আমি মরার পরে যদি
আমি হঠাৎ বিদায় নিলে,খবর যদি পাও,
জানি,কি কি ক'রবে সবাই,বলছি,শুনে নাও!
সর্ব প্রথম,'মরেছে কি?যাচাই প্রয়োজন',
মোবাইলে হয়তো কেহ করবে আমায় ফোন!
দেখবে যখন ফোনের পরেও কোনই সাড়া নাই,
ভাববে মনে,'ঠিক ভেবেছি,বুড়োটা আর নাই।'
গ্রুপে গ্রুপে খবর যাবে,"খবর জানেন কেহ?
শিলিগুড়ির বুড়ো বোধ হয় ত্যাগ করেছে দেহ!
কোন বুড়োটা? যে বুড়োটা লিখতো হাসির ছড়া?
কি ক্ষতি আর?এমনিতেও ছিল ঘাটের মড়া।
ফুসফুসে ওর দম ছিল না,লিখত বাজে যা-তা!
মরেছে তো কি হয়েছে?কিসের মাথা ব্যথা?'"
কেউ হয়তো বলবে ফোনে,"জানিস রে প্রণতি?
শিলিগুড়ির বুড়ো কবির হয়েছে সদগতি!
গ্রুপে ছিলো,উনার ছবি ফেসবুকেতে দিয়ে,
দুঃখ প্রকাশ করবি সবাই ইনিয়ে-বিনিয়ে!
মনে মনে গালি দিলেও রাখবি সে সব চেপে,
বলবি ভাল ভাল কথা,হিসাব করে মেপে।
লিখবি,বড়ই ভাল ছিল দিলখোলা ওই কবি,
অকালেতে ঝরে গেলো,এখন শুধুই ছবি!
অতি শোকে পাথর মোরা,বন্ধ খাওয়া-দাওয়া,
বন্ধ কদিন টি ভি দেখা,বাথরুমেতে যাওয়া!
কি আর করি?ভাগ্য লিখন,সবার যেতে হবে,
উনি না হয় আগেই গেছে,সুখেই সেথায় রবে।"
কেউ হয়তো বলবে ফোনে,"হ্যালো,তথাগত?
খবর পেলাম,শিলিগুড়ির কবিটা প্রয়াত?
খবর আমায় পাঠিয়েছে যদুগোপাল জানা,
ঐ বুড়ো রে!হাসির ছড়া লিখত যে রে নানা!
ছন্দজ্ঞানের 'ছ' জানে না,তবুও লেখা চাই,
ফেসবুকেতে ছড়িয়ে আছে এমন হাজার ছাই!
পরলোকেও লিখবে ছড়া,পড়বে অশরীরী,
বেশ হয়েছে,টেঁসে গেছে,বয়েই গেছে ভারি!
ফ্রেন্ড-তালিকায় নাম ছিল,তাই বন্ধু ছিলেন বটে!
দিই জানিয়ে খবরটা তাই যা গিয়েছে ঘটে।
আজ গ্রুপেতে শোক জানাবো বুড়োর ছবি গুঁজে,
আমরা কত শোক পেয়েছি নিজেই যাবেন বুঝে।"
তার পরেতেই খুলে সবাই 'বন্ধু তালিকা'-টি,
ঘ্যাঁচাৎ করে ডিলিট মেরেই নামটি দেবে ছাঁটি।
যার যেখানে ছড়িয়ে আছে আমার লেখাগুলি,
মুছে দিয়ে করবে তা সাফ,আমায় যাবে ভুলি।
বিধিমতে কালের স্রোতে স্মৃতিও হবে লীন,
রইবে না দাগ,ফেসবুকেতে ছিলাম কোন দিন!
কবি যেমন স্বপ্ন দেখে,ভবিষ্যত ও দেখে,
যা ঘটে যায় পরম্পরায় শেখে ও তাই লেখে।
বন্ধু লেখক যায় হারিয়ে,স্মরণ করি কেউ?
নতুন ঢেউয়ে যায় হারিয়ে পুরাণো সব ঢেউ।
এমনই তো শিখছি সবাই,যাচ্ছে যত দিন,
ফেসবুকের এক কবির কাছে নেইতো কারো ঋণ।
সমর কুমার সরকার/শিলিগুড়ি
রচনাকাল : ২৫/৭/২০২১
© কিশলয় এবং শ্রী সমর কুমার সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।