলংকার। বসুদেব ভক্তিতে করজোড়ে প্রণাম ও বন্দনা শুরু করেন। বন্দনা ও দেবকীর প্রার্থনা শেষে শ্রীকৃষ্ণ একজন সাধারণ শিশুর রূপ ধারণ করেন। এ সময় দৈবভাবে কারারক্ষীরা ঘুমিয়ে পড়ে। তখন বসুদেব শ্রীকৃষ্ণকে গোকুলে যশোদা ও নন্দের কাছে রেখে আসেন। এদের কাছে কৃষ্ণ বড় হন। বসুদেব কারাগারে যশোদা ও নন্দের সদ্যজাত মেয়েকে নিয়ে আসেন। কংস খবর পেল দেবকীর অষ্টম সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কারাগারে চলে এসে দেবকীর কোল থেকে মেয়েটিকে ছিনিয়ে নিয়ে একই ভাবে পাথরের উপরে আঁছাড় মারতেই মেয়েটি শূন্যে উঠে যেয়েই যোগমায়া মূর্তি ধারণ করে। মহাশূন্যে মিলিয়ে যাওয়ার পূর্বে কংসকে বলে গেলো, “তোমাকে বধিবে যে গোকূলে বেড়েছে সে”।


অর্থাৎ, কৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছে। এর পর পুতনা নামক এক ভয়ানক মায়াবী রাক্ষসী গোকূলে কংস দ্বারা প্রেরিত হয়েছিল , দুষ্ট প্রকৃতির ভোজবংশীয় রাজা কংস পুতনাকে প্রেরণ করেছিলেন শিশু কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য। এরপর কৃষ্ণের খোঁজ চলতে থাকে , কংস…… শ্রীকৃষ্ণের সন্ধান না পেলেও হাল ছাড়ে না,…. কংস তখন ছয়মাস পর্যন্ত বয়সের সব শিশুকে হত্যা করার জন্য পুতনা রাক্ষসীকে পাঠায়। [পুতনা রাক্ষসী স্তনে বিষ মাখিয়ে বিষমাখা স্তন্য পান করানোর ছলে শিশুদের হত্যা করে] কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকে পুতনা রাক্ষসী মারতে পারে না, বরং স্তন্যপানকালে ঘাতক পুতনাই মারা যায়। কিন্তু কংস নানাভাবে ব্যর্থ হন। শ্রীকৃষ্ণ গোকূলে বড় হতে থাকেন। মুক্তির আশায় নিপীড়িত মানুষ তার অনুসারী হয়ে উঠে।


অবশেষে কংস মথুরায় মল্লক্রীড়ার আয়োজন করে আমন্ত্রণ জানান শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামকে। সেখানে কৃষ্ণকে পিষে মারার জন্য পাগলা হাতি রাখা হয়। এছাড়া থাকে চানুর ও মুষ্টির নামে দুই খ্যাতিমান মল্লবীর। কিন্তু অন্তর্যামীরূপে শ্রীকৃষ্ণ কংসের সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়ে মুষ্ঠির আঘাতে হাতি, মুষ্টির ও চানুকে হত্যা করে। কংস সেনাদের অস্ত্র ধারণ করতে বললেও কেউ সাড়া দেয় না। তখন কংস নিজেই অস্ত্রধারণ করে।


কিন্তু কৃষ্ণের লৌহমুষ্ঠির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এভাবে মথুরাবাসীকে অত্যাচারী রাজার হাত থেকে রক্ষা করেন।


হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে এদিনে শুধু উপাবাসেও সাতজন্মের পাপ নষ্ট হয়। তাই এ দিনে উপবাসসহ শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করা হয়। ভগবান শ্রী কৃষ্ণের অষ্টশত নাম পাঠ করা হয়।
রচনাকাল : ২৭/৮/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 1  Germany : 3  India : 35  Ireland : 1  Romania : 1  Russian Federat : 2  Ukraine : 1  United States : 46  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 1  Germany : 3  India : 35  
Ireland : 1  Romania : 1  Russian Federat : 2  Ukraine : 1  
United States : 46  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
শ্রী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী (প্রথম পর্ব) by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৩৯৭৪৫
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী