কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন
আনুমানিক পঠন সময় : ৯ মিনিট

লেখক : দেবজিৎ কুণ্ডু
দেশ : India ,

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২১ , এপ্রিল
প্রকাশিত ৯ টি লেখনী ১৮ টি দেশ ব্যাপী ২৫০৯ জন পড়েছেন।
বাড়ীটা খুঁজে পেতে বিশেষ বেগ পেতে হল না। মোড়টা ঘুরে একজন বয়স্ক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করতেই উনি হেসে বললেন, “খোকা বাবুর বাড়ি তো? ওই যে সোজা গিয়ে দেখবেন একটা চায়ের দোকান পড়বে, তার তিনটে বাড়ি পরে।”
ও হ্যাঁ,এখানে আমার পরিচয়টাও বলে রাখা ভালো। আমার নাম সব্যসাচী সেন। পেশায় সাংবাদিক। কলকাতার এক নামী বাংলা সংবাদ পত্রিকার জন্য সাক্ষাৎকার নিতে এসেছি আমাদের সকলের প্রিয় গোয়েন্দা শ্রী রাজা রায় চৌধুরী ওরফে কাকাবাবুর যার ডাক নাম খোকা। গতকাল রাতেই ফোন করে একটা এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিয়েছি। সাক্ষাৎকারের নাম শুনে প্রথমে গররাজী হলেও পরে বললেন, “ঠিক আছে সাক্ষাৎকার চলতেই পারে, তবে ছবি কিন্তু তোলা যাবে না।”
আমি বললাম, “না, না ছবির প্রশ্নই আসছে না। শুধুই সাক্ষাৎকার।”
“যদিও আজকাল আমার মতো পঙ্গু প্রাইভেট গোয়েন্দার কেউ আর খোঁজ খবর রাখে না। তবুও..." গলায় অভিমানের সুর।তারপর কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বললেন, “ঠিক আছে। কাল চলে আসুন সকাল দশটা নাগাদ। ঠিকানাটা জানেন তো?” 
বললাম, " আমাদের অফিস থেকে আপনার বাড়ীর ঠিকানা পেয়ে গেছি,সেই ছেলেবেলা থেকে আপনার গল্প পড়ে আসছি। কতদিন থেকে আপনাকে চাক্ষুস দেখার ইচ্ছা।শুধু আমি কেন আমার মতো পৃথিবীতে যত বাঙালী বইপোকা আছে, তাদের সবার মনের মণিকোঠায় আপনি বসে আছেন;তিনি বললেন "যদি খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়, অবশ্যই ফোন করবেন ।”
গত ত্রিশ বছরে কাকাবাবু আমাদের মনেই শুধু বেঁচে আছে। প্রথম প্রথম ওনার কিছু ছোট খাটো সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হলেও গত ত্রিশ বছরে হয়নি।তাই আমাদের পত্রিকার সম্পাদককে বলতে উনি একটু নাক শিটকলেন ঠিকই, কিন্তু কাকাবাবুর নামের সেই বিশাল পর্বত খ্যাতির উচ্চতাকে অগ্রাজ্য করতে পারলেন না।
বাড়িটার সামনে এসে বুকের ভিতরটা কেমন যেন করে উঠল। চারিদিকের ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাটের মাঝখানে একটা আদ্যিকালের বাড়ি যেন খুব কষ্ট করেই দাঁড়িয়ে আছে। রঙ চটা দেওয়ালগুলো দেখলে মনে হয় চারিদিকের নতুনত্বে মাঝে এই বাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে শুধুমাত্র ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। মনটা যেন একটু খারাপ হয়ে গেল। তিনটে সিঁড়ি পেরিয়ে সবুজ রঙের দরজার সামনে এসে বেল বাজালাম। বুকের মধ্যে দামামা বাজছে। এই বুঝি দরজা খুলে আমার সামনে এসে দাঁড়াবেন আমাদের সকলের প্রিয় সন্তু! 
আরও মিনিট দুয়েকের অপেক্ষা, তারপর একটা ক্যাঁচ শব্দ করে দরজাটা খুলে গেল। একটা বছর পনেরোর ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আমায় দেখে বলল, “দাদুর সাথে দেখে করতে এসেছেন?চির পরিচিত কাকাবাবুর জায়গায় 'দাদু' ডাক শুনে আমি একটু হোঁচট খেলেও মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলতে ছেলেটা বলল, “আসুন।”
তারপর আমায় ছোট্ট বৈঠকখানাটায় বসতে বলে ভিতরে চলে গেল। আমি অ্যাকুয়ারিয়ামের পাশে রাখা বেতের সোফাটায় বসলাম। বাড়িটার বাইরেটার মত ভিতরের দেওয়ালেরও রঙ চটে গেছে। ছাদের কোনাগুলোয় ঝুলের আধিক্য। হঠাৎ করে দেখলে মনে হয় খুবই অযত্নে রাখা হয়েছে বাড়িটাকে। শুধুই টিকিয়ে রাখা। আর আমার পাশে রাখা অ্যাকুয়ারিয়ামটায় দুটো গোল্ড ফিস্ ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখেই বোঝা যায় যে বেশ কিছুদিন হল জল পাল্টানো হয়নি। সেই দিকে তাকিয়ে দেখিছি এমন সময় আমার পিছন থেকে একটা গুরুগম্ভীর স্বরে কথা শুনে প্রায় চমকে উঠলাম। 
‘গত সপ্তাহ থেকে বলছি এখনও পাল্টায়নি জলটা।’ দেখি আমার ঠিক পিছনে হুইল চেয়ারে বসে বয়স্ক, রোগা এক ভদ্রলোক। পরনে সাদা পাজামা আর পাঞ্জাবী। চোখে হাই পাওয়ারের কালচে ফ্রেমের চশমা। সারা মাথা জুড়ে ধবধবে সাদা কোঁকড়ানো চুল আর মোটা একটা মিলিটারি গোঁফ। ভদ্রলোক আমার ঠিক উল্টো দিকে হুইল চেয়ারটা নিয়ে এসে বললেন, “নমস্কার, চিনতে পারলেন না তো?”
প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে উঠে বললাল, “না, মানে সেরকম না। আসলে গল্পে আপনার সম্বন্ধে যেটা পড়েছি সেটা...”
আমার কথা শেষ করতে না দিয়েই ভদ্রলোক বলে উঠলেন, “আমার গল্পগুলো যখন লেখা হয়েছিল তখন আমার বয়স ছিল পঞ্চাশের কোঠায়। আর এখন আমার বয়স বিরাশি। তাই সেই কাকাবাবুর সাথে এই বিরাশি বছরের  চেহারাটা মেলাতে যাওয়াটাই ধৃষ্টতা নয় কি?”
আমি একটু লজ্জিত হয়ে বললাম, “না, না , সেরকম না। আসলে আমাদের কাছে আপনার চেহারাটা চিরকালই একই রকম, সেই মানসিকভাবে প্রচন্ড শক্তিমান একরোখা একটা রূপ তো, তাই একটু...”
কাকাবাবু তার একপেশে হাসিটা হেসে বললেন, “চা না কফি?”
“চা-ই ভালো।”
কাকাবাবু হাঁক পাড়ল, “অন্তু, নন্দকে বল তো দুকাপ চা দিয়ে যাবে।”
 তারপর আমার দিকে ঘুরে বললেন নন্দ আমার সব সময়ের কাজের লোক। একা মানুষ তো কখন কি দরকার হয়। তাই সন্তুই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে।নন্দু,ছেলেটিও বেশ ভালোই।”
আমি চুপ করে থাকলাম। আমার সামনে যেন বিরাট একটা স্বপ্নের প্রাসাদ আস্তে আস্তে ভেঙে পড়ছে। 
বললাম, “কাকাবাবু, এই অন্তু ছেলেটি কে?”
“অন্তু সন্তুরই ছেলে। সন্তুর সাথেই মুম্বইয়ে থাকে। গরমের ছুটিতে এসেছে। সন্তু আর ওর স্ত্রীও এসেছে। তবে এখন বেড়িয়েছে একটু। আপনি জানেন না বোধহয়, সন্তু মুম্বাইতে একটা এড্ এজেন্সিতে চাকরি করে।”
সব কিছু কিরকম যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। কাকাবাবু কোলকাতায় আর সন্তু মুম্বাইতে? এটা তো ভাবতেই কেমন একটা লাগছে। জিজ্ঞেস করলাম, “আর জোজো?”
কাকাবাবু বললেন, “সেও বেশ আছে।জোজো এখন বাঙ্গালোরে থাকে। একটা মাল্টি ন্যাশানাল কোম্পানির সিনিয়র ম্যানেজার।এই তো গত রবিবারই এখানে এসেছিল।”তারপর বললেন, “তা শুরু করুন আপনার ইন্টারভিউ। আপনার কাজটা শেষ করে আমাকে আবার আর একজনকে সময় দিতে হবে। ডাক্তার বাবু আসবেন। এপয়েন্টমেন্ট করা আছে।”
আমি একটু চিন্তিত হয়ে বললাম, “সিরিয়াস কিছু? আমি কি তাহলে অন্য দিন আসব?”
কাকাবাবু সামান্য হেসে বললেন, “বয়স হয়েছে তো, এখন হাজার সমস্যা। সিরিয়াস ভাবলেই সিরিয়াস, না ভাবলে নয়। আসলে বেশ কিছু বছর ধরেই হার্টের অসুখে ভুগছি। পেসমেকার লাগানো তো।”
আমার মাথাটা ঝিমঝিম করছে। আমাদের মনে কাকাবাবুর যে ছবিটা আঁকা আছে, সেটা কেমন জানি আসতে আসতে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। এই সেই কাকাবাবু যার পোষাকি নাম রাজা রায়চৌধুরী। যিনি ভারত সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা। একবার আফগানিস্তানে কামাল নামে এক বন্ধুকে দুর্ঘটনার কবল থেকে বাঁচানোর চেষ্টায় পঙ্গু হন। তারপর থেকে কাকাবাবুর সাথী ক্রাচ। এই ক্রাচকে অনেক সময় অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার কর‍তে দেখা গেছে তাঁকে। কাকাবাবু কিছুদিন সি.বি.আই বা সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের উপদেষ্টাও ছিলেন। সেখানকার কর্তা নরেন্দ্র ভার্মা তাঁর বিশেষ বন্ধু। তাঁর ভাইপো সন্তু ওরফে সুনন্দ রায়চৌধুরী আর সন্তুর বন্ধু জোজোকে নিয়ে অনেক অ্যাডভেঞ্চারে জড়িয়ে পড়তেন। বেশিরভাগ অ্যাডভেঞ্চারই ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বা বিদেশে বেড়াতে গিয়ে হয়েছে। তাই কাকাবাবুর প্রতিটি উপন্যাসেই নতুন নতুন জায়গার কথা থাকতো। কাকাবাবু শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও তাঁর অদম্য সাহস,মনের জোর ও নানা বিষয়ে অভূতপূর্ব জ্ঞান থাকায় তিনি সব সমস্যার সমাধান করতেন।রিল লাইফ নয় রিয়েল লাইফে, তিনি ছিলেন অনন্য এক ব্যক্তিত্ব। তার বর্ণাঢ্য জীবনে পেয়েছেন অগণিত মানুষের ভালোবাসা। মেজাজেও যথার্থই তিনি ছিলেন রাজা।  আর যাকে চোখের সামনে দেখছি তিনি এখন দাঁড়িয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।শুনলাম, বর্তমানে করোনার জন্য কিছু দিন কোলকাতার একটা নামি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।মনটা খারাপ হয়ে গেল। 
ইন্টারভিউ নেওয়ার মানসিকতাটাই চলে গেছে আমার। বললাম, “আপনাকে আজ একটাই প্রশ্ন করব?”
“শুধু মাত্র একটা?” কাকাবাবু যেন একটু অবাক হলেন। তারপর তার একপেশে হাসিটা হেসে বললেন, “কেন,এই বুড়োটাকে আর পছন্দ হল না?”
কি বলব বুঝতে পারলাম না। বললাম, “না, না সে কি বলছেন। আপনি ওই বলছিলেন না যে ডাক্তারবাবু আসবেন, তাই আর কি।”
হুইল চেয়ারটা নিয়ে গিয়ে জানলার বাইরের দিকে দৃষ্টি ফেলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন কাকাবাবু। তারপর বললেন, “ঠিক হ্যায়, তাহলে ঔই একটা প্রশ্নই করে ফেলুন।”
আমি নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে বললাম, “আমি, আপনার প্রায় সব কেস নিয়ে লেখা উপন্যাসগুলো পড়েছি। দু একটা ছাড়া সবগুলোতেই তো আপনি সাকসেস। আপনি কিছু আন-সাকসেসফুল কেসও ইচ্ছাকৃতভাবে শেষ করেছেন, সেটাও আমি জানি।”
আমার কথা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে কাকাবাবু প্রশ্ন করলেন, “যেমন?”
আমি বললাম, “যেমন ধরুন সেই 'সবুজদ্বীপের রাজা' বা 'কাকাবাবু হেরে গেলেন'  ।”কাকাবাবুর ঠোঁটের কোণায় অস্তমিত সূর্যের ছটার মতো একটা হাল্কা হাসি দেখা দিল। বললেন, “হোম-ওয়ার্ক করে এসেছেন দেখছি। আচ্ছা, কি যেন বলছিলেন?” 
“বলছিলাম, আপনার জীবনের তো প্রচুর কেস প্রচুর রহস্যময় ঘটনা আছে। আপনার কাজের সফলতার জন্য সরকারী বেসরকারী অনেক সন্মান ও পুরষ্কারে আপনি ভূষিতও হয়েছেন।আপনার এই ঘরে রাখা অজস্র স্বারক ও উপহার সামগ্রী তার সাক্ষ্য বহন করছে। কিন্তু আজ যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করি, যে আপনার জীবনের সেরা প্রাপ্তির বা সর্ব শ্রেষ্ঠতম পুরষ্কার কোনটা তাহলে আপনি কি বলবেন?”কাকাবাবু মিনিট তিনেক চুপ করে বসে থাকলেন। ইতিমধ্যে চা এসে গেছে। তিনি চায়ের কাপটা হাতে তুলে, হুইল চেয়ারেই গা-টা এলিয়ে দিয়ে বললেন, “আমার সক্রিয় গোয়েন্দা জীবনের জুড়ে ছিল কত যে রহস্যময় অভিযান,কত রোমাঞ্চকর ঘটনা।আর এত বছরে কত কেসই যে আমার হাতে এসেছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু এখন হয়তো বয়সের কারনেই কোনটাই বিস্তারিত ভাবে আর মনে নেই।মাঝে মাঝে পুরোনো দিনের ঘটনাগুলোও মনে পড়ে যায়।তবে আজ যে ব্যাপারটা আপনাকে বলবো তা কাউকে কোনও দিন বলিনি, সেটার বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যাও আমার কাছে নেই।”
আমি রেকর্ডারটা অন করে টেবিলের উপর  রেখে মন দিয়ে শুনছি কাকাবাবুর জীবনের শেষ অধ্যায়ের গল্পটা। বার্দ্ধ্যকের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে অনেক রোগ বাসা বাঁধার পর থেকে ওঁর জীবনটা পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে। বাঙালী চিরকালই আত্মবিস্মৃত জাতি। তাই ফেলুদা বা ব্যোমকেশকে নিয়ে যতই মাতামাতি হোক ,সমাজ ও প্রশাসন সবাই কিন্তু আজ ভুলে গেছে এই অশীতিপর বৃদ্ধ 'কাকাবাবু'কে? প্রতিক্ষনে তাই এই বৃদ্ধের গলায় ঝরে পড়ছে খেদ,অভিমান। যে ক্ষত হয়েছে তাঁর মনে তা শারীরিক কষ্টের চেয়ে অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক। আজ আর তিনি ক্রাচ নিয়েও হাঁটতে পারেন না। আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও শুধুমাত্র একাকিত্বের জন্যই বাঁচার লড়াইটা আরও কঠিন হয়ে গিয়েছে।আর যখন এই একাকিত্বের যন্ত্রণা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে ঠিক এর মধ্যেই ঘটে যায় – আর একটি জীবন বদল করা ঘটনা।
কাকাবাবুর আজকাল সারাদিন জানলার ধারে বসেই, যান বাহনের আওয়াজ আর মানুষের কোলাহল শুনে, সময় কেটে যায়। এর মধ্যেই ঘরে আসে এক চডুই পাখি দম্পতি। তারা বাসা বাঁধে।তারপর একদিন হঠাৎই ওপরের বাঙ্ক থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিল সেই চড়ুই পাখির একটা ছোট্ট বাচ্ছা। সেই আহত শিশু-পাখিকে শুশ্রূষা করে সুস্থ করেন কাকাবাবু। নাম রাখেন ‘পেঙ্গুইন’। যদিও প্রথম প্রথম পছন্দ করেনি তিনি, তার মতোই ডানা-ক্ষত নিয়ে থাকা পাখিটিকে। ভেবেছিলেন একটু সুস্থ হলে আপনা থেকেই উড়ে যাবে পাখিটা। তবে ধীরে ধীরে, তারা একাত্ম হয়ে ওঠে। পাখির কিচির-মিচির থেকে ঝরতে থাকে আনন্দ।কাকাবাবুর মনে ইচ্ছেরা ফুটে ওঠে আবার ! আসলে ইচ্ছের তো মৃত্যু হয়নি। হয়ও না কক্ষনও ! সে কথা আবার নতুন করে বোঝেন রাজা রায়চৌধুরী।
ক্রমে ক্রমে পাখিটা সুস্থ হতে থাকে। দানা-পানি-আদর থেকে তার ডানায় জোর বাড়ে। শক্তি বাড়ে তার। সেই 'পেঙ্গুইন' আকাশে উড়তে পায় আবার। কিন্তু অবাক কান্ড সারাদিন আকাশ বেয়ে আবার ফিরে আসে 'পেঙ্গুইন' নামের পাখি আর এসে বসে কাকাবাবুর নির্ভরশীল হাতে।তার কিচির মিচির ভাষায় যেন কত কি বোঝাতে চায়।অথর্ব গৃহবন্দী কাকাবাবুর সামনে ফের খুলে যায় বাহির বিশ্বের দরজা। বদ্ধ ঘরে,হুইল-চেয়ারের বন্ধন ঘুচিয়ে মহাবিশ্বের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়। এরকমই চলতে থাকে।বার বার, প্রতি দিন, সে আকাশে উড়ে যায় আর যেন যত রাজ্যের খবর নিয়ে ফিরে আসে।পাখিটা যেন ফিসফিসিয়ে গল্প করে। আর কাকাবাবুও বিষাদের ঝারোখা সরিয়ে বাইরে এসে ফিরে পান তাঁর পুরনো দিনগুলো। কাকাবাবু বুঝতে পারেন, জীবনের এগিয়ে চলাতে তাল মেলানো দরকার সবচেয়ে বেশি। রবি ঠাকুরের  সেই ‘একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ’ যেভাবে হাওয়া থেমে গেলে, মাটির দিকে মনোযোগ ফিরে পায়, সেই ভাবেই তিনি খুঁজে পান জীবন যাপনে আস্থা রাখার বিশ্বাসকে। নিমগ্নতার আনন্দ, পুনরায় কাকাবাবুকেও যেন সেই অভিযানের দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। মহাকাশ ও কাকাবাবুর মাঝের সেতু তাদের শান্তির সহাবস্থান নির্মাণ করে এই ছোট্ট চড়ুই। আসলে তারা যেন একাত্ম হয়ে যায়। সবটাই। ইচ্ছে এবং আত্মবিশ্বাসের পাখায় তো উদযাপনেরই অক্ষর। সেই অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদগুলো আবার ফিরে পাওয়ার স্বাক্ষর। ফিরে আসতে আসতে তাই ভাবছিলাম, বিগত একটি বছর লক্ ডাউনে ঘর বন্দী অবস্থায় আমরা সাধারণ মানুষ কি দুর্বিসহ মানুষিক যন্ত্রণা পেয়েছি। তাহলে একসময় যিনি অ্যাডভেঞ্চারের নেশা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন,সেই তিনি বার্ধক্যজনিত কারনে আজ দিনের পর দিন,বছরের পর বছর,একা, অসহায়, নিরুপায়, গৃহবন্দী।তাই এই ছোট্ট চড়ুই পাখিটাই তো তাঁর বেঁচে থাকার রসদ,আজ জীবনের শেষ বেলায় নতুন একটা জীবনের অপেক্ষা।আমাদের প্রিয় কাকাবাবুর কাছে এর থেকে সেরা প্রাপ্তি আর কি বা হতে পারে !!
রচনাকাল : ১২/৫/২০২১
© কিশলয় এবং দেবজিৎ কুণ্ডু কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 2  China : 2  Germany : 4  Hungary : 2  India : 68  Ireland : 3  Russian Federat : 5  Saudi Arabia : 4  Ukraine : 3  United States : 109  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 2  China : 2  Germany : 4  Hungary : 2  
India : 68  Ireland : 3  Russian Federat : 5  Saudi Arabia : 4  
Ukraine : 3  United States : 109  
© কিশলয় এবং দেবজিৎ কুণ্ডু কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন by Debjit Kundu is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৩৮২০
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী