কিছুদিন ধরেই গুনগুন লক্ষ্য করছিল একটা ছেলে ওর পিছনে পিছনে সব জায়গায় যায়। ব্যাপারটা মোটেও গুনগুনের ভালো লাগছিল না। তাই আজ সাহস করে জিজ্ঞাসা করল ছেলেটাকে। কেন তার পিছনে পিছনে সব জায়গায় যায়। ছেলেটা উত্তরে বলল, তার নাম পল্লব, সে গুনগুন কে ভালোবাসে। গুনগুন হেসে বলল, "ভালোবাসো! তুমি আমার অতীত জানো"? পল্লব বলল, তার অতীত জানার দরকার নেই, সে গুনগুনকে ভালোবাসে আর বিয়ে করতে চায়। গুনগুন বলে-"তুমি আমার অতীত জানলে আমাকে প্রত্যাখ্যান করবে"। পল্লব বলল প্রত্যাখ্যানের কোন প্রশ্নই ওঠে না সে গুনগুন কে ভালোবাসে আর গুনগুন কে বিয়ে করতে চায়।
গুনগুন বিপদে পড়ে যায়। তার অতীত পল্লবকে জানাতেই হবে। গুনগুন আর কোন নতুন বিপদে পড়তে চায় না। স্থির করলো পল্লবকে তার অতীত বলবেই। তাই পল্লবকে, গুনগুন বলল-তুমি যদি আমার অতীত শোন রাজি হও তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করব। পল্লব শুনতে রাজি হয়।
গুনগুন বলল সে ডিভোর্সি। আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে তার বিয়ে হয় অজিত পাল এর সাথে। অজিত তাকে খুব ভালোবাসত ও যত্ন করতো। শ্বশুর, শাশুড়ি গুনগুনকে নিজের মেয়ের থেকেও বেশী ভালোবাসত। শাড়ি, গহনা কোনো কিছুরই অভাব ছিল না তাঁর। কিন্তু বিয়ের দুবছর পার হতে না হতেই শুরু হলো অশান্তি। শ্বশুর, শাশুড়ি চেয়েছিল তাদের একটা নাতি বা নাতনি হোক। সেজন্য গুনগুনকে অনেক ডাক্তার দেখানো হয়। সবকিছু টেস্ট হল। সব ডাক্তারের একই রেজাল্ট। গুনগুন কোনদিন মা হতে পারবেনা। এরপরেও গুনগুনের শাশুড়ি আশা ছাড়েনি। গুনগুনকে কবিরাজি, নানারকম উপোস করালো। কিন্তু কিছুতেই কোনো কিছু হলো না। এরপর থেকেই শুরু হলো গুনগুনের প্রতি অবহেলা। যে স্বামী এত ভালোবাসত, সে প্রায় কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল গুনগুনের সাথে।
একদিন অজিত অফিস থেকে ফিরে এসে গুনগুনকে ডেকে বলল, গুনগুন এই পেপারে সই করে দাও। গুনগুন জিজ্ঞাসা করল, কিসের পেপার? অজিত বলল-এটা ডিভোর্স পেপার। গুনগুনের পায়ের থেকে মাটি সরে গেল। কি করবে কিছু বুঝতে পাচ্ছে না। গুনগুন আজকে বলল, আমি তোমার স্ত্রী, তুমি এটা করতে পারো না। অজিত উত্তরে বলল, তুমি আমাকে পিতৃ সুখ দিতে পারবে না কোনোদিন। তাই আমি তোমাকে ডিভোর্স দিচ্ছি। আর মা-বাবা আমার অন্যত্র বিয়ে স্থির করেছেন। ওখানে আমি বিয়ে করবো। গুনগুন আর কিছু না বলে ডিভোর্স পেপারে সই করে দেয়। গুনগুনের মনে হয়েছিল যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে জোর করে কোন লাভ নেই।
গুনগুন পল্লব কে বলল এই আমার অতীত। পল্লব চুপ, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কোনও উত্তর দিচ্ছে না। গুনগুন মনে মনে ভাবল- যে কোনদিন মা হতে পারবেনা, তাকে কি কেউ আর বিয়ে করবে? এই ভেবে গুনগুন কিছুটা এগিয়ে গেল বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। পল্লব, গুনগুনকে ডেকে বলল- কি ভাবলে? আমি তোমাকে প্রত্যাখ্যান করবো? আমি আগে থেকেই সব জানতাম। তুমি মা হতে পারবে না তো কি হয়েছে? আমরা "অনাথ আশ্রম" থেকে কন্যা সন্তান দত্তক নেব। একটা অনাথ শিশু তার মা-বাবা পাবে। আর আমরা সন্তান পাবো। গুনগুন বলল, "তোমার পরিবার আমাকে মেনে নেবে না"। পল্লব বলল, "আমার মা বাবা তোমার সম্পর্কে সব জানে"। গুনগুন কাঁদতে শুরু করল। পল্লব জড়িয়ে ধরে বলল "কাঁদবে না আমি তোমার পাশে আছি"। গুনগুন ও পল্লবের বিয়ে হয়। তারা একটি কন্যা সন্তান দত্তক নেয়। এখন তারা সুখী দম্পতি।
রচনাকাল : ১৫/৫/২০২১
© কিশলয় এবং তনুশ্রী দে পাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।