বাল্যগুরু ভগবান শঙ্করাচার্য
আনুমানিক পঠন সময় : ৮ মিনিট

লেখক : সনৎকুমার পুরকাইত
দেশ : India , শহর : ডায়মন্ডহারবার

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ৯৭ টি লেখনী ৩৮ টি দেশ ব্যাপী ৩৫১৯৪ জন পড়েছেন।
Sanat Kumar Purkait
যার গন্তব্য বহুদূর তাঁর প্রাথমিক গতি ধীর প্রকৃতির হয়ে থাকে, কিন্তু যার গন্তব্য নিকটে তাঁর গতি শুরু থেকেই তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন মনে করুন লোকাল ট্রেনের যাত্রাপথ কম তাই তার তাড়া বেশী, কিন্তু এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি অনেক দূরে যাবে তাই প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যেতে অনেক সময় লাগে। জীবের জীবদ্দশায় এমন ভাব লক্ষ্য করা যায়। যে জীবের আয়ু কম, তাঁরা খুব তাড়াতাড়ি কর্ম সম্পাদন করেন যেমন মানুষ গড়ে একশত বছর বাঁচে বলেই জন্মের পর একবছর শুয়ে কাটিয়ে দেয়, কিন্তু গরু বা ছাগলের সেই সুযোগ থাকে না বলেই জন্মের পরে পরেই চারপায়ে দাঁড়াবার প্রচেষ্টা শুরু করে আবার অনেক পক্ষী বা পতঙ্গ জাতীয় প্রাণীর আয়ু এতই কম যে জন্মের সাথে সাথে ওড়ার চেষ্টা দেখা গেছে। কিন্তু মানবজীবনে এটাও দেখা গেছে যারা জগতের কল্যাণের জন্য এসেছেন, যারা মহামানব হয়ে এসেছেন, যারা মানুষের সমাজ, সংস্কৃতি ও চিরাচরিত চিন্তাধারার অবসান ঘটিয়ে নতুন দর্শনের প্রতিস্থাপন করে নবজাগরণ ঘটিয়েছেন তাঁদের আয়ুষ্কাল কম হয়ে থাকে। এমন উদাহরণ বহু আছে। স্বামী বিবেকানন্দ বা চৈতন্য মহাপ্রভু কেউ পঞ্চাশে পা দেন নি। তেমনি একজন মহান সন্তানের কথা তুলে ধরব এই প্রবন্ধের মাঝে। তিনি আর কেউ না জগতের ধর্মগুরু ভগবান শ্রীশ্রী শঙ্করাচার্য। দক্ষিণ ভারতের কেরলের প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর ভাবধারা, তাঁর বেদান্তবাদ, তাঁর অদ্বৈতবাদ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গেছে সময়ের সাথে সাথে। আজ থেকে ১৯৩২ বছর আগে কেরলের কালাডি গ্রামে শিবগুরু পিতা ও সতীমাতার ঘর আলো করে জন্ম নিলেন এই দিব্য পুরুষ। সৌম্যকান্তি, অপূর্ব তেজরাশি প্রবহমান শিরায় শিরায়।

সনাতন হিন্দুধর্মের গুরু, অবতার আর ভগবানের অভাব নেই। ভিন্ন ধারায় ভিন্ন অনুগামীদের কাছে ভিন্ন মানুষ দেবতা বা গুরু সত্ত্বা পেয়ে এসেছেন বা আজও পেয়ে চলেছেন অনেকেই। কিন্তু আমাদের জানতে হবে ভারতীয় দর্শন ও কৃষ্টি বা চিরাচরিত ঐতিহ্য বজায় রেখে সংস্কারের পথ ধরে কুসংস্কার ছেঁটে দিয়ে ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে উপহার দিয়েছেন এক নতুন সমাজ। তাঁরাই প্রকৃত ধর্মগুরু, তাঁরাই মহাজন মনীষী। ভগবান শ্রীশ্রী শঙ্করাচার্য হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি এসেছিলেন বুদ্ধের মহানির্বাণের অনেক পরে। প্রায় বারো’শ বছর পরে, যখন প্রকৃত বৌদ্ধধর্মের ন্যায় নীতি সরিয়ে এক বিকৃত বৌদ্ধধর্মের আধিপত্যে সংকটে পড়েছিল সনাতন হিন্দু ধর্ম। ভগবান শ্রীশ্রী শঙ্করাচার্য ভারতবাসীর মনে প্রাণে প্রকৃত জ্ঞানের সঞ্চার করে তাঁদের একান্ত নিজস্ব বৈদিক কৃষ্টিধারায় করেছেন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত এবং জ্বেলে দিয়ে গেছেন জগতের অধ্যাত্মিক মন্দিরে এক অভিনব আলোকবর্তিকা। অপূর্ব জ্ঞান নিয়ে জন্ম নিয়েছিলেন শ্রুতিধর এই ব্যাক্তি, যিনি যা শুনতেন একবার তা মনের মণিকোঠায় জায়গা পেয়ে যেত। সেই কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি সকল শাস্ত্রে পারদর্শী হয়ে গেছিলেন।

ভগবান শ্রীশ্রী শঙ্করাচার্য দিব্যদ্যুতি নিয়ে এসেছিলেন। তাই মাত্র তিন বৎসর বয়সে চূড়াকরণ হবার পর তাঁর পিতৃবিয়োগ হলেও তিনি নির্বিকার ছিলেন। পাঠকের মনে হতে পারে ওই বয়সে অনুভূতি আসে না যে এই সংবাদে তিনি বিকারগ্রস্থ হবেন। কিন্তু তিনি তো আর পাঁচজনের মত না। জন্ম থেকেই তিনি এতটাই পরিপক্ক বোধবুদ্ধিতে যে মাত্র পাঁচবছর বয়সে উপনয়ন হয়। তৎকালীন সমাজব্যবস্থার চিত্র আমরা কেউ জানি না। তবে তথ্য বলছে তাঁর মাত্র আট বছর বয়সে বিবাহের প্রস্তাব আসে এবং যা প্রত্যাখ্যান করে তিনি যে উত্তর দিয়েছিলেন তা হল, ‘আমার আয়ু মাত্র ষোল বৎসর, আমি জন্মসন্ন্যাসী’। এখানেই তাঁর দিব্যজ্ঞান প্রস্ফুটিত হয়। তিনি নিজের ভবিষ্যৎ জানতেন। আমরা যারা মানব তাঁদের ভবিষ্যৎ জানার অধিকার ঈশ্বর দেন নি। সেই কারণ জানতে চেয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পাঞ্চাল কুমারী। কৃষ্ণ বলেছিলেন জীবের ভবিষ্যৎ জানার অধিকার দেওয়া হয় নি কারণ ভবিষ্যৎ জানলে জীব নিজেই দুর্নীতিগ্রস্থ হবেন, কারণ জীবের সংযমের অভাব আছে। তাছাড়া জীব ভবিষ্যতে কোন পীড়াদায়ক ঘটনার কথা জানলে তিনি তাঁর বর্তমানের আনন্দ বিসর্জন দেন সেই ভবিষ্যতের কঠিন অধ্যায়ের কথা ভেবে ভেবে, কিন্তু ভবিষ্যতের সুখবার্তায় কোনকালে বর্তমানের দুঃখকে উপেক্ষা করতে পারেন না। এটাই সবথেকে এর কাঠিন্যতা। কিন্তু যে সকল জীবের সমান্তরাল ভাবধারার বাইরে তিনি তাঁর আয়ু মাত্র ১৬ বছর জেনেও নির্বিকার থাকেন। তিনি ঘোষণা করতে পারেন তিনি জন্মসন্ন্যাসী। তিনি অচিরেই বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান  করে দিয়ে সংসারের মায়াজাল ছিন্ন করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন সমাজের পথপ্রদর্শক হিসাবে।

সাধক শিশু শঙ্করাচার্য একদিন মায়ের কাছে সন্ন্যাস নেবার কথা জানালে মা সম্মতি না দেওয়ায় সংসারের এই মায়াময় টান কাটাতে ছলনার আশ্রয় নিলেন। নিকটস্থ পূর্ণা নদীতে স্নানকালে কুমীরের কবলে পড়লে মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন শঙ্করাচার্য বলেন মা তুমি যদি আমাকে সন্ন্যাসের অনুমতি দাও তাহলে ওই কুমীর আমাকে মুক্তি দেবে। মজার বিষয় মায়ের সম্মতি প্রদানের সাথে সাথেই কুমীর তাঁকে ছেড়ে দিয়ে অন্তর্হিত হয়ে যায়। এভাবেই সন্ন্যাসের পথে গিয়ে বেদান্ত আর অদ্বৈতবাদের প্রতিষ্ঠা করার জন্য গুরু গোবিন্দপাদের কাছে গিয়ে বলেন, ‘প্রভু আমাকে ব্রহ্মজ্ঞান ও সন্ন্যাস দিয়ে চরিতার্থ করুন’। গুরুদেব সেই অপরিচিত বালককে পরিচয় জিজ্ঞেস করাতে তিনি যা বলেছিলেন তা সাধকজীবনের কাছে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রভু, আমি পার্থিব কিছু নই, আমি জল নই, আমি আকাশ নই, তেজ নই, বায়ু নই, কোন ইন্দ্রিয় নই বা ইন্দ্রিয় সমষ্টিগত দেহও নই। আমি এসবের অতীত নির্লিপ্ত শিবস্বরূপ পরমাত্মার একটি অংশ মাত্র’। তাঁর উত্তরে গুরুদেব মুগ্ধ হয়ে সন্ন্যাস প্রদান করে ব্রহ্মজ্ঞানী করে তোলেন। শুরু হয় আটবছরের বালকের এক গভীর তপস্যা। তপস্যায় সিদ্ধিলাভের পর শুরু হল পরিব্রাজন। এক এক করে প্রচুর শিস্য তৈরি হল। অদ্বৈততত্ত্বের প্রচার ও ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্য প্রণয়ন করলেন।

কাশী, বারানসি হয়ে তিনি এসে পৌঁছলেন হিমালয়স্থিত ব্যাসদেবের পুণ্যাশ্রম বদরিকা আশ্রমে। হিমালয়ের সেই নির্জন প্রান্তরে ও স্বর্গীয় পরিবেশে বসেই রচনা করেছিলেন তাঁর ইতিহাসপ্রসিদ্ধ ব্রহ্মসূত্রভাষ্য, উপনিষদভাষ্য, গীতাভাষ্য, সর্ববেদান্তসিদ্ধান্ত ও অন্যান্য অসংখ্য গ্রন্থাদি। মাত্র আট বছর বয়সে সন্ন্যাস এবং তারপর তাঁর হাতে ছিল মাত্র আট বছর, কারণ ষোল বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু ঘটবে। এই কারণে তিনি অতি দ্রুত একের পর এক গ্রন্থ রচনা করে চলেছেন। কিন্তু কথিত আছে তাঁর ব্রহ্মসূত্রভাষ্য স্বয়ং ব্যাসদেব ছদ্মবেশে এসে পাঠ করে পরম পরিতৃপ্ত হয়ে ভগবান শ্রীশ্রী শঙ্করাচার্যকে বর দিয়ে যান, ‘বৎস, তোমার এখনও অনেক কাজ বাকি। তোমার পরমায়ু ষোল বৎসরের স্থলে বত্রিশ বৎসর হউক’। তিনি বত্রিশ বৎসর বেঁচে ছিলেন। জীবনের শেষ ষোল বছর শাস্ত্র বিচার ও তর্কযুদ্ধে অংশ নিয়ে একের পর এক পণ্ডিতকে পরাজয় করে বেদান্ত ও অদ্বৈতবাদের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তাঁর এই পরিব্রাজনকালে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। মহীশুরের অন্তর্গত তুঙ্গভদ্রা নদীতীরে শৃঙ্গেরীমঠ, দ্বারকায় গোমতী নদীতীরে সারদামঠ, পুরীতে সমুদ্রকুলে গোবর্ধনমঠ ও বদরিনাথে অলকানন্দা নদীতীরে যোশীমঠ বা জ্যোতিমঠ স্থাপন করেন। ভগবান শ্রীশ্রী শঙ্করাচার্যই প্রথম মঠনিয়ন্ত্রনবিধি ও বিভিন্ন সম্প্রদায় গঠন করেন। যার মধ্যে দশনামী সম্প্রদায় উল্লেখযোগ্য। তীর্থ, বন, অরণ্য, গিরি, পুরী, ভারতী, পর্বত, সাগর, সরস্বতী ও আশ্রম এই দশটি দশনামী সম্প্রদায়ের পদবী বলে আজও প্রচলিত আছে।

তিনি জ্ঞানের পথযাত্রী। ভগবান শ্রীশ্রী শঙ্করাচার্য প্রবর্তিত জ্ঞান ও দর্শন অদ্বৈতবাদ নামে খ্যাত যার প্রধান উপজীব্য বেদান্ত ও উপনিষদ। বেদের জ্ঞানকাণ্ডকেই বেদান্ত বলে মানা হয়। তাঁর মতে, ‘ব্রহ্ম সত্য, জগত মিথ্যা। জীব ব্রহ্মই, ব্রহ্ম থেকে ভিন্ন নয়’। তাঁর রচনা থেকে জানা যায় যে ‘যাহা বড়, যাহা মহান, যাহা বাধারহিত, যাহা মহত ও মহীয়ান তাহাই ব্রহ্ম’। এই ব্রহ্মজ্ঞান না হলে ঝিনুকের অন্তর দেখে রৌপ্য, দড়ি দেখে সাপ বা রৌদ্রকরোজ্জ্বল স্থানকে দূর থেকে মরীচিকা মনে হতে পারে। ব্রহ্মজ্ঞান হলে জগতের সকল অলীকত্ব দূর হয়ে সর্বভুতে এক অখণ্ড সত্তা, অখণ্ড চৈতন্য ও অখণ্ড আনন্দস্বভাবের দিব্যানুভুতির স্ফুরণ হয়। প্রকৃত জ্ঞানের বিকাশ ঘটলে সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো দেখতে থাকে জীব, নইলে সবকিছু গুলিয়ে এক অদ্ভুত সমাহারে ফেলে জীব মায়াজালে আটকে পড়ে।

রামকৃষ্ণ মিশন লোকশিক্ষা পরিষদ প্রকাশিত জগতের ধর্মগুরু গ্রন্থ অনুসারে তাঁর নিত্যানিত্যভেদজ্ঞান থেকে জানা যায় পুষ্পমাল্য, চন্দন ও স্ত্রী প্রভৃতিতে জ্ঞানী পুরুষের বিরক্তি জন্মে। আপনারা স্বয়ং বিচার করুন আপনি কতটা জ্ঞানী। যৌবনমদমত্ত, গুরুজন অবমাননা ও মর্যাদালঙ্ঘন পাপ। ব্রহ্মচর্য, অহিংসা, জীবে দয়া, সরলতা, বিষয় বৈরাগ্য, শৌচ ও অভিমান বর্জনই চিত্তপ্রসাদের কারণ। পূর্বজন্মের পাপের জন্য যেসব আধ্যাত্মিক ও আধিদৈবিক দুঃখ পাওয়া যায় তা ধীরভাবে সহ্য করতে হয়। এই সহ্য করাকেই তিতিক্ষা বলে।

পাঠকের জ্ঞাতার্থে বলে রাখি যে প্রবন্ধের শেষ দিকে আমি বেশ কয়েকটি গ্রন্থের একেবারে অনুলিখন করছি শুধুমাত্র তাঁর অভেদ দর্শনের প্রকাশ করার জন্য। তা যতজন লিখুন না কেন, পৃথক হবার নয়। সে তো তাঁর জীবশিক্ষা। এমন একটি গ্রন্থ মণিমালা যেখানে গুরু শিস্যের আলাপ প্রশ্নোত্তরে উঠে এসেছে যা আজকের প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন। সেখানে তিনি বলছেন যে ঈশ্বরের পাদপদ্মস্বরূপ নৌকাকে স্মরণ করলে তবেই গুরুচরণ পাওয়া যায় আর গুরু কৃপা পেলেই ঈশ্বরপ্রাপ্তি। যিনি বিষয়াসক্ত তিনিই আবদ্ধ জীব। তাঁর মুক্তি আটকে রেখেছে বিষয়ের প্রতি মায়ার বন্ধন আর অন্তহীন লালসা। এজন্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভু বলেছিলেন, বিষয় ছাড়িয়া কবে শুদ্ধ হবে মন/কবে হাম হেরিব মধুর বৃন্দাবন। বিষয় না ত্যজিলে তাঁরে পাওয়ার মত ভজনের দেহ তৈরি হয় না যে! আর এই সংসার বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে হলে দরকার আত্মজ্ঞান, বেদবিহিত আত্মজ্ঞান। যার বিষয়ের প্রতি আকাঙ্ক্ষা যত প্রবল সে ততই দরিদ্র। যিনি মঙ্গল চান, সদুপদেশ দেন তিনিই গুরু। যিনি বিবেকহীন তিনিই মূর্খ। আর এই মূর্খতা হল দুঃখ। নিজের মনকে শুদ্ধ করতে পারলে আর তীর্থভ্রমণের দরকার পড়ে না। যিনি পরের উপকার করেন তিনিই ধন্য আর সকলের নিকট বিনয়ভাব হল দিব্যব্রত। গুরু, দেবতা আর বয়োবৃদ্ধগণ হলেন উপাস্য। মা যেমন সুখ প্রদান করেন তেমন সুখ আর কেউ না দিতে পারলেও সুবিদ্যা সেই সুখ প্রদান করতে পারে। তাই ভগবান শ্রীশ্রী শঙ্করাচার্য সুবিদ্যা অর্জন করতে বলেন আর ঈশ্বরের প্রীতি হয় তেমন কর্ম করতে বলেন কারণ সত্য হল এই জগতজীবের কল্যাণসাধন। এইসকল মার্গ হল জীবের দেবত্বে উন্নীত হবার মার্গ।

ভগবান শ্রীশ্রী শঙ্করাচার্য তাঁর প্রসিদ্ধ দার্শনিক কাব্যগ্রন্থ ‘মোহমুদগর’ এ বলছেন, ‘হে মুঢ় ধনাগমের লোভ ত্যাগ করো। হে স্বল্পবুদ্ধে, বিষয়ের প্রতি বিতৃষ্ণা আনো। স্বকীয় কর্মের দ্বারা উপার্জনে চিত্তকে সন্তুষ্ট রাখো। শত্রু, মিত্র, পুত্র, বন্ধু, বিগ্রহ, সন্ধি – সকল কিছুতেই সমান যত্নশীল হও। তোমাতে, আমাতে ও অন্য সকল বস্তুতে সেই এক বিষ্ণু বর্তমান। অতএব ভেদাভেদজ্ঞান বর্জন করে সমান করে নাও। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ত্যাগ করে নিজেকে চেন, আমার আমিত্বকে টেনে বের করে আত্মোপলব্ধি করতে হবে। আত্মজ্ঞান ব্যাতিরেকে মুক্তি কোনকালেই আসে না।‘ স্বকীয় কর্মের দ্বারা উপার্জনে চিত্তকে সন্তুষ্ট রাখো – তাঁর এই বক্তব্যে পরিষ্কার হয়েছে লালসা ত্যাগ করে এবং দুর্নীতি ত্যাগ করে নিজের ক্ষমতা ও দক্ষতা অনুসারে কাজ করে অর্জন করো। কারণ কৃপা পেতে গেলে তো করে পেতে হয়।

এমন মহান ধর্মগুরু যিনি জগতে এলেন মাত্র ক্ষনিকের জন্য কিন্তু জগতকে পরিচালন করে চলেছেন অনন্তকাল ধরে অন্তরালে থেকে, শুধুমাত্র তাঁর দর্শন ও ভাবধারাকে অবলম্বন দিয়ে। তাঁর জ্ঞানের অপরিসীম সীমা দেখে ব্যাসদেব যে আশীর্বাদ করেছিলেন তাতেই আমরা তাঁকে ষোল বছরের থেকে বত্রিশ বছর পেয়েছি। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত তথা হিমালয়ের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে বেড়ান শাস্ত্রযুদ্ধে। কাশ্মীর থেকে বেরিয়ে যখন তিনি আবার কেদারনাথে আসেন আর এই কেদারনাথেই শেষ হয়ে যায় সেই মহান ত্যাগী জন্মসন্ন্যাসীর ইহধামের লীলা। মাঝে চলে গেছে কত শত বছর তবু তিনি আজও আমাদের মাঝে রয়ে গেছেন তাঁর অদ্বৈতবাদ ও বেদান্ত দর্শনের মধ্যে। তাঁকে আমাদের প্রণাম। 
রচনাকাল : ২০/৬/২০২১
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 5  Canada : 2  China : 1  Germany : 1  India : 39  Russian Federat : 1  Saudi Arabia : 4  Ukraine : 2  United States : 44  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 5  Canada : 2  China : 1  Germany : 1  
India : 39  Russian Federat : 1  Saudi Arabia : 4  Ukraine : 2  
United States : 44  
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
বাল্যগুরু ভগবান শঙ্করাচার্য by Sanat Kumar Purkait is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৭৭১৭৫
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী