আশ্চর্য নয় সত্য......অপ্রিয় হলেও সত্য ঘটনা (দশম পরিচ্ছেদ)
তথ্য সংগ্রহ ও সম্পাদনা ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
যে গ্রামের কেউ কাপড় পরে না
অবাক হচ্ছেন? যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ারে অবস্থিত স্পিলপ্লাজ নামক গ্রামে এমনই রীতি! একমাত্র নগ্ন হতে রাজি হলেই সে কিনতে পারবে জমি। অন্যথায় জমিও মিলবে না, মিলবে না বাড়ি-ঘর বা বসবাসের সুযোগ। কারণও আছে, ওই গ্রামে কেউ কাপড়ই পরে না। তাই সেখানে থাকতে চাইলে তাদের মতো করেই থাকতে হবে আপনাকে। নগ্ন বিচের কথা শোনা গেছে, নগ্ন অবকাশযাপন কেন্দ্রের কথাও অনেকের জানা, কিন্তু নগ্ন গ্রাম! হ্যা, দক্ষিণ আমেরিকায় ঘনজঙ্গলে কিছু আদিবাসী আছে যারা এখনও সভ্যতার ছোঁয়া পায়নি। তাদের ব্যাপার হলে ভিন্ন কথা ছিল। কিন্তু সভ্যতার পথপ্রদশক বলে যারা নিজেদের দাবি করে সেই যুক্তরাজ্যে এমন গ্রামের কথা শুনলে অনেকেই হয়ত অবাক হবেন।
তবে গ্রামবাসী অবশ্য নগ্নতার মধ্যে অসভ্যতার কিছু দেখেন না। আর যেখানে ইউরোপ-আমেরিকার সামনের সারির সভ্য দেশগুলোর শিক্ষিতরা নগ্নতার দাবিতে আন্দোলন করছেন, রাস্তার মধ্যে কাপড় খুলে ব্যানার হাতে টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন সেখানে ওই গ্রামবাসীকে অসভ্য বলার সুযোগই বা কোথায়? তারা তো নিজেদের মতো করে থাকছেন, কারও বাড়া ভাতে ছাই দিচ্ছেন না। এটা ওই গ্রামেরই মানুষের কথা।
মজার ব্যাপার হচ্ছে- ওই গ্রামের মানুষ বেশ সচেতন ও সৌখিন। তারা গায়ে কাপড়ের কোন পোশাক না পরলেও রোদ থেকে চোখ বাঁচাতে সানগ্লাস ঠিকই ব্যবহার করেন। গলায় স্বর্নের চেইন এমনকি আঙ্গুলে আংটিও পরেন শখ করে। গ্রামের ভেতর বেশ সমৃদ্ধ বারও আছে। শুধু পোশাকই নেই গায়ে। মোর-৪ নামের একটি টিভি চ্যানেল সেই গ্রামের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নিয়ে একটি ধারাবাহিক ডকুমেন্টরি তৈরি করছে। এর ফলেই নতুন করে আলোচনায় চলে আসে স্পিলপ্লাজ। জানা গেছে, ওই গ্রামের সবাই বস্ত্রহীন। প্রথম দর্শনে একে আর দশটি গ্রামের মতোই মনে হবে। ছবির মতো সুন্দর, বেশ পরিপাটি। কিন্তু আপনার ধারণা পাল্টাতে শুরু করবে যখন আপনি এই গ্রামের কোনো বাসিন্দার দেখা পাবেন। এই গ্রামের বাসিন্দারা গ্রামটিকে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে পুরনো নগ্নতাবাদী অঞ্চল বলে দাবি করেন। তারা এতটাই নগ্নতাবাদী যে আপনি যদি তাদের মতের সাথে একমত না হন তাহলে সেই গ্রামের কেউ আপনার কাছে জায়গা-জমি, বাড়ি-ঘর কিছুই বিক্রি করবে না।
এই গ্রামের বাসিন্দা ৮৫ বছর বয়সী ইছিয়ুট রিচার্ডসন বলেন, আমি বুঝি না এটা নিয়ে এত হৈচৈ করার কি আছে। আমি তো অন্য গ্রামের সাথে এই গ্রামের কোনো পার্থক্য দেখি না। ওরা যেভাবে জীবন ধারণ করে আমরাও সেইভাবে করি। সকালে ঘুম থেকে উঠি, দিনের কাজ শুরু করি, বাজারে যাই, পানশালায় যাই, দুধওয়ালা, পোষ্টম্যানরা আমাদের বাড়িতে আসে। সবই তো স্বাভাবিত, অস্বাভাবিক তো কিছু দেখি না। আমরা শুধু বস্ত্রহীন থাকি, এই যা।
বাস, ট্রেন, ট্রাম অর্থাৎ গণপরিবহনে সব ফ্রি
বাস, ট্রেন অর্থাৎ গণপরিবহনে যাতায়াত করলে পকেট থেকে কোনো অর্থ খরচ হবে না। একদম ফ্রিতে শহরের যেখানে খুশি যখন ইচ্ছা ভ্রমণ করতে পারবেন নাগরিকরা।
এমন অভিনব ও ব্যতিক্রমী নাগরিক সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গ।
শহরের জ্যাম কমাতেই সরকার এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।
২৯ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ অধিবর্ষের দিন থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে লুক্সেমবার্গের পরিবহন মন্ত্রণালয়।
এএফপি জানায়, ইউরোপের এই দেশটির জনসংখ্যা ছয় লাখের কিছু বেশি হলেও এর আয়তন অন্য কোনো দেশের জেলার সমান। মাত্র দুই হাজার ৫৮৬ বর্গকিলোমিটার। যে কারণে দেশটিতে যানজট একটি নিয়মিত সমস্যা। দিন দিন সমস্যাটি আরও প্রকট আকার ধারণ করছে।
এর কারণ খতিয়ে কর্তৃপক্ষ দেখেছে, লুক্সেমবার্গের বেশিরভাগই ব্যক্তিগত যানবাহনে চলাচল করেন। নাগরিকদের মধ্যে বাসে চড়ে মাত্র ৩২ শতাংশ। ট্রেনে ১৯ শতাংশ। বাকি সবাই ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করছেন। এসব গাড়ি রাস্তায় বেরিয়ে পড়লে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
তাই যানজট কমাতে গণপরিবহন ব্যবহারে নাগরিকদের উৎসাহী করছে সরকার।
রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি কমানোর পদক্ষেপে বাস, ট্রেন অর্থাৎ গণপরিবহনে যাতায়াত ব্যবস্থা একদম ফ্রি করে দিয়েছে দেশটির সরকার।
দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রতিদিন গণপরিবহনে যাতায়াত করলে নাগরিকদের ১১০ ডলার খরচ সাশ্রয় হবে।
AFP জানিয়েছে, বিশ্বে গণপরিবহনে নাগরিকদের বিনামূল্যে যাতায়াতের সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত লুক্সেমবার্গেই প্রথম নিল।
যে গাঁয়ের সব মানুষই অন্ধ এমন কি পশুরাও।
বিচিত্র একটি গ্রাম টিলটেপেক, মধ্য আমেরিকার দেশ মেক্সিকোতে অবস্থিত এটি। গ্রামটির চারপাশ ঘন অরণ্যে ঘেরা।
তবে খবরের শিরোনামে গ্রামটির কথা উঠে এসেছে এর প্রাকৃতিক পরিবেশ বিষয়টি নিয়ে।
মেক্সিকোর একটি সংবাদমাধ্যম বলছে, টিলটেপেক গ্রামটির সব মানুষ ও পশুই অন্ধ! তিন শতাধিক জাপোটেক নামের জাতির মানুষ বাস করে এই গ্রামে। জানা গেছে, তাদের প্রত্যেকেই অন্ধ।
শুধু মানুষই নয়, গ্রামের গৃহপালিত পশুগুলোও দৃষ্টিশক্তিহীন।
বিষয়টি এমন নয় যে, গ্রামের অধিবাসীরা সবাই জন্মগত অন্ধ। এই গ্রামে জন্ম নেয়া নবজাতকরা আর পাঁচটা নবজাতকের মতোই সুস্থ-সবল অবস্থাতেই জন্মায়। কিন্তু এক সপ্তাহ পরই দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে তারা।
বিষয়টি খবরে আসার পর বেশ ভাবিয়েছে মেক্সিকো প্রশাসন ও বিজ্ঞানীদের। এর কারণ অনুসন্ধানে নেমেছেন তারা।
এ বিষয়ে গ্রামবাসীর দাবি, লাবজুয়েলা নামে একটি গাছই তাদের এই অন্ধত্বের পেছনে দায়ী। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, অভিশপ্ত ওই লাবজুয়েলা গাছই তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়।
লাবজুয়েলা গাছটি নিয়ে ইতিমধ্যে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু গ্রামবাসীর এমন অভিযোগের সত্যতা মেলেনি বলে জানিয়েছেন তারা।
ওই গাছের সঙ্গে তাদের দৃষ্টিহীনতার কোনো সম্পর্কই নেই। তা হলে কেন এভাবে দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছেন জাপোটেকরা?
অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে বিজ্ঞানীদের সামনে। তারা দেখেন যে ঘন অরণ্য গ্রামটিকে ঘিরে রেখেছে সেখানে বসবাস রয়েছে ‘ব্ল্যাক ফ্লাই’ নামের এক প্রজাতির বিষাক্ত মাছির।
টিলটেপেক গ্রামে মাছিটির অবাধ বিচরণ রয়েছে। এই বিষাক্ত মাছির কামড়ে জীবাণু সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলেই শিশু থেকে বুড়ো এবং পশুরাও ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে।
বিজ্ঞানীদের এমন তথ্যে নড়েচড়ে বসে মেক্সিকো সরকার। অঞ্চলটি মানুষের বসবাসের অযোগ্য জানিয়ে গ্রামবাসীকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ নেয় মেক্সিকো প্রশাসন।
কিন্তু অদ্ভুত কারণে টিলটেপেক গ্রাম ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি হচ্ছেন না গ্রামবাসী।
এক মায়ার জাদুতে অন্ধত্বকেই বরণ করে নিতে রাজি তারা। তা ছাড়া মাছির কামড়ে তারা অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন বিষয়টিও মেনে নিচ্ছেন না গ্রামবাসীর অনেকেই।
তবে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিতে মেক্সিকো সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
রচনাকাল : ২৫/৮/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।