অসমাপ্ত - অন্তিম পর্ব
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : দেবারতি নন্দী ঘোষ
দেশ : India , শহর : রিষড়া

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , নভেম্বর
প্রকাশিত ১০ টি লেখনী ২৬ টি দেশ ব্যাপী ৬০২৫ জন পড়েছেন।
Debarati Nandi Ghosh
অবিরাম ধারাবর্ষণে অস্থির হয়ে ওঠে চারু। বাড়ি ফিরে ভিজে শাড়িতেই নিজের ঘর সংলগ্ন ব্যালকনির দোলনায় বসে পড়ে ও। মনে মনে ভাবে , "একি কারোর আগমনবার্তা ! সত্যিই কি এবার ও ফিরবে !"
উফফ আবার, আবার সেই অপেক্ষা ! চার চারটে বছর কেটে গেছে, শিউলির গন্ধ মেখে সে তো আসেনি ! রাখেনি তো তার কথা। আসার হলে অনেক আগেই আসতো, এতটা কষ্ট দিত কি ! 
তবে এই অপেক্ষায় যন্ত্রণা মাখা একটা সুখও আছে। যে অনুভব করতে পারে শুধু সেই জানে সে কথা। বাড়ির দক্ষিণের এই ব্যালকনি ওর খুব প্রিয়, গাছে গাছে ফুল ভরে থাকে, কত পাখি আসে। ওদের কিচিরমিচির সঙ্গীতের মধুর ধ্বনিকেও হার মানায়। মৃদু হাওয়ায় ফুলগুলো আনন্দে মাথা দোলাতে থাকে, তখন ফুলের মিষ্টি গন্ধ নাসারন্ধ্র বেয়ে মস্তিষ্কের প্রতিটা কোষে ছড়িয়ে গিয়ে মন জুড়িয়ে দেয়। আর কারোর কথা জানেনা চারু কিন্তু প্রকৃতির সব কথা ও শুনে ফেলে অবলীলায়। তাইতো আজ বারবার মনে হচ্ছে সে আসবে। কাজলকালো চোখ মেলে তাই চেয়ে থাকে আগ্রহভরে তার আসার পথের দিকে।
বৃষ্টির বেগ একটু বেড়েছে। পুজোর সময় বৃষ্টিতে অনেকে বিরক্তবোধ করলেও চারু সবসময়ই নিজেকে ভেজাতে ভালোবাসে। তার একটা কারণ অবশ্য বৃষ্টির জলে নিজের চোখের জল লুকিয়ে ফেলা যায়। কাছেই আকাশের বুক চিরে বিদ্যুত ঝলকের সাথে একটা বাজ পড়লো ঠিক সেদিনের মতো। চমকে উঠলো চারু। ফিরে গেলো আবার সেই দিনে।
হোটেলে পারিজাতের রুমে বসেছিলো ওরা। ওর ক্রন্দনরত মুখটা দু হাতে তুলে নিয়ে আঙ্গুল দিয়ে যত্ন করে ওর চোখের জল মুছিয়ে দিয়েছিলো সেদিন। 
বলেছিলো,
- যে চোখে এতো মায়া সে চোখে কি জল মানায় !
উত্তর দেয়নি চারু। শুধু অভিমানভরে তাকিয়ে ছিলো পারিজাতের মুখের দিকে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদার ফলে ঠোঁটগুলো ফুলে ফুলে উঠছিল বারবার। ওর অব্যক্ত কথাগুলো শুনে ফেলেছিলো পারিজাত সেদিন। প্রতিটা নীরবতা ওকে বলে গিয়েছিলো চারুর মনের কথাগুলো। হঠাৎ বাজ পড়ার শব্দে চমকে উঠে চোখ বুজে ফেলে চারু। তখনই দু'হাতে শক্ত করে ওকে জড়িয়ে নেয় পারিজাত। কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে বলে,
- ভয় পেওনা চারু, আমি আছি তো !
নিশ্চিন্তে পারিজাতের বুকে মাথা রেখেছিলো চারু। সেদিন মনে হয়েছিল সারা পৃথিবীর সব প্রতিকূলতা থেকে ওকে আড়াল করে নিয়েছে পারিজাত। এ যেন পরম শান্তির আশ্রয়। 
সেদিন চারুকে বুকে জড়িয়ে পরম শান্তির খোঁজ পেয়েছিলো পারিজাতও। নির্দ্বিধায় নিজের জীবনের অন্ধকারময় দিনগুলোর কথা বলেছিলো ওকে। অলিঙ্গনাবদ্ধ হয়েই কেঁদেছিল সেদিন দুজনে। তবে সে কান্না হারাবার নয়, হারিয়ে পাওয়ার। পারিজাতের যন্ত্রনাই সেদিন ওকে পরম প্রেমের প্রাপ্তিসুখ এনে দিয়েছিলো। অনেক অনেক মূহুর্ত কেটেছিলো ওভাবেই। কেউ নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা যেমন করেনি, তেমনি লঙ্ঘিত হয়নি কোনো সীমাও। যদিও প্রেম সীমানাবদ্ধ নয়, তবে শরীরের মতো স্থূল বিষয়কে প্রাধান্য দিলে প্রেমের সূক্ষ অনুভূতিগুলো অনেকাংশে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। 
বৃষ্টি শেষে রামধনু উঠেছিলো সেদিন। হোটেলের ঘর ছেড়ে আবার সেই নদীর ধারে এসেছিলো ওরা। বড় একটা পাথরে পাশাপাশি বসে চারুর হাতের ওপর নিজের হাত রেখে বলেছিলো,
- আমার শক্তি হবে চারু ? আবার লড়াই করার ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে আমায় ? 
মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়েছিলো চারু। বুকের ভেতরের লাব-ডুব আওয়াজও তখন শোনা যেতো হয়তো। শ্বাস পড়ছিলো ঘন ঘন। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা কারও নেই।
পারিজাতের হাতের ওপর নিজের হাত রেখেছিল ও, সে হাত ভরসার। "ভালোবাসি" শব্দটা উচ্চারণ না করেও দুজনে দুজনের ভালোবাসার জোয়ারে ভেসে গিয়েছিলো সেদিন, মন তো হারিয়েছিলো প্রথম দিনেই শুধু বুঝতেই যা একটু দেরি হলো। হাতের মুঠোয় চারুর কোমল হাত শক্ত করে ধরে রামধনু দেখেছিলো সেদিন পারিজাত, ওর কাঁধে পরম নিশ্চিন্তে মাথা রেখেছিলো সেদিন চারু। একটা স্নিগ্ধ হওয়া ছুঁয়ে গিয়েছিলো ওদের দুজনকে, প্রকৃতি জানিয়েছিলো তার তৃপ্ত হওয়ার কথা।
পরের দিন ফেরার ট্রেন। চারুর ঠিকানা আর ফোন নম্বর পারিজাত নিলেও নিজের কোনো যোগাযোগের মাধ্যম চারুর কাছে দেয়নি ও। বলেছিল,
-অপেক্ষা কোরো, ঠিক এমন একটা দিনেই আমি আসবো তোমার কাছে। শিউলির গন্ধ মেখে। 
তারপর বাসে পাশাপাশি হাতে হাত রেখে বসে থাকলেও দুজনের মধ্যে কোনো কথা হয়নি আর। 
সেই ঘটনার পর চার বছর কেটে গেছে। প্রতি বছর পুজোর সময় শিউলির গন্ধ এলেই চারু পারিজাতের আসার পথের দিকে চেয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিবারই আশাহত হয়। তবু অপেক্ষা করে। 
আজও রামধনু উঠেছে আকাশে , সেদিকে তাকিয়ে আবার চারুর দু'চোখ জলে ভোরে ওঠে। মুখচোরা চারু এবার ভীষণ অভিমানে একা একাই গর্জে ওঠে,
-মিথ্যে, সব মিথ্যে, কেউ রাখেনা কথা। কেউ কখনো ফিরে আসবেনা আর। 
বাঁধভাঙা কান্নায় শ্বাসরোধ হয়ে আসে, গলার কাছে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করে ও। ব্যালকনির মেঝেতে ঝুপ করে বসে পড়ে ও ভগ্ন শাখার মতো।
এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠে। বিধ্বস্ত চারু ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়, টেনে টেনে বয়ে নিয়ে চলে নিজেকে দরজার দিকে। অনেকক্ষণ কাঁদার ফলে চোখদুটো ফুলে উঠেছে খুব, তবু চোখের জল মুছে দরজা খুলতে যায়- নিজের গ্লানি কারোকে দেখাতে চায়না।
দরজা খুলে দিয়েই বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় ও। এও কি সত্যি ! সত্যিই কি ভালোবাসা ফিরে আসে নিজের ঠিকানায় !
হ্যাঁ, দরজার ওপারে সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরে হাতে এক গোছা কাশফুল হাতে দাঁড়িয়েছিল পারিজাত। 
অবসান হয়েছিলো চারুর দীর্ঘ অপেক্ষার, আর জয় হয়েছিলো ভালোবাসার, বিশ্বাসের। 
বাঁধভাঙা অভিমান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে চারু পারিজাতের বুকে। ফুল ধরা হাতে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পারিজাত বলে ওঠে
- পাগলী ! কাঁদছো কেন ! এই তো আমি।।
কিছু গল্প অসমাপ্তই থাক..
রচনাকাল : ১২/৫/২০২১
© কিশলয় এবং দেবারতি নন্দী ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 1  Germany : 5  India : 197  Ireland : 7  Norway : 1  Russian Federat : 10  Saudi Arabia : 10  Sweden : 3  Ukraine : 7  
United States : 266  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 1  Germany : 5  India : 197  
Ireland : 7  Norway : 1  Russian Federat : 10  Saudi Arabia : 10  
Sweden : 3  Ukraine : 7  United States : 266  
© কিশলয় এবং দেবারতি নন্দী ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
অসমাপ্ত - অন্তিম পর্ব by Debarati Nandi Ghosh is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৪০৪৪৫
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী