এখন আমার সুখের সংসার ।
বৌমা আমাকে এখন খুব যত্ন করে ।
তিনবেলা যত্ন করে খেতে দেয় ।
মুখের সামনে ওষুধ নিয়ে এসে বলে,
বাবা ওষুধগুলো খেয়ে নাও ।
স্নান করার সময় জল গরম করে দেয় ।
হাতের সামনে গামছা লুঙ্গি রেখে দেয় ।
জানো অভাগী, বৌমা অনেক পাল্টে গেছে ।
আগের মত মশলাগুলো লুকিয়ে রাখে না ।
চানাচুর, বিস্কুটের ডিবা গুলো উপরে রুমে নিয়ে যায় না।
একা হাতেই সব কাজ করে হাসি মুখে ।
রাতে কি রান্না করবে?
সেই নিয়ে কোন ঝগড়া নেই ।
রান্না টা তোমার মত ওতো সুন্দর না হলেও,
বেশ ভালই করে।
দুবেলা ননদের ফোন করে খবর নেয় ।
তারা এলে তাদের সাথে বেশ হাসিখুশি থাকে ।
দেখে যেন মনে হয় ওরা তিনবোন ।
তুমি তো এটাই চেয়েছিলে অভাগী ।
আমাদের নাতিটা তোমাকে খুব খোঁজে।
তোমার এই সুখের সংসারে,
সবাই আছে ,শুধু তুমি নেই।
জানো অভাগী ,আমার টিভি দেখতে ভালো লাগে না।
টিভি দেখতে গেলেই,
তোমার সাথে টিভি নিয়ে ঝগড়ার কথা,
মনে পড়ে যায়।
তুমি বলতে সিরিয়াল দেখবে,
আর আমি বলতাম খবর দেখব ।
সে কত সুমধুর ঝগড়া ছিল ।
রাতে ওদের খাওয়া দাওয়া হলে
ওরা উপরের রুমে চলে যায় ।
আর আমি তোমার ফটোরদিকে তাকিয়ে
আগের কথা মনে করি।
তোমাকে দেখাশোনা করে বিয়ে করে নিয়ে এসে ছিলাম ।
মা, বাপ মরা মেয়ে ছিল তুমি ।
দাদা বৌদির সংসারে বড় হয়েছিলে ।
বৌদির সব অত্যাচার তুমি
মুখ বুজে সহ্য করতে ।
ভেবেছিলাম আমাদের গৃহস্থের বাড়িতে
তুমি মানিয়ে চলবে ।
হ্যাঁ, তুমি মানিয়ে নিয়ে ছিলে ।
তোমার সাত চড়ে রা থাকেনি ।
শাশুড়ি ও জাদের শত অত্যাচার
হাসিমুখে মেনে নিতে।
আমি সবিই দেখতে পেতাম,
কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারতাম না ।
টাকার জোর কম ছিল বলে,
সব দেখেও না দেখা হতাম ।
তুমি রাতে আমার পাশে শুয়ে
কান্না করতে।
আমি তোমার চোখের জল মুছিয়ে
কোনদিন বলিনি,
কান্না করোনা আমি তোমার পাশে আছি ।
ভয় পেতাম, যদি তোমার সাহস বেড়ে যায় ।
আস্তে আস্তে ছেলেমেয়ে বড় হল ।
ছেলে হাইস্কুলে শিক্ষক হল ।
সেদিন তুমি হাসির কান্না কেঁদে বলেছিলে
আমাদের সব দুঃখ ঘুচলো ।
নতুন বাড়ি করলাম।
নাম দিলাম "অভাগীর স্বর্গ"।
বছর না যেতে যেতে ই
ছেলের বিয়ে দিয়ে বউ আনলে বাড়িতে ।
তুমি বৌমাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখতে।
সংসারের সব কাজ তুমি নিজের হাতে করতে।
তাও তুমি বৌমার মন পেতে না।
কি জানি কি ভাবতো বৌমা?
সারাদিন তোমার সাথে ঝগড়া লেগেই থাকত।
আমি বোকা দিয়ে তোমাকে চুপ করাতাম।
তারপর একদিন হঠাৎ তোমার শরীর অসুস্থ।
তুমি হসপিটালে আইসিইউ তে ভর্তি ।
ছেলেটা সারাদিন আইসিইউ বাইরে বসে থাকতো ।
আর দুইমেয়ে আসা যাওয়া করত ।
তুমি যখন আইসিইউতে ভর্তি ছিলে
বৌমা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিল ।
বৌমা তোমার জন্য খুব কান্না করত।
তুমি ছুটি হয়ে বাড়ি ফিরে এলে।
বৌমা তোমার দুটো পা ধরে
ক্ষমা চেয়ে বলল, মা
এবার আমরা মা মেয়ে হয়ে থাকব ।
তোমার মুখে সেকি শান্তির হাসি ।
সেইদিন রাতেই তোমার অসুস্থতা আরো বেড়ে গেল।
তোমাকে আবার হসপিটালে আইসিইউ তে ভর্তি করা হল।
তুমি আর বাড়ি ফিরে এলেনা ।
অভাগী তোমাকে সারা জীবন একটু শান্তি দিতে পারলাম না ।
"অভাগীর স্বর্গ"তে , অভাগী নেই আজ আমি একা ।
তোমাকে মাথাভর্তি সিঁদুর, পা ভর্তি আলতা,
লাল পাড় শাড়ি পড়িয়ে স্বর্গ রথে বিদায় জানালাম।
তুমি যেখানে আছো ভালো থেকো একটু শান্তিতে থেকো ।
রচনাকাল : ১৫/৫/২০২১
© কিশলয় এবং তনুশ্রী দে পাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।