"নীতার "সাথে আমার এক যুগ পর দেখা হল। প্রথমে বুঝতে পারিনি নীতা বলে। নীতার কি চেহারা ছিল আর কি হয়েছে। কঙ্কালসার চেহারা, মাথার চুল উঠে গিয়েছে। কি রকম চেহারা! যেন দুর্ভিক্ষের প্রতীক। নীতার সাথে ১২ বছর কোনো যোগাযোগ ছিল না। সেই দিনগুলো মনে পড়লে দুঃখ লাগে। ঘৃণা আসে নীতার প্রতি। আজও নীতার মায়ের কথাগুলো কানের নিকটে বাজে। আমার নাম করে বলেছিল- "এই ছেলেটা তোকে সুখে রাখতে পারবে কি? যে ওর সাথে প্রেম করতে গেছিস"?। আরো অকথ্য ভাষা। কথাগুলো শুনে রাগ হয়েছিল। নীতাকে অনেক অপমান করেছিলাম। আর বলেছিলাম যে- "তোমার মাকে আমি দেখিয়ে দিতে চাই রোজগার করতে জানি কিনা?" তারপর আর কোন খবর রাখিনি। শুনেছিলাম নীতার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। এখন আমি অন্য জায়গায় বদলি হয়ে গেছি। আজ আমি একজন অফিসার।
- নীতা!
- হ্যাঁ।
- কেমন আছো?
- যা তুমি দেখতে পাচ্ছো ! দেখছি আগের চেয়ে তোমার চেহারাটা বেশ ভালো হয়েছে। বেশ আরামে আছো?অনেক টাকা রোজকার করছো?একটা উপকার করবে?
- কি?
- ইতস্তত করে বলল! আমাকে ৫০০ টাকা দেবে?
- ব্যাগ থেকে দুটো ৫০০ টাকার নোট দিলাম।
- ফেরত দিতে পারব না কিন্তু।
- তাতে কি হয়েছে?
- তোমার অনেক টাকা তাই না। বিয়ে করেছো?
- কই আর হল।তোমার মত মেয়ে পেলাম না।
- নীতা গম্ভীর হয়ে গেল কি রকম!
- নীতা, তোমার শরীরের কি অবস্থা করেছো?
- বেঁচে আছি এই অনেক।
একদিন বাড়ি এসো সব বলবো। ঠিকানা দিল নীতা। বাসের থেকে নেমে পড়ল নীতা।
আমার নতুন বদলি হয়েছে এই শহরে। অনেক কষ্টে পুরনো প্রেমিকার বাড়িতে উপস্থিত হলাম।
সেদিন না গেলেই ভালো হতো হয়তো। নীতাকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু নীতার সেদিন এই অবস্থা দেখে আমি মনে মনে তৃপ্তি পেয়েছিলাম। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে উঠেছিল আমার মন।
নীতার মা বাবা, একজন সরকারি চাকরি ওয়ালা ভদ্রলোকের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিল নীতার। নীতার স্বামী লম্পট ও মদ্যপ। নীতার স্বামী মদ খেয়ে মাতলামি করে, মারধর করে, ভালো করে খেতে দেয় না। নীতার একটা ছেলে ৮ বছরের আছে। নীতা সেদিন আমাকে দেখিয়েছে মারার চিহ্নগুলো। কালশিটে পড়ে গেছে পিঠে, ও সমস্ত শরীরে। আরো অনেক কষ্টের কথা বলল।
নীতার করুণ মুখটা দেখে আমার ভালো লাগেনি। প্রতিশোধের নেশায় আমি জয়লাভ করেছি। কিন্তু মনুষ্যত্ব, বিবেক ও প্রেমের কাছে আমি হেরে গেছি। ২০০০ টাকা নীতার হাতে দিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম সেদিন। আমার মনে হয়েছিল, নীতা যদি আমার হতো!
রচনাকাল : ১৫/৫/২০২১
© কিশলয় এবং তনুশ্রী দে পাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।