বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রসঙ্গে...........
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের বিখ্যাত উক্তি ও বাণী
(কবির কবিতা থেকে সংকলিত) তৃতীয় পর্ব
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
নজরুল ইসলামের জীবনী
নাম কাজী নজরুল ইসলাম
জন্ম ২৪শে মে ১৮৯৯, চুরুলিয়া, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ)
অভিভাবক কাজী ফকির আহমদ (বাবা) জাহেদা খাতুন (মা)
দাম্পত্য সঙ্গী প্রমিলা দেবী নার্গিস আসার খানম
ছদ্মনাম দুখু মিয়া
জাতীয়তা ব্রিটিশ ভারতীয় ও বাংলাদেশী
ধর্ম ইসলাম
পেশা কবি, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার ও সম্পাদক
উল্লেখযোগ্য কর্ম নজরুলগীতি, অগ্নিবীণা, বাঁধন হারা, বিষের বাঁশি প্রভৃতি
মৃত্যু ৯ আগস্ট ১৯৭৬
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের বিখ্যাত উক্তি ও বাণী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)
৫২.“যার ভিত্তি পচে গেছে, তাকে একদম উপড়ে ফেলে নতুন করে ভিত্তি না গাঁথলে তার ওপর ইমারত যতবার খাঁড়া করা যাবে, ততবার তা পড়ে যাবে।”
৫৩.“তিনিই আর্টিস্ট, যিনি আর্ট ফুটাইয়া তুলিতে পারেন । আর্টের অর্থ সত্য প্রকাশ এবং সত্য মানেই সুন্দর; সত্য চিরমঙ্গলময়।”
৫৪.“শোন মর্ত্যের জীব অন্যের যত করিবে পীড়ন নিজে হবে তত ক্লীব।”
৫৫.“অনেক সময় খুব বেশি বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যেকে অস্বীকার করে ফেলা হয় । তাতে মানুষকে ক্রমেই ছোট করে ফেলে, মাথা নিচু করে আনে ও রকম মেয়েলি বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক ভালো।”
৫৬. ” শাস্ত্র না ঘেটে ডুব দাও সখা সত্য সিন্ধু জলে।“- কাজী নজরুল ইসলাম( উৎস ‘ঈশ্বর’ কবিতা)
৫৭.“পশুর মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে আমাদের লাভ কী, যদি আমাদের গৌরব করার মতো কিছু না-ই থাকে।“
৫৮.“ শিহরি উঠো না শাস্ত্রবিদেরের ক’রোনা ক’ বীর ভয়
তাহারা খোদার খোদ ‘প্রাইভেট সেক্রেটারি’ তো নয়। “
কাজী নজরুল ইসলামের প্রেরণামূলক বাণী:-
৫৯.“ব্যর্থ না হওয়ার সব চাইতে নিশ্চিন্ত পথ হলো সাফল্য অর্জনে দৃঢ় সঙ্কল্প হওয়া।”
৬০.“অন্ধের মতো কিছু না বুঝিয়া, না শুনিয়া, ভেড়ার মতো পেছন ধরিয়া চলিও না । নিজের বুদ্ধি, নিজের কার্যশক্তিকে জাগাইয়া তোলে ।”
৬১.“বহু যুবককে দেখিয়াছি যাহাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধকের কঙ্গাল মূর্তি।”
৬২.“ আসবে ঝড়, নাচবে তুফান, টুটবে সকল বন্ধন,
কাঁপবে কুটীর সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন-
টুটবে যবে বন্ধন!
পড়বে মনে, নেই সে সাথে
বাঁধবে বুকে দুঃখ-রাতে-
আপনি গালে যাচবে চুমা,
চাইবে আদর, মাগবে ছোঁওয়া,
আপনি যেচে চুমবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে। ”
৬৩.”আমরা রচি ভালোবাসার
আশার ভবিষ্যৎ
মোদের স্বর্গ-পথের আভাস দেখায়
আকাশ-ছায়াপথ!
মোদের চোখে বিশ্ববাসীর
স্বপ্ন দেখা হোক সফল।
আমরা ছাত্রদল।“- কাজী নজরুল ইসলাম( উৎস- ‘ছাত্রদল’ কবিতা)
৬৪.“সত্য যদি লক্ষ্য হয়, সুন্দর ও মঙ্গলের সৃষ্টি সাধনা ব্রত হয়, তবে তাহার লেখা সম্মান লাভ করিবেই করিবে।”- কাজী নজরুল ইসলাম
৬৫.“রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা, তাই
লিখে যাই এ রক্ত লেখা।”- কাজী নজরুল ইসলাম
৬৬.‘আজি হ’তে শত বর্ষে আগে, কে কবি,
স্মরণ তুমি করেছিলে আমাদের শত অনুরাগে।“- কাজী নজরুল ইসলাম
দুঃখ ও বিরহ নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের বাণী:-
৬৭.“ যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুঁছবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে। ”- কাজী নজরুল ইসলাম (উৎস- ‘অভিশাপ’ কবিতা)
৬৮.“ আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি,
থাকবে সবাই – থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী!
আসবে শিশির-রাত্রি!
থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন,
থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন,
বঁধুর বুকের পরশনে
আমার পরশ আনবে মনে-
বিষিয়ে ও-বুক উঠবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে! ”- কাজী নজরুল ইসলাম( উৎস- ‘অভিশাপ’ কবিতা)
৬৯.“ স্বপন ভেঙ্গে নিশুত রাতে, জাগবে হঠাৎ চমকে
কাহার যেন চেনা ছোয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে-
জাগবে হঠাৎ ছমকে,
ভাববে বুঝি আমিই এসে
বসনু বুকের কোলটি ঘেষে
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শূন্য শয্যা মিথ্যা স্বপন
বেদনাতে চোখ বুজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে ।”- কাজী নজরুল ইসলাম(উৎস- ‘অভিশাপ’ কবিতা)
৭০.”কপালে সুখ লেখা না থাকলে সে কপাল পাথরে ঠুকেও লাভ নেই। এতে কপাল যথেষ্টই ফোলে, কিন্তু ভাগ্য একটুও ফোলে না ।”
৭১.” এই নীরব নিশীথ রাতে
শুধু জল আসে আঁখিপাতে!“- কাজী নজরুল ইসলাম( উৎস- ‘ব্যথা নিশীথ’ কবিতা)
৭২.” হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে ক’রেছ মহান!
তুমি মরে দানিয়াছ খ্রিষ্টের সম্মান।“- কাজী নজরুল ইসলাম( উৎস- ‘ দারিদ্র্য’ কবিতা)
৭৩.”আমাদের শত ব্যথিত হৃদয়ে
জাগিয়া রহিবে তুমি ব্যথা হ’য়ে,
হ’লে পরিজন চির-পরিচয়ে-
পুনঃ পাব তব দরশন,
এ নহে পথের আলাপন।“-কাজী নজরুল ইসলাম( উৎস- ‘বিদায়- স্মরণে’ কবিতা)
৭৪.“নুড়ি হাজার বছর ঝরণায় ডুবে থেকেও রস পায় না।”
৭৫.“হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা
আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদোনা।“
৭৬.“মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা যে কতো কঠিন,
কতো ভয়ানক তা একমাত্র ভুক্তভুগিই অনুভব করতে পারে।“
৭৭.“আমার যাবার সময় হল দাও বিদায় মোছ আঁখি দুয়ার খোল দাও বিদায়। ”
৭৮.“আমি নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন
শেষে সেই আমারে কাঁদায়, যারে করি আপনারি জন।”
৭৯.“গাইতে গিয়ে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না
বলবে সবাই- সেই যে পথিক তার শোনানো গান না?-
আসবে ভেঙ্গে কান্না,
পড়বে মন আমার সোহাগ
কন্ঠে তোমার কাদবে বেহাগ
পড়বে মনে আমার ফাকি
অশ্রুহারা কঠিন আখি
ঘন ঘন মুছবে,
বুঝবে সেদিন বুঝবে। ”
৮০.“ স্বপনে কি যে কয়েছি তাই গিয়াছে চলে
জাগিয়া কেঁদে ডাকি দেবতায়
প্রিয়তম প্রিয়তম প্রিয়তম।।”
৮১.“ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে ঝরে ধুলায় ভোর বেলাতে আমায় তারা ডাকে সাথী আয়রে আয় সজল করুণ নয়ন তোলো দাও বিদায়। ”
বসন্ত নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের বাণী:-
৮২.“ বসন্ত মুখর আজি দক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনেবনে বনে বিহ্বল বাণী ওঠে বাজি।“
৮৩.“ বসন্ত এলো এলো এলোরে
পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহুরে
মুহু মুহু কুহু কুহু তানে
মাধবী নিকুঞ্জে পুঞ্জে পুঞ্জে
ভ্রমর গুঞ্জে গুঞ্জে গুনগুন গানে। ”
৮৪.“ আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী;
চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি।“
বাংলা সাহিত্যের এক বিষ্ময় প্রতিভার নাম কাজী নজরুল ইসলাম । কবিতা, নাটক ও উপনাস্যের মতো সাহিত্যের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে তাঁর ছিলো অবাধ বিচরণ । নিজেই লিখতেন গান, দিতেন সেইসব গানের সুর এবং সেইসাথে গাইতেন গানও । এছাড়াও পাশাপাশি সাংবাদিক হিসাবে ধরেছিলেন পেন এবং করেছিলেন নানা আন্দোলন রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য । ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানের কারণের জন্য তাঁকে “বিদ্রোহী কবি” হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয় ।
রচনাকাল : ২৬/৫/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।