ঐতিহাসিক মে দিবস-২০২১
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৪৮৯৫১ জন পড়েছেন।
ঐতিহাসিক মে দিবস-২০২১  মহান বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক!
মেহনতী মানুষের সংগ্রাম চলছে, চলবে।
ইনকিলাব- জিন্দাবাদ
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


শ্রমজীবী মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রামের লাল রক্তে চিহ্নিত মে দিবস আজ (১ মে, শনিবার)। ২০২১ সালের এই মে দিবসে করোনা আক্রান্ত পৃথিবীতে খেটে খাওয়া মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে স্বদেশে পাড়ি দিচ্ছেন।


শ্রমিক ও মেহনতী মানুষ করোনার ফলে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, চাকরিচ্যুতি, রোজগারহীনতা, মন্দা, হতাশা ও অনিশ্চয়তার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন।


এক অভাবনীয় বিরূপতার মধ্যে সারা পৃথিবীর দমবন্ধ স্তব্ধতায় মে দিবসকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাপী করোনার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার সার্বক্ষণিক যুদ্ধে লিপ্ত শ্রমজীবী মানুষের জীবনসংগ্রামে স্পন্দিত মে দিবস এসেছে অবিরাম লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেতনাদীপ্ত প্রত্যয়ে।


চলমান লড়াইটি প্রধানত শ্রমিক শ্রেণির হলেও তা কেবল তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং ঘোরতর বিপদের ঘণ্টাধ্বনি বাজিয়ে ছড়িয়ে গেছে বিশ্বময় সব জাতি, ধর্ম, ভাষা, বর্ণ, অঞ্চল, লিঙ্গ ভেদে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে। ফলে ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’ প্রতিপাদ্যে করোনা কবলিত এ বছরের (২০২১) মে দিবস পালিত হচ্ছে সারা বিশ্বে।


তবে, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, সঙ্গরোধ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে এ বছর মে দিবসের সব আনুষ্ঠানিকতা এবং সম্ভবত বিশ্বের অধিকাংশ স্থানেই বাতিল করা হয়েছে। ফলে এ বছর দেখা যাবে না মে দিবসের বর্ণিল শ্রমিক সমাবেশ আর শোনা যাবে না বজ্রকণ্ঠে ঘোষিত ‘দুনিয়ার মজদুর, এক হও’ ধ্বনি।

কারণ, বৈশ্বিক মহামারি আকারে করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তারের পটভূমিতে সামাজিক দূরত্ব ও সঙ্গরোধের কঠোর বিচ্ছিন্নতায় সাধারণ মানুষের মতোই শ্রমজীবী, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষের জীবন থমকে গেছে। রোগের ঝুঁকির পাশাপাশি বাড়ছে শ্রমজীবী মানুষের জীবন নির্বাহের বহুমুখী সংকটও। তাদের ঘিরে ধরেছে করোনা পরিস্থিতি-সৃষ্ট নানাবিধ আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ।


দিনান্তের সামান্য রোজগারে যাদের জীবন চলে, পরিস্থিতিগত কারণে তাদেরও সঙ্গরোধে ঘরে থাকার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কর্মস্থলের বাইরে থাকার ফলে তাদের প্রাত্যহিক জীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন সংকট। ফলে জীবনধারণের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে কাজে যেতে হচ্ছে তাদের। বের হতে হচ্ছে রিকশা বা ভ্যান নিয়ে। ফসল কাটতে মাঠে কিংবা মাছ ধরতে যেতে হচ্ছে নদীতে।


উৎপন্ন পণ্যের মূল্য পাওয়ার জন্য হাজির হতে হচ্ছে হাট-বাজারের জনারণ্যের স্বাস্থ্যগত বিপদ সঙ্কুল ভিড়ে। আদিঅন্তহীন নগ্ন পদধ্বনিতে শত সহস্র শ্রমিককে প্রলম্বিত পদযাত্রা করতে হচ্ছে লকডাউন ভেঙে কারখানা অভিমুখে।


জীবনের কঠিন বাস্তবতা আর করোনার প্রাণঘাতী পরিস্থিতির দোলাচলের মধ্যেই কাটছে শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামমুখর জীবন। যেখানে নিত্য বিরাজমান জীবনের লেলিহান ক্ষুধার দাবি আর করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ ঝুঁকি। এমনই এক বিরূপতার মধ্যে শ্রমিক শ্রেণির লড়াকু জীবনে আশার স্ফুলিঙ্গের মতো এসেছে করোনা কবলিত মে দিবস। মে দিবস শতবর্ষের সংগ্রামশীল অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে বিদ্যমান সংকট ও সঙ্কুলতা উত্তরণের জন্য শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে জাগাচ্ছে নবতর লড়াইয়ের সাহস, স্পৃহা ও প্রতীতি।


১৮৮৬ সালে শ্রমজীবী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মালিক ও শোষকদের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়ে জীবন ও রক্ত দিয়েছিলেন। শতবর্ষ পরে তাদের জীবন দিতে হচ্ছে অদৃশ্য ভাইরাসের কবলে, নীতিগত ভ্রান্তিতে ও ভুল পরিকল্পনার কারণে। আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের আত্মাহুতির পেছনে ছিল নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার দাবি। সে দাবি পরিপূর্ণ হলেও কর্মপরিবেশ, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সামাজিক স্থিতিশীলতা, আর্থিক স্থিরতার মতে বহুবিধ বিপদ একবিংশ শতকের অগ্রসর পৃথিবীতেও আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছে শ্রমজীবীদের কর্মক্লান্ত জীবন।

বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রতিক্রিয়ায় শ্রমজীবীদের অবস্থান আরো নাজুক হয়েছে। অনেক নতুন নতুন স্বাস্থ্য ও পেশাগত বিপদ তৈরি হচ্ছে শ্রমিক ও মেহনতী মানুষের সংগ্রামী জীবনের পদে পদে। তদুপরি, প্রযুক্তি, পরিবেশ ও পরিবর্তনের জোয়ারের ফলে নব নব সমস্যা উত্থিত হয়ে কালাপাহাড়ের মতো সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থে যেসব সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে ভাবনা-চিন্তা করার এবং প্রতিবিধান খুঁজে বের করার দরকার আছে মে দিবসকে সামনে রেখে।


ঐতিহাসিক মে দিবস অতীতের সংগ্রাম ও ত্যাগের অভিজ্ঞতায় শ্রমিক শ্রেণির জন্য বিশ্বব্যাপী বর্তমান বিরূপতার অবসান ঘটিয়ে ভবিষ্যতের মসৃণ পথ খুলে দেবে।


নতুন বছরের পূণ্য মে দিবসের অরুণ প্রভাতে ভরে উঠুক শ্রমিক, কৃষক আর মেহনতী মানুষের জীবন ভরে উঠুক পাখিদের আনন্দ কলতানে । আসুক এবার নতুন সকাল, কিছু কথা কিছু গান। কিছু সুন্দর স্বপ্ন, একমুঠো সাদা মেঘ, কিছু মিষ্টি অনুভূতি। আসুক স্বপ্নময় সৃষ্টি।  এবার নতুন বছরে মে দিবসের আলোকে রঙিন হোক খেটে খাওয়া মানুষদের আগামী দিনগুলো, সফল হোক তাদের খেয়ে পরে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
মে দিবস জিন্দাবাদ।


আসুন, আজ আমরা লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, সেই সব শ্রমিক, কৃষক আর মেহনতী মানুষ, যাদের চোখের জলের দাম কেউ দিতে পারে না, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে  সবাই একসাথে সম্মিলিতভাবে সংগ্রাম করি। তাদের দিই মানবিক মর্যাদা। অথবা দুবেলা দুমুঠো খেতে না পাওয়া অনাহারী মানুষগুলোর পাশে এসে সহানুভূতির পরশ দিয়ে তাদের বাঁচার ঠিকানা বলে দিই। সকলে সুস্থ থাকুন, রোগমুক্ত জীবনযাপন করুন এই প্রত্যাশা। জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু 
রচনাকাল : ১/৫/২০২১
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 2  Germany : 3  India : 120  Ireland : 4  Russian Federat : 6  Sweden : 4  Ukraine : 5  United States : 206  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 2  Germany : 3  India : 120  
Ireland : 4  Russian Federat : 6  Sweden : 4  Ukraine : 5  
United States : 206  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ঐতিহাসিক মে দিবস-২০২১ by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৩৩৩৫০
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী