মুকুল ঝরা বসন্ত
আনুমানিক পঠন সময় : ১৫ মিনিট

লেখক : দেবজিৎ কুণ্ডু
দেশ : India ,

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২১ , এপ্রিল
প্রকাশিত ৯ টি লেখনী ১৮ টি দেশ ব্যাপী ২৩২০ জন পড়েছেন।
লকডাউনের পর থেকে আর মক্কেলের পা পড়েনি একুশ নম্বর রজনী সেন রোডে। তাই ফেলুদার হাতে খুব একটা টাকা যে নেই, সেটা আন্দাজ করা শক্ত না।ফেলুদার অবিশ্যি তাই নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয়না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সবাই জেরবার। আপাতত ফেলুদা নির্বিকার। বই পড়ে, হাতের ফোনে নানা রকম ইনডোর গেমস খেলে, হাতসাফাই প্র্যাকটিস করে, দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছে। নিয়মিত যোগ ব্যায়াম তো আছেই। মামলা না থাকলে স্রেফ কুঁড়েমি করে কাটিয়ে দিতে ওকে আগেও দেখেছি।যদিও
টিভি জিনিসটা আমাদের বাড়িতে একটু কমই চলে। মাঝে মধ্যে চললেও খবরের চ্যানেল,কিন্তু এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে এত বেশী প্রচার চলছে যে ,বাবা বলেছে এখন খবর একেবারেই নয় কারন এতে মানুসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।ফেলুদা ও বাবা দুজনেই খবরের কাগজটা গুছিয়ে পড়াতেই বেশি বিশ্বাসী।বিশেষ কোন কিছু জানতে হলে সিধু জ্যাঠা তো আছেনই। 
ইদানিং কদিন ধরেই অভ্যেস পালটিয়ে ফেলুদা সময় কাটাতে বারবার মোবাইলে নেট দুনিয়া খুলে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করছে।যেমন গত পরশুই দুপুর বেলা কী সব শব্দ শুনে ঘরে গিয়ে দেখি ফেলুদা ইউ টিউব দেখছে।!ব্যাপারটা আমার কাছে খুব আশ্চর্যজনক মনে হওয়াতে, কাছে গিয়ে দেখি, সিনেমা টিনেমা নয়, ফেলুদা ইউ টিউব দেখে দেখে অনলাইন টাকা লেন দেনের কায়দা গুলো রপ্ত করার চেষ্টা করছে। এটা অবস্য আমি আগে থেকেই ভালই জানি, তাই নিজেই বুঝিয়ে দুয়েকটা অ্যাপ নামিয়ে রাস্তাগুলো দেখিয়ে দিলাম।  সন্ধ্যেবেলায় বেশ হালকা মেজাজে টিভির একটা জিংগলের সুর ভাঁজতে ভাঁজতে ফেলুদা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে যা বলল, সেটা এই লকডাউনের ব্যাপার না হলে কখনও শোনা যেত কী না সন্দেহ। “সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাট্রাকশন গুলো কাটিয়ে থাকতে পারলে, স্মার্ট ফোনের মত কাজের জিনিস খুব কমই আছে রে!”
“কিন্তু তুমি তো মোবাইল ফোনই নিতে চাইতে না! বলতে যখন তখন যেখানে সেখানে লোকে আমায় ফোন করে বিরক্ত করবে, সেটা আমার বরদাস্ত হবে না?”
“সেটা এখনও বলছি। বিশেষ করে তোকে আর জটায়ুকে। মামলার একটা মোক্ষম জায়গায় অনেক সময় আত্মগোপন করার প্রয়োজন হয়। তখন যদি খামকা ফোন করে ‘কোথায় আছ’ জিগ্যেস করে গোলমাল পাকাস, তাহলে বয়স যাই হোক না কেন, ফের রামগাঁট্টা খাবি, বলে রাখলাম। তবে যদি পকেট ক্যালকুলেটর বা সেবার হংকং থেকে কেনা পকেট রেকর্ডারটার কথা ভাবি, তাহলে প্রায় সব যন্ত্র একসঙ্গে পকেটে পুরে ফেলাটা মোটেই মন্দ নয়।“
“তোমার অ্যাপ এর কাজটা হল?”
“ বর্তমান অবস্থায় যা দেখছি এরপর হয়তো অন্ লাইনেই সব কিছু করতে হবে। সেক্ষেত্রে, যাতে টাকা পয়সার লেনদেনটা বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। সেটা জেনে রাখাটা আমার আশু কর্তব্য ।“
“আরও একটি লোককেও এই ব্যাপারে ইন্সপায়ার করব ভাবছি। সেটা তিনি কেমন ভাবে নেবেন, সেটাই প্রশ্ন।“
এটাও একটু অবাক হবার মতই। এসব ডিসিশন নিতে ফেলুদার বড় একটা সময় লাগতে দেখিনি। আর আমার সাথে আলোচনার তো প্রশ্নই আসে না।
বলতে বলতেই এক ঝটকায় উঠে টেবিল থেকে ফোনটা তুলে নিয়ে ডায়াল করল ফেলুদা। আর ফেলুদার কথা শুনে বুঝলাম আমার আন্দাজ ঠিক। লোকটি জটায়ু। আমি বই এর তাকের দিকে এগোলাম। ফেলুদা পরশুই আমায় হুমকি দিয়ে বলেছে এখন কাজের চাপ নেই।তাই এই ফাঁকে ফেলুদার পুরনো নীল ডাইরি গুলোর সব কটা খুঁজে বার করে সাল তারিখ অনুযায়ী পরপর সাজিয়ে রাখতে। “সাত দিনের মধ্যে না হলে কিন্তু ফল ভাল হবে না, মনে রাখিস।“ এমনিতেও এই কাজে আমার আপত্তি নেই। এই সুযোগে সেই পুরনো বিখ্যাত মামলার নোটগুলোতে চোখ বোলাতেও ভালই লাগবে।তাছাড়া গতকাল অর্থাৎ ২রা মে পূর্ব কথা মত নিউ টাউন কফি হাউসে লাল মোহন বাবুর দেওয়া ট্রিটটা বেশ ভালোই হলো।তার উপর সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত বেশ কিছু বইও কাল সংগ্রহ করেছি।আজ সকাল থেকেই মনটা বেশ ফুরফুরে। সেই বইগুলোই দেখছিলাম।তারমধ্যে একটা বই পেলাম যেটা খবরের কাগজের মলাট দেওয়া, তাই নামটা পড়তে পারিনি। এটা জানি যে, ওটা সিধুজ্যাঠার কাছ থেকে ধার করে আনা। সিধুজ্যাঠারও খুব বই কেনার বাতিক, আর বইয়ের খুব যত্ন। সবাইকে বই ধার দেন না, তবে ফেলুদাকে দেন। যাইহোক উল্টে পাল্টে বইটার নাম উদ্ধারের চেষ্টা করছি।
“অতীতে এই বই মানুষের চামড়া দিয়েও বাঁধাই করা হয়েছে।সেটা কি জানিস?” 
ছাদের দিকে মাথা চিতিয়ে ধোঁয়ার দুটো রিং ছাড়তে ছাড়তে বলল ফেলুদা।
ফেলুদার প্রশ্নের উত্তর দিলাম না। এ হচ্ছে ফেলুদার বিখ্যাত জ্ঞান দেবার মুড। নিজেই প্রশ্ন করবে, নিজেই তার উত্তর দেবে। “প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো একটি বই পাওয়া গেছে। তা নিয়ে সম্প্রতি চলেছে কাঁটাছেড়া। আর তা করতে গিয়েই শিউরে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ বইটি বাঁধানো হয়েছে মানুষের চামড়া দিয়ে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার থেকে সম্প্রতি এমন একটি বই উদ্ধার করেছেন বিজ্ঞানীরা।
দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তারা নিশ্চিত যে কোনও মানুষের চামড়া দিয়েই বাঁধানো হয়েছে বইটি। আর তার পরই শুরু হয়েছে শোরগোল। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউটন পাঠাগারে ১৯৩৪ সাল থেকে রয়েছে ফরাসি লেখক আরসেন হুসেইর লেখা ‘দে দেসতিনে দো লোম’ বইয়ের একটি সংস্করণ।
হাউটন পাঠাগারের ব্লগেই জানানো হয়েছে বইটির ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসই বলছে, আঠারোশো আশির মাঝের দিকে বইটি লিখেছিলেন আরসেন। তার পর সেটি উপহার দেন তারই এক ডাক্তার বন্ধুকে। নাম লুডোভিক বুল্যান্ড। এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। গোলমাল বাধে তার পর। নিজেরই কোনও এক মৃত রোগীর চামড়া দিয়ে বইটি বাঁধিয়ে ফেলেন বুল্যান্ড।
ব্লগের তথ্য অনুযায়ী, সম্ভবত সেটি ছিল বুল্যান্ডের এক মহিলা মানসিক রোগীর মৃতদেহ। হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল তার। মহিলার কোনও আত্মীয় তার দেহ দাবি করতে না-আসায় আরসেনের লেখা বইটি তারই চামড়া দিয়ে বাঁধিয়ে ফেলেন বুল্যান্ড।
বইটির কভারে নিজের কাজের ব্যাখ্যাও দেন ওই চিকিৎসক। লেখেন, “মানুষের আত্মার উপর লেখা বইয়ে মানুষের চামড়ার মোড়ক তো থাকাই উচিত।”
তন্ময় হয়ে ফেলুদার কথাই শুনছিলাম আর হতভাগ্য সেই মানসিক রোগী মহিলাটির কথাই ভাবছিলাম।
হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে দরজার দিকে এগিয়ে যাই। আই হোলে চোখ রেখে দেখি অনেক দিনের পুরোন একজনের মুখ। মুকুলের বাবা,ধর বাবু,কলেজস্ট্রিটে যার বইয়ের দোকান।কিন্তু খুব চিন্তিত। একটু অবাক হয়েই দরজা খুলি। ওনাদের সাথে যোগাযোগ আছে।যদিও বিভিন্ন উৎসবে শুভেচ্ছা বিনিময় বা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কথা খুব একটা হয় না। তবে মুকুলের সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ আছে।একটু হেসে ওঁকে ভেতরে আসতে বলি। বসার ঘরের সোফায় বসেই উনি ফেলুদার খোঁজ করলেন। ফেলুদা এখনই আসছে শুনে একটু নিশ্চিন্ত হলেন মনে হল। কিন্তু ভীষণ অন্যমনস্ক লাগছিল। ফেলুদা এসে এক-দু’কথার পর বলে, “আপনি কিছু একটা সমস্যায় পড়েছেন বুঝতে পারছি। চাইলে আমায় খুলে বলতে পারেন।”
ধর বাবু বল্লেন "আপনারা তো জানেন,মুকুল এখন খরগপুরে আই আই টি-তে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।হোস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করে।গত বছর লকডাউনের সময় বাড়ী ফিরে এসেছিল।আবার করোনার প্রভাব কমতে হোস্টেলে ফিরে যায়।বলে ওখানে থেকেই পড়াশোনা করতে সুবিধা।মাঝে একবার হঠাৎ করে দুদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ীতে আসে তারপর আবার ফিরে যায়।তারপর ভোটের সময় বাড়ী ফেরে আর এ যাবৎ বাড়ী ফিরে আসা ইস্তক,সামাজিক মেলামেশা একদম বন্ধ করে দিয়েছে।ঘর থেকেও বেরোচ্ছে না। গত কয়েক দিন ধরে মুকুল কি এক মানসিক অবসাদে ভুগছে। কোনও কারণ ছাড়াই তার সব সময় মনের মধ্যে একটা যেন ভয় ভয় ভাব। চলাফেরাও করছে মানসিক অস্বস্তি নিয়ে।খাওয়া দাওয়া একপ্রকার বন্ধই প্রায়।জিজ্ঞেস করলে কোন কথার উত্তর দেয় না। আপনাদের সাথে তো ওর হৃদ্যতা, সেই সোনার কেল্লার ঘটনার সময় থেকে তাই ভাবলাম,যদি একবার দয়া করে আপনারা আমাদের বাড়ী যান।আর আমার স্ত্রীর বিশ্বাস আবারও আপনাদের সাহায্যেই আমারা এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাবো।" ফেলুদা কথা দিল আজ বিকেলেই ওনার বাড়ীতে আবার দেখা হচ্ছে।
ধর বাবু চলে যেতেই ফেলুদা জটায়ুকে ফোন করে ঠিক বিকেল চারটে চলে আসতে বলল।যথা সময়ে জটায়ু তার প্রিয় গাড়িটা নিয়ে হাজির হলেন।
মোরের ক্রসিং থেকে গাড়িটা ডানদিকে ঘুরতেই, স্বনামধন্য রহস্য রোমাঞ্চ ঔপন্যাসিক লালমোহন গাঙ্গুলী আর ধৈর্য রাখতে না পেরে বলে উঠলেন-“মশাই যাচ্ছি টা কোথায় একটু বলবেন?”
ফেলুদা সামনের সিটে বসে,চারমিনারে শেষ টানটা দিয়ে সিগারেটটা দু আঙুলের টোকায় চলন্ত গাড়ি থেকে পাশের জঞ্জালে নিক্ষেপ করে উল্টো দিকে ঘুরে বলল-“তখন যে হরিপদ বাবুকে বললাম,শোনেন নি?
-“তা শুনেছি,সোনার কেল্লা খ্যাত সেই জাতিস্মর মুকুলদের বাড়ীতে তো। কিন্তু দরকারটা কি?আবারও কি কোন হঠাৎ খোঁজ পাওয়া কেল্লার কেল্লাফতের উদ্দেশ্যে?” উত্তরে ফেলুদা বলল,'একটু ধৈর্য্য ধরুন লালমোহন বাবু।সবুরের ফল মিঠা হয়।'
আধ ঘন্টার পর আমরা মুকুলদের বাড়ী পৌছলাম। তারপর ধর বাবুর ইসারা অনুসরন করে আমরা মুকুলের ঘরে ঢুকে।আধা অন্ধকার ঘরটিতে একটা আধ খোলা ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে মুকুল।এ কি চেহারা হয়েছে তার।অবিন্যস্ত চুল, চোখ দুটো লাল। ক্ষয়াটে চেহারা ঢেকে রেখেছে আধ ময়লা পোশাকে।তখন ফেলুদা পকেট থেকে একটা প্যাকেট বার করে মুকুলকে দিয়ে বলল, মুকুল ,এটা খুলে দেখো তো, এতে কী আছে।
প্যাকেট খুলতেই বেরোল একটা সুদৃশ্য রিস্টওয়াচ।আমি জানি এটা ফেলুদা মুকুলকে জয়েন্টে চান্স পাওয়ার পর গিফ্ট দেবে বলে কিনে রেখেছিল।আসবো আসবো করে আসা হয়নি।আজ তাই মুকুলকে ফেলুদা নিজে হাতেই উপহারটা দিল।
'বাঃ! দারুন দেখতে' বললেন জটায়ু। 'এটা পরে ফেলো মুকুল ভাই, পরে ফেলো।'
মুকুল দ্বিধাগ্রস্ত ভাবে ঘড়িটা হাতে পরে নিতেই ফেলুদা বলল,দেখো মুকুল এই ঘড়ির সময় বলছে যে সে পরিবর্তনশীল। তাই সুখ দুঃখ কোনটাই চিরস্থায়ী নয়।কোনো মানুষ সারাজীবনে এক রকমের আকাশ যেমন দুবার দেখে না।প্রত্যেক দিনের আকাশের রূপের মত মানুষের জীবনেও প্রতিটি মুহূর্ত ভিন্ন।তা উপভোগ করতে হয়।মুকুল,তুমি যদি দুঃখে ভেঙে না পরে সব কথা আমাদের খুলে বলো, তাহলে তোমার সমস্যার হয়তো কোন সমাধান হবে। কথা দিচ্ছি আমার সাধ্যমত আমি চেষ্টা করবো।
ফেলুদার কথায় আশ্বস্ত হয়ে মুকুল সবিস্তারে বলে চলে।"তার সঙ্গে পরিচয় মাস ছয়কের। এতটুকু সময়ের মধ্যেই হৃদয়ের প্রায় পুরোটাই সে অধিকার করে ফেলেছে। অথচ আমাদের এখনো দেখা পর্যন্ত হয়নি। সে সুযোগও নেই অবশ্য।
আমাদের পরিচয়ের গল্পটা খুব আহামরি নয়। ফেসবুকে ফ্রেন্ড সাজেশন এসেছিল। মোটামুটি সুশ্রী প্রোফাইল ছবি দেখে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে এক্সেপ্ট করে সে আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছিল, ‘কে আপনি?’ প্রশ্ন শুনে ধন্দে পড়ে গিয়েছিলাম। এ আবার কেমন মানুষ বাবা! সোনাকেল্লা সিনেমা হবার সুবাদে প্রাপ্ত অহং উচ্চ রেখে জবাব দিয়েছিলাম, ‘আমি কে সেটা আমার প্রোফাইলে লেখা আছে। কষ্ট করে দেখে নেবেন।’ এমন একটা সর্বজন সুপরিচিত মানুষকে পরিচয় জিজ্ঞেস করার সাহস হয় কী করে? 
খানিক বাদেই দেখি সে মেসেজটা সিন করেছে। আমি লিখলাম, ‘না চিনলে আনফ্রেন্ড করে দিন।’ সে দ্রুত জবাব দিল, ‘আপনি রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন, আপনিই করুন না!’ জবাব দেখে আমার পিত্তি জ্বলে গেল। কি জানি কেনো আনফ্রেন্ড করতে গিয়েও করলাম না। ভীষণ কৌতূহল হলো। কে এই মেয়ে? কীসের এত দেমাগ তার? আমাকে সে ইগনোর করে কীভাবে? সেই দিন রাতে ঘুমাতে পারিনি।পরদিন আবার মেসেজ দিলাম। দেখলাম, সে অনেক নরম হয়েছে। আমাদের কথা বাড়তে থাকল। তারপর ফোন নম্বর আদান-প্রদান , মেসেঞ্জারে চ্যাট। এভাবে ফুরফুর করে কেটে গেল ছয় ছটা মাস। কিন্তু জীবন খুব কঠিন। ক্ষেত্র বিশেষে হয়তো নির্দয়, নির্মম। মনে হতো লাবনী আমার জীবনে যোগ না হলে আমার কী হতো জানি না।এর মধ্যে অনেকবার আমি সামনা সামনি দেখা করতে চেয়েছি কিন্তু করোনার জন্য তা বাস্তবায়িত হয়নি।হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা আর লাবনীর সাথে ভার্চুয়াল প্রেম সব, মিলিয়ে ভালোই ছিলাম আমরা। শুধু গত পনের দিন ধরে তার কোনো হদিস নেই। সে নেই। ফোন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে লাপাত্তা। পৃথিবীতে সব আছে। কিন্তু লাবনী নেই। কোথায় গেল সে? 
শেষের সেই দিনটার কথা খুব মনে পড়ছে। খুব সামান্যই একটা ব্যাপার নিয়ে ফোনেতেই আমাদের ঝগড়া হয়েছিল। উত্তেজনায় আমি খানিকটা চেঁচামেচিও করেছি।এর আগেও কয়েকবার এমন হয়েছে। কিন্তু তখন তো এভাবে ও হাড়িয়ে যায়নি। বড়জোর দু-এক দিন আমাদের কথা বন্ধ ছিল। তারপর আমিই বরফ গলানোর উদ্যোগ নিয়েছি। কাজও হয়েছে। এবার তবে কী হলো? 
এই ভাবতে ভাবতেই মোবাইল ফোন হাতে তুলে নিলাম। চ্যাট হিস্ট্রি পড়ব। বোঝার চেষ্টা করব আসলে আমার ভুলটা কোথায়। 
ডেটা অন করতে গিয়ে করলাম না। দেখি আমার রুমমেট রাজ কার সাথে মোবাইলে কথা বলছে। ওর চোখে মুখে আনন্দে ঝলকানি। নিজের মন খারাপের মধ্যেও ওর আনন্দ দেখে ভালো লাগল। 
এরপর কয়েক দিন ধরেই রাজকে ফোনে সময়ে অসময়ে গুজুর গুজুর করতে দেখি। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় তাকে ফোনে হোয়াস্ এ্যাপ চালাতেও দেখি। বুঝতে পারছিলাম যে তার কোনো নতুন বান্ধবী জুটেছে।ক্রমে সে ব্যাপারটা খোলাসা করল। সেদিন আমি ঘরে ঢোকামাত্র রাজ শশব্যস্ত হওয়ায় আমি তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলাম।কথা চালিয়ে যাওয়ার ইশারা করলাম। কিন্তু সে এক গাল হেসে বলল, ‘ওর কালকে অন লাইনে পরীক্ষা আছে। আর কথা বলব না।’ 
তারপর পাশাপাশি দুটো চেয়ারে বসলাম দুজনে। রুমমেট হলেও আমাদের খুব একটা কথা হয় না। দুজনের ব্যক্তিত্ব দুরকম হলে যেমন হয়। আমি যেমন চঞ্চলমতি, ঠিক তেমনি ধীর-স্থির রাজ।
বাইরে তখন ভোটের প্রচারের জন্য মাইক নিয়ে কোন এক রাজনৈতিক দলের রোড শো যাচ্ছে । 
‘প্রেমে পড়ছ নাকি রাজ?’ প্রশ্নটা না করে পারলাম না। লাজুক হেসে মাথা নীচু করে বলল, ‘হ্যাঁ ভাই। জীবনে প্রথমবার।’  দেখলাম তার ফরসা গাল রাঙা হয়ে উঠছে। সে নিজেই সব বলবে ভেবে চুপ করে গেলাম। সে আমাকে ভুল প্রমাণ করে চুপ করে রইল। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কীভাবে পরিচয়? আগে থেকেই চেনাজানা নাকি?’ সে জিব কেটে বলল, ‘না না ভাই। এই তো ফেসবুকে। দুই মাস হলো পরিচয়। কিছুদিন ধরে ফোনে কথা বলা শুরু করেছি। ’ 
আমিও নিজের কথা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে গেলাম। কদিন আগে আমারও একই দশা ছিল।রাজ ব্যাপারটা লক্ষ করল না। সে বলতেই থাকল, ‘জানো মেয়েটা বিএ সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। কিন্তু কী কিউট। একদিন তোমার সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেব।আচ্ছা তোমার বাড়ী কোলকাতায় না?' 
‘হ্যাঁ, কেন বলো তো?’ 
‘সে থাকে শ্যামবাজারে।’ 
কথাটা শুনে একটু খটকা লাগল। রুমমেটের গার্লফ্রেন্ড সম্পর্কে অতিরিক্ত কৌতূহল দেখানো উচিত না জেনেও জিজ্ঞেস না করে পারলাম না, ‘শ্যামবাজারে কোথায়?’ 
‘রাজ বল্লভ পাড়াতে।’ 
শুনে আমার বুক ধড়ফড় করতে লাগল, ‘সে কী জয়পুরিয়া কলেজে পড়ে?’ 
‘হ্যাঁ'
শুনে আমার বুকের ধড়ফড়ানি আরো বেড়ে গেলো। নিজেই নিজের হৃদস্পন্দন শুনতে পেলাম। 'তুমি চেনো নাকি?’ আমাকে জিজ্ঞেস করলো রাজ
এইবার আমার হাত-পায়ের তালু ঘামতে লাগল। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, ‘মেয়েটার নাম কি লাবনী?’
' হ্যাঁ লাবনী দাস গুপ্ত। তুমি তো তাকে চেনো দেখছি।’
রাজকে বললাম, ‘মেয়েটার ছবি দেখাও তো।’
হঠাৎ এমন ব্যবহারে কিছুটা থতমত খেয়ে গেল রাজ। চোখভরা বিস্ময় নিয়ে বলল, ‘কী হয়েছে বলতো? কোনো সমস্যা নাকি?’
আমি মাথা নেড়ে না বললাম। সে নিখাদ অনিচ্ছা নিয়েও ফোনে নেট্ অন করল। তারপর ফেসবুক খুলে যে প্রোফাইল ছবি দেখাল, সেটাই লাবনীর ছবি। আমার মেরুদণ্ড দিয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে গেল। মনে হলো আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক কষ্টে চোখের জল গোপন করলাম। লাবনীর এ কেমন প্রতারণা! 
সে রাতেও আর ঘুম হলো না। পাশের বিছানায় দেখলাম রাজও এপাশ-ওপাশ করছে। প্রেম ও সংশয়ের মাঝামাঝি একটা বিবমিষা জাগানো অনুভূতি আমাকে সারা রাত দংশন করতে লাগল। তখন এক একটা দিন টেকা খুব কষ্টকর। সারা দিন আমার রুমমেটের খুনসুটি দেখি, হাসি-আনন্দ-অভিমান দেখি আমারই প্রিয়তমা মানুষটির সঙ্গে। এই যন্ত্রণা যে কী রকম তীব্র, সেটা অভিজ্ঞতায় না থাকলে বলে বোঝানো যাবে না। কোনোমতে হোস্টেল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে ফিরে এলাম। পরের দিন নিজেই গেলাম শ্যামবাজারে। আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও রাজবল্লভ পাড়াতে লাবনীকে খুঁজে পেলাম না। ওর স্কুলেও খোঁজ নিলাম। এই নামে কেউ নেই। কোনোকালেও ছিল না। রাজবল্লভ পাড়াতে আমার এক মাসীও থাকেন।ওদের কাছে লাবনীর ছবি দেখিয়েও কিছু উদ্ধার করতে পারলাম না। কেউ তাকে কোনো দিন দেখেনি।
ছুটি শেষ। মনের মধ্যে বিশাল খটকা নিয়ে ফিরে এলাম হোস্টেলে। আবার সেই কঠোর জীবন, নাভিশ্বাস ওঠা কষ্টের জীবন। ব্যাচমেটদের কাছেই জানতে পারলাম, রাজও হঠাৎ করেই বহরমপুরে ওর নিজের বাড়ী ফিরে গেছিল।কিন্তু ফেরেনি। আর ফিরবেও না। মানসিকভাবে নাকি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে যে ওকে রাঁচির মানসিক হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে। সবাই নানা কথা বলাবলি করতে লাগল। পুরো কলেজে আলোড়ন পড়ে গেছে, কেউ জানে না কী হয়েছে রাজের মতো লাজুক একটা ছেলের। সংশয়ের দোলাচলে দুলে নিশ্চুপ হয়ে রইলাম আমি। লাবনীর কথা একটিবারের জন্যও বললাম না কাউকে।আসলে বলতে পাড়লাম না।এই পর্যন্ত বলে চুপ করলো মুকুল।
এতক্ষণ ফেলুদা শুধু একটাই প্রশ্ন করলো মুকুলকে।'তোমাদের মধ্যে কি নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল?'
'খুবই সামান্য ব্যপার'বলল মুকুল' আসলে ও আমার ব্যাঙ্কে কিছু টাকা পাঠাতে চেয়েছিল,কিন্তু ওর টাকা আমি নেবো কেনো? তাই আমার ব্যাঙ্ক একাউন্ট্ নম্বরটা দিইনি।'
মুচকি হেসে ফেলুদা কাকে যেনো ফোন করলো আর মুকুলের ফোন নম্বর আর ফেসবুক একাউন্টসের ডিটেলস পাঠালো। কিছুক্ষণ পর ফেলুদার মোবাইলে ফোন এলো।ফেলুদার এপ্রান্তের কথা শুনে বুঝলাম লালবাজার সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট। যারা একটা হ্যাকার গ্রুপকে ট্রেস করার কথা জানালেন। গত কয়েক বছর চেষ্টার পর তারা নাকি বেশ কিছু তথ্যও উদ্ধার করতে পেরেছে। হোয়াটস্ অ্যাপে ফেলুদাকে কিছু তথ্যও তারা পাঠালো। তা ল্যাপটপে ডেটা কেবল মারফত অন করতেই দেখা গেলো লাবনী দাস গুপ্তার ছবি ও ডিটেলশ তথ্য। ফেলুদা বলল, দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশে তিন নামে পরিচিত এই নারী চরিত্রটি রক্ত-মাংসের কোনো মানুষ নয়। বরং উত্তর–পূর্ব এশিয়ার একটি দেশের হ্যাকারদের বানানো একটি প্রোগ্রাম মাত্র। বাংলাদেশে সাবিনা, ভারতে লাবনী দাসগুপ্তা, পাকিস্তানে পারভীন নামে পরিচিত চরিত্রটি মূলত বিভিন্ন ছাত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে,সমস্ত টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার একটা টুল মাত্র। স্রেফ আর্টিফিশিয়াল ক্যারেকটার। নানা প্রলোভন দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য দিতে বলে । এরপরই ফাঁকা হয়ে যেতে পারে অ্যাকাউন্ট বা দরকারি নথি পত্র।” জানা গিয়েছে, এই হ্যাকাররা একটি আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। তারা ভারত সহ বিভিন্ন দেশের ৫০ লক্ষেরও মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। হ্যাকাররা ইতিমধ্যেই এই দেশগুলির বহু মানুষকেও সর্বস্বান্ত করেছে।পুরো ঘর তখন পিনপতন নীরবতা। এর মধ্যেই মুকুল হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। সেটা প্রিয়াকে হারানোর যন্ত্রণা থেকে না, সর্বস্বান্ত হওয়ার থেকে বেঁচে যাওয়ার আনন্দে কিনা জানি না।ফেরার পথে ফেলুদাই প্রথম মুখ খুলল।বলল বুঝলি তপসে আজ মুকুলের এই মানসিক সমস্যার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আমি যেটা করলাম তাকে বলে সাইকোথেরাপি। যা এই লক ডাউনের সময় বাড়ী বসে রপ্ত করেছিলাম। লালমোহন বাবু জলহস্তীর মত একটা হাই তুলতে গিয়ে একটু থতমত খেয়ে বললেন 'ফিজিওথেরাপি শুনেছি, সাইকোলজিও শুনেছি মশাই কিন্তু দুই মিলে এই রকম খিচুড়ি মার্কা শব্দ 'সাইকোথেরাপি' এই প্রথম শুনলাম।'শুধু তাই নয় লালমোহন বাবু নোট করে নিন, যাতে পরের উপন্যাসে প্রখর রুদ্রের মোকাবিলা কোনো মানসিক রোগীর সঙ্গে করিয়ে দিতে পারেন।’
ফেলুদা বলল ,'জানেন তো এই 'সাইকোথেরাপি' বিভিন্ন ধরনের হয় । মানসিক দ্বন্দ্ব এবং প্রতিরক্ষার অন্তর্নিহিত মনোবিশ্লেষণ করে যে থেরাপি দেয়া হয় তাকে বলে ডমিন্যান্ট স্কুল অফ সাইকোথেরাপি। আজ যেটা ব্যবহার করা হল । মনে রাখবেন লাল মোহন বাবু,এই চিকিৎসা সেই সম্পর্কের উপরেই নির্ভর করে, যেখানে বিশ্বাস, গোপনীয়তা এবং প্রবৃত্তি নিয়ে সমস্যা হতে পারে।‘হেঁ হেঁ,দারুণ বলেছেন স্যার। তবে নেক্সট লেখাটা ভাবছি এই সাইবার ক্রাইম ব্যপারটাকেও ব্যাকগ্রাউন্ডে রাখব’, জানালেন লালমোহনবাবু। 'তবে আমার একটা প্রশ্ন ফেলুদা ; তুমি বুঝলে কি করে যে লাবনী বলে আদৌ কোনো মেয়ে নেই।পুরো ব্যাপারটাই একটা ফাঁদ?' আমার প্রশ্নের উত্তরে ফেলুদা বলল; “খুবই সিম্পল, একটা কথা ভাব,অল্প দিনের পরিচয়ে কেউ কখনো নিজের টাকা অন্যের ব্যাঙ্ক একাউন্ট্ এ ট্রান্সফার করতে চাইবে?নাকি তাই নিয়ে ঝগড়া করবে; তাছাড়া মুকুলের কথা অনুযায়ী লাবনী নামের মেয়েটিকে কেউ কখনো চাক্ষুষ দেখেনি।আসলে কি জানিস তপসে,দেশ ডিজিটাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে অপরাধের ধরনও।আজকাল বাড়ির তালা ভেঙে চুরি হয় কম, ব্যাঙ্ক জালিয়াতি করে জমিয়ে রাখা টাকা খোয়া যায় অনেক বেশি।প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের বিভিন্ন ঘটনা, লাল বাজার সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্টের নজরে এসেছে ও তারা উপযুক্ত ব্যবস্থাও নিচ্ছে। এখন আপাতত আমার কাজ শেষ।'
সব শোনার পর জটায়ুর মুখটা দেখার মতন হল। আধ মিনিট রসগোল্লার মত গোল গোল চোখে ফেলুদার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,'বোঝ কান্ড।' তারপর কান এঁটো করা এক গাল হেসে বললেন;'যাক মেঘ যখন কেটেই গেছে, তখন চলুন না ফেরার পথে পুঁটিরামের কচুরি দিয়ে সান্ধ্য জলযোগটা সেরে নিই।'


(সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি ফেলুদার অনুকরণের এই অক্ষম চেষ্টার জন্য আমি সকলের কাছে একান্ত ভাবে আবারো ক্ষমাপ্রার্থী।গল্পটাকে আকর্ষণীয় ভাবে তুলে ধরাই ছিল আমার একমাত্র উদ্দেশ্য। পাঠকের মতামত একান্ত ভাবে কাম্য।আপনাদের পূর্ববর্তী সুচিন্তিত মতামতই আমাকে  আবার ফেলুদাকে নিয়ে লেখার ধৃষ্টতা দেখাতে সাহস যুগিয়েছে।যদি পাঠ্য গল্পটি অনুপযোগী হয় তবে সমস্ত দায় আমার।)
রচনাকাল : ১২/৫/২০২১
© কিশলয় এবং দেবজিৎ কুণ্ডু কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 3  China : 4  France : 1  Germany : 3  India : 121  Russian Federat : 11  Saudi Arabia : 2  Sweden : 4  Ukraine : 5  
United States : 124  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 3  China : 4  France : 1  
Germany : 3  India : 121  Russian Federat : 11  Saudi Arabia : 2  
Sweden : 4  Ukraine : 5  United States : 124  
© কিশলয় এবং দেবজিৎ কুণ্ডু কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
মুকুল ঝরা বসন্ত by Debjit Kundu is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৭৭৩৫৭
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী