আবার ফিরে এসেছি
।।।।। ভৌতিক গলপ
। ।।।।অনাদি মুখার্জি
অয়ন অনেক দিন ধরে একটা বাড়ি কেনার সন্ধান করছে , শেষমেশে একটা পুরাতন ফ্ল্যাট বাড়ি পাওয়া গেলো ! কিন্তু এই নতুন বাড়িতে আসার পর থেকে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে লাগলো ,যা কল্পনা করা যায় না ! রাত হলে একটা মেয়ের কান্না আওয়াজ পাওয়া যায় ,একদিন রাতে সবাই মিলে বসে খাওয়া দাওয়া করছে ,তখন বাথরুমের জল পড়ার শব্দ শুনতে পায় ,সেই শব্দ শুনে অয়ন বাদরুমে গিয়ে দেখে কল থেকে জল পড়ছে না ,তবে কোথা থেকে শব্দ এল ? তার পর ছাদে কে যেনো আওয়াজ করে বলছে আমাকে সুখে থাকতে দিলি না সবাই কে শেষ করবো ! অয়ন এইসব শুনে একটু ভয় পেলো ! অয়নের বৌ মালা বললো দেখো কেউ আছে ছাদে গিয়ে দেখে এসো ! অয়ন তখন ছাদে গিয়ে দেখে কেউ নেই শুধু একটা ঠান্ডা হাওয়া স্রোত বয়ছে এতে অয়নের সারা শরীরের একটা কাঁটা দিয়ে উঠলো ! নিচে নামতে আবার সেই কান্নার আওয়াজ এলো ! অয়ন ভাবলো পাশের বাড়ি থেকে এই কান্নার আওয়াজ আসছে ,ঠিক দুইদিন পরে আবার সেই একিই ঘটনা তবে এই বার কান্নার আওয়াজ নয় বরং কে যেনো বাইরের দরজার ধাক্কা দিচ্ছে ,এত রাতে কে এল ??বলে অয়নবাবু একমাত্র ছেলে সমু দরজা টা খুলে দেখে কেউ নেই তার পর হঠাৎ দমকা হাওয়া সব কিছু ঘরের জিনিস পত্র উড়ে যেতে লাগলো ! এই দৃশ্য দেখে অয়ন ও তার বৌ খুব ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে বললো কে তুমি বলো ? কেনো এমন করছো হাওয়া তখন থেমে গেলো !
পরে আর এই রকম ঘটনা আর হয়নি বলে অয়ন সেই ব্যাপার টা নিয়ে মাথা ঘামালো না ! একদিন রাতের বেলায় সবাই ঘুমিয়ে আছে সেই সময় এক বিকট চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেলো অয়নবাবু ছেলে সমুর ,সেই শুনতে পেলো কান্নার আওয়াজ সেই আওয়াজ শুনে বিছানা ছেড়ে ছাদে এলো ,ছাদে ঘুটঘুটে অন্ধকার কিছুই দেখা যাচছে না ,হঠাৎ একটা ছায়া চোখে পড়তেই বলে উঠলো কে ? উপর দিকে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে দড়ি উপর ঝুলছে ,তা দেখে সমু ভয় পেয়ে বললো কে তুমি ? কেনো এমন ভয় দেখাছো ? তখন ঐ ছায়া টা ঝুপ করে তার সামনে এসে পড়লো !
সমু দেখলো সেই একটা মেয়ে তার পরনে নীল রঙের শাড়ি পরে তার মুখ খানিকটা কেমন যেনো থেতলে দেওয়া মতোন ,চোখের যেনো লাল রক্ত ঝরছে ,এই দেখে খুব ভয়ে কাঁপতে লাগলো সমু ,ভয়ে ভয়ে বললো কে তুমি ? কি চাও ? ঐ মেয়েটা তখন খুব হাসতে লাগলো আর বললো তোরা কেউ থাকবি না তুই এখুনি মরবি বলে লম্বা একটা হাত বের করে সমুর গলা চেপে ধরলো !
সমু বললো ছেড়ে দাও আমাকে আমি কি অন্যায় করেছি ? মেয়ে টা সমানে বলে যাচ্ছে আমি ফিরে এসেছি আমাকে এইখানে মেরে ফেলেছে ওরা বলে বিকট শব্দ করে বললো আমার ইচছা পূরণ হয়নি তাই তোকে মরতে হবে , আমি তোকে নিয়ে যেতে এসেছি ,এইখানে কেউ থাকবে না বলে সমু কে ছাদে উপরের আঁছাড় মারলো !
পরের দিন সকালে অয়নবাবু ও তার বৌ ছাদের মধ্যেই গিয়ে দেখতে পায় সমুর লাশ পড়ে আছে মুখে রক্তের দাগ ও কপালের মধ্যে রক্তের লেখা আছে আমি ফিরে এসেছি আমার নাম মালা বলে একটা নাম ! সেই দৃশ্য দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো দুই জনের !
সেই দিন এক প্রতিবেশীদের কাজ থেকে জানতে পারে এর ঘটনা !
অনেক দিন আগে এই বাড়িতে মালা ও তার বাবা ,মা থাকতো ,মালা বয়স ছিল আঠেরো বছর সেই একটা ছেলে কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল ,সেই বিয়েটা মেনে নিতে পারেননি মালার বাবা ও মা ! একদিন মালার বর কে পায়েসের সাথে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেললো মালার বাবা ! মালা তখন জানতে পারে তার বর কে মেরে ফেলেছে তখন মালার কি কান্না ! সেই কাঁদতে কাঁদতে বললো আমার সুখ ছিনিয়ে নিয়ে ভালো করোনি এর পরিনতি খুব খারাপ হবে ! তখন মালাকে উপরের ছাদে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে দিল ,তখন মালা বললো আমি কাউকে ছাড়বো না এই বাড়িতে সবাই কে মেরে ফেলবো বলে ছাদ থেকে ঝাপিয়ে আত্মহত্যা করলো ! তার কিছু দিন পর মালার বাবা ও মায়ের লাশ পাওয়া যায় এই ছাদের মধ্যেই ! সেই থেকে মালার আত্মা ঘুরে বেড়ায় ঐ ছাদের মধ্যেই !
সব কিছুই শুনে অয়ন ও তার বৌ বুঝতে পরলো যে ঐ মেয়েটা আত্মা তাদের কেউ শাস্তি দিবে এই ভয়ে পরের দিন ঐ বাড়িটি ছেড়ে দিল ,আগে যদি এই ঘটনা জানতো তবে তার একমাত্র ছেলেকে হারাতে হতো না বিধির কি বিধান কে করলো অপরাধ তার শাস্তি কে পেলো ! সেই থেকে সবাই ঐ বাড়িতে কেউ আসে না ,পরে ঐ বাড়ির নাম দিয়েছে আবার ফিরে আসবো ! মাঝেমধ্যেই একটা আওয়াজ শোনা যায় ,আমি ফিরে এসেছি !
রচনাকাল : ১৬/৪/২০২১
© কিশলয় এবং অনাদি মুখার্জি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।