স্বামী বিবেকানন্দের অজানা তথ্য (প্রবন্ধ)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর স্বল্প জীবনে অপমান, অবহেলা বহু পেয়েছেন,উপেক্ষিত হয়েছেন বার বার। পিতার মৃত্যূর পর স্বজ্ঞাতির সঙ্গে কোর্ট কাছারী করতে হয়েছে তাঁকে ।বহু বার হাজিরা দিয়েছেন কাঠগড়ায় l
নিদারুণ দরিদ্রের সংসারে সকালে উঠে অফিস পাড়া ঘুরে ঘুরে চাকরির খোঁজে বেরুতেন । দিনের পর দিন মা কে বলতেন মা আজ রাতে বন্ধুর বাড়িতে খেতে যাবো। প্রায় দিন দেখতেন সংসারে চাল,ডাল,নুন ,তেল কিছুই নেই কিন্তু ভাই ও বোন নিয়ে 5 টা পেটের খাবার কি ভাবে জুটবে ? মুদির দোকানে ধার করে মাকে এক- দুই দিনের চাল ডাল দিয়ে ... মা কে বলতেন আমার রান্না কোরো না... মা ! দিন দুই বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ আছে কিন্তু..কোথায় নিমন্ত্রণ ? .. আনাহার আর অর্ধপেটে থাকতেন তৎ কালীন নরেন্দ্র .........
ভাবা যায় !!!!!!!
চরম দারিদ্রের মধ্যে সারা জীবনটাই টেনে নিয়ে গেছেন । ২৩ বছর বয়েসে শিক্ষকের চাকরি পেলেন মেট্রোপলিটন স্কূলে । যাঁর প্রতিষ্ঠাতা বিদ্যাসাগর মশাই আর হেডমাস্টার বিদ্যাসাগরের জামাতা । জামাতা পছন্দ করতেন না নরেন্দ্রনাথ দত্তকে .. শ্বশুরকে বলে..." *খারাপ পড়ানোর অপরাধে"* বিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দিলেন বিবেকানন্দকে । অথছ, যাঁর জ্ঞান,বুদ্ধি,ব্যুৎপত্তি তর্কাতীত, অন্তত সেই সময়েও।
আবার বেকার বিবেকানন্দ। বিদেশেও তাঁর নামে এক বাঙ্গালি গুরু প্রচার করেন .. বিবেকানন্দ বেশ কয়েকটি বৌ ও দশ -বারো ছেলে পুলের পিতা ও এক আস্ত ভন্ড ও জুয়াখোর। ......
দেশে ও বিদেশে অর্ধপেটে বা অভুক্ত থেকেছেন দিন থেকে দিনান্তে....
চিঠিতে লিখেছিলেন :-
"-কতবার দিনের পর দিন অনাহারে কাটিয়েছি । মনে হয়েছে আজই হয়ত মরে যাবো ... জয় ব্রহ্ম বলে উঠে দাঁড়িয়েছি .... বলেছি . ..আমার ভয় নেই,নেই মৃত্যূ, নেই ক্ষুধা, আমি পিপাসা বিহীন । জগতের কি ক্ষমতা আমাকে ধ্বংস করে ?" ...
অসুস্থ বিবেকানন্দ বিশ্ব জয় করে কলকাতায় এলে তাঁর সংবর্ধনা দিতে বা সংবর্ধনা সভা তে আসতে রাজি হয় নি অনেক বিখ্যাত বাঙ্গালী ( নাম গুলি অব্যক্ত রইল) শেষে প্যারিচাঁদ মিত্র রাজি হলেও ... তিনি বলেছিলেন .. ব্রাহ্মণ নয় বিবেকানন্দ । ও কায়েত... তাই সন্ন্যাসী হতে পারে না , আমি ওকে brother বিবেকানন্দ বলে মঞ্চে সম্বোধন করবো ।
১৮৯৮, বিদেশের কাগজে তাঁর বাণী ও ভাষণ পড়ে আমেরিকানরা অভিভূত আর বাঙ্গালীরা !
সেই বছরই অক্টোবরে অসুস্থ স্বামীজি কলকাতার বিখ্যাত ডক্টর রসিকলাল দত্তকে দেখাতে যান,(চেম্বার- 2 সদর স্ট্রিট। কলকাতা যাদুঘরে পাশের রাস্তা )। রুগী বিবেকানন্দ কে দেখে সেই সময় 40 টাকা ও ঔষুধের জন্যে 10 টাকা মানে আজ ২০২১র হিসাবে প্রায় ১৬০০০ টাকা নিলেন
বিবিধ রোগে আক্রান্ত বিশ্বজয়ী দরিদ্র সন্ন্যাসীর কাছ থেকে . বেলুড় মঠের জন্যে তোলা অর্থ থেকে স্বামী ব্রহ্মনন্দ এই টাকা বিখ্যাত বাঙ্গালী(?) ডক্টর রসিকলাল কে দিয়েছিলেন। ..
আরও আছে .........!!!
বিবেকানন্দের মৃত্যূর কোন ফটো নেই । এমনকি বীরপুরুষের কোন ডেথ সার্টিফিকেটও নেই কিন্তু সে সময় বালি - বেলুড় মিউনিসিপালিটি ছিলো।
আর এই municipality বেলুড় মঠে প্রমোদ কর বা amusement tax ধার্য করেছিলো ।
বলা হয়েছিল ওটা ছেলে ছোকরাদের আড্ডার ঠেক আর সাধারণ মানুষ বিবেকানন্দকে ব্যঙ্গ করে মঠকে বলতো .. "বিচিত্র আনন্দ" বা "বিবি- কা আনন্দ" । ( মহিলা /বধূ / ... নিয়ে আনন্দ ধাম)। এই ছিলো তৎকালীন মুষ্টিমেয় বাঙ্গালীদের মনোবৃত্তি l
*একমাত্র আর একজন বিবেকানন্দই বুঝতে পারবে যে এই বিবেকানন্দ কি করে গেল।"*
...............................................................................................
ঋণস্বীকার---
শংকরের *অচেনা অজানা বিবেকানন্দ* ।
তথ্য : সংগৃহীত
রচনাকাল : ২৩/৬/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।