ভূতশুদ্ধি
জীবদ্দশায় যার যা পেশা,মরার পরেও তাই
করতে হবে,ভূত জগতে নিয়ম এমনটাই!
ময়নাগুড়ির সুভাষ শীলের স্ত্রীরোগ ছিল পেশা,
অপঘাতে ভূত হয়ে তাই বেড়েছে দুর্দশা!
জীবনকালে সুখেই ছিলেন স্ত্রীরোগবিশারদ,
চরিত্র নয় তেমন ভাল,স্বভাব বড়ই বদ!
কারণে ও অকারণেও রোগীনি শরীরে
পরখ করার কপট ছলে হাত বুলাতেন ধীরে।
সেই পাপেতে বজ্রাঘাতে মরেন অপঘাতে
বর্ষাকালের এক বিকালে যখন ছিলেন ছাতে!
অপঘাতে মৃত্যু মানেই প্রেত হওয়া তার পাকা,
শরীর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন শূণ্যপথে একা!
নির্জনতা নেই শহরে,ঠাঁই মেলে না তাই,
অনেক খুঁজে পৌঁছে গেলেন হঠাৎ আচমকাই
ময়নাগুড়ির শ্মশানঘাটের লাগোয়া জঙ্গলে,
ভূত-পেত্নী থাকে যেথায় দঙ্গলে দঙ্গলে।
স্বভাব কারো যায় না শুনি মরার পরেও হায়,
যে যে রকম,মরার পরেও তেমনি থেকেই যায়!
থাকতে মানুষ রঙ্গীন ফানুস যেসব পুরুষ নারী,
করেন কেবল লুকিয়ে পিরিত,যৌন কেলেঙ্কারি,
অপঘাতে মরার পরেও স্বভাব একই থাকে,
প্রেত জগতে তারাই ভোগে নানান দুর্বিপাকে।
মানুষ যখন ছিলেন সুভাষ স্ত্রীরোগ ছিল পেশা,
মরার পরেও মেটেনি তাই রোগী দেখার নেশা।
আঁধার রাতে বিশাল বটের মগডালেতে বসে
রোগীনি কে ক'জন এলো,তারই হিসাব কষে!
প্রেতলোকেতে ডেলিভারির নেই বটে দুর্ভোগ,
তবুও ওই পেত্নীগুলোর মনেই যৌন রোগ!
নিয়ম মেনেই সুভাষ শীলের ডেরায় আসে যায়,
শরীর দেখায়,গল্প করে,মুখ ঢাকে লজ্জায়!
হাড় খটাখট্ পেত্নীগুলোর শুঁটকো শরীর ছাই!
স্বভাব বশে সুভাষ বসে পরখ করে তাই।
একঘেঁয়েমি বসলে চেপে মানুষ তো কোন ছার!
প্রেতজগতের পেত্নী,ভূত ও হয় তাতে জেরবার।
একই জিনিস ক্রমাগত করলে বহু কাল,
ক্লান্তি আসে,হতাশাতে চিন্তাও খায় টাল।
সুভাষ ভাবে,জীবনকালে যা করেছি ভুল,
প্রেত জগতে কার্য কেন করবো সমতুল?
ভূত হতে চাই মুক্ত হতে,মুক্তি কোথায় পাই?
ইচ্ছা জাগে শ্মশান চিতায় ঝাঁপ দিয়ে হই ছাই।
রাত গভীরে অন্ধকারে জ্বলছিলো শবদেহ,
সুভাষ গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে,টের নাহি পায় কেহ!
সর্বগ্রাসী আগুন তারে পুড়িয়ে করে শেষ,
বায়ুপথে যায় মিলিয়ে থাকে না তার লেশ।
জৈব বিবর্তনের পথে জন্ম নিলে পুনঃ,
জানি না সে মানুষ না কি পশু হবে কোন?
স্ত্রীরোগ বিশারদ যাহারা তাদের অনুনয়,
সুভাষ শীলের মত জীবন না হয় অপচয়।
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
রচনাকাল : ৩০/৭/২০২১
© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।