আমি সেই বামন মেয়েটি,
যাকে আপনারা রাস্তাঘাটে দেখলে,
হাসেন, বিদ্রুপ করেন।
ইশারা ইঙ্গিতে অন্যদের
হাসার ও বিদ্রুপ করার সুযোগ করে দেন।
আমি সেই বামন মেয়েটি
যার জন্মের কিছু বছর পর
তার মাকে শুনতে হয়েছিল-
"তারই বামন মেয়ের
এই বাড়িতে কোন স্থান নেই।"
কিন্তু মা, লড়াই করে
তার মেয়েকে বড় করে।
আমি সেই বামন মেয়েটি
যে প্রাইমারির গন্ডি পেরিয়ে
হাই স্কুলে প্রবেশ করে।
কিন্তু বান্ধবীদের পাশে বসার
সুযোগ পায় না।
সে অন্য চেয়ার টেবিলে বসে।
আমি সেই বামন মেয়েটি
যার ইচ্ছে হয় সবার মত
পোশাক পরতে।
কিন্তু বামনত্বের জন্য
তাকে তৈরি করা পোশাক পরতে হয়।
আমি সেই বামন মেয়েটি,
যার মাকে প্রতি পদক্ষেপে-
তার বামনত্বের জন্য কথা শুনতে হয়।
যার মা কারো সাথে মিশতে ভয় পায়
তার বামনত্বের জন্য।
আমি সেই ই ই ই বামন মেয়েটি!
যার যৌবনে প্রথম এসেছিল প্রেম।
সে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ায়
ছেলেটি প্রত্যাখ্যান করে হেসে বলেছিল-
"নিজেকে আয়নায় দেখ! তোর সাথে
ভালো ব্যবহার করেছি বলে
তুই আমার প্রেমে পড়লি?
সার্কাসে যা ওখানে তোর
যোগ্য ছেলে পেয়ে যাবি।"
সেদিন মেয়েটি বুঝেছিল
সে কারো ভালোবাসার যোগ্য হতে পারে না।
আমি সেই বামন মেয়েটি,
মে নিজের যোগ্যতায়
চাকরি পাবার পরেও
তাকে শুনতে হয়-
তার বামনত্বের জন্যই তার চাকরি।
আমি সেই বামন মেয়েটি
যে নিজের কর্মস্থলে ও
সকলের কাছে উপহাসের পাত্র।
আমি সেই ই ই ই বামন মেয়েটি!
যার বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাবার পরে
বিয়ে না হওয়ায়, যে মা তাকে জন্ম দিয়েছিল,
সেই লড়াকু মায়ের কাছ থেকেও শুনতে হয়-
"তার বেঁচে থাকার থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো"।
আমি সেই বামন মেয়েটি
যার"ভগবান"কে একটাই প্রশ্ন-
সে কি দোষ করেছিল? যে তাকে
"বামন"করে পাঠানো হয়েছে।
আমি সেই বামন মেয়েটি
যে সারাজীবন সকলকে হাসিয়ে গেল।
কিন্তু তার আর জীবনে কোনদিন হাসা হলো না।
রচনাকাল : ১৫/৫/২০২১
© কিশলয় এবং তনুশ্রী দে পাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।