প্রখর রূদ্রের অপহরন - তৃতীয় পর্ব
আনুমানিক পঠন সময় : ৫ মিনিট

লেখক : দেবজিৎ কুণ্ডু
দেশ : India ,

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২১ , এপ্রিল
প্রকাশিত ৯ টি লেখনী ১৮ টি দেশ ব্যাপী ২৩০৯ জন পড়েছেন।
আমি তো ভেবেছিলাম ফেলুদা লাল মোহন বাবুর ব্যপারটা খুব হাল্কা ভাবে নিয়েছে। কিন্তু লাল মোহন বাবু ফিরে যাবার পর থেকে সারাদিন ওনার দিয়ে যাওয়া বইগুলো ফেলুদা খুবই মনযোগ দিয়ে পড়েছে। আমিও ফেলুদাকে কোন রকম বিরক্ত করিনি  । তখন আন্দাজ বিকাল পাঁচটা,আমি সন্তুর(কাকাবাবুর সহকারি) সাথে হোয়াট্সএ্যাপে ব্যস্ত ,ঠিক সেই সময় ফেলুদাকে দেখলাম মোবাইলে কার সাথে যেন কথা বলছে। কথা শুনে যা বুঝলাম ফোনের অপর প্রান্তে রয়েছেন সেই নবীন লেখক সমর বসু। আর ফেলুদার মুখ দেখে আন্দাজ করলাম কথা বার্তা খুবই আশা ব্যাঞ্জক।
রাতে সপ্তপদীতে খাওয়া দাওয়ার পর আসল কথায় চলে এলেন লালমোহন বাবু।
“কী বুঝলেন মশাই? এযুগের জটায়ু কি রুদ্র চরিত লিখে সাড়া ফেলতে পারবে?”ফেলুদার জুত করে একটা চারমিনার সিগারেট ধরাল। তারপর এক রাস ধোঁয়া ছেড়ে  বলল, “তা আপনার মতটা আগে বলুন, তারপর না হয়…”
“আমার তো একেবারে যাকে বলে এক্সট্রাসেলেন্ট লেগেছে।”
বুঝতে পারলাম এক্সট্রা অর্ডিনারি আর এক্সেলেন্ট শব্দ দুটোকে ভদ্রলোক একসাথে মিশিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু সেটা আর শুধরে দেবার সুযোগ হলো না। কারণ এর মধ্যেই ফেলুদা বলতে শুরু করেছে, “কিছু মনে করবেন না লালমোহন বাবু, এবার গল্প লিখতে গেলে শুধুমাত্র আমার উপর ভরসা না করে আপনার নিজের খাটনিটা আরো বাড়াতে হবে।”
লালমোহন বাবু যথারীতি ব্যাপারটা ধরতে পারলেন না। ফেলুদা আবার এক মুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলল, “আরে মশাই, এই সমর বসু তো মারাত্মক রকম পড়াশোনা করে গল্পগুলো লিখেছেন। আপনার মত উটের পাকস্থলীতে জল জমাতে দেননি।সত্যিই ব্রিলিয়ান্ট। এমন ডেডিকেশন, রিসার্চ ওয়ার্ক নন ফিকশনেও আজকাল খুব বেশি চোখে পড়ে না। কোনো সন্দেহ নেই, প্রখর রুদ্র অন্তত ঠিকঠাক লোকের হাতেই পড়েছে। তাঁর ভবিষ্যৎ ভীষণ রকম উজ্বল।”
ফেলুদা সচরাচর এত প্রশংসা কারোর সম্বন্ধেই করে না। কিন্তু বেশ বুঝতে পারছি এটা এক্সসেপশনাল কেস। লালমোহন বাবু এবার ফেলুদাকে একটা মোক্ষম ঠোক্কর দিলেন, “এ বই তাহলে একেবারেই নিখুঁত বলছেন?”
এবার ফেলুদাকে একটু গম্ভীর দেখালো।এবার সিগারেটের ফিল্টারটা ক্যারামের স্ট্রাইকারের মত ছুড়ে দিয়ে বলল, “লালমোহন বাবু,কোনো সন্দেহ নেই ভদ্রলোক দারুণ রিসার্চ ওয়ার্ক করেই গল্পগুলো লিখেছেন। কিন্তু মুশকিলটা হলো পাঠকদের এমন ভাবে এই জ্ঞানগুলো খাওয়াতে হয় যাতে তাদের মনে না হয় যে লেখক রহস্য রোমাঞ্চের গল্প বলতে গিয়ে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি পড়িয়ে ফেলছেন। এই জ্ঞানগুলো অতি সাবধানে গল্পের ফাঁকে ফাঁকে ঢোকাতে হয়, যাতে পাঠকগণ বিনা দ্বিধায় পড়ে ফেলতে পারেন কিন্তু পড়ার পর ভাবেন, বাহ, লেখকের তো দারুণ জ্ঞান এ বিষয়ে! কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এ বইয়ের লেখক সমর বাবু ‘দেখুন আমি কত গবেষণা করে লিখেছি’ মার্কা ব্যাপারটা মাঝে মাঝে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। 
“রূদ্রের প্রখর রূপ- গল্পটায় পায়ের দূরত্বের মাপ দেখে যেভাবে মানুষের উচ্চতা নির্ণয়ের চেষ্টা করেছে, সেটাও খুব বিজ্ঞানসম্মত লেগেছে। ডান ও বাম পায়ের ছাপের মধ্যে দূরত্ব দেখে আততায়ীর উচ্চতা আন্দাজ করার চেষ্টা করা অনেক বেশি লজিক্যাল। আফটার অল বেঁটে মানুষ ছোট পদক্ষেপে এবং লম্বা মানুষ বড় পদক্ষেপে হাঁটা চলা করবেন এটাই বেশি স্বাভাবিক। এতটা শোনার পর আমি বলে উঠলাম, “দেখো ফেলুদা, লেখক আবার একেবারেই নতুন।এরকম চিন্তা ভাবনার উচ্চতা,ভাবা যায়…খুবই আধুনিক বলতে হবে”
আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ফেলুদা বলল, “এক্সাক্টলি তোপসে, আর এটাও যেমন ঠিক তেমনই ভেবে দেখ,আজ আমরা কিন্তু সপ্তপদীতে এসে সেই সাবেকি বাঙালী খাবারই আমরা চেটে পুটে খেলাম।একবারের জন্যও কিন্তু  আধুনিক ফাস্টফুড খাবারের খোঁজ করিনি।  অথচ এর কোয়ালিটি যদি ডাউন হতো তাহলে কি এখানকার খাবারের এত চাহিদা থাকতো? মোদ্দ কথা হলো, নতুন হোক বা পুরোনো, সমস্ত লেখকেরই তার সৃষ্ট বা লেখার প্রতি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।তারজন্য বিভিন্ন রেফারেন্স বইও পড়া উচিৎ। আর একটা কথা লালমোহন বাবু,এতদিন আপনি নিজে এত উদ্ভট সব তথ্য দিয়েও বেস্ট সেলার লেখক ছিলেন কেন, সেটা জানেন তো? আসলে আপনি স্বাদু গদ্য লিখতে পারতেন। তাই নবীন লেখকের লেখা দেখে এত ভেঙে পড়বেন না।আপনার এই স্বকীয় ব্যাপারটা এত সহজে রপ্ত করা যায় না। বিদেশি গোয়েন্দা সিরিজগুলি ভালো করে পড়লে ভবিষ্যতে আরো ভালো মিস্ট্রি আপনি আমাদের উপহার দেবেন বলেই আমার বিশ্বাস। তবে সব শেষে এটুকু না বললেই নয়, ভদ্রলোক আপনার প্রখর রুদ্রকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই এবং তার গল্পগুলো সম্পূর্ণ রূপেই মৌলিক। আপনার প্রকাশক অতনু বর্মণ  কিন্তু এ ব্যাপারে কোনোভাবেই যুক্ত না। এছাড়া আমি নিজে ফোনেও তার সাথে কথা বলে এটাও বেশ বুঝতে পেরেছি যে সমর বাবু আপনার গল্পের একজন অন্ধ ভক্ত। শুধু মাত্র মনের ক্ষুধা মেটাতেই গোয়েন্দা গল্প লেখেন। আর প্রখর রুদ্র নামটাই খালি গল্পে উনি ব্যবহার করছে শুধুমাত্র আপনাকে গুরু হিসাবে সন্মান জানাতে এবং ভূমিকাতেও তা জানাতে কিন্তু কসুর করেননি। অবস্য আমি তাকে বলেছি যে তার পরবর্তী গল্পে যেন প্রখর রুদ্র নামটা ব্যবহার না করা হয় এবং তাতে তিনি সম্মত হয়েছেন, বলেছেন এবার থেকে গোয়েন্দার নামটা তিনি শুধুমাত্র রূদ্র রাখবেন।আর এই ভবিষ্যতের রুদ্র ভার্সেস আপনার সৃষ্ট প্রখর রুদ্রের দ্বৈরথ দেখার জন্য আমি তো মুখিয়ে আছি। লালমোহন বাবু, অন্তত এটা দেখে বেশ ভালো লাগছে, নতুন প্রজন্ম প্রস্তুত হয়ে গেছে। তারা বুঝিয়ে দিতে পারছে, লম্বা রেসের ঘোড়া হবার ক্ষমতা তাদের মধ্যেও আছে। কালের নিয়মে মগজাস্ত্র নির্ভর গোয়েন্দা কাহিনীতে না ঝুঁকে তারা যে নতুন কিছু করতে চাইছে, এটাই বেশি করে আমায় আনন্দ দিচ্ছে। আর আশাকরি জটায়ুর মনের জটও আমি কাটিয়ে দিতে পেরেছি।" জটায়ু বললেন "দারুণ লাগছে মশাই,নিজের মধ্যেই নিজেকে বেশ হাল্কা হাল্কা লাগছে।" আর এই উপলক্ষে আগামী ২রা মে লালমোহন বাবু নিউটাউন কফি হাউসে আবারও ট্রীট দেবেন কথা দিয়েছেন কারন ঐ দিন বাঙালীর জীবনে একটা বিশেষ দিন।না নির্বাচনের ফল প্রকাশ হবে বলে না আসলে ঐ দিন বাংলা চলচ্চিত্রের প্রবাদপ্রতিম নির্মাতা ও ফেলুদার রূপকার সত্যজিৎ রায়ের শততম জন্মদিন।
রচনাকাল : ১২/৫/২০২১
© কিশলয় এবং দেবজিৎ কুণ্ডু কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 2  China : 2  France : 1  Germany : 4  India : 121  Ireland : 3  Russian Federat : 9  Saudi Arabia : 6  Ukraine : 8  United States : 122  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 2  China : 2  France : 1  Germany : 4  
India : 121  Ireland : 3  Russian Federat : 9  Saudi Arabia : 6  
Ukraine : 8  United States : 122  
© কিশলয় এবং দেবজিৎ কুণ্ডু কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
প্রখর রূদ্রের অপহরন - তৃতীয় পর্ব by Debjit Kundu is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৭৬৬৮৯
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী